— অহন রাজি হয়ে যাও। কি এমন হবে আর একটা বিয়ে করলে?? কারো তো কোন ক্ষতি হচ্ছে না । এতে তোমার ই ও ভালো । আমার ও ভাল তোমাদের বাবু কে আমিও একটু আদর করতে পারব।( বুকে যে কত বড় পাথর চেপে কথা গুলো বললাম নিজেও জানি না)
— ভেবে বলছ??
— হুম
— পরে আফসোস করবে না তো??
— না
..
— Are you sure???
— হুম
অহন সারারাত আমার সাথে আর কোন কথা ই বলে নি।
পরের দিন অফিস ও গেল না । কাল রাতে বৃষ্টি তে কাক ভেজা ভিজে জ্বর বাধিয়ে বাড়িতেই বসে আছে ।।
সন্ধ্যায় মায়ের সাথে একটু টিভি দেখতে বসলাম। অহন ঘুমাচ্ছে ,জ্বর এখ্ন ও মোটামুটি ভালই আছে দেখলাম। অন্য দিন ও এ সময় টিভি ই দেখি শাশুড়ি মার সাথে। আসলে বাবুটা চলে যাওয়ার পর থেকে আর একা থাকতে পারি না ।কেমন জানি একটা লাগে,কান্না পায় ।
মা একটার পর একটা সিরিয়াল দেখে যাচ্ছেন । সব গুলোই প্রায় একই কাহিনি। আমাদের বাড়িতে মা যখন এসব দেখত মাকে ঝাড়ি দিয়েই চ্যানেল চেঞ্জ করতে পারতাম। এখন শাশুড়ি মাকে তো আর ঝাড়ি দিতে পারছি না । কি আর করার দেখছি।
প্রথমে একটা শুরু হল নাম 'ইরাবতির চুপকথা'' এই সিরিয়ালে অনেক ঝামেলার পর দুই বোন এর ই এক সাথে বেবি হলো। বাহ ভাল কথা।
তার পর শুরু হল 'কে আপন কে পর ' এইটার কথা আর কি বলব ।এই সিরিয়ালের নায়িকা জবার তিনটা বেবি। তিন নম্বর বেবিটা নায়িকার বয়স যখন 45+ তখন ই চাওয়া মাত্রই পেয়েছে। আমি এসব মায়ের সাথে দেখি আর মনে মনে হাসি। এসব সিরিয়াল যারা লেখে তাদের কি সাইন্স সম্পর্কে মিনিমাম নলেজ টুকু নেই?? একটা মেয়ে 45 এর পরে চাওয়া মাত্র কিভাবে বেবি পায়?? তখন তো মেনোপজ দশা শুরু হয় বেশির ভাগ মেয়ের। হাস্যকর সব সিরিয়ালের থিওরি ।
ওহো এরপর ' দেবী চৌধুরানি' নামক এক মহান নাটক শুরু হলো । যদিও এটা একটা বিখ্যাত উপন্যাস । এখানেও নায়কের তিনটা বৌ। বড় বৌ এর বাচ্চা নেই। মেঝ বৌ এর একটা সুন্দর ফুটফুটে মেয়ে । সিরিয়ালের মেয়েটাকে দেখতে আমার ভালই লাগে। মনে হয় আমার আর অহন এর ও যদি এমন একটা মেয়ে থাকত ।
..
এরই মধ্যে অহন রুম থেকে উঠে এসে হুট করে চ্যানেল চেঞ্জ করে স্পোর্টস চ্যানেল দিয়ে ইন্ডিয়া আর পাকিস্তানের ম্যাচ দেখা শুরু করে দিল।।
মা তো গেল ভিষন রেগে।
— অহন এটা কোন ধরনের ফাজলামি???
— ঐ সব ফালতু সিরিয়াল দেখার কি আছে?? ম্যাচ দ্যাখেন
— এই অহন রুমে গিয়ে ল্যাপটপ এ দেখলেই তো পারো ম্যাচটা । দেখছ ই তো মা সিরিয়াল দেখছেন
— উহু। বড় স্ক্রিন ছাড়া ম্যাচ দেখে মজা আছে নাকি?
— অহন আমি কিন্তু ভালো করেই বুঝতে পারছি কেন তুমি এমন করছ( মা)
— ক্যান??
— এই নাটকে নায়ক তিনটা বিয়ে করেছে আর এটাতেই তোমার আপত্তি তাই তো??
— ধুর কিসের মধ্যে কি নিয়ে আসেন আপনি আম্মা?
মা কিছু বলার আগেই আমি ই বললাম,
— মা, অহন না বিয়েতে আবার রাজি হয়েছে। কাল রাতেই আমি রাজি করিয়েছি। বলেছে এবার আর বিয়ে ভাঙবে না ।
মা তো সেই খুশি মুখ নিয়ে আমার দিকে তাকাল । এত খুশি মুখ নিয়ে মে বি আমি যে দিন প্রথম এই বাড়ি তে পা রাখি সেদিন ও উনি তাকান নি। তাকাবেই বা কেন আমাকে তো দেখতে গিয়েই উনার পছন্দ হয় নি । তার মধ্যে আমি মোটামুটি ফর্সা হলেও আমার শশুর বাড়ির লোক জনের তুলনায় নগণ্য।। এটা ও একটা অপছন্দের দিক।। তাই এবারের বৌ উনি নিজে পছন্দ করে ছেলের সাথে মানান সই আনবেন বলে ঠিক করেছেন।
যাই হোক মা খুশির চোখে তাকালেও অহন আমার দিকে অগ্নিমূর্তি হয়ে তাকাল।
— এই আমি কখন বললাম এই কথা??
— কেন কাল রাতেই তো এ বিষয়ে আমাদের কথা হলো।
— সত্যি বৌ মা?
— হ্যা মা।
— আমি সত্যিই এতদিন তোমাকে ভুল বুঝে এসেছি। আসলেই তুমি অনেক ভালো মনের বৌ মা। এই ভাবে নিজের জায়গা ছেড়ে দিচ্ছ। আমি জানতাম এক মাত্র তুমি ই অহন কে রাজি করাতে পারবে...
— এই আম্মা আপনি চুপ করেন তো । এরকম কোন কথা ই হয় নি আমাদের মধ্যে ।অয়নী ফাসাচ্ছ কিন্ত তুমি আমাকে।
— কই ফাসাচ্ছি??তুমি বলো নি বিয়ের সিদ্ধান্তের ব্যপারে আমি sure কি না??? আমি যে বললাম হ্যা তুমি বিয়ে করো।
— কি আশ্চর্য তুমি বললেই হলো?? আমি কি ক্লিয়ারলি বলেছি? হ্যা বা না??
— অহন মৌণতা কিন্ত সম্মতির লক্ষণ।তুমি কিন্ত মৌন হয়েই ছিলেন। হয়ত একটু দ্বিধায় পরেছিলে.
— অহন আর কিছু বলিস না রাজি হয়ে যাও বাবা।আমাদের ও তো নাতি নাতনির মুখ দেখতে ইচ্ছে করে নাকি?? আর অয়নী ও তো থাকছে ই এই বাড়ি তে।
আমিও অহন এর হাত ধরে আস্তে করে আমিও বললাম , অহন প্লিজ। রোজ রোজ একটা বিষয়ে অশান্তি আমার ও আর ভাল লাগে না।
অহন চট করে আমার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে...
— আম্মা , লাইফ টা কি আপনাদের সিরিয়ালের মত মনে হয়?? বেশি সিরিয়াল দেখে দেখে আপনাদের মাথায় এই বিয়ে বাচ্চা ছাড়া আর কিছুই নেই না??? সমস্যা কি আপনাদের??
— অহন!!!
— এর এই অয়নী এই?? তুমিও এখন আম্মার সাথে সাথে শুরু করেছ না?? সিরিয়ালের নায়িকা সাজতে চাও??? নাকি এখ্ন আম্মা আর বাবার মতো আমাকে শাসন করতে চাও?? কোনটা?? ওকে ফাইন মারো আমাকে আবার মেরে মেরে শাসন করো ।তুমি কি মনে করো তুমি যা বলবে তাই হবে?? আমি তোমার কথায় উঠব বসব?? আমি কি?? আমি তোমাদের সবার ইচ্ছা পুর্ণ করার পুতুল??
— অহন,,জ্বরের ঘোরে কি সব বলছ? চুপ করো ।।
— আম্মা,আমি কিচ্ছু জ্বরের ঘোরে বলছি না। যা বলছি ঠিক ঠিক বলছি এক্দম । তোমরা কি পেয়েছ টা কি?? সার্কাস?? আমার লাইফ টা একটা সার্কাস?? আর আমি সেই সর্কাসের জোকার??
—অহন
আমি ও ঠিক বুঝতে পারছি অহন জ্বরের ঘোরেই পাগলামো শুরু করেছে।। তাছাড়া মায়ের সাথে এত রাগারাগি আমি অহন কে কোনদিন ও করতে দেখি নি। মানুষ মদ খেলে, নেশা করলে, রাগের মাথায় আর না হলে জ্বরের ঘোরে সাধারণত মনে যা কিছু পুষে রাখে, চেপে রাখে তা গড় গড় করে বলতে থাকে। অহন ও তাই করছে।সে বলেই যাচ্ছে,
— আমি মিউজিক নিয়ে পড়তে চেয়েছিলাম অথচ আপনারা জোর করে আমাকে ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি করালেন। পাবলিকে এক্সাম খারাপ দিলাম তারপর জোর করে প্রাইভেট ভার্সিটি তে ভর্তি করালেন । সারাদিন কামলা খাটা পড়াশুনা। তারপর এখন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অফিসে কামলা খাটা দিতে হয়। তারপর বাড়ি এসে আবার এইগুলা । এখ্ন কি আপনারা আমাকে বাচ্চা বানানোর কামলা পাইছেন??
— চুপ আর একটা কথা ও বলবা না ।
আমি খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারলাম অহনের মাথা যথেষ্ট পরিমান গেছে ।তাকে এখ্ন যে ভাবেই হোক থামানো দরকার । না হলে যা ইচ্ছা তাই বলে যাবে।
আমি অহনের হাত ধরে হিড় হিড় করে টেনে ঘরে নিয়ে এসে রুম লক করে দিলাম ।
এরপর তো অহন আমাকেই যা ইচ্ছা তাই বলে গালি দেয়া শুরু করল। ইভেন মারতেও আসছে কয়েক বার। বাট মারে নাই। আমি কিছুই বুঝতেছি না ও আসলে কার রাগ কার উপর দেখাচ্ছে । বিয়ের পর এই প্রথম আমাদের এতটা ঝগড়া হলো।
সকাল বেলা অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হলো । নিজেই নিজের খাবার বেড়ে নিয়ে খাচ্ছে। কোন কথা নেই মুখে। আমিও আর কোন কথা বলছি না । চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে এখ্ন ও জ্বর আছেই।তাও জেদ জ্বর নিয়েই অফিস যাবে।আমি বা মা কেউ যদি এখ্ন মানা করে তো আবার চিল্লা পাল্লা শুরু করে দেবে তাই দুজনেই চুপ করে আছি।
খাওয়া শেষে অফিস যাওযার আগে মাকে ডাকল
— আম্মা, আম্মা,
— কি??
— আম্মা, আপনি মেয়ে দেখা শুরু করেন। আর হ্যা সাত দিনের মধ্যে মেয়ে জোগার করেন ।তা না হইলে কিন্ত আমি যাকে পাব বিয়ে করে আনব। তখন কেউ কিছু বলতে পারবেন না...।।
.
.
.
চলবে..............................