মাথায় বাজ ভেঙে পড়ল সেদিন যে দিন শুনলাম ওহি প্রেগন্যান্ট!!!
.
মানে অহন সত্যি সত্যিই দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছে।
এতদিন মনের মধ্যে কোথায় যেন একটা ছোট্ট আশা আর ভরসা ছিল অহনের প্রতি।
কিন্ত আজ ও সব ই মিথ্যা করে দিল। ওর কি একটা বাচ্চার এতটাই বেশি দরকার ছিল? কই আমাকে তো এতদিন তেমন বুঝতে দেয় নি।
হয়ত সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা ছিল । হয়ত আমি কস্ট পাব বলে বুঝতে দেয় নি।এখন যখন আমি সম্মতি দিয়েই দিয়েছি..
আর তো কোন বাধা নেই।
.
ওহি কে আমি কিছু দিন ধরেই খেয়াল করছি। সারাক্ষণ শুয়ে বসেই থাকে। বমি করার শব্দ ও পেয়েছি । খাবার ও খায় না ঠিক মতো ।সন্দেহ তখন ই কিছুটা হয়েছিল।
.
আমি জানি মা আমাকে এ বিষয়ে কিছু জানাবেন না তার ধারনা আমি হিংসার বশে যদি কিছু একটা করে ফেলি।
আর অহন তার কি কোন মুখ আছে আমাকে এটা জানানোর? আর যাই হোক এতটা নির্লজ্জ সে না তা আমি ভাল করেই জানি।
.
আমি নিজেই একদিন ওহি কে জিজ্ঞেস করলাম
— আচ্ছা ওহি তুমি প্রেগন্যান্ট তাই না???
ওহি কোন উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে ছিল
আর আমার ও যা বোঝার বোঝা হয়ে গেল ।
শুধু আস্তে করে বলে আসলাম
Congratulations
.
রাতে অহন কেও খাবার বেড়ে দিতে দিতে বললাম
— Congratulations পুরক সাহেব
— Thank you...but কেন সেটা নিশ্চই জানতে পারি?
— প্লিজ অহন তুমি এমন ভাব কর না যে তুমি ভাজা মাছ টা উল্টে খেতে জাননা। আমি সব জানি।
— কি জানো?
— তুমি বাবা হচ্ছ
— অহ আচ্ছা .. এই ব্যাপার.. তো এতে এত রাগের কি আছে? আমি যদি বাবা হই তুমিও তো মা ই হচ্ছ।
— বয়েই গেছে আমার তোমার আর ওহির বাচ্চার মা হতে ।
— কেন তুমি যেমন চেয়েছ তেমন ই তো হচ্ছে। তো এখন এত রাগ করছ কেন??
— তুমি নিজে আমাকে খবর টা দিলে না কেন??
— আমি বলা পর্যন্ত ওয়েট ই তো করলে না । তোমাকে আমার আগে আগেই কে বলে দিল বলো তো?
— কেউ বলতে হবে কেন? আমি কি কিছু বুঝি না? তোমার কি মনে হয় তোমরা আমাকে কিছু না বললে আমি কিছু বুঝব না?? অহন এটা কোন লুকিয়ে রাখার বিষয় না। আকাশে চাদ উঠলে সবাই দেখতে পারে ।
— বাহ তাহলে তো তোমাকে চাদ দেখা কমিটির হেড বানিয়ে দিতে হয় দেখছি।
— মনে বেশি ফুর্তি হয়েছে না? ফাজলামি নিয়েই থাকো সব সময় ।
— হুম।। খুব ফুর্তি। আমার থেকে একটু ফুর্তি ধার নিবা?
— অহন,,,,
— আচ্ছা নিতে হবে না। আপাতত আমাকেই কিছু দাও
— কি দিব???
— একটু ঝোল দাও তো । আজকের মাছের ভুনা টা সেই লেভেল এর হয়েছে ।
.
বাটিতে যতগুলো ঝোল ছিল রাগের চোটে সব ঢেলে দিলাম প্লেটে।
সে চুপচাপ পান্তা ভাতের মতো করে সেগুলো খেয়ে ওহির রুমে চলে গেল ।
.
.
কয়েক দিন ধরেই আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে । শ্রাবণের বৃষ্টি। অঝোর ধারার বৃষ্টি।। মন খারাপ করার বৃষ্টি।।
.
