পরিপূরক - পর্ব ২১ - স্পৃহা নূর - ধারাবাহিক গল্প


ও যে আমার সুখের মতো ব্যথা......
.
.
আচ্ছা অহন কি আমার সুখের মতো ব্যাথা???
নাকি ব্যাথার মতো সুখ?????
.
ফোন তো সুইচড অফ । কিভাবে খোজ নেব?? মা কে এক বার ফোন দেব? কি জিজ্ঞেস করব?? নাতি হয়েছে নাকি নাতনি?? ধ্যাত।। এইটা বেশি বেশি হয়ে যায়।
নাকি ওহি কে ফোন দেব? হু ...ওহি কে একবার ফোন দেয়াই যায়।।। আর যাই হোক মেয়েটার মন পরিস্কার। তবে কতটা পরিস্কার জানি না ।
.
.
অতপর ওহির ফোন ও সুইচড অফ।।। 
.
বাহ। কি মচেৎকার। নাহ নাহ সরি চমতকার। 
এরা দুইজন করছে টা কি আসলে? এরা কি কর্পূর নাকি ন্যাপথলিন?? হাওয়া হয়ে কই উবে গেল?? 
হাওয়া হয়ে যাওয়ার কথা তো আমার ছিল।।।।.
.
এভাবে আমাকে খোজ দিতে না চাইলেই হলো?? আমিও খোজ নিয়েই ছাড়ব। অন্তত ছেলে হয়েছে নাকি মেয়ে সেটাই জানব ।।।।
.
.
অনেক দিন সোস্যাল সাইট গুলো ইউজ করি না । ওদের আইডি ব্লক করে নিজের আইডি ও ডিএকটিভেটেট করে রেখেছি।
ওদের খোজ জানার এটাই একমাত্র উপায় এখন।।
.
.
ব্লক খুলে প্রথমে অহনের আইডি তে ঢুকতে চাইলাম । নাহ আইডি তো লক করা । সেই দুবছর আগের প্রোফাইল পিকটা ছাড়া আর কিচ্ছু দেখার উপায় নেই। ব্লক করার কারণে আনফ্রেন্ড হয়ে গেছি যে । আর এই ছেলেটাও প্রফাইলে ইচ্ছে মতো ছবি আপ্লোড করবে কিন্তু প্রোফাইল পিকচার সহজে চেঞ্জ করতে চায় না।
ওহির টাও লকড । ধুর। 
.
তবে ওহির আইডি লকড হলেও ওর প্রোফাইল পিকচার যেটুকু দেখা যাচ্ছে তাতে বোঝাই যাচ্ছে ছোট্ট একটা ছেলে পিচ্চিকে কোলে নিয়ে ছবিটা।।।  
অহ আচ্ছা ছেলে হয়েছে তাহলে।। 
শাশুমা তো তাহলে ভালোই খুশি।
কিন্তু পিকের ব্যাকগ্রাউন্ড দেখে তো মনে হচ্ছে এ দেশে না । এরা কি ছেলে হবার পর আবার সেকেন্ড হানিমুনে গেছিল নাকি?? নাকি দেশের বাইরে পার্মানেন্টলি চলে গিয়েছে? অহন তো আমাকে নিয়েও মাঝে মাঝে চলে যেতে চাইত। 
.
কি জানি?
.
.
জানিনাহ। তবে ছবি দেখে তো মনে হচ্ছে ওহি খুব হ্যাপি ই আছে। তার মানে অহন ও। ।
.
 ব্যাস আর কি খোজ নেব? শেষ ।।।।
.
.
সুখে থাক সুখ পাখিরা।
আর দুখে থাক দুঃখ পরীরা।।।।
.
.
কিছুদিন হলো পূর্ণতার নতুন বায়না শুরু হয়েছে। বিকেল হলেই আমাদের বাড়ি আসা তার তার চাই ই চাই।।।।
.
ওর বাবার তো ও সময় অফিস থাকে। তাই ওর দাদু মার সাথে রোজ ই আসে।।
ইদানিং পূর্ণতা কে নিয়ে বিকেল গুলো ভালোই কেটে যায় । বিকেল গুলো যেন পূর্ণ হয়ে যায়।। 
মার সাথেও আন্টির খুব ভাব হয়ে গেছে কয়েক দিনে। হবে না ই বা কেন? ইফ্তি সাহেবের মা আসলেই খুব মিশুক।
..
মার সাথে এই কয়েক দিনে কথায় কথায় আন্টি আমার ব্যাপারে সব জেনে গেছে ।। মানে আন্টি বিয়ে নিয়ে কি চিন্তা ভাবনা এই সব কথা প্রসঙ্গে জেনে নিয়েছে। অহনের নাম টা জানে না । আসলে নাম জানার তো প্রসঙ্গ ও ওঠে নি। 
 .
.
 আমিও আর নিজে থেকে ব্যাপার টা ভাঙাই নি। কি দরকার?  
অহনের অন্য রূপ এভাবে তাদের বলার? তারা যে তার ভালো রুপ টাই জানে অন্য সবার মতো । 
.
.
 আজ বিকেলে আন্টি এসে হুট করে আমাকে রিং পরিয়ে দিয়ে গেল।
.
আমাকে কিছু বলতে দেয়ার সুযোগ ই দেয়া হলো না ।
আমি যতই বোঝাতে চাইলাম আমি এখনো ম্যারিড। 
নাহ আমার মা আর আন্টি মিলে ততই বোঝাতে লাগল ও সম্পর্কের ।। যত তাড়াতাড়ি ডিভোর্স দেয়ার জন্য আবার আমাকে বোঝানো হলো দু জন মিলে।।। 
আমি এটাও জিজ্ঞেস করলাম ইফ্তি সাহেব এসব কিছু জানে কি না? 
.
ওসব নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না মা, তুমি শুধু রাজি হয়ে যাও।।। আমার ছেলেটা কে আমি বহু দিন পর তোমার সাথে মন খুলে হাসতে দেখেছি।।। ইনায়া তো তোমাকে ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না ।। তুমি তো ওর মা হয়েই উঠেছ। এবার পাকাপাকি ভাবে তোমাকে নিয়ে যেতে চাই আমাদের কাছে । ।।। তুমি ও ভাঙা সম্পর্ক আগলে ধরে আর কত দিন থাকবে মা?? অতীত ভুলে যাওয়াই শ্রেয়।সব কিছু নতুন করে শুরু করো ।। ইনায়া কে নিয়ে শুরু করো ,ইফ্তি কে নিয়ে শুরু করো তোমার নতুন জীবন ।।।
.
— আন্টি আমাকে কিছু দিন ভাবতে সময় দিন।
.
.
— ম্যাম তুমি আমার মা হবে তো? আমার পাপাকে বিয়ে করবে তো?
পূর্ণতা ও এসে হাত ধরে টানতে টানতে জিজ্ঞেস করা শুরু করল।।।।
.
.
ওকে এক বার কোলে নিয়ে আদর করে দিলাম অনেক্ষন।
.
তারপর আন্টি কে আবার বললাম, আমার সময় চাই। আমি ভাবতে চাই।
রিং ফেরত দিতে চাইলাম ।উনি কিছুতেই ফেরত নিলেন না । 
.
 
উনি গুরুজন। মায়ের মতো আমার। জোর ও করতে পারছি না খুব বেশি । এদিকে সাথে আমার মা তো আছেই।
.
.
তারপরও আমার সময় চাই বলে উনাদের মিথ্যা স্বান্তনা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম । তাছাড়া উনি আরো জেদ করতেন।। 
কিন্তু আমি তো জানি আমি তার আর পূর্ণতার এই জেদের মূল্য কখনো ই দিতে পারব না। আমি আমার জীবনে অহন ছাড়া আর কারো অস্তিত্ব কল্পনা ও করতে পারি না ।
.
.
আমি তো এভাবে কোন দিন মা হতে চাই নি। আমি যার মা হতে চেয়েছিলাম তার বাবা শুধু অহন ই হতো ।।। 
বেবি এডপড করলেও সে শুধু আমার আর অহনের ই হতো ।।
.
.
হ্যা পূর্ণতার মা হতে আমার ভাল লাগে । ওর মধ্যে মাতৃত্বের সুখ খুজে পাই। তাই বলে এই সুখ নিতে গিয়ে আমি এতটা স্বার্থপর হতে পারি না ।
.
অহন আমার কাছে সময় চেয়েছিল। আমি সময় দেব। সারাজীবন দেব।
.
.
মাঝে মাঝে রাগ করে ডিভোর্স দিতে চাই ঠিক ই। কিন্ত দিই নি তো ।।। আর দেব ও না কোনদিন। পরি বৌ সব সময় তার পুরক সাহেব এর ই থাকবে। সে পুরক সাহেব অন্য কারো হয়ে গেছে তো কি আসে যায়? অন্য কারো জন্য তো সে অহন। শুধু মাত্র আমার জন্যই তো আমার পুরক সাহেব।
.
.
কিন্তু আন্টি চলে যাবার পর থেকে মা তো টেপ রেকর্ডার নিয়ে বসলেন আমার কাছে। এত ভাল সম্বন্ধ,,রাজি হয়ে যা । ইনায়া তো তোর মেয়ে ই। একদম নিজের করে পাবি ইনায়া কে।। ছেলে ও তো ভাল। কত ভদ্র,মিশুক ...ইত্যাদি ইত্যাদি .....
.
 পরের দিন ইফ্তি সাহেব এলেন বাড়ি তে। 
আমাকে নিচে ডেকে পাঠালেন। জরুরি কথা আছে নাকি।
.
.
আমি মাকে বলে দিলাম আমি যাব না। তুমি উনাকে ফিরিয়ে দাও। মা জোর করেই পাঠালেন।  
.
.
পূর্ণতা কে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছেন উনি।
আমি এগিয়ে যেতেই পুর্নতা কান্না কান্না গলায় বলল,
— ম্যাম। পাপা আমাদের কে বকেছে।
.
— পূর্ণতা আমি তোমাকে এটা বলার এখানে এনেছি???
ইফ্তি সাহেবের কথায় পূর্ণতা মাথা নেড়ে না সূচক উত্তর দিল।
.
— ম্যাম ,,,,সরি। 
— এভাবে বলতে বলেছি???? (ইফ্তি সাহেব ধমক দিয়ে বলল)
.
পূর্ণতা দুহাতে কান ধরে মাথা নিচু করে বলল,
— ম্যাম ,,,, আমি সরি। আমি আর দাদু মনি আর পাকনামো করব না । .
.
— ইফ্তি সাহেব এসব হচ্ছে টা কি??? দেখুন আমি কিন্তু আপনাকে সোজা সাপটা বলে দিচ্ছি আমি এসবে রাজি নই ।। আন্টি কে অনেক বার বলেছি।উনি কিছুতেই মানতে চাচ্ছেন না। কিন্ত আমার সত্যিই কিছু করার নেই। আমি শুধু মাত্র উনাকে থামিয়ে রাখার জন্য সময় চেয়েছি। কিন্তু সত্যি কথা এটাই আমার এ বিষয়ে ভাবার কিচ্ছু নেই।। আমি আমার সিদ্ধান্তে অনড় । আমাদের বিয়ের হচ্ছে না ।।।।। না মানে না।।।
.
— ওয়েট ওয়েট।।। প্লিজ আমাকে কিছু বলতে দেয়া হোক।
— হ্যা বলুন
— আমি সত্যিই জানতাম না আমার মা আর মেয়ে মিলে এত বড় পাকনামো করে বসবে।।। বিশ্বাস করুন।।।আমি এসবের কিছুই জানতাম না । আমি অত্যন্ত লজ্জিত।।  
— উফ্ফ ইফ্তি সাহেব বাচালেন আমায় আপনি।।
— কিন্তু আমার একটা পার্সোনাল কোশ্চেন আছে। যদি কিছু মনে না করেন।
— জ্বি???
— আপনি এত কিছুর পরেও আপনার হাজব্যান্ড কে ছাড়তে চাচ্ছেন না কেন?? আপনি আরো বেটার কাউকে ডিজর্ভ করেন। আপনার সাথে যা হয়েছে অনেক অন্যায় হয়েছে । আপনার ঐ কুত্সিত মনের মানুষ টাকে ভুলে নতুন করে সত্যিই সব কিছু শুরু করা উচিত।।। 
— ইফ্তি সাহেব আমার একটা কথা রাখবেন???
.
.
.
চ্লবে........................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন