আজকে নওমির মন অনেক বেশিই ভালো।তানভিরের সাথে দেখা হয়েছে ওর।বাসায় অবশ্য বলে গেছে ভিনার সাথে দেখা করতে যাচ্ছে।ভিনার সাথে দেখা করেছেও,কিন্তু আধা ঘন্টার বেশি থাকে নি।এরপর তানভিরের সাথে একটা রেস্টুরেন্টে খেয়ে এসে পড়েছে।তানভির প্রথম ডেটে একটা বই আর এক জোড়া এয়ারিং গিফট দিয়েছে।বইটা র্যাপ করা ছিলো।নওমি আর খুলেনি রেস্টুরেন্টে। যাওয়ার আগে তানভির হেসে হেসে বলেছিলো,গিফট টা তোমার পছন্দ হবে।এই কথা শোনার পর থেকেই বেশ আগ্রহ জন্মেছিলো।বাসায় এসে দেখে ফেলুদা সমগ্র। দেখে বেশ মেজাজ খারাপ হয়েছে ওর।এখন কী ফেলুদা পড়ার বয়স ওর?এখন তো বুদ্ধদেব গুহর একটু উষ্ণতার জন্য পড়ার সময়।কিন্তু বাসায় এসব বই পড়া খুবই বিপজ্জনক ব্যাপার।নওমির মা অনেক স্ট্রিক্ট মহিলা।নওমির দিকে বেশ নজরদারি করেন উনি।কিন্তু ইদানিং ছাড় দিয়েছেন,যেটা এখনো নওমির কাছে রহস্যজনক।নওমিদের ড্রাইভার কাদের ভাই অনেক পুরোনো।বিশ্বস্ত দেখে তাকে নিয়েই একা যাওয়া আসা করে নওমি।তানভিরের সাথে দেখা করার আগে অনেক কায়দা করে তাকে বুঝিয়ে দেখা করতে হয়েছে।ভুলেও তার মার কানে এই কথা গেলে,নওমির স্বাধীনতা সেখানেই শেষ ।
•
আজকের দিনটা ভিনার মোটামুটি ভালোই গিয়েছে।হটাৎ করে নওমি এসে দেখা করে মন ভালো করে দিয়েছে।তার উপর নওমি আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই রুপিন আন্টি এসেছিলো।মুনার বাবা মারা যাওয়ার ঘটনা শুনে উনি দেখা করতে এসেছে।উনি কানাডা যাবে এক বছরের জন্য।এর জন্যও বিদায় নিতে এসেছিলো। ভিনার মন সামান্য খারাপ হলেও ইন্টারনেটের এই যুগে দূরত্ব কোনো ব্যাপারই না।মুনা শুধু কয়েক মিনিট বসে ফর্মালিটির জন্য যতটুকু না বললেই নয়,ততটুকু কথা বলে চলে গিয়ে মোমেনা খালাকে দিয়ে নাস্তা পাঠিয়ে দিয়েছে।নওমির সাথে বেশ ভালোই খাতির হয়েছে রুপিন আন্টির।মানুষটা কী অমায়িক আর মিশুক।এরকম মানুষ আশেপাশে থাকলেও মন ভালো হয়ে যায়।নওমি আর রুপিন চলে যাওয়ার পর ভিনা বেরিয়েছিলো বই কিনতে।কতদিন পর নীলক্ষেতে!অবশ্য যাবির ও ছিলো সাথে।যাবির খুঁজে খুঁজে ভালো লেখকদের বই কিনে দিয়েছে।সাইন্সে পড়ে আর্টসের ব্যাপারে এত ভালো ধারণা এই ছেলের কীভাবে হলো, সেটা নিয়ে ভিনা বেশ তাজ্জবই হয়েছে। কিন্তু যেহেতু কথা বলার অভ্যাস কম,তাই জিজ্ঞেস করেনি।এদিকে যাবির অধীর আগ্রহে ছিলো কখন ভিনা অবাক হয়ে বলবে 'তুমি এতকিছু কীভাবে জানলে!' আর ও জ্ঞানী মানুষের মত মুখে ভাব ফুটিয়ে বলবে,আরে এগুলা কোনো ব্যাপার।তুমি বলেছো আর আমি ব্যবস্থা করবো না,তা কি হয়?' কিন্তু মেয়েটা নিরস।এই বয়সের তুলনায় বুড়ি বনে যাওয়া মেয়ের সাথে তার বাকী জীবন কীভাবে কাটবে,সেটা নিয়ে কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো যাবিরের। তবে সেটা ক্ষণিকের জন্যই।
•
রুপিন কে দেখার পর থেকেই মুনার মধ্যে প্রচন্ড অস্থিরতা আর হতাশা কাজ করছে। এই মানুষটাকে দেখলেই মনে হয় সে যেন এসেছে মুনাকে সর্বহারা করতে। আচ্ছা রুপিন কি ওর সংসার ভাঙ্গতে এসেছে?এখন তো মুনার বাবাও নেই,এই বিষয়টারই কি সুযোগ নিবে সে?পরক্ষণেই আবার ভাবে এই সংসার তো সে নিজেই করতে চায় না।অনুগ্রহের এই সংসার তার কাছে ভিক্ষার মত লাগে। কিন্তু সোহেলকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবলেই সব এলোমেলো হয়ে যায়।আজকে যদি সুযোগ হত,তাহলে সে নিজের সন্তান দিয়ে অন্তত সোহেলকে বেঁধে রাখতে পারত,সেই সন্তানের জন্য হলেও সে ঘরে আশ্রিতার চেয়ে উপরে স্থান পেত।ভাগ্য তার সাথে এতটা নির্মম পরিহাস কেন করছে। এত কষ্ট সে কীভাবে সহ্য করবে?
•
মাইশা জান পরানেই বিরক্ত জেরিনের উপরে।মেয়েটা অতিরিক্ত জেদি।কিন্তু জেরিনের মা যেভাবে হাতে পায়ে ধরেছে,সেখানে এই টিউশনি ছাড়া সম্ভব না আপাতত।প্রতিটা কথা পালটা উত্তর দিবে মেয়েটা।আর প্রতিদিন একি কথা,যাবির নামে কাউকে চিনে কিনা। প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হয় মেয়েটার কান্ড দেখলে।ওর কি দায় পড়েছে যে সব মানুষের নাড়ি নক্ষত্র নিয়ে গবেষণা করবে।কয়দিন আগেই মেয়েটা বলেছে
-আপনি যাবির নামের কাউকে চিনেন?আপনার এক ব্যাচ জুনিয়র।
-না
-কেন?যে ইন্সটিটিউশনে পড়েন,সে ইন্সটিটিউশনের সবার খোঁজ রাখবেন না?
মাইশা আর উত্তর দেয়নি।সম্ভব হলে মেয়েটাত দুই গালে দুইটা চড় বসিয়ে দিত।মাঝে মাঝে সহ্যের পরীক্ষা এত কঠিন হয় যে বলার মত না!
•
পরেরদিন কলেজের জন্য বেড়োনোর সময় সোহেল ভিনাকে ডাক দেয়।
-গাড়ি লাগবে?
-না,হেঁটেই যাওয়া যাবে।
-আজকাল তো গাড়ি একদমই ব্যবহার করো না।
-প্রয়োজন পড়ে না।
-টিফিনের টাকা লাগবে না?
-দিলে ভালো হয়।
সোহেল সাথে সাথে পাঁচশ টাকার একটা নোট বের করে বলে,প্রতি সপ্তাহে টাকা নিয়ে যেও।আর কিছু লাগলে বলবে অবশ্যই।
-একদিন পারলে কলেজে এসো।
ভিনা এতটুকু বলেই চলে যায়।এই কথা বলার ইচ্ছা ছিলো না।কিন্তু তাও কেন বললো সে জানেনা।কলেজে গিয়েই দেখে আরশি ওয়াসিমকে ধমকে অর্ধেক করে ফেলছে।ছেলেটা একটা বেঞ্চে ঢেলান দিয়ে সব হজম করছে।ধমক পর্ব শেষ হলে আরশি ভিনার পাশে এসে বসলো,এবং ভিনার ব্যাগটা নিচে নামিয়ে রাখলো।ভিনা আগেই পেপার নিয়ে এসেছিলো,ব্যাগটা তুলে সে পেপারের উপর রাখলো। আরশি একবার তাকিয়ে কিছুই বললো না ওকে।পুরো ক্লাসে আরশি ঘুমিয়ে কাটিয়েছে।রিতু ম্যাডামের ক্লাসে অবশ্যই বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে ওকে।কিন্তু সে মোটেও বাইরে দাঁড়িয়ে থাকার মেয়ে না,সুযোগ বুঝে বাঙ্ক মেরে চলে গেছে।আবারো ব্যাগ ভিনার কাছে।ছুটির সময় এবার ব্যাগ ভিনাই নিয়ে বের হলো।প্রায় বিশ মিনিট পর আরশি এসে ভিনার কাছ থেকে ব্যাগ নিয়ে গেলো।যাওয়ার আগে বলে গেলো
-ভালো বাচ্চা।
বাচ্চা?সমবয়সী সহপাঠীকে কীভাবে একটা মানুষ বাচ্চা বলে। এসব সাত পাঁচ ভেবে ঘরে এসেই অনেক বড় ধাক্কা খায় সে.....
.
.
.
চলবে...............................................