ভিনা কোচিং ছেড়ে দিয়েছে,কোচিং টা বন্ধই হয়ে যাওয়ার কথা ছিলো।কিন্তু টাকা দিয়ে পুরো কোর্স না করিয়ে নিতে গার্জিয়ানরা নারাজ।আবার গার্জিয়ানদের রিকোয়েস্টে এর জন্য যাবির ক্লাস নিতে শুরু করেছে,কিন্তু ভিনা আর যায়নি।যে অবস্থা হয়েছে,সেখানে সবার সামনে যেতে খুবই আনকম্ফরটেবল লাগে।যাবির অনেকবার বলেছিলো,আসার জন্য,কিন্তু আর যায়নি ভিনা।হটাৎ একদিন ক্লাসে ঢুকে যাবির পুরো শক খেয়েছে।কোথা থেকে যেন জেরিন এসে হাজির।
-ভালো আছো যাবির?
-জেরিন,আমি তোমার চেয়ে বড়,কতবার বলবো আমাকে তুমি করে বলবে না।
-তুমি করেই বলবো,এখন আমার টিচার না তুমি।
-এখানে কী করছো?
-ক্লাস করবো তোমার।
-এটা এসএসসি এক্সামিনি দের জন্য,তোমার এখানে কী?
-কে জানে আমি কোথায় পড়ি?কারো এত তেল ও নাই জানার।
-ক্লাস আছেই মাত্র দুই সপ্তাহ,এসব বাদ দিয়ে পড়াশোনায় মন দাও।
-কীভাবে মন দিবো?শত শত মেসেজ দিয়েছি তোমার মোবাইলে,একটার রিপ্লাই করোনি।ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট করো নিশ্চয়ই? আমার রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করলে কী এমন দুনিয়া শেষ হয়ে যাবে?
-শোনো জেরিন,আমি ব্যাসিকালি ইন্ট্রোভার্ট একজন ছেলে,খুব বেশি ফ্রেন্ড আমার নেই।তার উপর তোমার মত এরোগেন্ট মেয়ে আমার লিস্টে রাখার প্রশ্নই আসে না।
-হয়ে গেছে ভুল একবার।ক্ষমা কি করা যায় না?
-ক্ষমা করা যায়।কিন্তু দ্বিতীয়বার ভুলের সুযোগ দেয়া যায় না।তুমি যদি সত্যিই এখানে ক্লাস করতে চাও,আমি চলে যাবো কোচিং থেকে।
-আমি তোমার পিছে পিছে সব জায়গায় যাবো।সব ছেড়ে দিবে আমার জন্য?এত ইম্পরট্যন্স আমার?
-টিন এজার তো,ভাবের কথা জানো বেশি। ডিস্টার্বিং কোনো এলিমেন্ট ই আমি আমার আশে পাশে রাখি না।সরো এখন।
যাবির বিরক্তি নিয়ে বেরিয়ে এলো।এই মেয়ের বাবা মা কি কিছুই বলে না?এত ছুট দিয়ে রেখেছে,সামান্যতম লজ্জা কাজ করে না। এখন কোচিং এ শুধু পরীক্ষা হবে,এইটা নিয়ে মাথা ব্যাথার কারণ নেই,কাউকে ম্যানেজ করে গার্ডে বসিয়ে রাখলেই হবে।ভাগ্যিস ভিনা আসে নি ক্লাসে।নাহলে কিছু শুরুর আগে শেষ হয়ে যেত সব।জেরিন এমন ভাবে বিহেভ করে যেন কত পুরোনো প্রেম!এসব মেয়ে থেকে শত হাত দূরে থাকা ভালো।
•
নওমির কিছুই ভালো লাগছে না।ভিনা নাকি নওমির সাথে এক কলেজে পড়বে না।সে নাকি বাসার সামনের কলেজেই পড়বে।শুধু তাই না,সে গ্রুপ চেঞ্জ করে আর্টস নিবে।নওমি কান্না পর্যন্ত করেছে,কিন্তু ভিনা শুনেনি কিছু।উলটো আরো বড়দের মত কথা শুনিয়ে দিয়েছে।
-দেখ নওমি,পড়াশোনা নিজের কাছে।ইন্সটিটিউশন ফ্যাক্ট না।আর গ্রুপ চেঞ্জ করলে মানুষ ও চেঞ্জ হয়ে যাবে এমন কোনো কথা নাই।যোগাযোগ থাকবে,সবই এক থাকবে।সামান্য কারণে যদি বন্ধুত্বে ছেদ পড়ে,সেটা খুবই দুঃখজনক।
এর উপরে আসলে কোনো কথা বলা যায় না।নওমি মনে মনে ঠিক করে যেভাবেই হোক সে আর ভিনা একি ভার্সিটিতে পড়বে।দুই বছর দেখতে দেখতে চলে যাবে।সবমিলিয়ে ভালো না লাগার আরেকটা কারণ ও আছে।তানভিরের সাথে দেখা করতে ইচ্ছে করছে।আগে ভিনার কথা বলে সে বের হত,এখন তাও বের হতে পারবে না।সেই কোন জন্মদিনে দেখা করেছে,তার ও প্রায় দুই সপ্তাহ হয়ে গেছে। ভিনা এখনো জানে না যে তানভিরের সাথে সম্পর্কে আছে সে।তাই হুট করে দেখা করার কথাটা বলা বেমানান।
-শোনো দেখতে ইচ্ছে করছে তোমাকে,পারবে দেখা করতে?
প্রায় ঘন্টাখানেক পর সন্ধ্যার দিকে রিপ্লাই আসলো।
-আমার সামনে এক্সাম নওমি।আপাতত কয়দিন আমি ঠিকমত কথাই বলতে পারবো না।
নওমির নিজের উপর বিরক্ত লাগছে,পছন্দ করলো তো করলো এক ডাক্তারকে!
•
মুনা গত পরশু নিজের বাসায় গিয়েছিলো। তার কিছু জিনিস ছিলো সে বাসায়।দোলা আর তারেক সামান্য কথা বললেও তার মা ভেতরের রুম থেকে বের ও হননি।দোলার কথা স্বাভাবিক মনে হলেও তারেকের কথায় কেন যেন মনে হলো সে বিরক্ত।
-কি রে তারেক,এসে কি কষ্ট দিলাম?
-না আপা,সেরকম কিছু না।আসলে জানোই তো আব্বার বেশি সম্পত্তি ছিলো না।আমার ব্যবসা আর দোলার বিয়ে এই দুইটা ঠিকমত হবে নাকি সন্দেহ।
-আমি জানবো না?আমাকে এগুলো কেন বলছিস?
-তোমার তো ভালো ঘরেই বিয়ে হয়েছে।তোমার তো আর টাকা পয়সার দরকার নেই,তাই না?
-তারেক,তুই কি মনে করছিস সম্পত্তির জন্য এ বাড়িতে এসেছি?
-যে কারণেই আসো,তোমাকে জানালাম আরকি।
পেছন থেকে দোলা তারেকের হাত চেপে থামিয়ে দিলো।
-তারেক বেশি বুঝে আপা।এসব বাদ দাও। তুমি কি মার সাথে দেখা করতে এসেছো?
-মা তো দেখা করবে না।আমি আমার কিছু জিনিস নিতে এসেছি।আলমারির চাবিটা দে।
দোলা তারেককে বাইরে থেকে নাস্তা আনতে পাঠিয়ে গোসলে চলে গেলো।মুনা আলমারি থেকে নিজের মেডিকেল রিপোর্ট আর কিছু পুরোনো জিনিস বের করে ব্যাগে ভরতে লাগলো। ঠিক তখনি সে কিছু কাগজ দেখলো।বেশ কিছুক্ষণ ঘাটাঘাটি করে যা বুঝলো,তার বাবা বেশ ভালো পরিমাণ টাকা রেখে গেছেন।এই টাকায় মুনা ভাগ বসালেও কিছু যায় আসবে না।মুনা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাগজগুলো জায়গা মত রেখে কিছু না বলেই বাসা থেকে বেরিয়ে এলো।আগের কথা মনে পড়লো,যখন সে তারেকের জন্য ভালো খাবার গুলো আলাদা তুলে রাখতো। তারেককে আলাদা রুম দিয়ে সে ড্রয়িং রুমের সোফায় ঘুমাত।তারেকের স্কুলের বেতন থেকে শুরু করে ফর্ম ফিলাপ সব সে রোদে দাঁড়িয়ে থেকে করত।এমন ও হয়েছে,পরীক্ষার আগের দিন বই খুঁজে না পাওয়ার রাত দশটা বাজে সে বই কিনতে বেড়িয়েছিলো।যে টাকা তুলে রেখেছিলো চুড়ি কেনার জন্য,সেটা দিয়ে বই কিনে এনেছিলো।পরেরদিন অবশ্য খাঁটের নিচ থেকে বই পাওয়া গিয়েছিলো,কিন্তু চুড়ি আর কেনা হয়নি।কে বলেছে অন্যকে ভালোবাসা দিলে নিজে ভালোবাসা পায়?...
.
.
.
চলবে.................................................