মন খারাপ করার বলছি কেন? আমার ক্ষেত্রে মন খারাপের হতে পারে কিন্তু তাই বলে তো আর সবার ক্ষেত্রে তা না ।
দুপুর বেলার বৃষ্টি আমার একদম ভাল লাগে না । সেই ছোট থেকেই।। কেমন যেন মন খারাপ হয়ে যায়।। পুরনো আজে বাজে স্মৃতি মনে পরে যায় ।
আজ সেই দুপুর থেকে বিকেল হতে চলল। বৃষ্টি পড়ছে তো পড়ছেই। থামার কোন নাম গন্ধ নেই।
অনেক ইচ্ছে থাকা সত্বেও অহন আর আমার কখনই এক সাথে সেভাবে ছাদে বৃষ্টি তে ভেজা হয় নি। বেশির ভাগ সময় অফিসে থাকবে আর বাড়ি থাকলেই বা কি? মা তো এসব পছন্দ করেন না ।
আর এখন তো এসবের প্রশ্ন ই ওঠে না।
.
কথা ই হয় না এখ্ন আর তেমন একটা । আর তো এক সাথে বৃষ্টি তে ভেজা ।।।
আচ্ছা ও কি সত্যিই খুব খুশি আছে নাকি খুশি থাকার ভান করছে । নিশ্চয় খুশি ই আছে।
আমাদের বেলায় তো অনেক বেশি খুশি ছিল। যদিও তা মাত্র কয়েক দিন এর জন্য।
বিয়ের পর থেকেই লক্ষ্য করেছি অহন ছোট বাচচাদের প্রতি খুব ই দুর্বল। নিজের রিলেটিভ দের তো বটেই,রাস্তায় কোন ছোট বাচ্চা দেখলেও সুযোগ পেলেই খুব আদর করত।
এখন তো নিজেই বাবা হচ্ছে।তো খুশি হবে না কেন?
এখন ও মনে পড়ে যেদিন প্রথম জানতে পারলাম যে আমাদের মধ্যে কেউ আসছে ও রিপোর্ট টা বাড়ি নিয়ে এসেই খুশি তে আমাকে ওর মা বাবার সামনেই কোলে তুলে নিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়েছিল।
মা শুধু ওকে বলল, অহন তোমার কি লজ্জা শরম দিন দিন লোপ পাচ্ছে?
— আম্মা আপনার আর বাবার সময় কাটানোর জন্য কেউ আসছে।
ও কথা টা এমন ভাবে বলল আমি তো পুরো লজ্জায় মরে যাবার অব্স্থা। এই ছেলে নিজের বাপের সামনে নিজের বাপ হওয়ার খবর এভাবে বৌ কে কোলে নিয়ে দিচ্ছে। মা সত্যি ঠিকই বলেছে, লজ্জা শরম দিন দিন লোপ ই পাচ্ছে জনাবের। তারপর আমাকে কোলে করেই আমাদের রুমে নিয়ে এলো।।
রুমে এসেই আমাকে রেডি হয়ে নিতে বলল।
সেদিন আমরা অনেক ঘুরেছি ।পুরোটা বিকেল, পুরোটা সন্ধ্যা।।। তবে ও সেদিন আমাকে বাইকে করে নিয়ে বেড়ায় নি। যদি আমার কোন প্রবলেম হয় । রিক্সায় বেরিযেছিলাম। সে রিক্সাওয়ালা কে ও সে কি শাসন আস্তে চালাতে পারেন না ,মামা আর একটু আস্তে চালান।।
ভালই কাটছিল দিনগুলো। যত কাজ ই থাক ও সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফিরে আসত। আমার শাশুড়ি ও আমার বেশ আদর যত্ন করতে লাগল।
বাবা মা আমাকে নিতে আসল। তারা যেতে দিল না। একমাত্র ছেলের বাচ্চা এখানে থেকেই হবে সাফ সিদ্ধান্ত তারা জানিয়ে দিল।
অহন ও কেমন যেন রাজি হল না আমার বাপের বাড়ি যাওয়াতে। সে ও বলল ,আমার কাছেই থাকো ।আমি তোমাকে ছাড়া এতদিন থাকতে পারব না । আমি আমার বৌ আর বাচ্চার দেখভাল নিজেই করতে চাই।
বাবা হিসেবে এটুকু অধিকার আমায় দাও
আমিও সেদিন অহন কে না বলতে পারি নি।
.
সব কিছু ঠিকঠাক চলছিল।অহন আমার সব কাজ করে দেবার জন্য বুয়া কে অতিরিক্ত মাইনে দিত । তাই আমার সারা দিন শুয়ে বসে থাকা , নামাজ আদায় করা ছাড়া আর তেমন কোন কাজ থাকত না।
.
সেদিন সকালে বুয়া আসল না আমি ভাবলাম দুপুরে আসবে হয়ত। মাসের কাপড় ধোয়ার বাকি ছিল। রুমের যত কাপড় বিছানার চাদর থেকে শুরু করে কম্বল পর্যন্ত আমি প্রতি মাসেই ধুয়ে দিই। বুয়া আসতে লেট হচ্ছে তাই ভাবলাম আমিই কাপড় গুলো ভিজিয়ে রাখি বুয়া এসে তাড়াতাড়ি পরিস্কার করতে পারবে।
দুপুর হয়ে এলো তাও তার কোন খবর নেই। আমি মাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
— মা, বুয়া কখন আসবে,?
