বাসায় এসেই ভিনা বাথরুমে যেয়ে কাঁদতে লাগলো।যাবির আর ক্লাস নিবে না তাহলে।এমন না যে দেখা হবে না আর,কিন্তু প্রচন্ড খারাপ লাগা কাজ করছে।আরেকটা বিষয় যেটা আরো খারাপ হয়েছে সেটা হলো মকবুলের ফিরে আসা।এই লোক আবার হ্যারাজ করবে।তার বাবাকে বলে লাভ নেই,আর বলতে ইচ্ছাও করছে না।বিশেষ করে মুনার সাথে ইদানিং ঘনিষ্ঠতা বেশিই বেড়েছে।এটা সহ্য করতে পারছে না।নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। তখনি হটাৎ মনে পড়লো,যাবির ভিনার ডায়রি পড়েছে।তার মানে কি সে জানে মকবুলের কথা?নওমি সবকিছুর সাথে এটাও জানিয়ে দিয়েছে?হয়ত যাবির জানে না,জানলে নিশ্চয়ই প্রশ্ন করত এই ব্যাপারে।
•
মুনার অবাক লাগছে বিগত কিছু দিন ধরে। সোহেল যে ভালো ব্যবহার করছে,সেটা ভালোবাসা থেকে না,তা সে জানে।সে চাচ্ছে সোহেলের কাছ থেকে আলাদা হয়ে যেতে৷ অনুগ্রহের সম্পর্ক দরকার নেই তার। আগের চাকরিটার জন্য এপ্লাই করবে।এরপর কোনোভাবে জীবনকে টেনে নিয়ে যাবে।বাবার বাড়ি থেকে অলিখিত ভাবে সে বিতারিত এখন।সেখানে সে যাবে না।সোহেল নিতান্তই ভালো মানুষ দেখে হয়ত তার বাবার চাপিয়ে দেয়া সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এভাবে তো আর ভালোবাসা হয় না।
-সোহেল,শোনো
-বলো
-আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দাও
-কেন?
-এখন তো বাবাও নেই,তার লেহাজ ও করা লাগবে না।
-তাতে কী?
-এভাবে দায়সারা ভাবে কোনো সম্পর্ক এগিয়ে নেয়া উচিৎ না।আমি নিজের একটা ব্যবস্থা করে নিতে পারব।বাবা তখন অসুস্থ ছিলেন,না জেনে বুঝে অনেক কথা বলে ফেলেছেন।
-ভুল তো বলেননি।তুমি আমার ওয়াইফ,বিনা দোষে তোমাকে শাস্তি কেন দিবো?
-আমি জানি,এই বিয়েটা তুমি করতে চাওনি।কেন করেছো সেটাও আমি বুঝি,দরকার কী নিজের জীবনটা নষ্ট করার?
-নষ্ট কোথায় হচ্ছে মুনা?তোমার কি মনে হচ্ছে তোমার জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে আমার সাথে থেকে?যদি তাই মনে হয়,তাহলে নির্দ্বিধায় ডিভোর্স দিতে পারো।
-তুমি ভালো মানুষ, তাই দায়িত্ব পালন করছো।কিন্তু ভালোবাসা ছাড়া দায়িত্ব অনেক বড় বোঝা।
-প্রতিটা জিনিস সুন্দরভাবে হতে সময় লাগে।ভালোবাসা তুচ্ছ বিষয় না।সময় দাও, ধৈর্য্য ধরো মুনা।
-আমার বাবা মারা যাওয়া অনুগ্রহ দেখাচ্ছো?
-না,আমি শুধু এই সম্পর্ককে সুযোগ দিতে চাচ্ছি।
মুনার বিশ্বাস হচ্ছে না, চোখে পানি এসে পড়ছে,আসলেই কি সোহেল তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে?
•
ভিনা নিজের ফোন বন্ধ করে রেখেছিলো।কিন্তু সকালে যাবিরের কথামত দেরীতে কোচিং এ ঢুকলো। মকবুল ওৎ পেতে ছিলো।
-কী ব্যাপার ভিনা,আবারো লেট।
-জ্যাম ছিলো রাস্তায় স্যার।
-তোমার বাবার সাথে কথা বলা লাগবে,অফিসে এসে নাম্বার দিবে ছুটির সময়।
ভিনা এই কথার ই অপেক্ষা করছিলো।যাবির কী মনে করে এসব করছে কে জানে। সকালে কোচিং এও দেখেনি ওকে।
ছুটির পর ভিনা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো যাবিরের জন্য,কিন্তু দেখলো না কোথাও।
-অফিস রুমে না আসতে বলেছিলাম?এক্ষনি আসো।
ভিনা হাত শক্ত করে অফিস রুমে ঢুকলো।
-কী ব্যাপার দাঁড়িয়ে আছো কেন?বসো
-আমি এখানেই ঠিক আছি।
-বেশি কথা বলবে না,যা বলেছি,তাই করো।
ভিনা টেবিলের অপজিট সিটে বসতে যাওয়ার সময় মকবুল হাত টান দিয়ে ভিনাকে নিজের কোলের উপর বসালো।ভিনা ধাক্কা দিয়ে সরে দাঁড়ালো।
-দেখুন স্যার,বাড়াবাড়ি করবেন না।
-আমাকে রাগ দেখাচ্ছো ভিনা?সাহস দেখি ভালোই বেড়েছে।
মকবুল এবার দাঁড়িয়ে হাত টান দিয়ে ভিনাকে কাছে আনার চেষ্টা করলো।ভিনা পাশে রাখা পেন হোল্ডার দিয়ে হাতে বাড়ি মেতে সরে গেলো।
-আমি কিন্তু সবাইকে আপনার কথা বলে দিবো।
-কী বলবে?
-সব!
-কেউ তোমার কথা বিশ্বাস করবে?গার্জিয়ানদের সবাই জানে,তোমার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছে।এই বিয়ের পর তুমি বখে গেছো।কেউই তোমাকে ভালোভাবে দেখে না ভিনা।আমি যদি বাইরে যেয়ে বলি,তুমি আমাকে সেডিউজ করার চেষ্টা করেছো,সবাই তাই বিশ্বাস করবে।
ভিনার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।সে চাচ্ছে এই লোকটাকে খুন করতে। ঠিক তখনি চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ শোনা গেলো।
ভিনা তাকিয়ে দেখলো মকবুল স্যারের ওয়াইফ এসেছে,সেই সাথে পেছনে দাঁড়ানো সব গার্জিয়ান।কিন্তু ছুটির পর সব গার্জিয়ান চলে গিয়েছিলো,এরা আসলো কোথা থেকে।মকবুল ভয়ে হাত ছেড়ে দিলো।সে ঘটনা সাজানোর চেষ্টা করছে, ঠিক তখনি তার ওয়াইফ এসে মুখে সশব্দে চড় বসিয়ে দিলো।
-তোর নিজের ও একটা মেয়ে আছে শুয়োরের বাচ্চা,তুই এই কাজ কীভাবে করলি!
পেছন থেকে গার্জিয়ানরা স্যান্ডেল নিয়ে ঝাপিয়ে পড়তে চাচ্ছে।সবুজ কোনোভাবে তাদের আটকে রেখেছে।মকবুলের ওয়াইফ চিৎকার করে কাঁদছে আর চড় মারছে।ভিনা কিছুই বুঝতে পারছে না।এরি মাঝে এক গার্জিয়ান ওর হাত টেনে নিয়ে বুকে জড়িয়ে নিয়ে কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।অন্য গার্জিয়ান রাও এসে কন্সোল করছে ওকে।ম্যাস পিপল ইমোশন ইফেক্ট।এমন না যে এরা ভিনাকে খুব পছন্দ করে,কিন্তু এখন,এই মুহূর্তে তারা নিজের জীবনটা দিয়ে দিবে ভিনার জন্য।এই মাঝে কোন গার্জিয়ান যেন পুলিশ কল করেছে,তার ভাই না দেবর কে জানি পুলিশে চাকরি করে।বেশ হামতাম করে সে কল দিয়ে একটা সিনেমেটিক অবস্থা সৃষ্টি করেছে।পুলিশ আসার পর ভিনার বয়ান নেয়ার সময় আরো দুইটা মেয়েও কম্পলিন করেছে।এরা দুইজনই বেশ সুন্দর।সব ঝামেলা শেষ করে যখন ভিনা বের হচ্ছে তখনি পেছন থেকে যাবির আসলো
-কী ভিনা?গিফট কেমন লাগলো?
-তুমি এসব কীভাবে করলে?
-একা করিনি,সবুজ ও হেল্প করেছে।খুব বেশি কিছু করা লাগেনি।অফিস রুমে ক্যামেরা সেট করে এরপর নিচের তালায় যে ক্লাসরুম আছে, ওখানে ডিসপ্লের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।যখন মকবুল ক্লাস নিচ্ছিলো,তখন গার্জিয়ানদের প্যারেন্টিং ক্লাসের নাম বলে নিয়ে এসেছি,বাকীটা তো জানোই।
-আর মকবুলের ওয়াইফ?
-সবুজ ই সব জানিয়েছে।তুমি তো জানো না,যখন তাকে মকবুলের কথা বললাম,সে আমাকে ছুড়ি দিয়ে ধাওয়া করতে নিয়েছিলো।পরে অনেক কষ্টে রাজি করিয়ে এনেছি উনাকে।জাস্ট ইমাজিন,এই মহিলা এখন মকবুলের কী অবস্থা করবে!
ভিনা যাবিরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।যাবির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো.....
.
.
.
চলবে.................................................