অন্তর্দ্বন্দ্ব - পর্ব ১৪ - সাবরিনা ইমরান - ধারাবাহিক গল্প


-সিদ্দিক ভাই,কিছু কথা ছিলো।

-বলেন স্যার।

সোহেলের এরকম প্রশ্ন করতে ভীষণ অস্বস্তি লাগছে। মুনা যেভাবে জোর গলায় বলেছে,সে একেবারে ফেলেও দিতে পারছে না কিছু।সিদ্দিক এ বাসায় প্রায় পনেরো বছর ধরে আছে।বিশ্বস্ত মানুষ,তাই সোহেল তার কাছেই সব জিজ্ঞেস করতে গেলো।

-আচ্ছা বলো তো,ভিনা কি দুইদিন আগে রাতে বেড়িয়েছিলো?না মানে আমার শরীর টা খারাপ ছিলো তো,তা দেখে কোথায় যে গেলো,মুনাও খেয়াল করেনি।

-না স্যার,ভিনা তো কোত্থাও যায় নাই।

-আচ্ছা,যাক নিশ্চিন্ত হলাম,আসলে ঘরে ঔষুধ ছিলো না তো,পরে ভাবলাম ও আবার গেলো নাকি বাইরে।

-হ বুজছি স্যার।মাইয়া তো,বাপের লেইগা মায়া থাকবোই।হেরে কইবেন কোনো দরকার হইলে যেন আমারে কয়। 

-তাতো অবশ্যই।

স্বস্তির নিঃস্বাস ফেলে সোহেল গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে গেলেন।মুনার অযথা বাড়াবাড়ি এখন তাকে চিন্তিত করে ফেলছে।কিছু একটা করতে হবে।

সিদ্দিক গাড়ি বের হওয়ার পরই সিটে বসে পড়ে। সে খুব ভালোমত জানে সোহেল বানিয়ে বলেছে যে সে অসুস্থ ছিলো,তবুও সিদ্দিক কিছু জানায়নি।কারণ সে যখন দেখেছে যে ভিনা কারো সাথে হাঁটছে,তখন দূর থেকে ভিনার পিছু গিয়েছিলো।আপত্তিকর কিছু চোখে পড়েনি দেখে জানায়ও নি। সে মেয়েটার কষ্ট বুঝে।মা হারিয়ে একটু বিপথ হলেও নষ্ট হবে না তার বিশ্বাস। ভিনার মা শিউলি যথেষ্ট ভালো মহিলা ছিলেন।সিদ্দিকের এপেন্ডিসাইটিস অপারেশন পুরো খরচ তিনি বহন করেছিলেন।শুধু একারণেই যে সিদ্দিক তাকে পছন্দ করে তা না,উনার ব্যবহারও অনেক ভালো ছিলো।


আজকে বেশ কয়েকদিন পর ভিনা কোচিং এ এলো।যাবির দেখে অবাক হলো,কারণ এখনো সেলাই কাটা হয়নি।

-বাহ্,আজকে আসছো?

-হুম,ঘরে বসে থাকার চেয়ে কোচিং এ আসাটাই ভালো মনে করলাম। 

-সবুজকে জিজ্ঞেস করো,তোমার ব্যাগ কোথায় দিয়ে দিবে। 

ভিনা ব্যাগ কালেক্ট করে ক্লাসে চলে গেলো।যাবির খুব সুন্দরমত ক্লাস নিলো,ক্লাস শেষে যাবিরকে ডাক দিলো ভিনা।

-কিছু কথা ছিলো আপনার সাথে।

-হ্যাঁ? 

-কিছু কথা ছিলো তোমার সাথে।

যাবির হালকা হাসি দিয়ে বললো বলো।

-আপনার,না মানে তোমার ফ্রেন্ড তানভির কেমন?

-কেন?

-বলো না।

-আগে বলো কেন জানতে চাচ্ছো?

-দরকার আছে।

-তুমি পছন্দ করো?

-আরে না!

যাবিরের কেন জানো মনে হলো,ওর বুক থেকে একটা পাথর নেমে গেছে।

-তাহলে?

-নওমির জন্য জানতে চাচ্ছি।

-সিরিয়াসলি!?নওমি পছন্দ করে তানভির কে?

-এত জানি না।

-আশ্চর্য,না জেনে এ কথা কেন জানতে চাচ্ছো?

-মেয়ে বড় হয়েছে,সারাদিন টইটই করে বেড়ায়,একটা ভালো ছেলে দেখে গলায় বেঁধে দিতে চাচ্ছি।

-তাহলে বলতে হয় একটু অপেক্ষা করতে হবে,ছেলে গলায় এই ভার নেয়ার উপযুক্ত হয়নি।

-চলবে,এখন জানাশোনা হোক,মর্ডান যুগ,পোলাপান নিজেরাই পছন্দ করে নেয়।

-তা তো ঠিকই বলেছো।তোমার চিন্তা ঠিকি আছে।

-তাহলে দেরি না করে নাম্বারটা দাও।
 
ভিনা নাম্বার নিয়ে চলে গেলো, যাওয়ার আগে বলে গেলো-

-এইযে মি.যাবির,ছেলে ভালো হবে তো?

-একদম ভালো হবে,কোটিতেও এমন ছেলে পাওয়া যাবে না।

-ভালো না হলে কিন্তু মাথাটা আস্ত থাকবে না।

-আমিই কেটে দিয়ে দিবো।

ভিনা হাসতে হাসতে চলে গেলো।

যাবির নিজের এই ব্যবহারে অবাক হলো,কারণ সে সবসময় প্রেম জাতীয় ব্যাপার থেকে হাজার হাত দূরে থেকেছে।কাপল দেখলেই ওর ইচ্ছে করত ব্রেক আপ করিয়ে দিতে,ও ভেবে পেত না এত ন্যাকার টাইম মানুষ কীভাবে পায়,জীবনের কুৎসিত দিক কি তাদের ছোঁয় না?আজকে কিনা নিজেই নিজের ফ্রেন্ডের প্রেম করিয়ে দিচ্ছে!কি ভয়াবহ ব্যপার!


সোহেল মুনার নাম্বার ব্লক করে রেখেছে।মুনা ভেবে পাচ্ছে না সত্যি জানার পরও কীভাবে সোহেল তার সাথেই মিসবিহেভ করে যাচ্ছে,নাকি সে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজনই মনে করেনি। এত কিছু ভেবে নিজের মধ্যে একটা চাপ অনুভব করছে মুনা।তার কি সংসার করা হবে না?জীবনে কখনো প্রেম আসে নি তার,তাই হয়ত বিয়ের পর সোহেল কেই জীবনের সব মনে হয়,এত খারাপ আচরণের পরও নিজেকে বেহায়ার মত মেলে দিতে ইচ্ছে করে,অথচ পরিবারে সে আর যাই হোক না কেন,ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন একজন ছিলো।নিজের ব্যক্তিত্ব আর আত্মসম্মানের কাছে ভালোবাসার ওজন মেপে নেয় মুনা। এভাবে যে আসলেই চলছে না।বয়স বিশের পর থেকেই সে শুধু যুদ্ধই করেই যাচ্ছে। মানুষের কথা শুনে শুনে জীবন তিতা হয়ে গেছে।সামান্য ভালোবাসার হাহাকার ছিলো,সৎ মেয়ের জন্য সেটাও ভাগ্যে নেই।তাই ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিলো মুনা।


নওমি ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে।ভিনা তানভিরের নাম্বার পাঠিয়েছে।মেসেজে লিখা 'ধ্বংস হ'। মেয়েটার হাবভাব বুঝা মুশকিল,কখন ওর মনে কী চলে আন্দাজ করা যায় না।এই গত রাতে বললো প্রেম কত বড় জীবন নাশক ব্যাপার,আজকে তানভিরের নাম্বার পাঠিয়ে বসে আছে।কিন্তু যেহেতু ভিনা দিয়েছে,তার মানে ধরা যেতে পারে তানভির ভালো।কিন্তু ভালো মন্দের এই ব্যাপার টা নিয়ে নওমির মাথায় নানা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে,কারণ শেষ মেষ ভিনা তার বয়সীই।সব চিন্তা বাদ দিয়ে,নওমি মেসেজ দিলো
'হাই'
.
.
.
চলবে....................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন