সেন্ট্রাল হসপিটালের পাঁচ তালার বাইশ নম্বর রুমে মুনার বাবা এ্যডমিট।তার বাম দিক পুরো অচল হয়ে গেছে।কথাও জড়িয়ে বলছে,খুব বেশি রেস্পন্স দিচ্ছে না।মুনা সোহেলকে নিয়ে রুমে ঢুকতেই দেখে দোলা আর তার ভাই তারেক বসে আছে।দোলা একবার ফোলা চোখে তাকিয়ে ঘুরিয়ে ফেললো,সোহেলকে বসতে দিলো।সোহেল কী করবে বুঝতে পারছে না।হাতে থাকা ফল আর হরলিক্সের প্যাকেট দোলার হাতে দিয়ে সে বসলো।মুনার মার চোখ লাল হয়ে ফুলে আছে,সোহেল সামনে দেখে কিছু বলতে পারছে না,নাহলে ঠিকি গায়ে হাত তুলে ফেলত।মুনা ধীর পায়ে তার বাবার সামনে যেয়ে দাঁড়ালো, তার মনে হলো,এই মানুষটি বাঁঁচবে না।মুনা তার হাত ধরে চেয়ারে বসে আছে।বেশ কিছুক্ষণ যাওয়ার পরে মুনার বাবা চোখ খুললো।প্রথমেই উনি সোহেলকে খুঁজতে লাগলেন।সোহেল বেডের পাশে এসে দাঁড়ালে উনি ইশারায় বসতে বললেন,এরপর অনেক কষ্টে সোহেলের হাত হালকাভাবে ধরে কথা শুরু করলেন।
-সোহেল,আমার মেয়েটাকে ডিভোর্স দিও না বাবা।
-বাবা আপনি এখন এসব কথা বলবেন না,বিশ্রাম নিন,পরে কথা হবে।
-পরে আর সময় পাবো না,আমার মেয়েটাকে কাজের লোক বানায় রাখো,তাও রাখো,তাও রাখো.....
সোহেল আর কিছু বলতে পারলো না,মাথা নিচু করে রাখলো।
-বাবা,আমাকে কথা দাও,আমার মেয়েটাকে নিজের ঘরে রাখবা,কথা দাও বাবা।
-আমি কথা দিলাম আপনাকে, আপনার মেয়ের দায়িত্ব পালন করবো।
মুনার বাবা লতিফ সাহেব মলিন হাসি দিলেন,এই কয় লাইন বলতেই তার যেন শরীরের সব শক্তি খরচ হয়ে গেছে।সারারুমে থমথমে পরিবেশ।সন্ধ্যার দিকে এই পরিবেশেই লতিফ সাহেব মারা গেলেন।কেউ দাপিয়ে কাঁদলো না,শুধু সোহেল দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো।এই চাপিয়ে দেয়া সম্পর্ক আজীবন তাকে টেনে নিয়ে যেতে হবে।
•
কালকে ভিনার জন্মদিন,নওমির ইচ্ছা আছে মেয়েটাকে সারপ্রাইজ দেয়ার।ভালো একটা রেস্টুরেন্ট খুঁজে ছোট কেক কেটে সেলিব্রেট করলে বিষয়টা খারাপ হয় না।তখনি মাথায় আসলো তানভির কেও যদি ডাকা যায়?নিজেকে অনেক স্বার্থপর লাগছে,কিন্তু যদি সত্যিই তানভির আসে,খুব ভালো হবে।সাথে সাথে যাবিরকে ফোন দিলো নওমি।
-হ্যালো ভাইয়া
-বলো নওমি
-কালকে ভিনার বার্থডে,ওকে একটা সারপ্রাইজ দিতে চাচ্ছিলাম,হেল্প করবেন।
-আমি জানি কালকে ওর বার্থডে,ভালো হয়েছে তুমি প্ল্যান করছো কী হেল্প লাগবে বলো?
-ভালো রেস্টুরেন্ট কোনো?
-উম্মম,আচ্ছা জানাবো আমি,এসব বিষয় তানভির ভালো জানে,ওর থেকে জেনে জানাবো,আর বার্থডে তে ওকে নিয়ে আসলে কোনো সমস্যা হবে?
-না,কোনো সমস্যা না!
-ঠিক আছে,আমি মেসেজে সব জানিয়ে দিবো। কালকে দেখা হচ্ছে তাহলে।
-থ্যাংক্স ভাইয়া।
-ইউ আর ওয়েলকাম।
নওমি ফোন রেখে লাফিয়ে উঠলো।কালকে দেখা হচ্ছে তাহলে।যাবির ভাইয়া মানুষটা খুব ভালো।
যাবির ফোন রেখে দিয়ে ভাবলো তানভিরের কিছু না করেই চমৎকার একটা প্রেম হয়ে যাচ্ছে,এদিকে সে ভিনার সাথে ঠিকমত কথাও বলতে পারে না।জীবনের সবকিছুর মত এখানেও তার নিজের কষ্ট করেই সব আগাতে হবে।দিনশেষে কষ্টের ফল হাতে পেলেই সে খুশি।সব ভেবে হাতে থাকা টিউশনির লিফলেট গুলো আশে পাশে লাগিয়ে দিলো যাবির।
•
ভিনা প্রেজেন্টেশন রেডি করে বিছানায় শুয়ে পড়লো।ইদানিং অল্প কাজেই টায়ার্ড হয়ে পড়ে। ঠিকমত খাওয়াদাওয়া অনেকদিন হলো করে না।দুপুরে মুনা কোথায় যেন বেড়িয়েছে তাড়াহুড়ো করে,জানায়নি কিছু।মোমেনা খালা জানিয়েছে সে নাকি কাঁদতে কাঁদতে বেড়িয়েছে। মোমেনা খালা সবে দুইদিন হলো কাজ নিয়েছে এ বাসায়।দিনে দুইবার করে এসে সব কাজ করে দিয়ে যায়।তার এক মেয়ে কাজলা আরেক ছেলে আলামিন।ছেলে মাদ্রাসায় পড়ে।কাজলার বিয়ে হয়েছে এক বছর আগে। কাজলার মা হিসেবেই সে মূলত পরিচিত,তার যে আসল নাম মোমেনা এটা কেউ ই জানে না,তাই এই নামে কেউ তাকে ডাকে না ভিনা ছাড়া।কান্না করে বের হওয়ার কথা শুনে বেশ অবাক হলো সে। এখন প্রায় সন্ধ্যা,সারাদিন প্রেজেন্টেশন,লেখালেখি করেই কাটিয়েছে,সকালে নাস্তা করার পর আর খায়নি কিছু,রুমের বাইরের জগৎ থেকে সে একদমই বিচ্ছিন্ন।মুনাকে সে ঘৃণা করলেও এখন তার জন্য চিন্তা হচ্ছে।শত হোক,নিজের মায়ের একটা অংশ যে বয়ে বেড়াচ্ছে,তাই চাইলেও খুব খারাপ হওয়া সম্ভব না তার পক্ষে।সোহেলের ফোনে কল দিলো,কিন্তু রিসিভ করলো না কেউ-ই ।চিন্তা মাথায় নিয়েই সে বাইরে বেড়িয়ে গেলো।বিকালে হাঁটতে হাঁটতে কলোনিতে চলে আসলো।কলোনিতে গিয়েই যাবিরের কথা মনে হলো,ফোন দিলে কেমন হয়?
-হ্যালো,ফ্রি আছো?
-আছি,কিছু দরকার?
-হ্যাঁ, আসলে তোমার কলোনিতে এসেছিলাম।
-সূর্যাস্ত দেখবে আজকে?
-হয়ত
-কোথায় তুমি?
-কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে,মেইন গেটের বা পাশেই।
-আসছি আমি।
ভিনা ফোন রেখে পাশে তাকিয়েই লিফলেট দেখলো,সেটার ছবি জলদি করে মোবাইলে তুলে নিলো।
.
.
.
চলবে.............................................