— ও তো দিন চারেক আসতে পারবে না । গ্রামের বাড়ি গেছে ওর বাবা নাকি অসুস্থ।
— আশ্চর্য মা , আপনি আমাকে কথা টা আগে বলবেন না?
— বুয়া আসতে পারবে না এই সামান্য কথা টাও তোমাকে আমার আগে থেকে বলে অনুমতি নিতে হবে?
— মা আমি তো সে কথা বলি নি। আমি আসলে অনেক গুলো কাপড় ভিজিয়ে ফেলেছি। আগে থেকে জানলে ভেজাতাম না। এখন প্রায় দুই বালতি কাপড় আমি কিভাবে ...
— তার মানে কি তুমি এখ্ন সেসব আমাকে ধুয়ে দিতে বলছ?আমি কি তোমাকে বলেছি হুট হাট এত গুলো কাপড় ভেজাতে? যখন দেখ্লেই বুয়া আসছে না।
—মা আমি কি আপনাকে সে কথা বলেছি? আমি তো ভেবেছিলাম হয়ত দুপুরে আসবে ।মাঝে মাঝেই তো ও লেট করে ।আমি বলছিলাম কি আপনি একটু আশে পাশে খোজ নিয়ে দেখবেন যে কাজ করার মত কেউ আছে নাকি?চার চার দিন তো ভেজা কাপড় এভাবে ফেলে রাখা যাবে না। ভুল যখন করেই ফেলেছি
—বৌমা এই ভর দুপুরে আমি অসুস্থ শরীর নিয়ে বের হব তোমার কাজের মানুষ খুজে দিতে? তুমি এই কথা টা আমাকে বলতে পারলে ?
— না, মা আসলে
— থাক থাক।অহন আসলে বলো ও ই ধুয়ে দেবেনি। এমনিতেই তো চামচা বানিয়ে রেখেছ আমার ছেলেটাকে ।তোমার কথায় তো ওঠে বসে।।অথচ ঐ ছেলে পেটে থাকতে কত কাজ একাই করেছি আমি। আর সে তার বৌ এর জন্য আলাদা লোক রেখেছে। সেই লোক আসে নি বলে তার বৌ এর দেমাগ দেখো। বুঝবে বুঝবে নিজের বাচ্চা কাচ্চা বড় হলেই বুঝবে
.
আমি মায়ের কথাগুলোর অর্ধেক শুনতে শুনতেই চলে এলাম রুমে। আমি জানি এই মুহুর্তে মায়ের সামনে থেকে সরে না আসলে উনি আরো বেশি কথা শোনাবেন।যা আমার একদম ভাল লাগে না ।
কিন্ত আমি এটাই বুঝলাম না আমি কখন তাকে দেমাগ দেখালাম।বরঙ উনি ই উল্টে আমাকে...আর আমি অহন কে নিজের চামচা বানিয়েছি? ছিহ। উনি কিভাবে ভাবলেন এটা ।বৌ এর কেয়ার করা কে উনার চামচামি মনে হয়।।।
কি আর করার নিজেই কাদতে কাদতে কাপড় গুলো ধোয়া শুরু করলাম।।। দু বালতি কাপড় নিজেই আস্তে আস্তে ছাদে নিয়ে গিয়ে রোদে দিলাম।
শরীর খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল।বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই চলে গেলাম ঘুমে।
সন্ধ্যার পর অহনের ডাকে ঘুম ভাঙল। ওকে আর এসব ব্যাপারে কিছু বললাম না। এতগুলো কাপড় নিজে ধুয়েছি শুনলে আজ আর রক্ষা নেই । এমনিতেও কাল আমাদের প্রথম anniversary ।তাই আজ এসব বলার কোন মানেই হয় না ।
আর আমার মা ও আমাকে সব সময় বলে সংসার করতে গেলে স্বামী বা শাশুড়ির সাথে একটু আকটু ঝামেলা হতেই পারে । সবার ই হয় ।তাই বলে এক জনের কথা অন্য জন কে কখনই বলে তাদের মধ্যে কার সম্পর্ক নষ্ট করবি না। তাদের ছেলে.... তাদের অধিকার অবশ্যই বেশি ছেলের প্রতি । স্ত্রী হিসেবে তোর যেটুকু প্রাপ্য সেটুকু অহন তোকে দিলেই খুশি থাকিস। এর বেশি কিছু চাস না।
.
.
.
চলবে............................