— আম্মা, আপনি মেয়ে দেখা শুরু করেন। আর হ্যা সাত দিনের মধ্যে মেয়ে জোগার করেন ।তা না হইলে কিন্ত আমি যাকে পাব বিয়ে করে আনব। তখন কেউ কিছু বলতে পারবেন না।।।।
....
গত নয় দিন যাবত বাড়ির পরিবেশ বেশ ঝিম ধরে আছে। অহন আমার সাথে খুব দরকারি কথা ছাড়া কিছুই বলছে না ।। আর আমি তার ও উত্তর দিচ্ছি না ।
মা ও বেশ চুপসে গেছে সেদিন রাতে ছেলের এমন অবাক কান্ড দেখে ।।
মা আবার নতুন করে মেয়ে দেখা শুরু করেছে কি না তাও বুঝতে পারছি না । সাত দিনের মধ্যে মেয়ে জোগাড় করা তো আর মুখের কথা না । তাও আবার দ্বিতীয় বিয়ের জন্য ।সাত দিন পেরিয়ে নয় দিন হচ্ছে আজ। অহন বলেছিল সাত দিনের মধ্যেই মেয়ে জোগাড় করতে । তা না হলে যাকে ইচ্ছা বিয়ে করে আনবে। হুহ মুখে যতই বলুক এটা কি আর এত সোজা নাকি।।। আমি যতদূর জানি বিয়ের আগে ওর কোন প্রেম পিরিতি ছিল না।।। প্রেম ছিল একমাত্র গান আর গিটার এর সাথে।। তবে কলেজ এ নাকি এক হিন্দু মেয়েকে পছন্দ করত।। তবে প্রেম ট্রেম না। কিন্তু সেই মেয়েকে বিয়ে করে আনবে না তো আবার?? ধুর কি সব ভাবছি। সে মেয়ে নাকি বিয়ে করে ইন্ডিয়া চলে গেছে। সে কোত্থেকে আসবে।
সাত দিনের জায়গায় আজ নয় দিন যাচ্ছে । জেদ করে বিয়ে করতে চাইলেই হলো নাকি।। হুহ কোন মেয়ে তার সাথে হেটে হেটে সতীন এর সংসার করতে আসবে ।
.
সন্ধ্যায় টুকিটাকি কাজ সেরে মায়ের সাথে বসেছি আবার সে ই বস্তা পচা সিরিয়াল দেখতে। এরই মধ্যে দরজায় নক। আমি জানি অহন এসেছে এটা তার ফেরার টাইম। অন্য দিন আমি ই দরজা খুলি । কিন্ত গত নয় দিন যাবত খুলছি না। কাজের মেয়েকে বললাম, যা খুলে দে তো । তোর ভাইয়া আসছে।
.
বুয়া তো গেট খুলেই অবাক । সে দৌড়ে আসল আমার আর মায়ের কাছে ।
— চাচি,, ভাইজান আপনাদের ডাকল।বলল কি যেন কাজ আছে। সাথে ঐ আপা রেও নিয়ে আসছে।
— কোন আপা?
— আরে নাম মনে হইতেছে না। আপনে আসেন না । আসলেই বুঝতে পারবেন।
.
আমিও মায়ের পিছে পিছে গেলাম। মনে মনে ঠিক বুঝতে পারলাম কপাল আমার পুড়েছে । কিন্তু যাকেই নিয়ে আসুক।বুয়া চিনল কিভাবে??
.
আমি গেট এ গিয়ে দারাতেই থ মেরে গেলাম । এ তো আমার আদরের ননদিনী ওহি।।অহনের খালাত বোন । ধুর বুয়া টাও না। ভয় পাইয়ে দিয়েছিল একদম ।।
.
ওহি মেয়েটা খুব ভালো আর মিশুক। আমার আপন কোন ননদ নেই। কিন্ত ওহি শুধু আমার ননদ না,আমার বোনের চেয়েও বেশি।।খুব ফ্রি আমি ওর সাথে। আর অহন ও ওকে নিজের বোনের মত ই দেখে।। শুনেছি অহনের সাথে নাকি প্রথমে ওহির ই সম্বন্ধ করতে চেয়েছিল আমার শাশুড়ি আর খালা শাশুড়ি মিলে।। কিন্ত অহন নাকি কড়া মানা করে দিয়েছিল। কারণ ওহি কে সে নিজের বোনের মতো ই দেখে।ওহি ও রাজি ছিল না।
ও মাঝে মাঝে ই ভার্সিটি ছুটি হলে এ বাড়ি আসে। হোস্টেল এ থাকে। তাই ছুটি পেলেই নিজের বাড়ি খালার বাড়ি বেড়াতে আসে।। ওহি এলে খুব মজা হয়। সারা বাড়ি একাই মাতিয়ে রাখে।। আমি বুঝতে পারলাম কয়েকদিন হল মন খারাপ করে আছি তাই অহন ওহি কে নিয়ে এসেছে। যাতে আমার মনটা একটু ভালো হয় ।
.
মা তো ওহি কে দেখেই,
— কি রে ওহি?? সন্ধ্যা বেলায় কেন?? সকাল সকালে আসতি। কতদিন পরে এলি।
— এইত খালা, দেরি ই হয়ে গেল একটু।
— কি ব্যাপার ওহি?? একদম শাড়ি পরে সেজেগুজে এসেছ যে?? ব্যাপার কি??( আমি)
ওহি কিছুই উত্তর দিল না শুধু অহন এর দিকে তাকিয়ে হাসছে।
— আম্মা,meet my second wife Ohi....(অহনের ঠোটে বাকা হাসি)
মা কিছু বলার আগেই আমার মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়ল।
— কিহ?? কি বললা অহন তুমি??
— তোমাকে তো কিছু বলি নাই । আমি আম্মা কে বলেছি। কি আম্মা বৌ পছন্দ হয়েছে?? বরন করবেন না ???
মা ও তোতলাতে লাগল।
— অহন কি বলছ এসব? (মা)
— ঠিক ই বলছি। তোমরা যা চাও তাই ই তো করেছি।
— কিন্তু অহন (আমি)
— আবার কিসের কিন্ত ?
— কিছু না ।
অহন আর ওহি কে বরন করে ভেতরে আনা হলো । দুজন পাশাপাশি সোফায় বসে আছে । আর আমি আহম্মকের মত দাড়িয়ে দাড়িয়ে ওদের দেখছি। বেশ খুশি দুজনই । অহন কে দেখে খুব টেনশন ফ্রি টেনশন ফ্রি মনে হচ্ছে ।
মা খালাকে ফোন দিয়ে জানতে পারল খালা মানে ওহির মা নাকি এ ব্যাপারে কিছুই জানে না। তারা কাল এ আসছে এ বাড়ি।।
মা ওহি কে দেখে বেশ খুশি খুশি ই মনে হচ্ছে । কিন্তু বাবা মানে আমার শশুর ও আমার মতো আহম্মক হয়ে ছেলের এসব কীর্তি দেখছে।
কিছুক্ষণ পর সে অহন কে প্রশ্ন করেই বসল,
— অহন এসবের মানে কি?
— কিসের মানে বাবা?
— এই যে এসব।
— কি সব??
— অহির সাথে ই তো প্রথমে আমরা তোমার বিয়ে ঠিক করেছিলাম । তখন না করলে আবার এখন...
— তখন বুঝতে পারি নি। এখন আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আর তোমরা তো চেয়েইছিলে যে আমি কাউকে আবার বিয়ে করি । তো করেছি তো এখন আবার এসব প্রশ্ন কেন উঠছে??
মা এসে ওদের থামিয়ে দিল।
— চুপ করো তো অহনের বাবা। যা হয়েছে ভালই হয়েছে । আল্লাহ যা করেন ভালো র জন্য ই করেন।।। আমরা যাকে প্রথম থেকেই ছেলের বৌ হিসেবে দেখতে চেয়েছি আমাদের অহন তাকেই নিয়ে এসেছে।। কিন্ত তোরা এভাবে নিজেরা নিজেরা বিয়ে না করলেই পারতি। আমাদের তো তোদের বিয়েটা দেখার সুযোগ ও দিলি না ।
— খালা তোমাদের বললে এভাবে সারপ্রাইজ দিতাম কিভাবে??
— এখন ও খালা বলবি?? মা বল মা।
— হ্যা ওহি আম্মা কে মা বললেই তো পারো। (অহন)
— আচ্ছা ধীরে ধীরে চেষ্টা করব। হুট করে তো আর এত দিনের অভ্যস চেঞ্জ করা যায় না।
— আচ্ছা তোর যা ইচ্ছা বলিস। ( মা)
আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে এদের নাটক দেখছি। প্রায় অনেক্ষ্ং ওদের এসব আদিখ্যেতা চলল। এদিকে যে আমি একটা মানুষ দাড়িয়ে আছি দরজার এক পাশে সে দিকে কারো কোন খেয়াল ই নেই।।।
.
অনেক্ষণ পর অহন আমাদের রুমে এলো । মেজাজ আমার এমনি তেই গরম হয়ে ছিল ওকে দেখে আরো হলো ।
— কি এই রুমে কি?? যাও নতুন বৌ এর কাছে যাও। মা তো তোমাদের জন্যে পাশের রুম ঠিক করেই দিয়েছেন।
— হ্যা হ্যা ..নতুন বৌ এর কাছেই যাব। ফ্রেশ হইতে আর চেঞ্জ করতে এসেছি এ রুমে।
অহন ফ্রেশ হয়ে বরাবর এর মত ট্রাউজার আর বাড়িতে পড়ার টি শার্ট টা পড়ে বের হলো ।
— নতুন বৌ এর কাছে যাচ্ছ এসব কি পরে?
— এসব কি পড়ে মানে?? আমি কি কোন অশ্লীল কিছু পড়েছি? ভদ্র সভ্য পোশাক পড়েছি।
— আমি কি সে কথা বলেছি নাকি??
— তো???
— বলছি এসব পুরাতন পোশাকে যাবে নতুন বৌ এর কাছে বাসর রাতে ? অন্তত একটা পাঞ্জাবি পরে যাও। আর না হলে আমাদের বিয়ের শেরওয়ানি টা পড়ে যাও।
— কোন হাদিসে আছে যে বাসর রাতে পাঞ্জাবি ই পড়তে হবে??
— কোন হাদিসে ই নেই । তবে এটাই সবাই করে। আমাদের বিয়েতেও তো শেরওয়ানি ই পরে এসেছিলে।। তো আজ কেন পড়বে না?
অহন আমার কথা শুনেই আলমারি থেকে খুজে খুজে ক্যাটকেটে হলুদ একটা পাঞ্জাবি বের করে পড়ল।
— এবার খুশি???
— হ্যা খুব । তবে ওহি যদি নীল শাড়ি পরত আরো খুশি হতাম। তাহলে দুজন কে একদম খাপে খাপ লাগত। তুমি হিমু আর ওহি হতো রুপা।
— এতই যখন দরদ তোমার ই একটা নীল শাড়ি দাও। ওহি পড়বে।
আমি আলমারি থেকে আমার সব চেয়ে সুন্দর নীল শাড়ি টা বের করে অহনের হাতে ধরিয়ে দিলাম।
অহন শাড়ি টা আমার মুখের ওপর ছুড়ে মারল।
— অয়নী .. তোমার কি একটু ও ক্স্ট হচ্ছে না ??
— হচ্ছে তো অনেক।
— তো এরকম করছ কেন?
— কিরকম?
— এত স্বাভাবিক কিভাবে আছ তুমি?? তোমার জায়গায় অন্য কোন মেয়ে হলে এতক্ষণ না জানি কি কি না করত।
— আমি তো তোমার থেকেই শিখেছি অহন যে কোন পরিস্থিতি মেনে নিয়ে খুব স্বাভাবিক থাকা। আর আমি তাই থাকার চেষ্টা করছি।
— বাহ
— কিন্ত অহন আমার একটা প্রশ্ন আছে।
— বলো
— এত মেয়ে থাকতে ওহি কেন??ওকে না তুমি নিজের বোনের মতো দেখতে।। আর তুমি তো জানো ই ওকে আমিও কতটা ভালবাসি ।একদম নিজের বোনের মতো । আমার কোন নিজের বোন নেই অহন । যাকে নিজের বোনের মতো ভাবি তাকে এখন সতীন হিসেবে দেখতে হবে ?? কেন এতো কস্ট দিচ্ছ আমাকে? কিসের খেলায় মেতে উঠেছ তুমি?????
— হ্যা বোনের মত বলেছি।বোন তো আর বলি নি । খালাত বোন কে তো হাজার হাজার মানুষ বিয়ে করে । আর হ্যা একবার তো বললাম ই আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আর যা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি।।
— অহন আমার মনে হয় এ বাড়ি তে থাকা আর ঠিক হবে না । আমি বরং কাল চলে যাই।
— উহু।আমাদের মধ্যে কিন্ত এমন কথা ছিল না। কথা কিন্তু ছিল আমি আবার বিয়ে করলেও তুমি এ বাড়ি তেই থাকবে। এখ্ন ই কোথায় যাবে অয়নী ম্যাডাম yeh to bas trailer thaa... picture to abhi Baki hay.......❤
.
.
.
চলবে..........................