— সাইকো লেডি একটা ।। পূর্ণতা তুমি এই সাইকো লেডির সাথে কি করছ। কোথায় পেয়েছ একে?? আর তুমি চুপ করে আছ কেন বলছ না কেন যে আমি তোমার পাপা
— পাপা হলে তো বলবে। আর আমি সাইকো লেডি না ।আপনি সাইকো ম্যান।।
.
.
— চুপ একদম চুপ। অনেক্ষন থেকে সহ্য করছি এসব পাগলামি ।শহরে এসব নতুন সাইকো কোত্থেকে আমদানি হয়েছে কে জানে ।
.
বলেই হ্যাচকা টান দিয়ে ইনায়া কে আমার কোল থেকে নিয়ে নিল।
.
— পাপা আমার লাগছে তো ।।
.
ইনায়ার কথা শুনে আমি পুরো হা হয়ে গেলাম।
.
— পাপা????
— O hello... I am not your papa.. I am Purnota's papa Iftekhar Ahmed Chowdhury Ifty... nd she is my princess Inaya Ahmed Chowdhury Purnota...
— মানে টা কি??
— মানে টা এটাই সাইকো লেডি।।। আশা করি এর পর থেকে অন্যের বাচ্চা কে হুদাই টানাটানি করবেন না । আমার মতো সবাই এত ভালো না বুঝলেন। অন্যরা হলে এতক্ষণ ছেলেধরা ভেবে আপনাকেই পুলিশে দিত।
— আপনি সত্যিই ওর বাবা??
— এখনো সন্দেহ??? প্রমাণ চাই তো???
— জ্বি
—ওকে ওয়েট
.
বলেই উনি ইনায়ার মাথায়
আমার করে দেয়া বেণী খুলতে লাগল।
— উফ্ফ পাপা লাগছে তো ।
— কি আশ্চর্য এতো জোরে কেউ ছোট বাচ্চার চুল ধরে টানে??? ছাড়ুন বলছি ছাড়ুন ওকে। আমি কত সুন্দর করে চুল বেধে দিলাম ওর। আর আপনি এগুলো এভাবে ...নিজে তো মেয়ের চুলে দুটো ঝুটি ছাড়া কিছু করে দিতে পারেন না । মেয়ে বিরক্ত হয়ে সেগুলো স্কুলে এসেই খুলে ফেলে।.
.
.
আমি এসব বলতে বলতে লোকটা আমার হাতে দুটো চুল ধরিয়ে দিল । একটা ইনায়ার মাথা থেকে ছিড়ল আর অন্যটা নিজের মাথা থেকে। আমি এদের বাপ মেয়ের কান্ড দেখে একের পর এক অবাক ই হয়ে যাচ্ছি। একে তো এই মেয়ে প্রথমেই বাপের শর্ট নেম বলে আমাকে অহনের সাথে ওর বাপকে গুলিয়ে দিয়েছিল । তারপর নিজের ও শর্ট নেম বলে আজকেও বিপদে ফেলল।
.
.
— নিন ধরুন
— এই আপনাদের চুল নিয়ে আমি কি করব?
— আপনার নাকি এখনো বিশ্বাস হয় নি যে আমি ইনায়ার বাবা।আপনার নাকি প্রমাণ চাই??
— তো?
— তো আবার কি?? প্রমাণ দিলাম। যান এগুলো নিয়ে গিয়ে নিজ দায়িত্বে ডিএনএ টেস্ট করিয়ে নিন। ভবিষ্যতে যেন আর আমার মেয়ের দিকে নজর দিতে না দেখি।বাচ্চার চুল বেধে দেয়ার যখন এতই শখ আর এত ভাল চুল বেধে দিতে পারেন তাহলে নিজে বিয়ে করে নিজের বাচ্চার ইচ্ছে মতো চুল বেধে দেবেন অন্যের বাচ্চা নিয়ে এত টানাটানি কিসের?
.
.
ইনায়ার প্রতি এবার খুব রাগ হতে শুরু করল। ওর জন্য ই এভাবে অপমান হতে হচ্ছে।
— ইনায়া এসবের মানে কি??তোমার সমস্যা টা কি???
— ম্যাম....
.
.
— ম্যাম??
— O hello I am not your mam... I am Inaya's mam
— বাহ কথা তো ভালই ফেরাতে পারেন। Anyways I am extremely sorry for my behaviour.... আমি actually বুঝতে পারি নি । আর আপনি হুট করে এসে এমন ভাবে....
— এই আপনি চুপ করুন তো । আপনার এই বদের হাড্ডী মেয়ে যত নস্টের মূল ।ইনায়া তোমার সমস্যা টা কি বল তো?? প্রথমে বললে তোমার বাবা নাকি দেশে নেই? তারপর বাবা আসলো ভালো কথা। আমি যে এতক্ষণ ধরে তোমার বাবার সাথে অযথা তর্ক করে গেলাম তুমি বললে না কেন যে ইনিই তোমার বাবা??? হুম?? তোমাকে কি বোবায় ধরেছিল? আবার মুখ দিয়ে পুরো নাম তো কখনো ই বের হয় না আপনার। এর জন্যও ঝামেলা কম হলো না। রোজ রোজ ফাজলামো করো তাই না আমার সাথে??
— দেখুন আমার মেয়ের সাথে আপনি এভাবে উচু স্বরে কথা বলতে পারেন না । আপনি যতই ওর ম্যাম হোন না কেন আমি একটা কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি পাগলামো বা ফাজ্লামো যা ই বলুন না কেন শুরু টা কিন্ত আপনি করেছিলেন।। মেয়ে আমার ভয়ে হয়ত কিছু বলে নি।
— এই আমি আপনাকে চুপ করতে বলেছি না?? আর একটা কথা বলবেন না আপনি।
— করলাম না চুপ। তো??? আপনি আমার মেয়েকে অযথা গালাগাল করবেন আর আমি ভেড়া সেজে সব সহ্য করব? শুনুন আমি না আমার মেয়েকে কোন দিন একটা ধমক পর্যন্ত দিই না।
— হ্যা। শাসন না করে করেই এই অবস্থা করেছেন। পড়াশুনার দিকেও তো কোন খেয়াল রাখেন না । মেয়ে যা করবে তাতেই প্রশ্রয় দিতে হবে তাই না?? এত প্রশ্রয় দিতে বাচ্চা মানুষ হয় না বুঝলেন।
– হ্যা আমার মেয়ে আমি যেভাবে ইচ্ছা মানুষ করব। আপনি টিচার টিচারের মতো থাকুন। এত বেশি নাক গলাতে আসবেন না ।মায়ের চেয়ে দেখছি মাসির দরদ বেশি।
— হ্যা মা না থাকলে মাসি কেই দরদ দেখাতে হয় মাঝে মাঝে।।
.
.
কথাটা শুনে ভদ্র লোক বেশ দমে গেল বুঝতে পারলাম ।
— দেখুন মানলাম আমার মেয়ের জন্য ই একটা misunderstanding হয়ে গিয়েছে। আমি কিন্ত তার জন্য সরি ও বলেছি। তারপর ও আপনি কথা বাড়িয়েই যাচ্ছেন। ও ছোট মানুষ হয়ত কিছু ভুল বলে ফেলেছে।। কিন্ত আপনিও .. যাই হোক আমি আমার মেয়ের হয়ে সরি চেয়ে নিচ্ছি। আর ও একটা কথা ঠিক ই বলেছে আমি সত্যিই দেশে ছিলাম না। আর আজ আমার আসার কথা ও ছিল না । একটা মিটিং ক্যানসেল হওয়াতে আজ ফিরতে পেরেছি।আর ও এতক্ষণ কেন চুপ ছিল তা আমি নিজেও জানি না ।
.
— পাপা আমার ম্যামের কোলে থাকতে অনেক ভালো লাগছিল। তাই আমি চুপ করে ছিলাম যেন তোমরা আরো বেশিক্ষণ ঝগড়া করা পর্যন্ত আমি ম্যামের কোলে থাকতে পারি। তুমি অনেক শক্ত করে কোলে নাও কিন্ত ম্যাম অনেক সুন্দর করে কোলে নেয়। তুমি অনেক বেশি শক্ত করে ধরো আমি ব্যথা পাই তো ।
.
.
— দেখলেন তো আপনার মেয়ে আপনার চেয়ে আমার কাছে বেশি comfort feel করে।
.
উনি আর কোন কথা ই বললেন না । গজ গজ করে হেটে গিয়ে মেয়েকে নিয়ে গড়িতে উঠলেন।
.
.
পরের দিন এসেম্বিলি শুরু হবার আগেই ইনায়া টিচার্স রুমে এসে পেছন থেকে আমার শাড়ির আঁচল ধরে টানতে শুরু করল।
— ম্যাম,ম্যাম
— কি সোনা?
— আমার চুল বেধে দেবে না??
— তোমার পাপা রাগ করবে ইনায়া।
— করবে না । আমি স্কুল ছুটি হওয়ার আগেই আবার খুলে ফেলব।
— আচ্ছা এসো তাহলে।
— ম্যাম তুমিও আমাকে পাপার মতো পুন্নতা বলে ডাকবে ।ওকে?
— পুন্নতা না সোনা পূর্ণতা।
— হ্যা ওটাই। আমি ঠিক ভাবে এইটা বলতে পারি না বলে পাপা বলেছে কেউ নাম জিজ্ঞেস করলে ইনায়া নাম বলতে। সেজন্যই তো আমি সবাইকে ইনায়া নাম ই বলি।
— আচ্ছা বাবা ।ওকে ওকে আর কৈফিয়ত দিতে হবে না । তোমার পূর্ণতা নাম টাই বেশি সুন্দর।
— ম্যাম কৈফিয়ত মানে কি?
— কিছু না । তোমার পাপা বাড়ি গিয়ে আমার জন্য আবার তোমাকে কিছু বলে নি তো?
— না তো । পাপা চুপ করে ছিল অনেক্ষন। তারপর আমার সব হোমওয়ার্ক কমপ্লিট করে দিয়েছে।। ম্যাম আমি আজকে সব পড়া কমপ্লিট করে এসেছি।
— ওয়াও । গুড গার্ল।
— হ্যা। আর পাপা তোমার পড়া আরো বেশি করে পড়িয়েছে আমাকে। আর স্কুলে আসার পথে পুরো রাস্তা তোমার পড়া ই বার বার পড়িয়েছে ।পাপা আমার হোম টিউটর কে ছুটি দিয়েছে। বলেছে এখ্ন থেকে পাপা ই পড়াবে । আর বলেছে অন্য কারো পড়া যদি ভুলেও যাই তোমার টা যেন ভুলে না যাই ।
— বাহ ভালো তো । তোমার পাপা আশলেই একটা জিনিস
— কি???
— কিছু না ।
.
.
ফোনে আমার আর অহনের ছবি গুলো স্লাইড শো দিয়ে দেখছি। আর হালকা সাউন্ডে ওর কভার করা গান প্লে করে রেখেছি।।
আগে যখন ই ও গান গেয়ে শোনাত আমায়, আমি ফোনে চুপ করে সেগুলো রেকর্ড করে নিতাম।ও বুঝতেই পারত না ।।
রেকর্ড গুলো যে এখ্ন এতটা কাজে লাগবে আগে জানলে ওর প্রত্যেকটা কথা গুলো ও এভাবে রেকর্ড করে রাখতাম । গানের মতো ই বার বার সেগুলো শুনতাম।
আর আমাদের সেই ছোট্ট ছোট্ট মুহূর্তের তোলা ছবি গুলো স্লাইড শো তে দেখতাম।।
কত ছোট্ট ছোট্ট মোমেন্টেরও ছবি তুলত অহন আমাদের। আমি বিরক্ত হয়ে যেতাম। ও বলত এখন এত বিরক্ত হচ্ছ। একদিন এগুলোই বিরক্তি , আর মন খারাপ কাটানোর উপাদান হবে তুমি দেখো।।।
বুড়ো বয়সে আর কি করব দুই বুড়ো বুড়ি এগুলো দেখেই টাইম পাস করব।।
.
অথচ বুড়ো হবার আগেই আমাকে এগুলো দেখে টাইম পাস করতে হচ্ছে।।
কিন্ত ওর নিশ্চয় এগুলো দেখে টাইম পাস করতে হয় না। সারাদিন অফিস। আর বাড়ি ফিরেই ওদের ছোট্ট বাচ্চাটাকে কোলে নিলে নিশ্চয় বাবুটা ওর ছোট্ট ছোট্ট আঙুল দিয়ে অহন কে আকড়ে ধরে।
.
.
— অয়নী তুই ডিভোর্স পেপার টা আরো কবে সিগনেচার করে দিবি বল তো?
.
হঠাত মায়ের কথায় চমকে উঠে হাত থেকে ফোন লুকিয়ে বালিশের নিচে রাখলাম।
.
— মা আমি বলেছি না আমার একটু সময় লাগবে ।
— আর কত সময় চাই তোর??
— আর একটু। জাস্ট একটু।
— যথেষ্ট সময় নিয়েছিস তুই। যার জন্য এত অপেক্ষা করিস সে কি তোর অপেক্ষার দাম দিল? দ্যাখ তোর এসব পাগলামো আর মানব না আমরা। তোর চাচা গ্রাম থেকে একটা সম্বন্ধ এনেছে। ওরা সব মেনে নিতে রাজি। ছেলেও ডিভোর্সি আগের পক্ষের একটা বছর তিনেক এর বাচ্চা আছে । আর ফ্যামিলিও ভালো । ওদের তোর এই ব্যাপার নিয়ে কোন সমস্যা নেই। ওদের শুধু বাচ্চার একটা মা দরকার। আর তোর ও তো বাচ্চার প্রতি একটা দুর্বলতা আছে ।
.
— মা তোমার কি বলা শেষ?? আর যদি শেষ না ও হয় প্লিজ এই মুহুর্তে আমার রুম থেকে বের হয়ে যাও। ফাজলামি পেয়েছ আমার সাথে ফাজলামি?? আমাকে এ বাড়িতে রাখতে তোমাদের এতই প্রবলেম হচ্ছে তো?? ওকে আমি এখান থেকেও চলে যাব।
— তুই ভুল বুঝ্ছিস মা । আমরা তোর ভালর জন্য ই..তোর ভবিষ্যতের ও তো একটা ব্যাপার আছে না কি?? আমরা যখন থাকব না তখন কে দেখবে তোকে? একা একা সারা জীবন কিভাবে কাটাবি??
— আমাকে নিয়ে এত ভাবতে হবে না তোমাদের। প্লিজ আমার ঘুম পেযেছে।এখ্ন আমাকে ঘুমাতে দাও। কাল সকালে স্কুল আছে আমার।
.
.
স্কুল ছুটির সাথে সাথেই পূর্ণতা রোজ আমার কাছে ছুটে চলে আসে। এসেই শাড়ির আঁচল ধরে টেনে বলে ম্যাম আমাকে কোলে নাও আর একটা চকলেট দাও।
আমি ওকে কোলে নিয়ে মাঠের এক কোনে বসে থাকি। ওর সাথে অনেক গল্প করি।ওর সাথে হাসি ,খেলি। ওর জন্য প্রায় ই বাড়ি থেকে কিছু না কিছু রান্না করে এনে ওকে খাইয়ে দিই।। মেয়েটা দিন দিন খুব লক্ষি হয়ে যাচ্ছে। আমার সব কথাই শোনে।। সারাক্ষণ কানের কাছে তোতা পাখির মত ম্যাম ম্যাম করেই যাবে।।
.
.
ওর বাবা ওকে বেশির ভাগ দিন ই লেট করে নিতে আসে। আর ও সেই সময়টুকুই আমার সাথে কাটায়।যদিও ওর বাবা নাকি আমার সাথে বেশি মিশতে ওকে মানা করেছে ।।কিন্ত কে শোনে কার কথা ।
.
.
আমার নিজের ও পূর্ণতার সাথে সময় কাটাতে বেশ ভালো লাগে । ওর ম্যাম ডাক শুনলেই মনে হয় ম্যাম না মা বলে ডাকছে আমায়।
.
.
আজ হঠাত গাল ফুলিয়ে এসেছে আমার কাছে ।
— ম্যাম আমাকে কোলে নাও।
.
কোলে তুলে নিতে নিতেই জিজ্ঞেস করলাম
— বিড়াল ছানা তোমার কি মন খারাপ??
— হ্যা
— চকলেট খাবে না? এই নাও
— ও হ্যা খাব।
— কি হয়েছে আমার বিড়াল ছানার শুনি?? মুড অফ কেন আজ?? পাপা কিছু বলেছে?
— হ্যা।
— আচ্ছা বাদ দাও । তোমাকে আজ একটা মজার গল্প বলব । শুনবে তুমি?
— ম্যাম কাল না আমার বার্থ ডে ।
— বাহ। তাই নাকি?? পার্টি হবে নিশ্চয়। খুব মজা হবে । তারপর ও আমার বিড়াল ছানা এমন মুখ ভার করে আছে কেন?
— ম্যাম পাপা বলে দিয়েছে এবার ও আমার বার্থ ডে সেলিব্রেট করবে না । জানো ম্যাম পাপা কোনদিন ও আমার বার্থ ডে সেলিব্রেট করে না। আমার একদম ভাল লাগে না । আমার সব ফ্রেন্ড রাই বার্থ ডে সেলিব্রেট করে । ম্যাম আমিও বার্থ ডে সেলিব্রেট করব।
.
.
পূর্ণতা আমাকে জাপটে ধরে খুব করে কান্না জুড়ে দিল ।
আমার লোকটার প্রতি রাগ আরো বেড়ে গেল। লোকটার আসলেই মেয়ের প্রতি কোন দায়িত্ব জ্ঞান বোধ নেই। শুধু ভাব দেখানো আছে আমার মেয়ে আমার মেয়ে বলে। কাজের বেলায় কিচ্ছু নেই। ছোট মানুষ শখ করেছে বার্থ ডে সেলিব্রেট করার। অথচ উনি নাকি না করে দিয়েছে।। এ পর্যন্ত এক বার ও মেয়েটার বার্থ ডে পালন করে নি। এটা একটা হলো ।
কি হারে কেদে যাচ্ছে মেয়েটা।
.
.
অনেক ভেবে চিন্তে নিজেই প্ল্যান করলাম।
ওকে বললাম আর কেউ না করুক আমি আর তুমি মিলে এবার তোমার বার্থ ডে সেলিব্রেট করব ।ওকে???
.
—সত্যি ম্যাম??
— ম্যাম কখনো মিথ্যা বলে???
— থ্যাংক ইউ ম্যাম।
— শুধু থ্যাংক ইউ দিলে হবে না। পাপ্পি দাও
— উম্মা
.
.
পরের দিন আমি স্কুল ছুটি নিয়ে রেখেছিলাম।। পূর্ণতাকেও বলে রেখেছি ওর বাবা ওকে স্কুলে দিয়ে যাওয়া মাত্রই ও যেন আমার কাছে চলে আসে। আমি মাঠেই দাড়িয়েছিলাম।
.
.
কথা মতো ও চলে আসল। ওর সাথে ঠিক করলাম পুরো স্কুল টাইম আজ দুজনে ঘুরব। পূর্ণতার ফেভারিট জায়গা গুলো তে। তারপর কথাও বসে কেক কাটব। আর স্কুল ছুটির সময়েই স্কুলে ফিরে আসব। এমনিতেও ওর বাবা ওকে নিতে আসতে দেরি করে । তো এসে সে তার মেয়েকে স্কুলেই দেখতে পাবে।
তো এক ঢিলে দুই পাখি ও মারা হয়ে যাবে। মেয়েটার বার্থ ডে ও সেলিব্রেট করা হবে, আর ওর বাবা কিছু জানতে ও পারবে না ।
পূর্ণতা ও খুব খুশি হবে। ইদানিং মেয়েটার খুশি যেন আমার ও খুশি হয়ে উঠেছে ।
.
.
যা ভাবা তাই কাজ। পূর্ণতা কে নিয়ে প্রচুর ঘুরলাম । তারপর ওর পছন্দ মতো কেক নিয়ে দুজ্ন মিলে কেক কাটলাম। কেক কেটে সে কি খুশি মেয়েটা। আমাকে জড়িয়ে ধরে কতগুলো যে চুমু দিল তার কোন হিসেব নেই।।।
— Mam you are the best...ম্যাম তুমি পাপার চেয়েও অনেক ভালো ।
— হুম,,মা চলো এখন ফিরতে হবে ।পাপা এসে যাবে তাছাড়া
— ম্যাম তুমি আমার মা হবে?
— আমি তো তোমার মায়ের ই মতো সোনা।
— ম্যাম আমার পাপা কে বিয়ে করবে তুমি??
— কিহ??
— হ্যা বিয়ে হলে মা হয়।
— এই পাকনা বুড়ি কি সব বলছ?? তুমি বোঝ এসব কথার মানে কি??
— হ্যা ম্যাম। আমি জানি বিয়ে হলেই মা হওয়া যায়। আমি টিভিতে দেখেছি। আমার পাপাকে বিয়ে করলেই তুমি আমার মা হবে । আমার পাপা তো বিয়ে করে নি তাই আমার কোন মা নেই
— ওরে পিচ্চিরে তোর পাপা বিয়ে করে নি তাই না??! তাহলে তুই মা ছাড়া এলি কোত্থেকে?? আর হাসতে পারছি না আমি সোনা পাখি।
— হ্যা,, পাপা বিয়ে করলে তো মা থাকত ই আমার। কেন মা ছাড়া আসা যায় না ম্যাম??
— নাহ। তুমি কেক খাও তো ।ওসব অত কিছু তোমার বুঝতে হবে না ।
.
.
ফেরার পথে জ্যামে আটকে গেলাম। ফিরতে প্রায় কিছুক্ষণ দেরি হয়ে গেল।। ভাবলাম ওর বাবা তো আরো লেট করে আসে সো প্রবলেম হবে না।
.
.
কিন্তু কথায় আছে না যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয় ।।
.
হলো ও তাই । স্কুলে পৌছে দেখি স্কুল অলরেডি ছুটি হয়ে গেছে । ভালো কথা ।।।আমি ভাবলাম স্কুল ছুটি হয় হোক। পূর্ণতার বাবা আসতে তো নিশ্চয় আরো দেরি করবে।।
.
কিন্তু না...আজ কোত্থেকে যেন মহাশয় আগেই উপস্থিত।। স্কুলের গেট এর সামনে ওর বাবার গাড়ি দেখেই আমার কলিজা যেন শুকিয়ে উঠল।। আজ আমি শেষ।।
.
.
পূর্ণতা কে নিয়ে রিক্সা থেকে নামতেই দরোয়ান বলল,
— ম্যাডাম আপনি ইনায়া কে কই পেলেন? ওর বাবা তো ওকে হন্যে হয়ে খুজলো এতক্ষণ। যাও ইনায়া তোমার বাবা অফিস রুমে এখ্ন বোধ হয় ।
.
.
আমি ইনায়া কে কোলে নিয়ে এক পা দু পা করে হেটে হেটে অফিস রুমে ঢুকলাম।।
.
.
— Again this psycho lady....
বলেই হ্যচকা টান দিয়ে পূর্ণতা কে আবার আমার কোল থেকে নিয়ে নিল।
.
.
— আপনারা এই সব সাইকো কে কি দেখে জব দেন টিচার হিসেবে??? She is totally a psycho...সেই প্রথম দিন থেকে আমার মেয়েকে নিয়ে টানাটানি শুরু করেছে । আর আজ তো একদম উধাও হয়ে গিয়েছিল । ভাগ্য ভালো আমার মেয়েটার কিছু করে দেয় নি এই সাইকো লেডি।
.
— পাপা তুমি ম্যাম কে কিছু বলো না ।
.
— এই চুপ একদম চুপ। ম্যাম ম্যাম করে মাথা খারাপ করে দিচ্ছ তুমি দিন দিন।
.
— ইফ্তি সাহেব আ...আমি আসলে সরি।
— কিসের সরি?? আপনি সরি ও বলতে পারেন?? বাহ।।। কোথায় নিয়ে গিয়েছিলেন আমার মেয়েকে শুনি??
— একটু বে...বেড়াতে। আর ওর বার্থ ডে সেলিব্রেট করতে।
— ওয়াও। আমার মেয়ে আমাকে না জানিয়ে স্কুল থেকে যেখানে ইচ্ছা সেখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর স্কুল অথুরিটি বসে বসে আঙুল চুষছে।।।
— মিস অয়নী আপনার থেকে আমরা এটা আশা করি নি।। আপনি স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে এভাবে.(হেড স্যার)
— সরি স্যার। আর হবে না এরকম।
— এই শুনুন আমি আমার মেয়ের আশে পাশেও যেন আপনাকে আর না দেখি।।। তাহলে কিন্তু আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না । আপনি নিজে একটা পাগল আর আমার মেয়ে টাকেও পাগল বানানোর ধান্দা শুরু করেছেন তাই না??
— দেখুন মি.ইফ্তি আমি কিন্ত আপনার মেয়ের একটু খুশির জন্য ই...
— আমার মেয়েকে নিয়ে এত মাথা ঘামাবেন না আপনি।প্লিজ এটুকু উপকার আমার করুন।। ওর কিসে খুশি কিসে অখুশি সেটা আমাকেই দেখতে দিন।
.
.
গত কয়েক দিন ধরে পুর্নতা স্কুলে আসছে না। মেয়েটাকে সত্যিই ইদানিং ভীষণ মিস করি। ওর ম্যম ডাক টা ওকে কোলে নেয়া ভীষণ মিস করি।
কি আর করার মিস করার অভ্যাস তো আর নতুন কিছু না। এসব এখ্ন পুরনো অভ্যাস হয়ে গেছে ।
.
.
রাতে ডিভোর্স পেপার টা বের করে দেখছিলাম আর এক বার। ভাবছি আর বেধে রাখব না অহন কে।
কি দরকার এই আধ ছেড়া সম্পর্কের? ছিড়েই যাক ...
.
.
এরই মাঝে দরজায় কলিং বেল বাজল। এত রাতে কে আসবে ...
অহন না তো??? ভাগ্যিস সিগনেচারটা করিনি...
.
.
.
চলবে..........................