— আচ্ছা পালিয়ে গেলে কেমন হয়?? যদি আর বাড়ি না ফিরি আমরা??
— কিহ???
—হুম অনেক দূর চলে যাব আমরা,,,
.
—অহন
— হুম... অনেক অনেক অনেক দূর।।।।।। যেখানে থাকবে না কোন পিছুটান । যেখানে আমরা দুজন শুধুই আমাদের দুজনের মতো থাকতে পারব। আমাদের জীবনে হস্তক্ষেপ করার মত কেউ থাকবে না। আমাদের ওপর সিদ্ধান্ত চাপানোর কেউ থাকবে না । আমরা নিজেরাই হব নিজেদের সিদ্ধান্ত।।।।
.
.
কথাগুলো বলতে বলতে আমরা আরো অনেক দূর এসে গেছি। সামনেই একটা লেক।।।।
অহন কে বললাম বাইক থামাও। আমি ঐ লেকের পাশে বসব।আর পানিতে পা ভেজাবো ।
.
সন্ধ্যা প্রায় শেষ।।। রাত নেমে আসছে।।। আকাশে রুপালি চাদ।।।। রাতের লেকের কালো জল তরঙ্গে চাদের রুপালি আলো ঝিকিমিকি করছে।মনে হচ্ছে কোন পরীরা এসে পানিতে রূপার দানা ছড়িয়ে দিয়ে গেছে।।।আর চারপাশে জোনাকির লুকোচুরি আলো তো আছেই।।। আমরা পানির একদম ধারেই বসে আছি। আমি পানিতে পা নামিয়েও দিয়েছি একটু ।।।পা দিয়ে পানিতে ছলাত্ ছলাত শব্দ করছি।।
.
অহন আমার কোলে মাথা দিয়ে ঘাসের ওপর ই শুয়ে পড়েছে।আর ওপর দিকে তাকিয়ে আকাশ দেখছে।।।তারা গুনছে।। আজ বাড়ি যাওয়ার যেন কোন তাড়া ই নেই আমাদের।।
.
মা আর ওহি কয়েকবার আমাকে আর অহন কে ফোন দিয়েছে।। অহন নিজের ফোন আর আমার ফোন দুটোই সুইচড অফ করে রেখেছে।।।
.
.
"""""আর কিছু দিন তারপর বেলা মুক্তি
কসবার ঐ নীল দেয়ালের ঘর
সাদাকালো এই জঞ্জালে ভরা
মিথ্যে কথার শহরে
তোমার আমার লাল নীল সংসার"""""
.
.
অহনের গানে আমার ভ্রম ভাঙল।।।।
অহন কি সব ভুল বকে যাচ্ছে তখন থেকে এসব। আর আমিও তার এসব ভুল শোধরাচ্ছি না কেন?? আমার ও কেন তার সাথে দুরে কোথাও চলে যেতে ইচ্ছে করছে????? সত্যিই এই জঞ্জালে ঘেরা শহর থেকে আমার ও মুক্তি নিতে ইচ্ছে করছে।।।
.
অহন স্বভাবতই হুট হাট করে যেকোন সিদ্ধান্ত নেয়।।।। সে আমাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত ও হুট করে নাকি নিয়েছিল আমাকে দেখার পর । ওহি কেও হুট করেই বিয়ে করে এনেছে। ওহির আর ওর বেবি ও মে বি হুট করেই এসেছে।
আর এখ্ন হুট করেই আবার আমাকে নিয়ে গিয়ে পালিয়ে সংসার করতে চাইছে।।।
কি ভাগ্য আমাদের তাই না?? নিজের বিয়ে করা স্বামীর সাথে সুখে সংসার করতেও আমাদের পালিয়ে যাওয়ার কথা ভাবতে হয়।।।। তাও লাভ ম্যারেজ এর হাজব্যান্ড নয় এরেঞ্জড ম্যারেজ এর হাজব্যান্ড ।।।
.
কিন্ত অহনের এই হুট হাট ডিসিশন নেয়া আমার মোটেই পছন্দ নয়।।।
আজ তার আমাকে নিয়ে আলাদা থাকার ইচ্ছে হচ্চে কিন্তু কাল?? কাল কি হবে??
যখন ওদের ফুটফুটে বাচ্চা পৃথিবীতে আসবে তখন??? বাচ্চার দায় ও কিছুতেই এড়াতে পারে না।।ওহির ও না।। এড়ানো উচিত ও নয়।।।
আমার বাবা ই যদি আমার জন্মের আগে আমার মা আর আমার দায়িত্ব কোন কারণে এড়িয়ে যেত??? আমি কি কোন দিন ও আমার বাবাকে ক্ষমা করতে পারতাম?? নাকি যার জন্য বাবা আমাদের দায়িত্ব এড়াতেন তাকে ক্ষমা করতে পারতাম???
তাহলে আমি ই কেন কারো প্রতি দায়িত্ব এড়ানোর কারণ হব????
.
অহন এখনও আমার কোলে শুয়ে আছে ।। আমি একটু ঝুকে ওর কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে বললাম,
— অহন বাড়ি যাবে কখন?? রাত তো অনেক হলো ।।। বাড়িতেও কিছু বলে আসি নি।।
— কেন আমার সাথে থাকতে ভালো লাগছে না???
— কি আশ্চর্য ভালো লাগবে না কেন?????
—তাহলে চুপ করে যেভাবে আছ সেভাবেই বসে থাকো আর পা দিয়ে পানিতে ওভাবেই ছলাত ছলাত্ শব্দ করো তো ।। ভালই লাগছে শুনতে।।।
— তাই ??
— হুম। আর হ্যা এতগুলো চুড়ি যে নিলে সেগুলো পড়তে হবে না??? দেখি প্যাকেট টা ।।
.
অহন প্যাকেট থেকে খুজে খুজে শাড়ির সাথে ম্যাচিং নীল চুড়ি গুলো ই বের করল।সব গুলোএক হাতেই পরিয়ে দিল।।।
সে আমাকে পানি আর কাচের শব্দের সংমিশ্রণ করতে বলল।জলতরঙের শব্দ শুনতে চায় সে আমার হাতে ।।।
ছেলেটা শব্দ নিয়ে খেলতে খুব ভালোবাসে।।
— উহু এভাবে ভালো লাগছে না শুনতে। কাচের চেয়ে পানির শব্দ বেশি হচ্ছে ।। কাচের শব্দ আরেকটু বেশি হলে ভালো লাগবে।।
অহন প্যাকেটে আবার চুড়ি খুজ্তে শুরু করল।
— আর নীল চুড়ি নেই???
— সব তো এক হাতেই পরিয়ে দিলে।।। থাকবে কিভাবে??
— ঐ প্যাকেটে আছে??
— হু। ওগুলো ওহির জন্য নিয়েছি।
— অহিকে ঐ কালার দিতে হবে না। বাকি গুলো দিও।
.
সে আমার কোন নিষেধ মানল ই না। জোর করে আমার অন্য হাতে বাকি নীল চুড়ি গুলোও পরিয়ে দিল।
সত্যিই এবারের শব্দ টা আগের বারের চেয়ে ভালো লাগছে ।। পানির তালে চুড়ির রুন ঝুন রুন ঝুন।।।
আর ইচ্ছে মতো পানি ছিটাচ্ছি অহনের গায়ে।
সে ও খুব উপভোগ করছে।।
.
.
""দুই চোখে তাহার একি মায়া
নদীর জলে পড়ল কন্যার ছায়া""
— হয়েছে পুরক সাহেব হয়েছে ।।। আর এত গান ধরতে হবে না আপনার ।।
—চাদের রঙে রুপালি পরি বৌ আমার।। চাদ বৌ আমার।।।এভাবে খোলা আকাশের নিচে কখনো ই জোৎস্না স্নান করা হয় নি আমাদের তাই না???
— নাহ।।। আমি আবার চাঁদ বৌ হলাম কবে থেকে???
— আজ থেকে।
— এত চাদ দেখা ভাল না পুরক সাহেব।। চাদে যে কলঙ্ক
— চাদ দেখে কলঙ্ক হবে তাই কে দেখে না চাদ???
তার চেয়ে চোখ যাওয়াই ভালো ঘুচুক আমার দেখার সাধ।।।।
.
— বাব্বাহ আজ দেখি ভালোবাসা উতলে উতলে পড়ছে।।
— সব সময় ই উতলে উতলে ই পরে।এখ্ন কেউ যদি তা না বোঝে আমার আর কি করার????
— তাই নাকি???
— হু তাই তো ।।। তোমাকে ভালবাসব না তো কাকে ভালবাসব আমি?? আমি তো তোমার জন্মের আগেই তোমাকে ভালোবাসার অধিকার নিয়ে পৃথিবীতে এসেছি।।।এই অধিকার আল্লাহ নিজে আমাকে দিয়েছেন।। আমি সামান্য বান্দা হয়ে সে অধিকার কি করে অগ্রাহ্য করি??? হুম??????
— সর্বনাশ।।। এত কিছু ভাবো তুমি???
— হুমম।।
—তা আমার জন্মের কত দিন আগে তুমি এ অধিকার পেয়েছ শুনি??
— ওয়েট....উম....চার বছর তিন মাস ছাব্বিশ দিন।।। কারণ আমি তোমার চেয়ে এই ক দিনের বড় ।।।সো আমি অধিকার টা এত দিন আগেই পেয়ে পৃথিবীতে এসেছি।
— অহন আমি আর হাসতে পারছি না ।।।। প্লিজ থামাও আমায়
— থামার কি দরকার।। হাসতেই থাকো সারারাত।
— হু।।।হাসতেই থাকো সারারাত তাই না??? বাড়ি যেতে হবে না???চল ওঠ।।।
— কিসের বাড়ি??
— কিসের বাড়ি মানে?? তোমার বাড়ি।।
— যাব না বললাম তো ।
— অনেক রাত হয়েছে অহন। আর এসব ইয়ার্কি করতে হবে না।
— কিসের ইয়ার্কি?, I am serious..
— বললেই হলো না একটা কথা???এতই সোজা??
— হুম এতই সোজা।। আমি কি বেকার নাকি যে বৌ নিয়ে আলাদা থাকতে পারব না?
— আমি কি সে কথা বলেছি???
— তো কি প্রবলেম?
— তোমার বাবা মা??? একমাত্র ছেলে তুমি তাদের??
— তোমার কি মনে হয় আমি আমার বাবা মায়ের খোজ খবর নেব না????? আমি এরকম?????
— আর ওহি??? আর যে আসছে সে????
— তোমার অত সব ভাবতে হবে না ।সব ম্যানেজ করে নেব আমি।।।
— আমার জন্য এতসব ম্যানেজ করতে হবে না তোমার কস্ট করে । ।আমি চাই না আমার জন্য কেউ কারো অধিকার থেকে বঞ্চিত হোক।।। এটা পাপ।
— বাহ
— হুম। আর সত্যি কথা বলতে আমি বিনা কারণে কারো ঘৃণার পাত্র হতে চাই না। আর সারা জীবন অকারণে মানুষের অভিশাপ কুড়োতে চাই না।।। তুমি যেমন নিজের দিক টা ভাবছ আমাকেও তো নিজের দিক টা ভাবতে হবে।।
— অয়নী কিসব বলছ তুমি??
.
— ঠিক ই তো বলছি। তোমার এখ্ন হুট করে আমার সাথে আলাদা থাকার ইচ্ছে হচ্ছে এই ইচ্ছে টা যে হুট করে ওহির সাথেও হবে না তার কোন নিশ্চয়তা আছে???? কয়েক দিন পর বাচ্চা যখন বাবা বাবা বলে ডাকবে তখন তোমার মন এমনি ও দিকে চলে যাবে। তখন হয়ত এক সময় সব দোষ তুমি আমাকেই দেবে। এটাই বলবে আমার জন্য তুমি তোমার বাচ্চার মা আর বাচ্চার ঠিক মতো দেখভাল করতে পারো নি।।। তোমরা নিজেরা নিজেরা তখন ঠিক ই থাকবে,, আবার এক হবে।।। তো আমি কেন মাঝখান থেকে দোষের ভাগী হব??? আর খামোখা তোমাদের চোখের বালি হব???তুমি এখনো তেমন কাউকে জানতে দাও না ওহির ব্যাপারে।। কিন্তু বাচ্চা টা আসার পর??? সবাই যখন জিজ্ঞেস করবে এই বাচ্চার বাবা কে??? তখন??? তখন সত্যি টা জানার পর কেউ কিন্তু তোমাকে দোষ দেবে না। পাড়া প্রতিবেশি আত্নীয় স্বজন সবাই আমাকেই দোষ দেবে। আর ওহির হয়ে সিমপ্যথি কুড়াবে ।।। বলবে আমি জোর করে তোমাকে তোমার বৌ বাচ্চার কাছে যেতে দিই না । তোমাকে বশ করে আমার কাছে রেখে দিয়েছি। বাচ্চা কে তার বাবার থেকে আলাদা করেছি।কেউ কিন্ত এক বারের জন্য ও তোমার বিন্দু মাত্র দোষ ধরবে না ।।। সব কিছুর দায় গিয়ে পড়বে আমার ওপর।আর এসব শুনতে শুনতে তুমিও দায় আমার ওপর ই চাপাবে শেষ পর্যন্ত ।।। আমি অকারণে এসব দায় নিতে চাই না
.
— অয়নী তুমি শুধু নিজের স্বার্থ টাই দেখছ।
— হ্যা আমি স্বার্থপর ।। তুমি কি??
— সত্যিই তুমি স্বার্থপর।
— তুমি নিজেও তাই। তুমিও শুধু তোমার স্বার্থ ই দেখছ। যখন যে বৌ কে দরকার মনে হচ্ছে তখন তাকে সেই ভাবে ই ইউজ করছ। এক জন কে বাচ্চার জন্য রেখে দিচ্ছ অন্য এক জন করে মনের শান্তির জন্য রাখছ।।।
— আমার সত্যিই আর কিচ্ছু বলার নেই ।।কিচ্ছু না ।
— হুমম । সত্যি কথা বলার পর কারোর ই আর কিচ্ছু বলার থাকে না । আসলে এই পৃথিবী তে আমরা সবাই স্বার্থপর ।। কেউ তা স্বীকার করতে চায় না ।। প্রয়োজনে সবাই স্বার্থপর ।।।
.
.
সে আমার দিকে অনেক্ষন তাকিয়ে থাকল। আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলো।।
.
পাশে খুলে রাখা স্যুট পরে নিল। অতপর বাইক স্টার্ট দিতে দিতে বলল,,
— আমার সাথে কেউ যদি বাড়ি যেতে চায় তো যেতে পারে ।।। তবে এটা যেন সে মনে না করে যে আমি তাকে এই মুহুর্তে ইউজ করতে চেয়ে বাইকের পেছনে বসাতে চাচ্ছি। রাত অনেক হয়ে গেছে ফাকা রাস্তায় এত রাতে ট্যাক্সি বা সিএনজি পাওয়া কঠিন। আর পেলেও নিরাপদ নয় । তাই...
.
.
আমি চুপচাপ গিয়ে ওর পেছনে বসলাম।সারা রাস্তা আর কোন কথা হয়নি আমাদের।
.
.
বাড়ি ফেরার সাথেই শুরু হলো হাজারটা প্রশ্ন।।।
আমি কই গিয়েছিলাম??? কাউকে না বলে কেন গিয়েছিলাম??? অহনের সাথে ছিলাম এতক্ষণ??নাকি একাই ছিলাম?? কই গিয়েছিলাম দুজন?? এত রাত অবধি কই ছিলাম??? ফোন কেন পিক করি নি কেউ??? এসবের মানে টা কি????
.
.
এত প্রশ্ন অথচ অহন একটা প্রশ্নের উত্তর ও দিল না ।।।দু তিনটে প্রশ্ন শোনার পরই সে নিজের মতো চলে গেল রুমে। আমি শুধু অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকলাম ওর দিকে।।
.
আর যত প্রশ্ন সব আমার উপরেই ছুড়ে পড়ছিল। প্রশ্ন হবে না ই বা কেন?? ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ১:২০।।
.
আমি কি উত্তর দেব কিছুই ভেবে পাচ্ছিলাম না ।। কি বলতাম মাকে?? আমি অহনের সাথে ঝগড়া করতে ওর অফিস গিয়েছিলাম । তারপর ঝগড়া বাদ দিয়ে ইচ্ছে মতো ঘুরেছি দুজন অতপর আবার ঝগড়া করে বাড়ি ফিরেছি।।। আর ঝগড়ার কারণ টা কি। ।
.
সত্যিই কি বলব কিছু ভেবে পাচ্ছি না একাএকা। অহন পাশে থাকলে তাও প্রশ্ন দু একটা কম হতো ।।।
.
এরই মধ্যে ওহি আমার হেল্প করল। ও মে বি ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুম থেকে কোনমত উঠেই মাকে এসে বলল, খালা আপুর নাকি শরীর খারাপ ছিল।তাই ও ডক্টর এর কাছে নিয়ে গিয়েছিল ।।। তুমি তখ্ন ঘুমাচ্ছিলে তাই আপু আর তোমাকে ডিস্টার্ব করে নি। আমাকে বলেছিল তোমাকে বলতে কিন্ত আমার মনে ছিল না খালা।।
.
তো ডক্টর এর কাছে এত সেজেগুজে যাওয়ার কি আছে?? আর এত রাত পর্যন্ত????
.
আমিও এবার অহনের স্টাইল নেয়া শুরু করলাম। কোন উত্তর না দিয়েই নিজের রুমে চলে এলাম।।।
.
মা উত্তর না পেয়ে ততক্ষণে থেমে গেছে ।।। আসলে কথার উত্তর দিলেই কথা বাড়ে ।।। তাই কিছু কিছু ক্ষেত্রে কথার উত্তর না দেয়াই ভালো ।। অহনের থেকেই আমি এটা শিখেছি ।।। তবে এখ্ন ও ওর মত সবসময় প্রয়োগ করতে পারি না ব্যপার টা ।।
.
রুমে এসে হাতের দিকে চোখ পড়াতেই ওহির কথা মনে পড়ল ।।ওকে চুড়ি গুলো দিতে গেলাম।
.
অহন ততক্ষণে শাওয়ার নিতে গেছে ।। বিয়ের পর থেকেই এই অভ্যাস দেখছি ওর ঘুম থেকে উঠেই একবার শাওয়ার নেবে আবার ঘুমোতে যাওয়ার আগে ।।।
.
— ওহি আসব??
— হ্যা হ্যা, আপু এসো না
— ঘুমিয়ে পড়েছিলে তাই না,? এই অসুস্থ অবস্থায় আমাদের জন্য ঘুম টা ভেঙে গেল।।
— আরেহ না আপু ব্যাপার না ।। ঠিক ই আছি মোটামুটি।
— ডক্টর ডেলিভারির ডেট দিয়েছে?
— হ্যা,,আর মাস চারেক।।দেখো না আপু আমার পেট কেমন হয়ে যাচ্ছে আর আমিও কেমন মুটিয়ে যাচ্ছি।। আয়নার সামনে আর যেতে ইচ্ছে করে না।
— ধুর পাগলি।।। কিছু দিন পর ই ঠিক হয়ে যাবে। তখন বেবি কে নিয়ে শুধু আয়নার সামনে ই দারাতে ইচ্ছে হবে।
— কিন্ত তোমরা যে বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান করেছ সেটা কিন্তু আমাকে আগে বললেও পারতে ।। শুধু শুধু আমিও টেনশন করছিলাম।। আমি তো ভেবেছিলাম তুমি রাগ করে বাপের বাড়ি চলে গেছ।
— চলে গেলে খুশি হতে বুঝি???
— তোমার তাই মনে হয়???
— জানিনা
— তবে তুমি আমাকে বলে গেলেও পারতে ।।।আমি আরো ভালভাবে খালাকে ম্যানেজ করতে পারতাম।।এই কই কই ঘুরলে তোমরা??
— আরেহ ঘোরার প্ল্যান তো করিনি। হুট করে হয়ে গেছে । অন্য একটা কারণে ওর অফিস গেছিলাম একটু।
— বলবে না আমাকে এই তো???
— বলার কিছু থাকলে তো বলব। এই যে নাও এগুলো।
— কি এগুলো???
— চুড়ির মেলায় গিয়েছিলাম । তোমার জন্য ও নিলাম।। তোমার বর ই নিতে বলেছে।
— বাহ। থ্যাংক ইউ সো মাচ আপু। তাই তো দেখছি শাড়ির সাথে মিলিয়ে দুহাত ভরে এতগুলো নীল চুড়ি পড়েছ।।। দাড়াও আমিও এক্ষুনি তোমার সাথে ম্যাচিং করে পড়ব।
.
ওহি প্যাকেটে নীল চুড়ি খুজছে।এদিকে আমিও তাকে বলতে পারছি না যে ওর চুড়ি গুলো ও অহন আমাকে পরিয়ে দিয়েছে। কি একটা অবস্থা।।।
— ওহি তুমি আমার গুলো ই পড় ।আমি খুলে দিচ্ছি এক হাতের গুলো।
— না এর মধ্যে হয়ত আছেই আমি সেগুলো ই পড়ছি।
— নেই ওর মধ্যে
— নেই??
— মনে হয় দোকানি ভুল করে দেয় নি।তোমার নীল চুড়ি ই পড়ার তো??? নাও
— না না আপু আমি তোমার গুলো নেব কেন???
— কেন নিলে কি হবে আমার গুলো?? আরে নাও তো
— না আপু আমি অন্যের শখের জিনিস নিই না ।
— তাই??
— হ্যা তুমি শখ করে নিয়েছ।।। আর ব্যবহার ও করে ফেলেছ। আমি অন্যের শখের ব্যবহার করা জিনিস কেন নেব????
— আমার সবচেয়ে শখের জিনিস টাই তো নিয়ে নিয়েছ?? তার বেলায়??
অন্যের ব্যবহার করা জিনিস নাও না তাই না?? তো অহন কে তো ভালই নিয়ে আছ।।।
আমার ব্যবহার করা জিনিস ভালো লাগে না কিন্তু আমার ব্যবহৃত স্বামী কে ভালই লাগে তোমার তাই না?
চুড়ি টা তো মাত্র কয়েক ঘণ্টা হলো হাতে পড়েছি আর অহন কে যে এক বছর ধরে লালন করেছিলাম???
.
.
.
চলবে...........................