প্রায় মাস খানেক পর রুপিনের সাথে কথা হলো ভিনার।ভিনা কথা বলতে বলতে কেঁদে দিয়েছে।পুরো ঘটনা বলার রুপিন বললো-
-আমি আসছি ভিনা,আসতে দেরী হবে।দাড়োয়ানকে বলে রাখিস।
ভিনার অনেকদিন পর মনে হলো তার আপন কেউ আসছে তাকে আগলে রাখতে।পুরোনো দিনের কথা মনে পড়লো যখন রুপিন আন্টির বাসায় প্রায় ছুটির দিনেই তারা যেত।এত বড় বাড়িতে কোণায় কোণায় আভিজাত্যের ছোয়া।কিন্তু তারা সবসময় দোতালার ছাদের কোণায় মাদুর বসিয়ে চা খেত আর আড্ডা দিত।রুপিন আন্টির হাজবেন্ড অনেক সুন্দর ছিলেন,তার নাম ছিলো জুয়েল আহমেদ।আক্ষরিক অর্থেই উনি রত্ন ছিলেন।ভালো ডাক্তার ছাড়াও ভালো মানুষ ও ছিলেন।রুপিন আন্টি কখনোই তার হাজবেন্ড নিয়ে বেশি কথা বলতেন না।ক্ষণিকের সংসারে যে সুখ পেয়েছিলেন,সেটা একান্তই নিজের মাঝে রেখেছিলেন তিনি।
রাত বারোটার সময় কলিংবেল বাজতেই ভিনা দৌঁড়ে দরজা খুললো।দরজা খুলেই রুপিন কে জড়িয়ে ধরলো।
-হ্যাপি বার্থডে মামনি!
-তোমার মনে ছিলো?
-কেন থাকবে না?তুইই তো আমার সব।
-তাই?তাহলে এতদিন কেন খোঁজ নাও নি?
-আমি মনে করেছি তুই ভালোই থাকবি হয়ত।তাছাড়া এর মাঝে মুনা ফোন দিয়েছিলো,বলেছে তুই ভালোই আছিস।
-তুমি তার কথা বিশ্বাস ও করলে?
-না করে উপায় কী?তোর বাবাকে ফোন দিয়েছিলাম,একি কথাই বলেছে।
-বাবাও!
-থাক বাদ দে।এমনিও আমি আজকে দেখা করতাম তোর সাথে।এখন তো থাকাও হবে।
ভিনা আগেই ঘর গুছিয়ে রেখেছিলো।রুপিন কেক আর খাবার রেখে ফ্রেশ হতে চলে গিয়েছে।এর মধ্যে ভিনা ছুড়ি আর প্লেট রেডি করে ফেললো।রুপিন আসার পর খাওয়া দাওয়া শেষে দুইজনই ভিনার রুমে গেলো।খুব বেশি হই হল্লা করেনি,কারণ পরিচিত একজন মারা গেছে।রুমে যেয়ে পর্দা সড়িয়ে আসার পর দেখলো মোবাইলের নোটিফিকেশন এসেছে।রুপিন আন্টিকে পাশে রেখেই মেসেজ গুলোয় চোখ বুলিয়ে গেলো।নওমি, যাবির আর রুশানের মেসেজ।রুশান জানলো কীভাবে আজকে ভিনার জন্মদিন?রুপিনের দিকে তাকিয়ে ভিনা চট করে মোবাইল রেখে দিলো সে।
-বার্থডে উইশ করেছে সবাই।
-সবাই বলতে?ফ্রেন্ডরা?
-হুম।
-সোহেল করেনি?
-বাবা তো ব্যস্ত মনে হয়।দাফনের কাজ শেষ করে বাসায় আসতে ভোর হবে।
-ঠিক আছে,তুই চিন্তা করিস না,মুভি দেখবি?
-কী মুভি?
-টাইটানিক?
-টাইটানিক!
-বড় তো হয়েই গেলি।আঠারো হলো না বয়স?
-সার্টিফিকেটে এক বছর কম।
-মুভি দেখতে সার্টিফিকেট কে দেখে?তের বছরের পিচ্চিরাও এডাল্ট ফিল্ম দেখে এখন।আয়,মুভি দেখ।রোমান্টিক সিন দেখে ছি ছি করার বয়স নাই আর তোর।প্রতিটা লাইনে গভীরতা বুঝতে পারার বয়স।
-তাই?
-না তো কী?বল তো এই বয়সটাকে খারাপ কেন বলে?
-কেন?
-এই বয়সে হটাৎ করে সবাই বুঝতে শিখে।প্রতিটা জিনিস খুব গভীরভাবে চিন্তা করে।এই গভীরতায় সবাই খেই হারিয়ে ফেলে।তবুও এই বয়সটাই সবচেয়ে বেস্ট।এখন সব জিনিস প্রয়োজনের বেশি তোকে স্পর্শ করবে, দুঃখ,সুখ,ভালোবাসা,সবকিছু।বাদ দে এসব।মুভি ছাড়।
মুভি দেখার সময় জ্যাকের জায়গায় যাবিরকে বসালো ভিনা।যখন রোজ জ্যাকের হাত টা ছেড়ে দেয়,তখন ভিনার মনে হচ্ছিলো নিজেরো এই পানিতে ডুবে যেতে,বেঁচে থাকার আর কী দরকার!অল্প সময়ে এরকম নিঃস্বার্থ অনুভূতি আসলেই হয় তাহলে!আসলেই মানুষ নিজেকে নিঃস্ব করে ফেলে অন্যের জন্য!
•
নওমি আর তানভির মিলে প্ল্যান করছে কীভাবে ভিনার বার্থডে সেলিব্রেট করা যায়।রুফটপ একটা রেস্টুরেন্ট পছন্দ হয়েছে দুইজনেরই,আর খাবারের দাম ও কম।দামের ব্যাপারটা তানভির মাথায় রাখছে কারণ যাবির বলেছে পুরো খরচ টা ও দিবে,আর তানভির ভালোমতো জানে যাবির হাত টানের মধ্যে আছে।সবচেয়ে বড় কথা যাবির এমন একটা মেয়ের সাথে পরিচয় করিয়েছে,যে মেয়েটা আসলেই ওর মনমত।যখনি কথা হয় তখনি ভিনা,তানভির যেমন যাবিরকে ছাড়া চলতে পারে না,নওমি সেরকম ভিনাকে ছাড়া। মন মানসিকতা প্রায়ই মিলে।সবচেয়ে বড় কথা সিন্সিয়ারিটি।বয়স আন্দাজে যথেষ্ট ম্যাচিওর নওমি।বাড়তি কথা বলবে না,আর আগে জিজ্ঞেস করে নিবে পড়ায় সমস্যা হবে নাকি। এরকম নির্ভেজাল কাউকেই তো সে খুঁজছিলো জীবনে!
•
জেরিনের মার হাই প্রেশার উঠে গেছে।সকালে দেখেছে জেরিন মেডিকেলের সব বই বাজারের ব্যাগে ভরেছে।বুয়াকে বলেছে যাওয়ার সময় নিয়ে যেতে।সে নাকি আইবিএ তে পড়বে,মেডিকেলে না।একটামাত্র মেয়ে তার,কত আশা নিয়ে ছিলো ডাক্তার বানাবে,শুধু তাই ই না,জেরিন ও সেভাবেই প্রিপারেশন নিচ্ছিলো। মাঝখানে কী হলো না হলো,এখন কমার্সের সাব্জেক্ট এ নাকি পড়বে। এখন অনেক আফসোস হয়,কেন সে আরেকটা বাচ্চা নিলো না,তাহলে ছোট থেকেই জেরিন শেয়ার করা আর এ্যডজাস্টমেন্ট শিখতো।তাছাড়া এক বাচ্চা কথা না শুনলে অন্তত আরেক বাচ্চা দিয়ে আশা পূরণ হতো। আচ্ছা এখন বাচ্চা নিলে কেমন হয়?বয়স যে খুব বেশি তার,তাতো না,উনচল্লিশ মাত্র।
.
.
.
চলবে................................................