রাতে ডিভোর্স পেপারটা বের করে দেখছিলাম আর এক বার। ভাবছি আর বেধে রাখব না অহন কে।
কি দরকার এই আধ ছেড়া সম্পর্কের? ছিড়েই যাক ...
.
.
এরই মাঝে দরজায় কলিং বেল বাজল। এত রাতে কে আসবে ...
অহন না তো??? ভাগ্যিস সিগনেচার টা করি নি...
.
.
দৌড়ে গিয়ে দরজা টা খুলে দিলাম। আর মনে মনে ভাবলাম ঠিক কি কি বলে গালি দেব ওকে।। আজ সারারাত ঝগড়া করব।
.
.
— মিস অয়নী ,,আমার মেয়েটা..
— ইফ্তি সাহেব আপনি ?? এত রাতে??? দেখি দেখি পূর্ণতার কি হয়েছে ??
— মেয়েটা আমার ভীষণ কান্নাকাটি করছে । জ্বর ও অনেক।। বার বার আপনার কথা বলছে।জেদ করছে ভীষণ। না পেরে আমি বাধ্য হয়ে ...
— দেখি দিন ওকে আমার কোলে দিন। নাকি আজও সমস্যা আছে ? হ্যাচকা টান দিয়ে আবার নিয়ে নেবেন?
.
.
— ম্যাম...
— এসো সোনা এইত আমি।কি হয়েছে বাবু??
.
ওকে কোলে নিতে নিতে বললাম
.
— ম্যাম আমি তোমার কাছে থাকব।
.
আমি ওর বাবার দিকে তাকালাম।
— পূর্ণতা, মা আমার ম্যামের কাছে কিভাবে থাকবে তুমি?? চল বাড়ি যাব আমরা এখ্ন। ম্যামের কাছে আসতে চেয়েছিলে এনেছি তো । চলো চলো আমরা এখ্ন বাড়ি ফিরব
— না পাপা আমি আজ ম্যামের কাছেই থাকব।তুমি চলে যাও।
.
— দেখুন ইফ্তি সাহেব আপনার মেয়ে এক রাত আমার কাছে থাকলে এমন কোন মহাভারতঅশুদ্ধ হবে না।। আর আমি এই মাঝ রাতে আপনার মেয়েকে নিয়ে পালিয়েও যাব না কোথাও কথা দিলাম। ছোট মানুষ । এক রাত থাকতে চেয়েছে । থাকতে দিন না একটু। আপনি তো রোজ ই ওকে নিয়ে থাকেন।
.
— না না ।এটা কেমন দেখায়। আর আপনি ওর ঝামেলা ই বা নেবেন কেন? ও আপনার কাছে যাবে যাবে করে জেদ শুরু করে দিয়েছিল তাই আমি বাধ্য হয়ে ..
— এখ্ন ও তো আমার কাছে থাকার জন্য জেদ করছে। এখ্ন ও না হয় বাধ্য হয়েই রাখলেন আমার কাছে একরাত।
— আপনার কোন প্রবলেম হবে না?? আপনার বাড়ির লোকজন...
— না ওরা কিছুই ভাববে না । আপনি আসুন আমার সাথে ।
.
.
পূর্ণতা কে কোলে নিয়ে আমার রুমে এলাম। ভদ্র লোক গেটেই দাড়িয়ে থাকল মাথা নিচু করে ।
.
আমি বাবাকে সব খুলে বললাম। বললাম পূর্ণতা আমার স্টুডেন্ট।বাচ্চাটার মা নেই। ও আমার মাঝেই ওর মা কে খোজে ।মেয়েটার জ্বর খুব বেশি ।ওর আমাকে প্রয়োজন। জ্বরের ঘোরে বার বার আমাকে ডাকছে। ওর বাবা একা সামাল দিতে পারছে না ।
.
.
বাবা এসব শুনে ইফ্তি সাহেব কে অনেক বার ডাকলেন বাড়ির ভেতর আসার জন্য । উনি আসলেন ই না।। উনার সেই এক কথা,এত রাতে এভাবে অপরিচিত কারো বাড়িতে থাকা খারাপ দেখায় । আশে পাশের লোক জন অন্যকিছু ভাবতে পারে । আপনারা শুধু আমার মেয়েটাকে থাকতে দিন । আমি সকালে এসেই ওকে নিয়ে যাব।
.
.
ভদ্র লোক বাড়ির বাহিরে গাড়িতে বসেই সারারাত কাটিয়ে দিলেন।আমি বেলকনিতে কয়েক বার গিয়ে লক্ষ্য করলাম।
.
.
পূর্ণতা কে রাতে প্রায় অনেক্ষন জলপট্টি দেয়ার পর ওর জ্বর বেশ কমে গেল।ও আমাকে জড়িয়ে ধরে ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে পড়ল।ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে নিজেকে কেমন যেন আজ মা মা লাগছিল।
আমার আর অহনের বাবুরা পৃথিবীতে আসলে ওরা অসুস্থ হলে হয়ত এভাবেই সেবা করতাম। তখন অহন ও থাকত আমার পাশে । নিশ্চয় ও ইনায়ার বাবার মতো ই টেনশন করত বাবুকে নিয়ে ।
.
কে বলেছে জন্ম না দিলে মা হওয়া যায় না? এইত আমি এক রাতের জন্য ইনায়ার মা। পূর্ণতার মা। পূর্ণতা যেন আমার মাতৃত্বের পূর্ণতা । হোক না একরাতের জন্য । ক্ষতি কি??? কি সুন্দর ছোট্ট ছোট্ট হাতে আমাকে আকড়ে ধরে আছে। মনে হচ্ছে ওর যত শক্তি দিয়ে আমাকে জাপটে ধরেছে।
.
.
সকাল বেলা ড্রইং রুমে কথার আওয়াজ শুনে এগিয়ে গিয়ে দেখি ইফ্তি সাহেব বাবার সাথে বসে বসে চা খাচ্ছেন আর গল্প করছেন। আমার দিকে চোখ পড়তেই উনি উঠে দাঁড়ালেন
— পূর্ণতা ঘুম থেকে উঠেছে???
— না । অনেক রাতে ঘুমিযেছে। আর একটু ঘুমাক।
— ও কেমন আছে এখ্ন?
— জ্বর নেই আর।
— আমি বরং ওকে নিয়ে যাই এখন। আপনি একটু এনে দেবেন ওকে?
— এখ্ন ই নিয়ে যাবেন মানে টা কি??? বললাম তো অনেক রাতে ঘুমিয়েছে। আর একটু ঘুমাক। কেবল সকাল ছটা বাজে।এত তাড়া কিসের আপনার? আপনার অফিস থাকলে আপনি যান না।পরে এসে নিয়ে যাবেন। আজ সারাদিন ও আমার কাছেই থাকবে।
— আমি আমার মেয়েকে ছাড়া এতক্ষণ থাকতে পারব না । এমনিতেই সারারাত দেখি নি মেয়েটাকে।.
.
— তো দেখতে কে মানা করেছে?
— মানে?
— আসুন আমার রুমে। ওর পাশে কিছুক্ষণ বসে থাকবেন।
— না থাক।
— আসুন। ও রাতে আপনার কথা ও বার বার বলেছে।
.
.বাবা আমার সাথে যেতে বলায় ইফ্তি সাহেব আমার পেছনে পেছনে এলেন । এসে ঘুমের মেয়েকেই জড়িয়ে ধরলেন।
.
.
— আমি actually ই বলে যে আপনাকে ধন্যবাদ দেব। অনেক জ্বালিয়েছে তাই না সারারাত?
— না ও খুব লক্ষি একটা মেয়ে ।
— হ্যা শুধু আপনার কাছে থাকলেই লক্ষি থাকে ।
— বাচ্চাকে লক্ষি রাখাও জানতে হয় ।
— হ্যা মেনে নিলাম আমি কিচ্ছু জানি না । কিন্ত আমি আমার মেয়ের জন্য সব করতে জানি। আর আমার মেয়েকে অনেক ভালোবাসতে জানি।
— হুম। আমি বাবা সাইকো লেডি। আমি এসব জানি না। আমি শুধু অন্যের বাচ্চা নিয়ে টানাটানি করতে জানি ।।
— আমার কথা গুলোর জন্য আমি সরি। কিন্ত একটা সত্যি কথা বলি আমার কেন যেন মনে হয় আপনার সাইকোলজিকার ডিজঅর্ডার আছে।
— কেন আপনি কি ডক্টর?
— জ্বি না । আপনি হুট হাট এমন সব কান্ড করে বসেন তাই...
— হুম। তা আপনি আমার বাড়ি চিনলেন কিভাবে??
— মেয়ের জন্য এটুকু পারব না??
— মেয়েকে খুব ভালোবাসেন তাই না??
— জ্বি।
— সব বাবারাই তাদের বাচ্চা কে খুব ভালোবাসে তাই না?? বাচ্চার জন্য সব করতে পারে?? আর সবাইকে ছাড়তেও পারে তাই না??
— আমার তো তাই মনে হয়। আমি নিজেই আমার মেয়ের জন্য তাই করতে পারি।
— হুম।
— আপনি যখন মা হবেন আপনিও ব্যাপার টা বুঝবেন।
— আচ্ছা আপনি কি সত্যিই ইনায়ার বাবা?
— এখনো সন্দেহ?
— সন্দেহ তো আপনার মেয়ে ই ঢুকিয়ে দিয়েছে। ও বলে আপনি নাকি এখনো বিয়ে করেন নি??
— আপনি ওর কথা এখনো গুরুত্ব দেন?? ওর কথার গুরুত্ব দিতে গিয়েই কিন্ত প্রথম দিন ....
— হা হা । থাক সেসব আর মনে না করি ।
— আসলে ও মার সাথে সারাদিন সিরিয়াল দেখে দেখে বেশি পেকে গেছে।
— হুম। ও তো সিরিয়ালের মতো আপনাকে বিয়ে দিতে চায়। বলে বাবার বিয়ে হয় নি তাই আমার মা নেই।
—আচ্ছা আপনি কি কালা জাদু জানেন?? আমার মেয়েটা আপনার সাথে এত ফ্রি হলো কিভাবে? ও তো আপনাকে ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না । আগে আমাকে ছাড়া কিচ্ছু বুঝত না। সেই আমাকেও এখন পাত্তা দিতে চায় না আপনার জন্য ।পুরো বশ করে ফেলেছেন ওকে।
— সত্যিই যদি কালো জাদু জানতাম সত্যি খুব ভাল হত। আপনার মেয়েকে না অন্য এক কাউকে বশ করে ফেলতাম আমি। আর আমার জেলখানায় কয়েদ করে রাখতাম
— অহ আচ্ছা এই ব্যাপার তাহলে
— এই যে শুনুন আপনি যেমন ভাবছেন তেমন কোন ব্যাপারই নয় কিন্তু।
— না না ঠিক আছে আমি তেমন কিছু ভাবিনি।
— আমি আপনাকে যতটা রাগী ভেবেছিলাম আপনি ততটা রাগী নন দেখছি। রসিক বটে ।।।
— আমিও আপনাকে যতটা সাইকো ভেবেছিলাম ততটা সাইকো নন আপনি। বশি করন জাদুকরিনি ও বটে।।
.
.
পরদিন স্কুল ছুটির পর ভাবলাম পূর্ণতা কে একটু দেখতে যাই ।
শুক্ল থেকে ওর বাড়ির ঠিকানা নিয়ে নিলাম।
.
.
ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে
রিক্সা নিয়ে দাড়াতেই দারোয়ান জিজ্ঞেস করল,কাকে চাই?
— জ্বি,,,পূর্ণতা মানে ইফতেখার সাহেব এর বাড়ি তো এটা?
— হ্যা ।।
— আমি পূর্ণতার ম্যাম
.
.
দারোয়ান বাড়িতে ফোন করে সিওর হয়ে তবেই আমাকে ঢুকতে দিল।
.
বাড়িতে ঢোকার সাথেই এক ভদ্র মহিলা হাসি মুখে আমার দিকে এগিয়ে এলো ।
.
— ও তুমিই তাহলে ইনায়ার অয়নী ম্যম
— জ্বি। আস সালামু আলাইকুম
— ওয়া লাইকুম আস সালাম মা। তুমি করে বললাম বলে কিছু মনে করো নি তো??
— জ্বি না আন্টি।আমি তো আপনার মেয়ের ই মতো । পূর্ণতা কেমন আছে এখ্ন?
— ও ভালই আছে। ইফ্তির সাথে ঘুমোচ্ছে। দাড়াও ডেকে দিই ওদের
— না না থাক ঘুমোক । ওর তো ঘুমের প্রয়োজন আছে। আন্টি এই ফ্রুটস গুলো পূর্ণতার জন্য । আর ওর কিছু পছ্ন্দের খাবার আছে।
— এখ্ন বুঝতে পারছি ইনায়া কেন তোমার এত প্রশংসা করে । সারাদিন তোমার কথা ই বলে।খুব খেয়াল রাখো দেখছি
— আন্টি আমার ছোট বাচ্চা খুব ভালো লাগে । ওদের খেয়াল রাখতেও খুব ভালো লাগে এই আর কি।.
.
.
ভদ্র মহিলা খুবই আন্তরিক। আমি চলে আসতে চাইলাম ।জোর করেই আমাকে বসিয়ে রাখলেন। আর কত রকম যে গল্প জুড়ে দিলেন। ।।।
.
.
কথায় কথায় পূর্ণতার মাকে দেখার অনেক ইচ্ছে হলো। আন্টি কে বলার সাথে সাথেই উনি এলবাম নিয়ে এসে সব পুরনো থেকে নতুন ছবি পর্যন্ত দেখাতে শুরু করলেন।
.
.
— বাহ আন্টি পূর্ণতার মা আপু তো অনেক সুন্দরী ছিল । দুজন ই দেখছি একদম খাপে খাপ।
— হুম। আমার ছেলে কি আর সেই ছোট বেলা থেকে এমনি পাগল হয়েছিল সানিয়ার জন্য । শেষ পর্যন্ত এস এস সি পরীক্ষার আগের রাতে বিয়ে করে এনেছিল পাগল টা ওকে ।
— কি বলেন আন্টি?? এত ছোট বয়সে বিয়ে??? আপনারা মেনে নিয়েছিলেন???.
.
.
— হ্যা মেনে নিয়েছিল তিন বছর ডান্ডা বারি দেয়ার পর ।। .
ইফ্তি সাহেব হাসতে হাসতে পেছন থেকে এসে বলতে বলতে বসলেন।
.
— সিরিয়াসলি ইফ্তি সাহেব?? এস এস সি ?? নাকি এইচ এস সি???
— এস এস সি... বয়স্ক লোক রা যাকে মেট্রিক বলে।
— তাই বলে..সনিয়া আপু তখন কোন ক্লাসে পড়ত??
— আমাদের সেম এজ রিলেশনশিপ ছিল।
— ওয়াও সো interesting...তো আপনারা রিলেশন করতেন কোন ক্লাস থেকে?? রিলেশন করার বয়সের আগেই তো বিয়েও সেরে নিয়েছিলেন।।।হা হা
— আমরা তো কে জি থেকেই একই স্কুলে পড়তাম। ফ্রেন্ডশিপ ও তখন থেকেই । এখ্ন প্রেম পিরিতি যে কবে হয়ে গেছে তার হিসেব কেউ জানে না । হুট করে ও জেদ ধরে বসল সেদিন ই বিয়ে করবে আর আমিও সাত পাচ না ভেবে বিয়ে করে ফেললাম।
.
.
— আন্টি আপনার ছেলে তো দেখছি একদম প্রেমিক পুরুষ রহিম মিয়া। এই সরি সরি হ্যা ।বাট আমি ভীষণ মজা পেয়েছি ।প্লিজ কিছু মনে করবেন না ।
— আরেহ না । ফ্রেন্ড সার্কেল এর সবাই আমাদের নিয়ে হাসত। এসব ই বলে খেপাত। আমার অভ্যাস আছে এসব শুনে।
— যদি কিছু মনে না করেন সানিয়া আপুর কি হয়েছিল বলা যাবে কি?
— সানিয়া পূর্ণতা কে উপহার দিতে গিয়ে আমায় অপূর্ণ করে চলে গেছে । পাচ বছরের ম্যারিড লাইফ হলেও ও আমার কাছে ছিল মাত্র দু বছর। অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে আমাদের দুজনের ফ্যামিলি ই মেনে নিল। তারপর এক সাথে সংসার। কত শখ করেছিল ইফ্তি আর সানিয়ার মেয়ে হবে ইনায়া। ইনায়া ঠিক ই আসল সানিয়া চলে গেল ।। তখন আমি সবে সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট। পূর্ণতা আমার বাচ্চা কালের বাচ্চা।। anyways আপনারা কথা বলুন । আমি দেখি পূর্ণতা ঘুম থেকে উঠলো কি না।
.
.
ইফ্তি সাহেব উঠে চলে গেলেন।
.
— আন্টি আমি মনে হয় উনার মনটা খারাপ করে দিলাম। আমি আসলে বুঝ্তে পারি নি। কথায় কথায় জিজ্ঞেস করে ফেলেছি।
— না মা। ও ঐ রকম ই। আগে অনেক বেশি মন খারাপ করে থাকত। ধীরে ধীরে মেয়েকে নিয়ে থাকতে থাকতে স্বাভাবিক হয়ে গেছে ।। কত বার বিয়ের জন্য বুঝিয়েছি। কত বোঝাই এখনো সারাজীবন পড়ে আছে । জীবন টা আবার গুছিয়ে নে। কিন্তু না,,, এসব বললে তার রাগ দেখে কে। মেয়েকে নিয়েই সারা জীবন কাটিয়ে দেবে এটাই তার সিদ্ধান্ত।
— অনেক বছরের সম্পর্ক যে আন্টি। যদি এক দু বছরের হত আবার যদি এরেঞ্জড ম্যারেজ হত তাহলে হয়ত সহজেই ভুলে যেতে পারত। মাত্র দু বছরের সংসারের কথা ।
— মা ,এই কথা টা কিন্ত তুমি ভুল বললে। সম্পর্ক সময় দিয়ে বিচার করা যায় না । এক সেকেন্ড এর সম্পর্কের ও কিন্ত অনেক সময় হাজার বছরের সম্পর্কের চেয়ে বেশি জোর থাকে । আর লাভ ম্যারেজ এরেঞ্জড ম্যারেজ এক্ষেত্রে কোন ব্যাপার না । সম্পর্ক সম্পর্ক ই। কত লাভ ম্যারেজ দু দিনেই ভেঙে যাচ্ছে। আর এরেঞ্জড ম্যারেজ টিকে যাচ্ছে বছরের পর বছর । শুরু থেকে শেষ অবধি ।.
.
.
ছবি গুলো দেখতে দেখতে একটা ছবি তে গিয়ে চোখ আটকে গেল।।।
.
— আন্টি ইফ্তি সাহেব সানিয়া আপুর সাথে এটা অহন না???
— হ্যা। অনেক আগের ছবি তো এটা। ওদের হাই স্কুলে পড়ার সময়কার । অহন কে চেন তুমি?
— না একটু আকটু আর কি ।
— অহ। ইফ্তি আর অহন তো একদম ছোট বেলাকার বন্ধু। দুই জন দুইজনকে ছাড়া কিছুই বুঝত না । ওদের নাম ও তো একিই।কলেজে ওঠার পর ওর বাবা ট্রান্সফার নিয়ে চলে গেল তারপর আর দেখা হয় নি।ভালো কথা মনে করেছ। ছেলেটার খোজ অনেক দিন নেয়া হয় নি ।ইফ্তির সাথে যোগাযোগ আছে মনে হয় ।
.
.
উনি ইফ্তি সাহেব কে ডাকলেন। অহনের কথা জিজ্ঞেস করার জন্য । ভাবলাম যাক অনেক দিন পর ও কেমন আছে এটা তো জানতে পারব ।।
.
.
—অহনের ফোন তো সুইচড অফ বলছে। মে বি কন্টাক্ট নং চেঞ্জ করে ফেলছে । আমার ও অনেক দিন কথা হয় না ওর সাথে।। এক সময় দুই জন জানে জিগার ছিলাম ।কিন্তু দেখুন না সময় দুরত্ব ব্যাস্ততা কত দুরে ঠেলে দিয়েছে আমাদের।।। ও কনটাক্ট নং চেঞ্জ করে ফেলছে অথচ আমি জানি ও না ।। ও যে গোয়াড় টাইপের। ব্যস্ততার কারণে বেশ কিছু দিন কথা হয় নি। তাই নিশ্চয় রাগ করে নতুন নম্বর টা আমাকে দেয় নি।।।
— হ্যাঁ ও পুরনো সব কিছুই চেঞ্জ করে দিচ্ছে দেখছি ।
— মানে?
— কিছু না ।
— আচ্ছা আপনি ওকে চেনেন কিভাবে?
— অহন আমার দুসম্পর্কের সুসম্পর্ক।। অথবা সুসম্পর্কের দুসম্পর্ক।
— সরি????
— কিছু না । দুসম্পর্কের আত্নীয় হয় আর কি। অনেক দিন যোগাযোগ নেই । সেটাই বললাম।
— ওহ আচ্ছা। দেখুন না অহন আর ওর মতো কিছু বন্ধু ছিল বলেই এত ছোট বয়সে পালিয়ে বিয়ে টা সম্ভব হয়েছিল। অথচ ওর বিয়ের দাওয়াতে আমি ব্যাস্ততার জন্য যেতেই পারি নি। সে জন্যও কত রাগ। ওর বৌ এর পিক টা পর্যন্ত আমাকে দেখায় নি।।আপনি গিয়েছিলেন ওর বিয়েতে?? আপনি তো ওর রিলেটিভ।। ওর বৌ নাকি খুব সুন্দরী? পরি বৌ বলে নাকি ডাকে ও। হা হা।
— হ্যা গিয়েছিলাম তো । ।। তবে ওর পরি বৌ পরীর মত সুন্দরী না । হয়ত ওর কাছে পরীর মতো কিন্ত অন্যদের কাছে না।
— উহু। অহনের চয়েস এতটা খারাপ না আমি জানি । ।। মেয়েরা সাধারণত অন্য মেয়ের প্রশংসা করতে চায় না । তাই মে বি আপনিও।।।।
— পূর্ণতা কোথায়?? আমি ওকে একটু দেখে চলে যাব। অনেক দেরি হয়ে গেছে ।বাড়ি যেতে হবে ।
.
.
পূর্ণতা কে দেখে বাড়ি ফিরে আসলাম।
.
.
অহন ,,,অহন ,,,আর অহন।
.
নাম টা যতই ভুলতে চাই কোন না কোন ভাবে আমার সামনে আসবেই।।।
.
.আচ্ছা ওর ফোন সুইচড অফ কেন?? তাহলে কি আমি যেটা ভাবছি সেটাই???
ও আমার খোজ না নিল আমি তো একটা বার ওর খোজ নিতেই পারি । আইনত আমি এখনো তার স্ত্রী ।।
.
ও যে আমার সুখের মতো ব্যাথা।.....
.
.
.
চলবে..........................