পরিপূরক - পর্ব ২২ - স্পৃহা নূর - ধারাবাহিক গল্প


— আপনি এত কিছুর পরেও আপনার হাজব্যান্ড কে ছাড়তে চাচ্ছেন না কেন?? আপনি আরো বেটার কাউকে ডিজর্ভ করেন। আপনার সাথে যা হয়েছে অনেক অন্যায় হয়েছে । আপনার ঐ কুত্সিত মনের মানুষ টাকে ভুলে নতুন করে সত্যিই সব কিছু শুরু করা উচিত।।। 
— ইফ্তি সাহেব আমার একটা কথা রাখবেন???
.
— জ্বি অবশ্যই চেষ্টা করব। 
— আপনি পূর্ণতা কে আমায় দেবেন???
— মানেহ????
— না,,,না,,,এত অবাক হবেন না । একবারে নিয়ে নিতে চাইছি না। জাস্ট একদিনের জন্য দেবেন??? আমি ওকে আমার নিজের মতো করে সাজাবো ওকে???
— ওহহ আচ্ছা এই ব্যাপার??? শুধু একদিনের জন্য মেয়েকে ভালোবাসবেন????
— না, মানে ও ভাবে বলি নি কথাটা । একদিনের জন্য শুধু নিজের করে চেয়েছি।
.
— শুনুন শুধু একদিনের জন্য নয়। আপনি সারাজীবনই আমার মেয়েকে নিজের করে পাবেন। আপনার যখন ইচ্ছে ওকে নিজের কাছে টেনে নেবেন। পূর্ণতা শুধু আমার আর সানিযার ই মেয়ে না আপনার ও মেয়ে।। আমার মেয়েটা আপনার মাঝে ওর মাকে খুজে পায়।। এক দিনের জন্য ওকে ভালোবাসার লোভ দেখিয়ে দুরে ঠেলে দেবেন না। পারলে সারাজীবন ই ওকে এভাবেই ভালোবাসবেন। 
.
— ইফতি সাহেব আপনি সত্যিই অনেক ভালো । আমার কল্পনার চেয়েও অনেক বেশি ভাল আপনি।
— আমি অতটা ভালো নই । মিস অয়নী আপনার মনটা অনেক ভালো তাই সবাইকেই ভালো লাগে আপনার।
— মিস নই মিসেস
— ও হ্যা সরি।বাট আমি কিন্ত আমার প্রথম কথাটার উত্তর পাই নি।
— কোন কথাটার???
— ঐ যে আপনার হাজব্যান্ডকে ডিভোর্স .....
— ও কথার উত্তর আমার কাছেও নেই।।। উত্তর চাওয়ার আশা বৃথা।
.
.
 পূর্ণতা ক'দিন ধরে আবার বায়না ধরেছে আমার সাথে বেড়াতে যাবে।।। বেড়াতে যাবে ভালো কথা ।বললাম নিয়ে যাব।। কিন্ত না সে তার পাপাকেও নেবে।। অন্যদের বাবা মার সাথে ঘুরতে দেখে তার ও ইচ্ছে হয়েছে। কান্নাকাটি করে গাল ফুলিয়ে একাকার করেছে।
.
.
অবশেষে ইফতি সাহেব আর আমাকে বাধ্য হতে হল ওকে নিয়ে বের হওয়ার জন্য ।।।
.
.
গতকাল বিকেলেই পূর্ণতাকে আমার কাছে নিয়ে এসেছি। ওকে নিয়ে অনেক শপিং করলাম।।। ঠিক যেমন লাল ফ্রক পড়া একটা মেয়ের স্বপ্ন দেখতাম সেরকম করেই আজ সাজিয়ে দিলাম পুর্নতা কে। 
লাল গাউন স্টাইল ফ্রক, লাল জুতো, ছোট্ট ছোট্ট হাতে লাল চুড়ি, হাতে পায়ে লালা আলতা। পুরো লাল পিন্সেস আমার বিড়াল ছানা ।।।। 
পূর্ণতা ও খুব খুশি । আয়নার সামনে থেকে নড়ছেই না।। 
.
— ম্যম তুমিও আমার সাথে ম্যাচিং করে পড় ।
— পড়ব ?
— হ্যা,,,, তোমাকেও আমার মতো সুন্দর লাগবে তাহলে। 
— আমি কি আর তোমার মতো সুন্দর হতে পারব সোনা?? তুমি তো প্রিনসেস।
— না না তুমিও প্রিনসেস ম্যাম আমার।। পড় না আমার সাথে ম্যাচিং করে ।
— পড়ব কিন্ত একটা শর্ত আছে ।
— কি শর্ত ম্যাম?
— মা বলে ডাকবে আমাকে একবার??
— ম্যাম আমি তো সব সময় ই তোমাকে মা বলতে চাই। তুমিই তো আমার মা হলে না । আমার পাপাকে বিয়ে করলে না । আমার পাপা ও এসব শুনে আমাকে আর দাদুমনি কে কত বকল।
.
— পাপাকে বিয়ে করলেই বুঝি মা হওয়া যায়?? তাছাড়া হওয়া যায় না?
— দাদুর সাথে যেগুলো মুভি আর সিরিয়াল দেখি সেগুলো তে তো তাই দেখি।
— হয়েছে। সিরিয়াল দেখে আর পাকনামো করতে হবে না। এটা আমাদের রিয়েল লাইফ সোনা। আমি তোমার ম্যাম না?? ম্যাম তো মায়ের ই মতো ।।  
— ওকে আমার পাপাকে করতে হবে না তোমার বিয়ে। কিন্ত আমি তোমাকে সব সময় মা বলে ডাকব। ম্যাম বলতে ভালো লাগে না ওকে??
— তাহলে কিসের দেরি বিড়াল ছানা? একবার অন্তত ডাকো ।
— একবার না আমি তোমাকে বার বার ডাকব মা। কি মজা অয়নী ম্যাম এখ্ন থেকে আমার অয়নী মা।
.
.
কেন জানিনা আজ খুব খুব খুব খুশি লাগছে মনে মনে। নিজেকে পূর্ণ পূর্ণ লাগছে কেমন যেন। আমার স্বপ্নে দেখা ছোট্ট পিন্সেস অবশেষে আমার সামনে।। 
পূর্ণতার কথা রাখতে আমিও ওর সাথে ম্যাচিং করে লাল শাড়ি লাল কাচের চুড়ি,আলতা পড়ে নিলাম।। সাথে হালকা টাচ আপ।
.
.
কিছুক্ষণ পর ইফতি সাহেব আমাদের নিতে এলেন।।
.
.
— বাহ দুই রেড পিন্সেস দেখছি এক সাথে।
— ইফতি সাহেব আর বলবেন না আপনার মেয়ে জেদ করল তাই...
— হ্যা আমার আর মেয়ে কি,মেয়ে তো আপনার ই হয়ে গেছে। মেয়ের সাথে এখ্ন মেয়ের পাপাকে যে বেমানান লাগবে সে বিষয়ে মেয়ের কোন খেয়াল ই নেই। আমাকে তো এই ব্ল্যাক স্যুটে এখন দুই পহেলা বৈশাখ এর মাঝে শোক দিবস মনে হচ্ছে ।
— হা হা। মোটেও এমন না ।
.
— না পাপা তোমাকে হিরো লাগছে । তুমি সব সময় ই আমার হিরো পাপা
.
— ঐ দেখুন মেয়ে কি বলছে আপনাকে । 
— ওর কথা বাদ দিন তো । চলুন যাওয়া যাক ।
— জ্বি। 
.
.
প্রায় সারাদিন পূর্ণতার পছন্দের জায়গা গুলোতে ওকে নিয়ে বেড়ালাম । পূর্ণতা তো খুব খুশি । 
সারাদিন আমার কোলে কোলেই থাকল। দুপুরে বাইরে লাঞ্চ করে আবার লং ড্রাইভ।।
 .
.
— ইফতি সাহেব কোথায় যাচ্ছি আমরা?
— দেখি কোথায় যাওয়া যায়। মেয়েকে নিয়ে তো বের হওয়ার সময় ই পাই না। আজ অনেক কস্টে সময় বের করেছি। তো বেড়াই আর একটু।
— উহু বেশি রাত হলে দরকার নেই । অনেক বেড়ানো হয়েছে সারাদিন।
.
.
— না অয়নী মা আরেকটু বেড়াই না?? খুব মজা হচ্ছে আজ। পাপা তুমি অনেক দুরে নিয়ে চলো তো আমাদের। যেন অয়নী মা আরো বেশিক্ষন থাকতে পারে আমাদের সাথে ।
.
—ভয় নেই মিসেস অয়নী। কিডন্যাপ করে নিয়ে যাচ্ছি না কোথাও।
— আমি কি সে কথা বলেছি নাকি? আপনি বেশি বোঝেন সব সময় ।
— বেশি আমি বুঝি ??? প্রথম দিন কে যেন বেশি বুঝে ফেলেছিল?
— ঐ হলো এক দিন ই তো । 
—উহু একদিন না আপনি সব সময় সব ব্যাপারেই বেশি বোঝেন।।। আমি প্রথম দিন ঠিক ই ধরেছিলাম আপনার সাইকোলজিকাল ডিজঅর্ডার আছে।
— মোটেও না ।
— আচ্ছা যাই হোক। সাইকো লেডিদের সাথে তর্কে যাওয়া উচিত না।
— আমি সাইকো না । পূর্ণতা দেখো তোমার পাপা আমাকে সাইকো বলে 
.
—সাইকো মানে কি পাপা??
— সাইকো মানে হলো ...(ইফতি সাহেব)
— সাইকো মানে কিচ্ছু না। হুহ।(আমি)
.
.

— ইফতি সাহেব আসলে রাত বেশি হলে বাবা রাগ করতে পারে।
— সমস্যা নেই। আমি আঙ্কেল কে বলেই আপনাকে নিয়ে এসেছি। । আর সবে মাত্র বিকেল এখন।
— আচ্ছা ঠিক আছে ।
.
.
— আচ্ছা ইফতি সাহেব আপনি সারাজীবন এমন ভাবেই কাটাবেন?
— কেমন ভাবে?
— মানে পূর্ণতার তো মা দরকার।
— কেন দুটো মা থাকতে আর কত গুলো মা লাগবে আমার মেয়ের? 
— মানে ..আপনার ও তো কাউকে দরকার।। 
— আমার তো সানিয়া আছেই । আমার আবার কাকে দরকার???
— আপনি অনেক মিস করেন সানিয়া আপুকে তাই না?
— মিস করার কি আছে?? ও তো আমার সাথেই থাকে সব সময়।
— বাহ কত সুন্দর কথা তাই না? 
— আমি আমার সানিয়ার বিকল্প কোন দিন ভাবতে পারব না । ও আমার সম্পূরক। ও আমার পরিপূরক। আর পরিপুরকের বিকল্প কখনো হয়না।।। 
.
.
— একই প্রশ্ন যদি আমি আপনাকে করি??
— কি প্রশ্ন?
— আপনি এভাবে আর কত দিন থাকবেন?
— আপনার কাছে দেয়ার মতো উত্তর আছে প্রশ্নটার । কিন্ত আমার কাছে কোন উত্তর নেই। 
— উত্তর খুজলেই উত্তর পাওয়া যায় ।
— তাহলে ভাবুন উত্তর খোজার চেষ্টা করছি না ।
—এটাই আপনার সব চেয়ে বড় ভুল।
— কোনটা?
— এই যে কোন কিছুর উত্তর খোজার চেষ্টা না করা ।
.
.
— তবে আমার মনে হয় অতীত আপনার ভুলে যাওয়াই উচিত।। নতুন করে সব কিছু আবার শুরু করা উচিত।
— যদি হঠাত পুরনো এসে কড়া নাড়ে দরজায়??
— আপনি এখনো আশা করেন যে আপনার হাজব্যান্ড আপনাকে নিতে আসবে? সত্যিই আপনি পারেন ও।
— জ্বি। আশা করতে ক্ষতি কি?
— যে আপনাকে নিয়ে আশা করে না তাকে নিয়ে আপনি কেন খামোখা আশা করতে যাবেন? আপনার হাজব্যান্ড তো একটা ফ্রড ,ভণ্ড আর প্রতারক । কাপুরুষ ও। সে একটাবার আপনার সামনে দারানোর সাহস পর্যন্ত করে নি। আপনাকে ফেরাতেও আসে নি। আর আপনি বেচারি বসে বসে ঐ কাপুরুষের ই দিন গুনছেন।
.
— ব্যাস ইফতি সাহেব। অনেক শুনেছি। আমার অহনের নামে আর একটা বাজে কথা বললে আমি কিন্ত
— অহন??? 
— জ্বি।
— আপনার হাজব্যান্ড এর নাম ও অহন?
— জ্বি। 
— আপনার ঐ যে কেমন যেন রিলেটিভ,আমার ফ্রেন্ড ওর নাম ও তো অহন
— হ্যা তো???
— কিছু না । একই নামের কতজন থাকে এই দুনিয়ায় তাই না??? কিন্তু স্বভাবে এক এক জন এক এক রকম। আমার ফ্রেন্ড অহন ওর পরি বৌ কে কত ভালোবাসে। অথচ ....
— এই শুনুন। আপনার ফ্রেন্ড না তার বৌ কে কচু ভালোবাসে। আপনি ঘোরার ডিম জানেন। 
— আপনি বুঝি সব জানেন???
— হ্যা জানি ই তো । আপনার ফ্রেন্ড অহন ই আমার হাজব্যান্ড ।
— Whatt??
—জ্বি। এই বিষয়ে আর কথা বলতে চাচ্ছি না আমি সরি।
— ও এরকম?? 
— বললাম না এই বিষয়ে আর কথা বলতে চাচ্ছি না ।।।।
— আসলেই আমার তো ওর প্রতি ঘেন্না হচ্ছে এসব শুনে।
— বলেছি না আর কোন কথা বলবেন না ওর ব্যাপারে ।
.
 .
শপিং মলের এর সামনে দিয়ে যেতেই পূর্ণতা আবার বায়না ধরল সে তার পাপার সাথে শপিং করবে ।।তার পাপা নাকি তার সাথে শপিং করতেই চায় না । সময় পায় না । তাই আজ তার পাপার সাথে শপিং করা চাই ই চাই।
.
.
ইফতি সাহেব পূর্ণতা কে নিয়ে ড্রেস চয়েজ করছেন। আমিও ঘুরে ঘুরে বাচ্চাদের ড্রেস গুলো দেখছি। একদম ছোট্ট ছোট্ট বেবিদের ড্রেস। জিরো এজ থেকে শুরু করে।
.
.
এমন সময় পেছন থেকে কে যেন কাধে হাত দিয়ে বলল,
— অয়নীপু তুমি বেচে আছ???
.
পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি ওহি ছেলেকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে ।
.
— কেন ওহি মরে গেলে খুশি হতে???
— কি জানি।। তবে চিঠি তে তো সেরকম ই লিখেছিলে।।।।
— তা ছেলেকে নিয়ে একা যে?? ছেলের বাবা কই??
— কে বলেছে একা ?ওর বাবা গাড়ি পার্ক করেই এক্ষুনি চলে আসবে । 
.
.
.
চলবে...........................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন