পরিপূরক - পর্ব ১৩ - স্পৃহা নূর - ধারাবাহিক গল্প


আমার ব্যবহার করা জিনিস ভালো লাগে না কিন্তু আমার ব্যবহৃত স্বামী কে ভালই লাগে তোমার তাই না?
.
.
চুড়ি টা তো মাত্র কয়েক ঘণ্টা হলো হাতে পড়েছি আর অহন কে যে এক বছর ধরে লালন করেছিলাম???
.
.
কথা গুলো শেষ করার আগেই দু চোখ বেয়ে টপ টপ করে পানি পড়তে শুরু করে দিল। তাই আরো কিছু কথা মনে আসলেও মুখে বলতে পারলাম না।
ওহির সামনে আজ এর প্রথম কেদে ফেললাম। আমি ওর সামনে কখনই কাদি না,কাদতে চাই ও না ।কেমন যেন নিজেকে পরাজিত পরাজিত মনে হয় ।।। তাই নিজেকে আবার সামলিয়ে নিলাম ।।।
.
ওহি আমার দিকে কিছুক্ষণ ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়ে থাকল ।।
— আপু তুমি অনেক কস্ট পাও তাই না???
.
কোন উত্তর দিলাম না । উঠে চলে আসতেই ওহি আমার হাত টেনে ধরে বলল
— আপু আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে।
— ওহি ছাড় । 
— আরে আপু শোনই না।। আমার আইডিয়া তোমার পছন্দ হবে দেখো।। শুনেই দ্যাখ
— অহনের মে বি শাওয়ার নেয়া শেষ হয়েছে । ও এখ্ন ই তোমার রুমে আসবে।। আমার হাত ছাড় আমি যাব ।
— অহন কি তোমার কাছে পরপুরুষ নাকি যে সে রুমে আসলে তোমার থাকা যাবে না??? 
— হ্যা ঐ রকম ই কিছু একটা।
— আপু শোন না,,, আমরা বরং এক কাজ করি । আমরা ওকে ভাগ করে নিই।।। 
— কিহ?
.
— হু।।। মনে করো তোমার ফিফটি পার্সেন্ট আমার ফিফটি পার্সেন্ট। তাহলে কারো ই লাভ ক্ষতি হবে না। মুনাফা মূলধন সবই দুজন সমান ভাবে নেব।
— সরি বুঝলাম না ।কি বলতে চাইছ???
.
— শোন ....শনি,সোম আর বুধবার অহন তোমার আর রবি,মঙল,বৃহষ্পতি তো বুঝতেই পারছ কার।।। আর শুক্রবার ও ওর মতো থাকবে।।।।তাহলেই তো হল?? দুজনের ই ফিফটি ফিফটি??? এবার তো হ্যাপি হয়ে যাও আপু।।। আইডিয়া টা পছন্দ হয়েছে না বলো???
.
রাগে শরীর কটমট করছিল কথা গুলো শুনে। এই মেয়ে বলে কি???ইচ্ছে করছিল দুই গালে ফিফটি ফিফটি থাপ্পড় বসিয়ে দিই।। পেটের দিকে তাকিয়ে দিলাম না আর।। শালি ফাজিল বেটি বলে কি।। আর এমনিতেও অহনের সাথে ঝগড়া করার পর রাগ টা কমেও নি।তার মধ্যে আবার এই মেয়ে রাগ আরো চরমে তুলে দিল।
.
.
—এই মেয়ে কি মনে কর নিজেকে????আর একটা উল্টা পাল্টা কথা যদি বলেছ।। শালি ফাজিল বেটি কোথাকার।
—আপু আমি তোমার শালি না সতীন।
.
— চুপ একদম চুপ থাপ্পড় যদি খাওয়ার শখ না হয়।।। অহন কি কোন বাজারের জিনিস নাকি খেলার পুতুল?? হ্যা???? একদিন তুই খেলবি আর একদিন আমি?? এই তোর সাহস কিভাবে হয় এসব কথা বলার??? তুই যে কত বড় লেভেলের ফালতু সেটা তোর কথা দিয়েই বোঝা যায়।। লাভ ক্ষতি বোঝাচ্ছে আমাকে।।। ফিফটি ফিফটি শেয়ার করবে। আরে তুই তো কমার্সের স্টুডেন্ট তাই না?? তোর মাথায় এসব লাভ ক্ষতি মূলধন মুনাফা শেয়ার এসব ছাড়া আর কি ই বা আশা করা যায়?? 
শোন আমাদের সায়েন্স এর স্টুডেন্টদের মাথায় এসব সব কিছু তে ব্যবসা,শেয়ার, লাভ ক্ষতির হিসেব থাকে না বুঝলি??? একটা দেহের সমস্ত পার্টসের কথা ,মন ,মস্তিস্কের সব খেলা সব ই থাকে আমাদের মাথায়।। অক্সিটসিন এর ক্রিয়া তুই কি বুঝবি রে?? 
তোর কি মনে হয় অহনকে ভালোবাসতে আমাকে তোর কাছে থেকে অহনের শেয়ার নিতে হবে???তোর তাই মনে হয় আমি এরকম ভালোবাসা চাই ওর থেকে??? ভালোবাসা মনের ব্যপার। এর জন্য যে দুজনকে দুজনের কাছেই থাকতে হবে তা কে বলেছে?? আর কক্ষনো বাজারের জিনিসের সাথে এসবের তুলনা করবে না । আর তুই করে বলার জন্য সরি।
.

.

— আপু মাইন্ড করো না। মানলাম তুমি এতকিছু বোঝ। তবে এতই যখন বোঝ তুমিই তো নিজের স্বামীকে প্রথমে বাজারের জিনিসের সাথে তুলনা করেছ।তাকে ছোট করেছ। আর আমি তুলনা দিলেই দোষ???
— আজেবাজে কথা একদম বলবে না বলে দিলাম। আমি অহন কে বাজারের জিনিসের সাথে তুলনা করেছি?? আমি??? 
.
— অবশ্যই করেছ। তুমি তোমার জামাইকে বাজারের সামান্য চুড়ির সাথে তুলনা করো নি??, বলো কর নি???? আমি চুড়ি নিতে চাইলাম না বলে চুড়ির দোহায় দিয়ে কত গুলো কথা শোনালে??? তুমি ই বল বাজারের সামান্য চুড়ি আর মানুষ কি এক??? তাও আবার ভালোবাসার মানুষ????? আমি জানি এসব প্রশ্নের উত্তর তুমি দিতে পারবে না ।। শোন আপু বয়সে আমি তোমার চেয়ে দু তিন বছরের ছোট হলেও একটা কথা বলি নিজের স্বামী কে কখনই বাজারে সামান্য সস্তা কিছুর সাথে তুলনা করো না। মহা মূল্যবান কিছুর সাথেও না। একটা মানুষের তুলনা হয় একটা মানুষ নিজেই। মানুষ কে কক্ষনোই অন্য কিছুর সাথে তুলনা করতে নেই।।। আর ভালোবাসার মানুষের তুলনা তো আরো করতে নেই।।। সে যেমন ই হোক, যে ধরনের ই হোক তার তুলনা সে নিজেই।।।। আমি তো শুধু তোমার কথার প্রেক্ষিতে একটু নোংরা ভাবে বলেছি এই যা ।। কিন্ত বাজারের জিনিসের সাথে তুলনা দেয়া টা তুমি ই শুরু করেছ।

.
আমি ওহির কথার সত্যিই কোন উত্তর দিতে পারলাম না । সত্যিই মেয়েটার কথায় যুক্তি আছে । 
.

ওহি মেয়েটা আমার চেয়ে বয়সে ছোট হলে হবে কি??? সে আমাকে তার যোগ্যতা,বুদ্ধি,মেধা আর কথা দিয়ে বারবার পরাজিত করে যাচ্ছে ।

.
— ওহি আমার মাথা ঠিক ছিল না আসলে। রাগের মাথায় তোমাকে অনেক অপমান করে ফেলেছি। প্লিজ তুমি কিছু মনে করো না। আমি এরকম ই রাগ উঠলে মাথা ঠিক থাকে না ।। অনেক আজেবাজে কথা বলে ফেলি। অহনকেও আজ অনেক বাজে কথা বলে ফেলেছি ।
— আরেহ ব্যপার না ।এসব ছোট খাট ব্যাপারে আমার মন খারাপ হয় না আমার মন খারাপের জন্য আরো বড় বড় বিষয় দরকার হয় ।।। বাদ দাও। ঝগড়া করেছ বুঝি ওর সাথে?? তাই তো মুড অফ দেখলাম বেচারার।।।ঐ তো দেখ এসে গেছে ।
.
পেছনে তাকিয়ে দেখ হুম দরজার চোকেটে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।
.
চুপচাপ কিছু না বলে রুমে চলে আসলাম।
মন খারাপ থাকলে সাধারণত রুম একেবারে ঘুটঘুটে অন্ধকার করে শোয়ার অভ্যাস আমার ।। আজ ও তাই করলাম।
.
একটু পরই দরজা লক করার শব্দ পেলাম ।
রুম যা অন্ধকার করে রেখেছি কিচ্ছু দেখবার উপায় নেই । জানলার হালকা আলোয় কিছুটা মানুষ মতো ই অবয়ব দেখলাম।কিন্ত গায়ে চাদর জড়ানো।।। মুখ ও ঢাকা।।এ জন্য পুরো ভূতের মতো ই অবয়ব লাগছে ।
.
.
আমি দিনের বেলায় জ্বিন ভুত প্রেত কিংবা তার চেয়ে বড় কিছুকেও ভয় পাই না ।। কিন্ত রাতের বেলা হলে অন্য কথা। 
এজন্য রাতে আমি সব সময় ই বালিশের নিচে লোহার টুকরা আর ম্যাচের বক্স নিয়ে ঘুমাই। ছোট বেলার অভ্যাস এটা আমার । 
.
 হাতে ম্যাচের বক্স নিলাম। জ্বালানোর ও সাহস পাচ্ছি না। জ্বালিয়ে যদি অন্যরকম কিছু দেখি..আমি সোজা হার্ট এট্যাক।।।
 যথেষ্ট সাহস নিয়ে তাও বললাম 
— এই কে রে?? কে ওখানে??
.
নাহ কোন আওয়াজ নেই। সে এগিয়েই আসছে।।
— দ্যাখ আমাকে ভয় দেখাতে চেয়ে লাভ নেই। আমি কিন্ত এসবে ভয় পাই না।
— এই তু তু তুমি অহন না তো??? আ,,,আ,, আমি কিন্ত এ এ এবার চিতকার......
.
.
ততক্ষণে সে আমার ঠোট দুটো নিজের দখলে নিয়ে নিয়েছে ।। বুঝতে বাকি রইল না এটা অন্য কেউ নয় ।তার শরীরের সুবাস আমার চেনা। তার প্রত্যেকটা হৃদস্পন্দন আমার চেনা।। 
অনেক দিন পর বুকের মধ্যে এমন আষ্টেপৃশ্টে জড়িয়ে নিয়েছে । তার প্রত্যেকটা হ্রদস্পন্দন আমার হৃদস্পন্দনের সাথে যেন তালে তাল মিলাচ্ছে ।।
Lub-Dub....Lub-Dub....Lub-Dub.....
.
— উফ্ফ ...অহন তুমি তাহলে....ছাড় আমায় ছাড় বলছি
— কেন আমি না হয়ে অন্য কেউ হলে বুঝি বেশি খুশি হতে???
— আমি তোমার মতো নই।।। 
— অহ আচ্ছা।
— এসব কি হচ্ছে শুনি?? 
— স্বার্থপরতা ।।।।।।।।।
.
— মানে টা কি???

— তুমি ই তো বলেছ আমি স্বার্থপর ।।। তো স্বার্থপরতা করছি।।।  
— অহন। ছাড় আমায়
— কি করবে না ছাড়লে শুনি?? তুমি বলো নি আমি যখন যে বৌ কে যেভাবে দরকার সে ভাবে ইউজ করছি??? তো অয়নী ম্যাডাম এখ্ন এমন বলছ কেন??? 
তুমি এখ্ন বুঝবে সত্যি কারের স্বার্থপরতা কাকে বলে ।।।। আমি আমার স্বার্থের এক ছিটে ফোটা ও আর ছাড় দেব না ।।। তুমি আমাকে যেমন ভাবো ঠিক তেমন টাই হব আমি। আমি আমার স্বার্থ পুরোটুক উসুল করে নেব।
.
.
.
চলবে...........................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন