অন্তর্দ্বন্দ্ব - পর্ব ০৪ - সাবরিনা ইমরান - ধারাবাহিক গল্প


-ইউ আর লেট,নেক্সট টাইম থেকে টাইমলি আসবে।আর এখন ফার্স্ট সিটে বসে ক্লাস করবে,কোনো ফ্রেন্ডের পাশে না।

মাথা নাড়িয়ে ভিনা ক্লাসে ঢুকে গেলো।বাসের সেই ছেলেটি।কিন্তু সে তো ভিনার সাথে একি স্টপে নামে নি।তাহলে?সব চিন্তা বাদ দিয়ে ক্লাস শুরু করলো।ইংলিশ ক্লাস ভালোই নিলো সে।ক্লাসের শুরুতে আসে নি,বিধায় পরিচয় পর্ব মিস হয়ে গেছে,কিন্তু বোর্ডের পাশে নাম লেখা,Zabir Ehan.

ছুটির পর নওমির সাথে কথা বলে জানলো যাবির আইবিএ তে পড়াশোনা করছে,ওদের চেয়ে চার ব্যাচ সিনিয়র।মকবুল স্যারের ওয়াইফের বাচ্চা হবে,তাই সে ক্লাস নিতে পারবে না,তার পরিবর্তে যাবির,মানে যাবির ভাইয়া ক্লাস নিবে।

ভিনা ছুটির পরও বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে থাকলো।বাসে ধন্যবাদ দিতে পারেনি সেভাবে,এখন দিবে।বের হওয়ার পথে রুশানের সাথে দেখা হলো,রুশান একি কোচিং এ পড়ে ওর সাথে।ছেলেটা ভদ্র এবং প্রায়ই ওর খোঁজ খবর নেয়। যদিও ভিনা খুব কম কথা বলে,এবং বলতে গেলে ছেলেটাকে ইগ্নোর ই করে,তাও সে দেখা হলেই হাসি দিয়ে কথা বলতে এগিয়ে আসবে।বিষয়টা খারাপ না লাগলেও খুব একটা ভালোও লাগে না।কারণ সে জানে,সবাই বদলায়। সময় গেলে রুশান ও হয়ত বদলাবে। দরকার কী আর কথা বাড়ানোর।

-কী ব্যাপার ভিনা,এখানে দাঁড়িয়ে আছো যে। 

-কিছু কাজ ছিলো।

-কী কাজ?

-এমনি,তেমন কিছু না।

-আচ্ছা,আমি কি বিরক্ত করছি তোমাকে?

-বিরক্ত কেন করবে,আসলে বলার মত কোনো কিছু না তাই।আর কাজটা আমাকেই করতে হবে দেখে তোমার হেল্প নেইনি।

-ঠিক আছে,আসি তাহলে।

-বাই

রুশান চলে গেলো।ভিনা জানে এভাবে কথা বলা ঠিক হয়নি।তবুও ঠিক বেঠিকের হিসাব নিয়ে আসতে চায় না,অন্তত তখন না,যখন তার নিজের জীবনের সবই বেঠিক।

প্রায় চল্লিশ মিনিট পর যাবির বের হলো।

-এক্সকিউজ মি

-আরে,তুমি এখানে,কোনো কাজ আছে অফিসে?মাত্রই তো সবুজ কে বন্ধ করে দিতে বললাম।

-না,অফিসের কোনো কাজ না।আপনাকে বাসে ধন্যবাদ দিতে পারিনি।এরজন্যই আরকি।

-ধন্যবাদ?কেন?

-হ্যাঁ,একটা ওকওয়ার্ড পরিস্থিতি থেকে বের করার জন্য।

-এটা দায়িত্ব ছিলো আমার, কিছু জিনিস এড়ানো যায় না,বিবেকে লাগে।

-আপনার তো এখানেই নামার কথা,আপনি যে একি সাথে নামলেন না?

-ভাড়া দেয়া বাকী ছিলো আমার।

তখনি ভিনার মনে পড়লো আজকে কন্ট্র‍্যাক্টর বাসে উঠার পরপরই ভাড়া তুলেনি,আর ভাড়া ছাড়া নামার উপায় ও নেই,এই কন্ট্র‍্যাক্টর যথেষ্ট চতুর,সে এই বাসে প্রায়ই আসে এখানে। 

-ভাড়াটা.....

-হেজিটেট করার কোনো দরকার নেই।ইটস ফাইন।

-থ্যাংক্স এগেইন।

 -মেনশন নট,কিন্তু তোমার নামটাই তো জানা হলো না।

-ভিনা ইনজামাম।

-ওকে মিস ইনজামাম,নেক্সট ক্লাস থেকে টাইমলি আসবে,সাবধানে বাসায় যাও। 

যাবির হাসি দিয়ে চলে গেলো।ভিনা বাসের অপেক্ষা করতে লাগলো।মাথায় রুপিন আন্টির কথা ভেসে আসছে।তার বাবার দ্বিতীয় বিয়েতে এই একটামাত্র মানুষই ছিলো,যে কিনা এই বিয়ের ঘোর বিরোধিতা করেছিলো।রুপিন সম্পর্কে তার বাবার চাচাত বোন হয়।বাবার বোন হিসেবে সম্পর্কে ফুপু হয় ভিনার,কিন্তু কোনো এক সময় তার বাবা আর রুপিন আন্টির বিয়ে ঠিক হয়েছিলো।রুপিন আন্টির বাবা,যথেষ্ট প্রভাবশালী এবং ধনী ব্যক্তি ছিলেন।ভিনার বাবার ব্যবসায় উনি অনেক সাহায্য করেছিলেন।ভিনার বাবা সোহেল আর মা শিউলির কথা রুপিন আন্টি জানতেন,তাই নিজের বিয়ের আসর থেকেই সোহেলকে পালাতে সাহায্য করেছিলেন তিনি।এ নিয়ে তার বাবা পুরো ফ্যামিলির উপর চড়াও হয়,এবং ভিনার দাদা দাদীকে চরম অপমান করে ছাড়ে।দিন কয়েক বাদে যখন সবাই জানতে পারে যে রুপিন নিজেই সোহেলকে পালাতে সাহায্য করেছে,তখন তার বাবা অনেক কষ্ট পান,এবারে ভিনার দাদী সবার সামনে রুপিন কে অপমান করে।দুই পরিবারে সবার মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে যায়।ভিনার বাবার বিয়ের প্রায় সাত আট মাস পরই এক বড় ডাক্তারের সাথে রুপিন আন্টির বিয়ে দেন তার বাবা,কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত এক বছরের মাথায় এক্সিডেন্ট করে মারা যায় তার হাজবেন্ড।এত অল্প বয়সে মেয়েকে বিধবা হতে দেখে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে একদিন মারা যান তার বাবা।বাবা আর স্বামীর রেখে যাওয়া অঢেল সম্পত্তি দিয়ে তিনি বিভিন্ন চ্যারিটি ওয়ার্ক করেন এবং গুলশানের এক আলিশান বাড়িতে একা একা থাকেন। ভিনার মা বেঁচে থাকতে রুপিন আন্টির সাথে গোপনে তার বাবা আর মার যোগাযোগ হত।ছোট থেকেই সে ভিনাকে অনেক স্নেহ করত এবং খোঁজ খবর নিত। তার বাবার দ্বিতীয় বিয়ের খবর সেই জানিয়েছিলো ফোনে,তাই বিয়ের দুইদিন আগে এসে দাদীকে বোঝানোর চেষ্টাও করেছিলো।অপমান ছাড়া কিছুই পায়নি সেদিন।এরপর থেকে সে একদম যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় সবার সাথে।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভিনা অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে থাকে।এত অল্প বয়সে এত তীব্র একাকীত্ব?সে কীভাবে সব ফেলে ঘুরে দাঁড়াবে?শুধু বেঁচে থাকার জন্য যে সাপোর্ট দরকার,সেটাও যে নেই তার কাছে।হটাৎ সামনে অনেক স্পিডে একটা বাস আসতে দেখলো.......
.
.
.
চলবে..............................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন