অন্তর্দ্বন্দ্ব - পর্ব ০১ - সাবরিনা ইমরান - ধারাবাহিক গল্প


-নষ্টামি বন্ধ কবে করবে?রাত দেখেছো কয়টা বাজে?এখন একটা সময় বাসায় আসার?

ভিনা কোনো কথার উত্তর না দিয়ে নিজের স্যান্ডেল খুলতে লাগলো।নিরুত্তর এই ঠান্ডা প্রতিক্রিয়া মুনাকে আরো রাগিয়ে দিলো।

-এত বেয়াদবি কেউ সহ্য করবে না ভিনা,রোজ রোজ রাত করে ফেরা,ডিসিপ্লিন ছাড়া লাইফ লিড করা এই বাসায় এলাউড না।বাপের টাকা আছে,সেই টাকা ইচ্ছামত খরচ করে ফূর্তি করা হচ্ছে। ফার্দার এরকম করলে আমি কোনো মেজর স্টেপ নিতে বাধ্য হবো।

ভিনা স্যান্ডেল জোড়া ইচ্ছা করে ছুড়ে ফেললো শু কেসে রাখার পরিবর্তে।

-নষ্টামি করে এসে এত তেজ!লজ্জা করে না?

-চুপ!একদম চুপ!বারবার নষ্টামি নষ্টামি করছেন কেন?প্রবলেম কী আপনার? 

-প্রবলেম কী মানে?একটা ভদ্র ঘরের মেয়ের চাল চলন এমন হয়?

-যেমনই হোক।সেটা আপনার মাথাব্যাথা না।আর এটা ভদ্র ঘর কে বলে?আপনি ভদ্র? নিজে কী করে বেড়ান সারাদিন?

মুনা সহ্য করতে না পেরে ঠাশ করে চড় বসিয়ে দিলো ভিনার গালে।ভিনা তাকে জোরে ধাক্কা দিয়ে উপরে চলে গেলো।না,চোখে কোনো পানি নেই।এগুলো নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার।

রুমে গিয়েই দরজা বন্ধ করে দিলো।ব্যাগ হাতিয়ে সিগারেট ধরালো ভিনা।মাথা প্রচন্ড ব্যাথা করছে,চোখ লাল হয়ে আছে।আজকে মকবুল স্যার তার গায়ে বাজেভাবে হাত দিয়েছে।লোকটা যে এত নীচ আগে বোঝা যায়নি। ছুটির পর লোকটা পিছু পিছু বাসা চিনে এসেছে।জানে না কী করবে,কিন্তু কিছু করবে।এরপর সে লাইব্রেরি গিয়েছিলো,সেখান থেকে কলোনির মাঠে।মাঠে বসে একটা বাচ্চা বিড়াল পেয়েছিলো,বিড়ালটার বয়স কয়েকদিন,বাসায় আনার মত পরিস্থিতি ছিলো না,তাই নওমির বাসায় দিয়ে এসেছে,নওমির বাসা ওর বাসা থেকে বেশ দূরে।কখন যে সময় গড়িয়েছে,টের পায়নি।সব ভাবতে ভাবতে আবার সিগারেট ধরালো। 

এর মধ্যেই নিচে চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ শুনলো,বাবা এসেছে।এখনি একটা তুমুল ঝগড়া লাগবে।মুনা যেয়েই এখন নালিশ দিবে।

-তোমার মেয়ে আমাকে ক্যারেক্টারলেস বলেছে।বেহায়া মেয়ের মুখে কিছু বাধে না।এর এক বিহিত তোমার করতেই হবে। 

-হটাৎ ক্যারেক্টারলেস বলার কারণ?

-মানে?তুমি কী আমাকে সন্দেহ করছো?

-সন্দেহের কী হলো,কোন কথার প্রেক্ষিতে কী হয়েছে তাই জানতে চাচ্ছি।

-তোমার ডিরেইল্ড মেয়ে রাত করে এসেছে।কারণ জিজ্ঞেস করায় এমন বলেছে।চরম লেভেলের বেয়াদব হয়েছে!

-রোজ রোজ এই ঝগড়াঝাটি ভালো লাগে না আমার মুনা। 

-ঝগড়া কি আমি করি ? তোমার মেয়ে কী যন্ত্রণা করে সেটা কী তোমার চোখে পড়ে না?

-ও আবার কী করেছে বলো।

-বললাম ই তো মাত্র। রোজ রোজ সকালে বের হয়ে রাতে আসে।সন্ধ্যার আগে কখনো ফিরে না।আর তুমিও আছো,কিছুই বলো না।আরো টাকা দাও ওর হাতে। 

-আমি অযথা টাকা দেই না, যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই দেই। 

-আচ্ছা?সারাদিন যে বাইরে থাকে এমনি এমনি?তুমি না দিলে নিশ্চয়ই ও অন্য কোনো ব্যবস্থা করেছে টাকার। চলে তো সব লাট সাহেবের বেটির সাথে।

-সন্দেহের বেসিসে তুমি এগুলা বলতে পারো না। 

-কমনসেন্স খাটাও সোহেল।সারাদিন তোমার মেয়ে নিজের রুমে পড়ে থেকে ঘুমায়।ফেস দেখো ওর। নেশা করে ও।

-তুমি দেখেছো নেশা করতে?

-দেখেই বোঝা যায়।সিগারেটের প্যাকেট তো আমি নিজেই সেদিন খুঁজে দিলাম তোমার হাতে।

-সেটা অন্য কারোও হতে পারে।

-এত বিশ্বাস করো না। ভুগবে তুমি একদিন।

-আচ্ছা আমি দেখছি বিষয়টা।

-দেখতেই থাকো।কিচ্ছু করা লাগবে না,মেয়ে হাতছাড়া হয়ে যাক,তারপর কিছু করো।

সোহেল কিছু না বলে উপরে চলে গেলেন।প্রতিদিনকার ঘটনা এটা।টিন এজ মেয়ে আর আর তার সেকেন্ড ওয়াইফের যন্ত্রণায় শ্বাস নেয়া দায় হয়ে গেছে।উপরে গিয়েই সিগারেটের গন্ধ পেলেন,ভিনা স্মোক করছে তার মানে।আজকে আর নিজেকে আটকাতে পারলেন না,রুমে গিয়েই ভিনার গালে চড় বসিয়ে দিলেন।ভিনা একবার চোখ তুলে তাকিয়ে সিগারেট ফেলে দিলো।

-ভাবতেও অবাক লাগছে,এত্তখানি খারাপ হয়ে গেছো?মুনার কথা কি তাহলে ঠিক?

-তুমি যখন বিয়ে করেছো,ঠিকি হবে।

-সাহস অতিরিক্ত বেড়েছে তোমার। 

-নষ্টা মেয়ে জন্ম দিয়েছো,ভুগতে তো হবেই। সবচেয়ে বেশি তোমার ওয়াইফের।আমার নষ্টামিতে তারই বেশি গা জ্বলে। 

সোহেল মেয়ের এমন ধারালো কথা শুনে চুপ করে রইলেন।ধীরে ধীরে সব স্পষ্ট হয়ে গেলো,মুনা নিশ্চয়ই প্রথমে এইসব বাজে ওয়ার্ড দিয়েই ভিনাকে রাগিয়েছে,ঘটনার প্রেক্ষিতে ভিনা এসব বলেছে।মেয়েটার প্রতি তার মায়া লাগলো ভীষণ। অজানা কারণে কেন যেন মাথায় হাত বুলাতে পারলেন না,চলে গেলেন নিশ্চুপ ভাবেই।খুব ভালোমত টের পাচ্ছেন তাদের দুজনের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে।ভিনা অনুভূতিহীন দৃষ্টিতে তার বাবার চলে যাওয়া দেখলো। 
'কেউ নেই,আমার কেউ নেই' কথাটা বিড়বিড় করে বলতে লাগলো।
.
.
.
চলবে....................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন