— অয়নীপু তুমি বেচে আছ???
.
পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি ওহি ছেলেকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে ।
.
— কেন ওহি মরে গেলে খুশি হতে???
— কি জানি।। তবে চিঠি তে তো সেরকম ই লিখেছিলে।।।।
— তা ছেলেকে নিয়ে একা যে?? ছেলের বাবা কই??
— কে বলেছে একা ?ওর বাবা গাড়ি পার্ক করেই এক্ষুনি চলে আসবে ।
.
.
— ওহ ।
— আচ্ছা আপু তুমি একটা কথা ক্লিয়ার করে বল তো তুমি কি মানুষ নাকি অন্য কিছু??? সমস্যা কি তোমার??? এত দিন কাউকে কোন খোজ খবর না দিয়ে....
— তোমরা ও তো একটা বারের জন্য আমার খোজ নাও নি।।
.
— খোজ নেয়ার মতো পরিস্থিতি থাকলে তো । এমন একটা চিঠি লিখে তুমি সবাইকে ভয় না পাইয়ে দিলেও পারতে। তুমি যদি আমার চেয়ে বয়সে ছোট হতে তাহলে আজ আমি তোমাকে ঠিকই দুটো চড় দিতাম ।। এভাবে একদম আত্নহত্যার হুমকি দিয়ে রেখেছ চিঠি তে।। অহন তো পুরো পাগলামো শুরু করে দিয়েছিল তোমার অসব কথা পড়ে ।।।
— এখন নিশ্চয় আর পাগলামো করে না,সয়ে গেছে । ওটা হুট করে শক পেয়েছে তাই ওমন করেছে।
.
— হুট করে শক দেয়ার মানে আছে কোন??? সব কিছুতেই তোমাদের দুজনের বাড়াবাড়ি তাই না? তোমার কোন আইডিয়া আছে তোমার এই খামখেয়ালিপনা হুট করে শক দেয়ার পরিণতির ব্যাপারে??? সব কিছুতেই মজা খোজ তোমরা তাই না?
.
— দ্যাখ ওহি আমি তোমাদের মজা দেয়ার জন্য ওসব কিছু লিখি নি। আমি সত্যিই মরে যেতে চেয়েছিলাম।
— বাহ কি সুন্দর কথা একজন মরে যেতে চেয়েছিল আর আরেকজন...বাহ তোমরা পারো ও...
— আর আরেকজন কি??? আরেকজন তো বৌ বাচ্চা নিয়ে খুব সুখে আছে দেখছি।
.
— কই দেখলে সুখে আছে?? বলো আমাকে??
— দেখছি ই তো
— অয়নীপু তুমি কি জানো এটাই তোমার সব চেয়ে বড় সমস্যা????
— কোনটা???
— এই যে না দেখেই সব কিছু দেখে নেওয়া। না বুঝেই সব কিছু বুঝে নেয়া । নিজে মনে মনে যা ভাব সেটাই ঠিক মনে করা। অথচ কি আবল তাবল ভাবো তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই ।।।অদ্ভুত অদ্ভুত সব কিছু নিজে নিজেই ভেবে নাও। কোন কিছু যুক্তি দিয়ে ভাবার চেষ্টা করো না। এখানে কোথায় দেখলে তুমি অহন কে শুনি??
.
.
— কেন তুমিই তো বললে ওর বাবা আসছে
— ওর বাবা অহন সেটা তোমাকে কে বলল?? আমি বলেছি নাকি অহন কোন দিন ও বলেছে?? এটাও তো তোমার নিজের আবিষ্কার।
— মানে????
.
.
— কি ওহি কি করছটা কি এখানে সেই তখন থেকে???
— লাবিব ভাই আপনি ???
— হ্যা আমি । কেন অহন কে এক্সপেক্ট করেছিলে?????
— জ্বি।।।
— আমি এত দিন ভাবতাম আমার বন্ধু ই বুঝি পাগল। এখ্ন দেখছি তুমি তার চেয়েও বড় পাগল। ও হুট করে তোমার ওপর জেদ করে পাগলামো শুরু করে দিল আর তুমিও তাতে তাল মেলালে বাহ অয়নী বাহ। কিন্ত বিশ্বাস করো তুমি বেচে আছ এটা দেখে সত্যিই খুব ভালো লাগছে । কিন্ত তোমার ধৈর্য আছে বটে...
— এই তুমি চুপ করো তো । ধৈর্য না ছাই
।। উনি এত দিন সব কিছু আদর্শ বৌ সেজে মেনে চলল আর আসল সময়ে এসে ভয় দেখিয়ে .....
.
.
— এসবের মানে কি??, আর আমার অহন কই???হচ্ছেটা কি এসব????
— আপু তুমি এত বোকা কেন?? তুমি এখনো কিছু বুঝছ না??? সামান্য জেদ এর কারণে তোমরা দুজন ই যা শুরু করেছিলে। আর তুমি কি হ্যা???নিজের স্বামীর প্রতি এতটুকু বিশ্বাস নেই তোমার?? এত দিনেও ওকে একটুও চেন নি??? তুমি ভাবলে কি করে অহন আবার বিয়ে করবে?? তাও আমাকে??????
— বিয়ে হয় নি তোমাদের??
— এখনো সন্দেহ আছে এ বিষয়ে??? এই যে তোমার লাবিব ভাই, তোমার অহনের ফ্রেন্ড ,এই যে আমার পাশে যিনি ঠায় দাঁড়িয়ে আছে সে আমার ছেলের বাবা,সে আমার হাজব্যান্ড । আরো ক্লিয়ার করে বলতে হবে????
.
— তো এটা তোমরা আগে আমাকে বলবে না??? আশ্চর্য তো ।।।।
— বলার সময় দিয়েছ তুমি???
— যথেষ্ট সময় ছিল বলার।
.
.
— হ্যা ছিল। কিন্ত অহন যখন ই তোমাকে বলতে চেয়েছে তুমি নতুন নতুন সন্দেহ আর উদ্ভট কথা নিজে নিজে আবিষ্কার করে নিয়েছ। আর তুমি জানোনা অহন কেমন চাপা, জেদি আর গোয়াড় স্বভাবের?? ও জেদ করে করে সেগুলো তো মেনে নিয়েইছে সাথে নিজেও আরো দু চার লাইন লাগিয়ে দিয়েছে তোমার রিএকশন দেখার জন্য ।আর তুমি ওকে আরো কতটা নীচ ভাবতে পারো তা দেখার জন্য । আর তুমি বেচারি দিনের পর দিন সেগুলো ই বিশ্বাস করে গেছ। আর ভেতর ভেতর দুজন ই কস্ট পেয়ে গেছ।।।।।
দ্যাখো প্রথমে ফান ভেবে আমারও সায় ছিল এসবে। কিন্ত যখন এই ফান ধীরে ধীরে তোমাদের রাগে জেদে এত বেশি সিরিয়াস রুপ নিল আমি মোটেও এসবে সায় দিতে চাই নি। আমি অহনকে বার বার বলেছি তোমাকে সব টা বলে দিতে। কিন্ত তুমি হুট করে এমন এমন সবকথা বলতে যে ও রাগ করে আর তোমার ভুল ভাঙাত না।
শোন ...আমি আর লাবিব অনেক আগেই বিয়ে করে রেখেছিলাম । আর আমি হস্টেলে থাকতাম না আমরা এক সথেই থাকতাম।ভেবেছিলাম ও ভাল জব পেলেই বাড়িতে আমরা জানিয়ে দেব। তাছাড়া তো বাড়িতে মেনে নেবে না । তখন ও সামান্য টিউশনি করত। এরই মধ্যে হুট করে ওর দুলাভাই ওর ইউএসএ যাওয়ার ব্যাবস্থা করে দেয়। ও ইউএসএ যাবার দু এক দিন পরই জানতে পারি আমাদের মাঝে কেউ আসছে । তখন একা আমি কি করব ,বাড়িতে কি বলব ,কেউ এসব বিশ্বাস করবে কি না, বাড়িতে বললে নির্ঘাত আমার বেবি টাকে মেরে ফেলে আমার আবার বিয়ে দিয়ে দিত। এসব টেনশনে আমি একেবাড়ে ভেঙে পড়েছিলাম। এদিকে লাবিব ওখানে সবে মাত্র গিয়েছে না পারছে এখানে আসতে না পারছে কিছু করতে।। তখন ও অহন কে বলে আমাকে তোমাদের বাড়ি কিছুদিন রাখতে যতদিন ও আমার জন্য পেপার্স রেডি করতে না পারে।। তুমি তো জানো ই অহন ওর সেই কলেজ লাইফ থেকে ফ্রেন্ড। আর আমার ও নিজের ই ভাই। কারণ বাড়ি গেলেই বাবা মা বুঝ্লেই কিছু একটা করে বসত আমার সাথে। খালার বাড়ি কিছু দিন থাকলে অহন যে ভাবেই হোক ম্যানেজ করে নিত । অন্তত বাবা মা জোর করে আমার সাথে কিছু করতে পারত না । ও বাধা দিত। সেটা ভেবেই লাবিব আর অহন ই ঠিক করে আমি তোমাদের বাড়ি থাকব।
কিন্ত এর মধ্যেই তোমাদের আবার ঝগড়া হয় বিয়ে ব্যপার টা নিয়ে । অহন নাকি রাগের মাথায় বলে ফেলে সাত দিনের মধ্যেই বিয়ে করবে।।
তখন অহন ভাই আমাকে বলে এই ওহি একটা হেল্প কর তো অয়নী কে ভয় দেখাবো কয়েকদিন। যাতে করে ওর মাথা থেকে এসব ভুত নেমে যায় ।। সব সময় তোর ভাবি অশান্তি শুরু করেছে আমারসাথে । সে সিরিয়ালের নায়িকা দের মতো মহান সাজতে চায়। ওর মহান সাজা ছুটিয়ে দেব এবার।
ব্যাপার টা আমার ও interesting লেগেছিল তাই আর কি .. লাবিবের ও সায় ছিল...
.
.
— বাহ বাহ....interesting লাগল আর সবাই নাটক করতে শুরু করে দিলে ।।।।।। এক বার ও কেউ আমার কথা ভাবলে না তাই না???
— বিশ্বাস করো আপু এতদিন ধরে এসব করার কোন প্ল্যান ই ছিল না। আমরা তো জাস্ট এক মাস তোমাকে ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম। ।।। আমি বার বার বলেছিলাম যে তুমি এসব বিশ্বাস করবে না,কিন্ত অহন ভাই শিওর ছিল তুমি এসব ই বিশ্বাস করবে। তুমি নাকি এমন ই ,,হুজুগে।।।। এরই মধ্যে তুমি ধরে বসলে আমি প্রেগন্যান্ট।। বিশ্বাস করো এসব নিয়ে নাটক করার কোন প্ল্যান ই ছিল না । অহন ভাই তোমাকে সব বলতেই চেয়েছিল কিন্তু তার আগেই তুমি ধরে বসলে ব্যাপার টা । আর গিয়ে ওকে বাকা বাকা কথা শোনাতে নাকি শুরু করেছিলে তখন ও জেদ করে আর তোমার ভুল ভাঙায় নি।। তুমি যে হুট করে ওকে এতটা নীচ ভাববে সেটা অহন কেন আমি নিজেও তো কল্পনা করি নি। আমি তো ভেবেছিলাম অহন যতই রাগ করে ভুল না ভাঙাক তোমার অন্তত খটকা লাগবে। বিয়ের এততাড়াতাড়ি বাচ্চা কিভাবে এল। কিন্ত না খটকা তোমার ঠিক ই লাগল। কিন্ত তুমি কি ভাবলে এটা আমার আর অহনের অবৈধ বাচ্চা। তুমি যে ওকে এত নীচ ভাববে সে এটা কল্পনা ও করতে পারে নি। তাই তো সেদিন রেগে গিয়ে তোমার ওপর হত তুলল।আর তুমি....তো আরো বেশি করে ভুল বুঝলে......আমি অসুস্থ হয়ে পড়তাম আর তুমি সেগুলো কে নাটক মনে করতে আর আসল নাটক বুঝ্তে পারতে না । তুমি কি কখনো ওকে আমার হাত পর্যন্ত ধরতে দেখেছ??
.
.
—না। কিন্তু রুম লক করে রাখতে কেন সব সময়? আর আমাকে নক করেই বা কেন ঢুকতে হতো?
— তোমার অহন ফ্লোরে শুয়ে ঘুমাতো । ঐ জন্য লক করা লাগত। তুমি নক করতে করতেই বিছানা পত্র সরিয়ে ধুপ করে বেডে এসে বসে পড়ত। আমি দরজা খুলতাম। আর তুমি রেগে আরো ফায়ার হয়ে যেতে।
.
— তাহলে কেন হানিমুনের কথা বলে উস্কে দিয়েছিল আমাকে???
.
— ও এটাও তোমার একটা বেশি বোঝার ফল। অহন তোমাকে কিছু বলার আগেই তুমি তো তার পুরো উল্টো মিনিং ধরে নিতে।। ও তোমাকে কি বলেছিল?? 'আমরা হানিমুনে যাচ্ছি' এখানে আমরা মানে তুমি আমাকে আর অহনকেই ধরে নিলে কেন???? 'আমরা' মানে কি তোমরা হতে পারো না?? তুমি আর অহন হতে পারো না??? আরে তুমি শুধু পাসপোর্ট ই দেখলে। তার নিচে রাখা তিনটে এয়ার টিকেট ,ভিসা কিছুই চোখে পড়ল না। তোমার আর অহনের কথা ছিল হানিমুনে ইতালি যাওয়ার আর আমি তো ইউএসএ চলে যেতাম। লাবিব ততদিনে আমার পেপর্স রেডি করেছিল।।। তুমি আগেই ভুল বুঝে বসলে অহন আবার জেদ করে তোমার ভুল ভাঙাল না। তোমরা দুজন তো একে অন্যের প্রতি জেদ করতে করতে একদম চরম পর্যায়ে পৌছে যাচ্ছিলে। তখন আমি বার বার অহন ভাইকে বলেছি তোমাকে সব কিছু বলে দিতে এসবের শেষ করতে।। কিন্ত না সে ও কম নয় । ও বার বার আমাকে বলত দ্যাখ অয়নী কত নীচ মনের হয়ে যাচ্ছে,কেমন হয়ে যাচ্ছে।আমি কিছু বলার আগেই সে তো সব বুঝে বসে আমি আর কি বলব।। ও নিজে নিজে সব বুঝতে চায় নিজেই বুঝুক। অহন চেয়েছিল দেরি যখন হয়েই গেছে আর একটু দেরি হোক। এয়ারপোর্টে গিয়েই তুমি সব জানতে পারবে।।। সেদিন আমাদের তিন জনের ই যাওয়ার কথা ছিল এয়ারপোর্টে । আমার ফ্লাইট ছিল ইউএসএর আর তোমাদের ইতালিতে। তোমার নাকি অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল ভেনিস দেখার।।। ও তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল। অথচ তার আগেই তুমি এমন সব কান্ড করলে আর কথা বললে রাগের বশে ও তোমার গায়ে হাত তুলল আর তুমিও তো ওকে সারপ্রাইজড করে দিয়ে চলে গেলে। একটা বার ভাবলে না এসবের পরিণতি কি হতে পারে?????
.
.
— বার বার এরকম পরিণতির কথা বলছ কেন??? কি হয়েছে আমার অহনের?? ও কিছু উল্টো পাল্টা করে বসে নি তো????
.
— উল্টো পাল্টা করেছে কি না এখন সে সব খোজ নিতে চাইতে ইচ্ছে হলো তাই না??? একটা মানুষ যে তোমাকে সব কিছুর পরও কোন দিন যেতে দিতে চাইত না সেই মানুষটা তুমি চলে যাবার পর দিনের পর দিন তোমার কোন খোজ খবর নিচ্ছে না, একটাবার তোমাকে ফেরাতে আসল না । তোমার কি উচিত ছিল না নিজেই তার একবার খোজ নেয়ার,??? তুমি জানো অহন বাড়ি ফিরে যখন তোমার ঐ চিঠি হাতে পেল পুরো পাগল হয়ে গেছিল। ছোট বাচ্চাদের মতো কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিল। ও তো হিতাহিত জ্ঞান ই প্রায় হারিয়ে ফেলেছিল। পরে আমি বললাম তোমার বাড়িতে একবার খোজ নিতে তুমি হয়ত সেখানেই গিয়ে থাকবে। ও আঙ্কেল কে ফোন দিল। যখন শুনল তুমি যাও নি ওর পাগলামো তো আরো বেড়ে গেল । আমরা বার বার বলছিলাম ভালো করে খোজ নিতে। কিন্ত ও একই কথা বার বার বলছিল, আমি অয়নী কে চিনি ।ও যা বলে তাই ই করে। ও মর্গের কথা কেন লিখল। নিশ্চয় এতক্ষণে সুইসাইড করে নিয়েছে ।।। আমার এত বাড়াবাড়ি করা সত্যিই উচিত হয় নি। এখ্ন আমি কি নিয়ে থাকব। পুরো পাগলের মতো প্রলাপ বকতে বকতে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল চিঠিটা খালাকে ছুড়ে মেরে। এদিকে আমার ও ফ্লাইটের সময় হয়ে এসেছিল।। কি করার আমি চলে গেলাম এয়ারপোর্ট,দেন ইউএসএ।।। পৌছার পর আমি জানতে পারি অহন নাকি এক্সিডেন্ট করেছে। অবস্থা ভালো না ।
.
.
— এসবের মানে টা কি ?? আমার অহন কই?? বেচে আছে তো?? বলো বেচে আছে তো???
.
— হ্যা ,,হ্যা বেচে আছে ।এখন আর এত কান্নাকাটি করতে হবে না ।।। ওভাবে কান্নাকাটি ,,আর টেনশন নিয়ে বাইক চালালে কি হবে?? বিপি হাই হয়ে গেছিল একদম। ও সেন্সলেস হয়ে যায় বাইক চালাতে চালাতেই। ফলাফল এক্সিডেন্ট ।মাথায় প্রচন্ড আঘাত পায়।মাসের পর মাস কোমায় পড়ে ছিল।। তোমার কি একবারো উচিত ছিল না খোজ নেয়ার?? আমি ওখানে থেকে যতটুকু সম্ভব তোমার সাথে কন্টাক্ট করতে চেষ্টা করেছি। কিন্ত তোমার সোস্যাল সাইট গুলো অফ ফোন অফ। আমরা ওখান থেকে আর কিভাবে কন্টাক্ট করতাম বলো?? আর অবশেষে ভেবেই নিয়েছিলাম তুমি হয়ত সত্যি সত্যিই ...
.
— মা বা বাবা তো অন্তত একটাবার জানাতে পারত
— তারা তোমাকে নিয়ে আলাদা করে ভাবার মতো সিচুয়েশন ছিল?? তাদের এক মাত্র ছেলে কোমায় চলে গেছিল। লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখতে হয়েছে ওকে কতদিন।। পুরো মরেই তো গেছিল প্রায়। তখন তাদের অসব হিতাহিত জ্ঞান আশা করা বৃথা।। তারপর ও খালু তোমার বাবা কে ফোন দিয়েছিল কয়েকবার। কোন রেস্পনস পায় নি। আর ঐ সময় তোমার বাড়ি গিয়ে খোজ নেয়ার মতো সিচুয়েশন নিশ্চই ছিল না । এটুকু নিশ্চয় বুঝছ।
.
— রেসপন্স পাবে কি করে আমি যে রাগে সব গুলো নম্বর ব্লক করে দিয়েছিলাম সব ফোন থেকে।
— বাহ। অহন আঙ্কেল কে প্রথম যখন ফোন দিল আঙ্কেল কেন বলেছিল তুমি বাড়ি যাও নি?? কোথায় গিয়েছিলে???
— অহন তো আমি ফেরার অনেক আগেই ফোন দিয়েছিল। তখন বাবা কিভাবে জানবে আমি বাড়ি ফিরছি কি না । আমি ফেরার পর বাবা তো অহন কে ফোন দিয়েছিল আবার। কিন্ত সুইচড অফ বলছিল।আর আমি ভেবে নিয়ছিলাম...
— হ্যা সুইচড অফ বলার কারণ নিশ্চয় এখন বুঝতে পারছ।।।
— ও কই আছে এখন ?? কেমন আছে?? অনেক বেশি অসুস্থ তাই না?? আমাকে আজ ই ফিরতে হবে ।। এক্ষুনি
— না না তুমি আবার এত টেনশন নিও না । এখন ঠিক ই আছে মোটামুটি। বাড়িতেই আছে। ডক্টর বেড রেস্ট দিয়েছে।।। মাত্র কিছুদিন হলো হসপিটাল থেকে ফিরেছে।
— কিছুদিন হলো ফিরেছে,সুস্থ হয়েছে তবুও আমাকে জানালো না।।
.
— এই অয়নীপু প্লিজ। অনেক ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এখ্ন প্লিজ এই টা নিয়ে আবার ভুল বুঝো না।। ও কেন সুস্থ হয়েও তোমার খোজ নিল না সেটা আমি সত্যিই জানি না । আমরা দেশে ফিরেছি সবে চার দিন। আমি তোমার বাড়ি গিয়েই তোমার খোজ নিতে চেয়েছিলাম ।। অহন কেন যেন কড়া নিষেধ করে দিল জানি না । হয়ত মনে মনে ভাবে তুমি বেচে আছ। খোজ নিলে যদি জানতে পারে তুমি মরে গেছ তাহলে সে আশা টাও মরে যাবে সে ভয়েই হয়ত ও আমাদের ও বাধা দেয়।
.
.
— মিসেস অয়নী আপনি এখানে ?কার সাথে কথা বলছেন? চলুন আমাদের ফিরতে হবে অনেক দেরি হয়ে গেছে ।।।।
— ইফতি সাহেব সত্যিই অনেক দেরি হয়ে গেছে ফিরতে হবে ।।।। আমার পুরক সাহেবের কাছে আমার ফিরতে হবে ।।। আপনি নিয়ে যাবেন আমায় অহনের কাছে??? আমার পুরক সাহেবের কাছে???? তাছাড়া এখান থেকে বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে বাস ধরে যেতে যেতে হয়ত আজও অনেক দেরি হয়ে যাবে।।। আমি আর দেরি করতে চাই না । অনেক হয়েছে অনেক দেরি।।।
.
.
.
বাড়ি ফিরতেই মা বাবা দুজনেই আমাকে দেখে যথেষ্ট অবাক হলেন।
এতদিনে আমার ছেলেটার কথা মনে পড়ল?? আমার ছেলেটা মরতে বসেছিল তোমার জন্য ।।। আর তুমি বেচে আছ অথচ একটা বর খোজ নিলে না আমার অহনের।।। যদি মরে যেত লাশটাও তো শেষ বারের মতো দেখতে পারতে না ।।।।
কথাটা বলেই ঠাস করে একটা চড় দিল মা আমায়।।।
আশ্চর্য অন্য দিন মায়ের কথা গুলো শুনলেও মন খারাপ হয়ে যেত।। কারণ কথা গুলো অন্য রকম থাকত।।।। আজও কথা টা অন্যরকম।।। আজ অনেক স্নেহ আর মায়া ছিল কথাটায় ।। থাপ্পড়ে ছিল মায়ের ভালোবাসা ।।।
.
আমি জানি না কোন মায়ায় মাকে জীবনে প্রথম বারের মতো জড়িয়ে ধরলাম।একদম আমার নিজের মা কে জড়িয়ে ধরলে যেমন অনুভূতি হয় এই মা কে জড়িয়ে ধরেও তেমন ই অনুভূতি হলো ।।
.
— মা আমার সত্যিই অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে ।অনেক বড় । আমি কথা দিচ্ছি আর কোন দিন ও আপনার ছেলেকে এভাবে একা ফেলে যাব না । ও আমাকে যতই রাগানোর চেষ্টা করুক।এরপর থেকে আমি যদি কোন ভুল করি আপনি এভাবেই আমাকে শাসন করবেন।। আমার ভুল গুলো শুধরে দেবেন।
— না মা এভাবে বলছ কেন? ভুল তো আমি করেছি।আমি সব সময় ই আমার সিদ্ধান্ত গুলো ছেলের ওপর চাপাতে চেয়েছি। আর দ্যাখ না এতে কি থেকে কি হয়ে গেল ।।
— মা আমরা কেউ ই আর পুরনো কথা মনে করব না । আপনিও না । এখ্ন থেকে সব কিছু নতুন করে শুরু করব আমরা আর এই নতুন করে শুরু করায় আপনি আমাদের সাথে থাকবেন, আপনি আমাদের পাশে থাকবেন। মা আমি একটু অহনের কাছে যাই ????অনেক দিন দেখি না ওকে।
.
.
অনেক দিন পর আবার নিজের রুম টাতে ফিরলাম যেন।। বিয়ের পর থেকে এই রুমটাকেই তো নিজের করে নিয়েছি।। কত স্মৃতি আমাদের এই ঘরটায়।
আবার লিখা হবে শত শত নতুন স্মৃতি , নতুন গল্প এই ঘরটায়।। আবার শুরু হবে পরি বৌ আর পুরক সাহেবের গল্প। আমাদের দু জনের গল্প। তবে এবার আর কোন ভুল বোঝাবুঝি থাকবে না ।
.
.
অহনকে দেখি বরাবরের মতোই উপুর হয়ে শুয়ে শুয়ে ঘুমোচ্ছে।। ইশ কি নিষ্পাপ লাগছে আমার পুরক সাহেব কে। আমি ওর পাশে বসে কপালে আলতো চুমু একে ডাক দিলাম,
— পুরক সাহেব
.
অহন ঘুমের ঘোরেই জবাব দিল
— হু পরি বৌ
— পুরক সাহেব ওঠো দ্যাখো আমি সত্যি সত্যিই এসেছি ।। তোমার পরি বৌ তোমার কাছে ফিরে এসেছে ।
.
কথা গুলো শুনতেই যেন সে চট করে উঠে বসল।।।
— এতক্ষণে সময় হলো আসার?????
— আস্তে অহন আস্তে,,, ধীরে ধীরে উঠে বসতে পারো না? তুমি কিন্তু এখনো পুরোপুরি সুস্থ না ।
— হয়েছে থাক এত ভাবতে হবে না,,এত ভাবনা থাকলে এভাবে আমাকে একা ফেলে রেখে দিনের পর দিন থাকতে পারতে না ।।।
— ভাবনা ছিল কি না তা একমাত্র আমি জানি
— আমার মতো ছিল না
— হ্যা হ্যা নাও । তুমি ই জয়ী। তোমার ভাবনা ই বেশি ছিল মেনে নিলাম। খুশি এবার?? কিন্ত ভালবাসা টা দুজনের ই সমান ছিল।
— উহু ভালবাসা টাও আমার বেশি ছিল। এখনো আছে।।
– আচ্ছা ঠিক আছে,,,, এটাও মেনে নিলাম । এখ্ন থেকে সব মেনে নেব আমি তোমার। হ্যাপি এবার???
— উহু সব মেনে নিতে কে বলেছে??? সব মেনে নিলে আমার ভুল গুলো ধরিয়ে দেবে কে?? আমার সাথে আবার খুনসুটি করবে কে শুনি????
— আমিই করব। আমিই আবার ভুল শুধরে দেব। নিজের ভুল ও শুধরে নেব।
— আর কোন দিন ভুল বুঝবে না তো আমায়??
— এর আগের বার ভুল বুঝেছিলাম বলে তিনটা থাপ্পড় দিযেছিলে। এখ্ন থেকে ভুল বুঝলে তিনশ টা থাপ্পড় দেবে ।।।
.
.
— তিনটা থাপ্পড়েই এত দিন দুরে ছিলে তিনশ থাপ্পড় দিলে তো অসীম কাল দুরে থাকবে।।
— আর দুরে যাব না কথা দিলাম তো ।
— সত্যি করে বল অয়নী আমার কি তোমাকে শাসনের একটু ও অধিকার ছিল না?? ভুল করেছ বলে একটু না হয় শাসন করেই ফেলেছি তাই বলে তুমি এমন শাস্তি দেবে আমায়??
— কে বলেছে শাসনের অধিকার নেই?? আমাকে ভালবাসার যতটা অধিকার আছে ঠিক ততটাই শাসন করার অধিকার আছে তোমার। বরং শাসন না করে করেই ....
—হুম ঠিক ই বলেছ হাতে ঠিক মতো জোর থাকলে তোমাকে দেখার সাথেই কষে কষে দু চারটা থাপ্পড় দেয়ার ইচ্ছে ছিল আমার। কিন্ত কি করার ডান হাত ডান পা দুটোই ভেঙে পড়ে ছিলাম। হাতে পায়ে ব্যালেন্স আর জোর কোন টাই ঠিক মতো ফিরে পাই নি এখনো । তাই থাপ্পড় গুলো তোলা থাকল। আর একটু সুস্থ হয়ে নিই
— আচ্ছা ঠিক আছে । কয়েক দিন সেবা করে আগে আবার আগের মতো করে নিই আমার পুরক সাহেব কে তারপর থাপ্পড় গুলো সুদে আসলে উসুল করে নিও।
— হু। এমন ভয় কেউ দেখায়? কি সব আবোল তাবল কথা লিখে রেখে গেছিলে।
— সরি। এই যে কানে ধরছি আর হবে না।
— নিজের কান ধর আমারটা না ।
— আচ্ছা অহন তুমি অবাক হলে না কেন আমাকে দেখে?? আমি যে বেচে আছি এ বিষয়ে অবাক হলে না কেন? আর মোটামুটি সুস্থ তো বেশ কিছু দিন হলো ই হয়েছ তারপর ও একটি বারের জন্য জানতে চাইলে না আমি বেচে আছি না মরে গেছি???
— অয়নী ম্যাডাম তুমি এখনো আমাকে এতটা কেয়ারলেস ভাবো?? আমি আমার পরি বৌ এর খোজ নেব না ভাবলে কি করে তুমি?? তুমি না হয় নতুন মেয়েকে নিয়ে আমার কথা ভুলেই গিয়েছিলে আমি তো আর ভুলতে পারি না।।। তোমার তো আবার ইফতি সাহেব আছে, ইনায়া আছে। কিন্ত আমার পরি বৌ ছাড়া আর কে আছে শুনি??
— এই ওয়েট ওয়েট তুমি এসব কি করে জানলে???
— কি জানি
— আবার কথা লুকোচ্ছ তাই না??, দ্যাখ কথা লুকনোর জন্য ই কিন্ত এত কিছু হয়ে গেল। আবার সেসব ই শুরু করেছ তুমি তাই না??? তুমি যদি সুস্থ থাকতে না?? আবার মাথায় বাড়ি দিতাম একটা ।
— এই না না । এই অভ্যাস টা ছেড় এখন। মাথায় সত্যিই অনেক আঘাত পেয়েছি। ব্যাথায় এখনো মাঝে মাঝে সেন্সলেস হয়ে যাই । ঐ জন্য এখ্ন আর বেশি জোরে কথা বলতে পারি না, বেশি টেনশন , প্রেশার কিছুই নিতে পারি না।এর মধ্যে আবার যদি ওভাবে মাথায় বাড়ি দাও না খবর আছে তাহলে আমার। আর আমি কিন্ত এত তাড়াতাড়ি মরতে চাই না
.
— মরতে দেব ও না আমি তোমাকে এত তাড়াতাড়ি।।। আমি জানি আল্লাহ আমার কাছ থেকে এত তাড়াতাড়ি কেড়ে নেবেন না । তুমি ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে পুরক সাহেব। আবার আগের মতো। আমি আছি তো । ভালোবাসা দিয়ে, সেবা দিয়ে সোহাগ দিয়ে , যত্ন দিয়ে আবার সেরে তুলব তোমায়। আমি আছি মা আছে বাবা আছে। সবাই আছে তো ।।
— হুমম । আম্মা আর বাবা তো একদম ভেঙেই পড়েছিল নাকি। অনেক কান্নাকাটি করেছে।
— আমাকে তো তুমি কান্নার ও সুযোগ দাও নি।
— তুমি নিজেই নাও নি।
— মাফ চাইছি তো আর হবে না ।
— আমার দিক থেকেও অনেক ভুল ছিল। আমিও সরি।কথা দিচ্ছি আর এমন করব না ।
.
.
— May I come in??? এই তোদের ফিসফিসানি গল্প কখন শেষ হবে রে??
— গল্প তো আজ সারারাতেও শেষ হবে না তুই ক্যান ডিস্টার্ব করতে আসলি ?
— ইফতি সাহেব আপনি ওর কথা বাদ দিন তো । আসুন আসুন। আমার বিড়াল ছানা কই??
— এইত অয়নীমা আমি এখানে। আমাকে কোলে নেবে না??
— হুমম এসো সোনা।
— অয়নীমা এটা কে??
.
— পূর্ণতা মা আমার এটা তোমার আর একটা পাপা। এখন থেকে তোমার দুটো মা আর দুটো পাপা । ওকে?( ইফতি সাহেব)
— সত্যিই পাপা???
— হুম ময়না সত্যি ( অহন পূর্ণতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল)
.
— এই ওয়েট ওয়েট । ইফতি সাহেব আপনি অহন কে আমার কথা বলেছেন তাই না?? কিন্তু আমি তো আজই আপনাকে বলেছি অহন আমার হাজব্যান্ড । অহন তুমি আজ জানতে পেরেছ আমার ব্যাপারে তাই না???
.
আমার কথা শুনে ওরা দুই বন্ধু হেসে যেন লুটোপুটি খেতে শুরু করল।
— অয়নী ম্যাডাম আমার বন্ধু তোমার মতো গবেট না ।সে যথেষ্ট বুদ্ধিমান ।
— মানে টা কি??
— সাইকো লেডি প্রথম যেদিন আপনি আমাদের বাড়ি গেলেন আর কথার ছলে অহনের কথা উঠল তখন আপনার ওসব আধ্যাত্নিক সব কথা ঐ যে অহন নাকি আপনার সুসম্পর্কের দুসম্পর্ক, দুসম্পর্কের সুসম্পর্ক এই সব শুনেই মনে হয়েছিল ভেতরে ভেজাল আছে।আর এদিকে ওর ফোন সুইচড অফ।তো আমি নিজেই যখন খোজ নিলাম তখন ও অহন হসপিটালে। তার কয়েক দিন পর ও কিছুটা সুস্থ হলো । তারপর জানলাম সব কিছু ওর থেকে। এর মধ্যে আবার মা হুট করে ভেজাল পাকিয়ে বসতে চেয়েছিল। যাই হোক,,, অহন তোর বৌ সাইকো হলে হবে কি সে জাতে মাতাল তালে ঠিক। তোর কথা মতো আমি কত উস্কীয়েছি কিন্ত নাহ সে তো উল্টে আমাকেই ঝাড়ি খেতে হয়েছে তোর নামে কিছু বললে।।।।।
.
— দেখতে হবে না বৌ টা কার??
.
— বাহ আবার অহন আবার??? সমস্যা টা কি তোমার আমাকে বার বার বোকা না বানালে হয় না তোমার তাই না? অসুস্থ অবস্থায় ও মাথা ভর্তি ফাজলামি তাই না???? ইফতি সাহেব আপনিও ওর তালে তাল মেলালেন?? আমি আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি। এইত তখন ই কত খারাপ খারাপ কথা বললেন নিজের বন্ধুর নামে। সে কুত্সিত মনের, আমি বেটার কাউকে ডিজর্ভ করি আরো কত কি??
.
— এই আমার কিন্তু কোন দোষ নেই। তোমার পুরক সাহেব ই আমাকে অসব বলতে বলত। আর তোমার রিএকশন জানতে চাইত। এই তুমি করে বললাম বলে আবার কিছু মনে করো না। বন্ধুর বৌ তাই আপনি আপনি বলতে কেমন যেন লাগে। ছোট বোনের মতো তুমি আমার
— না না, ভাইয়া সমস্যা নেই। আপনি ও তো আমার বড় ভাইয়ের ই মতো । কিন্ত আপনি এই ফাজিল ব্যাটার তালে তাল মিলিয়ে একদম ঠিক করেন নি। আপনারা সব গুলো একই রকম।।।। আজ যদি ওহির সাথে দেখা না হত কি হত?? আরো কবে ফিরতাম আমি ?? আর এই শালা ফাজিল ব্যাটা অহন বসে বসে মজা দেখত তাই না???
.
— না না তুমি আজই ফিরতে।
— কিভাবে??
— ইফতি আজই তোমাকে নিয়ে আসত ।।।
— কিহ??
– জ্বি হ্যা সাইকো লেডি। সেজন্যই আমি বলছিলাম না আমরা কোথায় যাচ্ছি । আমি আর অহন সারপ্রাইজ প্ল্যান করেছিলাম। পূর্ণতা কে বলেছিলাম তোমার সাথে বায়না ধরতে। । মাঝখান থেকে ঐ ওহির সাথে দেখা হয়ে মজাটাই নষ্ট হয়ে গেল । ঐ বেচারি গড় গড় করে আগেই সব বলে দিয়েছে।
— বেশ করেছে বলে দিয়েছে।
.
— অহ এইজন্য তোদের আসতে এত দেরি হলো?? আমি ভেবেছি অয়নী আবার কোন পাগলামো করেছে তাই হয়ত আজ আর তোরা আসবি না।তাই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম
— ভালো কথা আমার বাড়িতে তো জানাতে হবে এখানে ফিরে এসেছি।
— সমস্যা নেই । আমি আঙ্কেল কে সব বলেই তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছি সাইকো লেডি । যাই হোক আমাকে আর পূর্ণতা কে এবার ফিরতে হবে । রাত অনেক হল। তোমরা দুই টোনাটুনি গল্প করো আমরা বাপ মেয়ে যাই । আর হ্যা আমার মেয়েটা কিন্তু তোদের ও মেয়ে। যখন ই ওকে দেখতে মন চাইবে চলে আসবি।
— ভাইয়া আপনিও ওকে আমার কাছে এনে দেবেন কিন্তু মাঝে মাঝে। আর আমরা তো যাবই আমাদের বিড়াল ছানার কাছে ।।।
.
.
ইফতি সাহেব পুর্নতা কে নিয়ে চলে গেলেন। যাবার সময় আন্টির দেয়া আংটি টা পূর্ণতার হাতে ফিরিয়ে দিলাম ।। বললাম এটার অধিকার শুধু তোমার সানিয়া মার। অয়নী মার না।
..
.
— আচ্ছা পুরক সাহেব তুমি যে এসব করলে আমি সত্যিই যদি তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিতাম?? তখন??
— ঠিক থাকলে তো সাথে সাথে গিযেই সব ভুল ভাঙিয়ে সেদিন ই নিয়ে আসতাম আমার কাছে । কিন্তু হুট করে এক্সিডেন্ট টা হয়েই তো যত বিপত্তি ঘটল ।। আমার তো ও কয়েক মাস জ্ঞান ই ছিল না । তারপর জ্ঞান ফেরার পর ইফ্তির থেকে তো সব শুনলাম তুমি ভালো আছ।।। তারপর ওর থেকে তো সব আপডেট নিতাম ই তোমার । আর আজ তো ফেরার ই কথা ছিল
— বাহ।। ওরে আমার আপডেট ওয়ালা বর রে।
— সত্যিই তুমি কেন ধৈর্য ধরলে এতদিন কেন ডিভোর্স দিলে না??
— পুরক সাহেব তোমার মনে আছে সেই যে সেদিন লেকের পাড়ে বসে তুমি আমার থেকে সময় চেয়েছিলে।। আমি তো জানতাম না তুমি ঠিক কেন সময় চেয়েছিলে সেদিন।।। কিন্ত আমি জানতাম তুমি সময় চেয়েছিলে। এই সময় টা আমি তোমাকে সারাজীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম পুরক সাহেব
— আমি তো সেদিন ওহির ব্যাপার টা ক্লিয়ার করার জন্য সময় চেয়েছিলাম। তুমি এত কিছুর পরও আমার ঐ টুকরো কথা টাই মনে রেখেছিলে?
— আমি তোমার টুকরো টুকরো সব কিছু মনে রাখতে ভালবাসি পুরক সাহেব।টুকরো কথা, টুকরো স্মৃতি,, টুকরো অভিমান টুকরো সব।
.
.
অহন আমার নাকফুল টা অতিযত্নে আজ আবার পরিয়ে দিল।
— ভবিষ্যতে এইটা যদি আর কখনো খোল একদম নাক কেটে নেব তোমার আমি।। তুমি জানো না তোমাকে নোজ পিন পড়া অবস্থায় দেখতে আমি কত ভালবাসি।
— আমিও তো ভালবাসি তোমার বুকে আমার দেয়া সেই চায়ের ক্ষত'র দাগ টা দেখতে...
— হুম ভালবাসি ভালবাসি ভালবাসি আমি আমার পরি বৌ কে ভালবাসি।
— অসীম ঘাতে ভালবাসি তোমাকে পুরক সাহেব।
.
.
দেখতে দেখতে সব কিছু ঠিক হয়ে গেল। অহন এখ্ন পুরোপুরি সুস্থ। । আমাদের বিয়ের তিন বছর পূর্তি টা খুব ভালো ভাবে সেলিব্রেট করা হয়েছে।
ঐ দিন পুরক সাহেব আমাকে পৃথিবীর সব চেয়ে সুন্দর উপহার আমাকে এনে দিয়েছে। আমাকে একটা রাজকন্যা এনে দিয়েছে ওরফ্যানেজ থেকে। ওর নাম ও রেখেছি পূর্ণতা। হ্যা ও আমাদের পুর্নতা। পরি আর পুরকের পূর্ণতা।। মা ও ওকে ধীরে ধীরে মেনে নিচ্ছে।।
.
আর আমার প্রথম পূর্ণতা ও আমার কথা মনে হলেই আমার কাছে চলে আসে ।
.
পরি আর পুরকের জিবন যেন নতুন করে শুরু হয়েছে। আমাদের জীবনে আবার ফিরে এসেছে বসন্ত। আর পূর্ণতা যেন পরিপুরকের সেই বসন্তে ফোটা লাল টুকটুকে ফুল ।।।
আর পরিপুরকের ভালবাসা এখনো গোলাপে ফোটে।।। হ্যা আমাদের ভালবাসা এখনো গোলাপে ফোটে....।।
.
.
.
সমাপ্ত.................................