ভিনা বাসায় আসার পর দেখে মোমেনা খালা চিৎকার করছে,পাশের বাসা থেকে ওয়াহিদ আঙ্কেল আর সিদ্দিক চাচা এসে মুনা কে ধরেছে।মুনা সুইসাইড এটেম্পট করেছে।ভিনা কিছু মূহুর্ত শুধু দাঁড়িয়ে সব বোঝার চেষ্টা করলো কী হচ্ছে।হুশ আসার পরেই সে সোহেলকে ফোন করে।এরপর ওয়াহিদ আঙ্কেকেলের গাড়িতে করে হস্পিটালে নিয়ে যায়।হস্পিটালে যাওয়ার পরেই ভিনা তানভিরকে ফোন দেয় ভিনা,তানভির ক্লাস রেখেই এসে পড়ে।তানভির সাথে করে সেই আগের সিনিয়র ইন্টার্ন করা আপুকে নিয়ে আসে,তার নাম মালিহা।মুনার জ্ঞান ছিলো,সে শক্ত করে নিজের হাত ধরে রেখেছিলো।একটা ওড়না দিয়ে তার হাত বাধা ছিলো,হালকা রঙের সেই ওড়না রক্তে ভিজে ভয়াবহ একটা অবস্থার সৃষ্টি করেছে।ইমার্জেন্সিতে নেয়ার পর দ্রুত একজন ডাক্তার আর মালিহা মিলে মুনার ট্রিটমেন্ট শুরু করে,তানভির আর ভিনা ফর্ম ফিলাপ করতে চলে যায়।আধা ঘন্টা পরই সোহেল এসে পড়ে।
মালিহা এসে জানায় নন লেথাল ইঞ্জুরি।রেডিয়াল আর্টারি কাটা পড়ে নি,তাই ভয়ের কিছু নেই।হস্পিটালে একদিন রাখা দরকার, সেলাই লাগবে,আর ক্ষত শুকিয়ে স্বাভাবিক হতে মাস দুয়েক লেগে যাবে।সোহেল চুপচাপ শুনে গেলো,রাগী চোখে মুনার দিকে তাকালেও কিছু বললো না,পুলিশি ঝামেলা এড়ানোর জন্য আগেই বাসায় নিয়ে যেতে চাচ্ছে সে।কয়েক ঘন্টা পর, প্রায় রাত দুটো বাজে মুনার অবস্থা স্ট্যাবল হলে বাসায় নিয়ে আসা হলো তাকে।হাতে ক্যানোলা আর স্যালাইন সহ।ভাগ্য ভালো পুলিশ ইনভলভ হয়নি,নাহলে আরো বড় সমস্যা হতে পারত।সোহেলের মুনার জন্য সামান্যতম মায়া কাজ করছে না।নিজের জীবনে সমস্যার তো কমতি নেই,এর উপর আবার মুনার ঝামেলা,হাপিয়ে উঠছে সে সবকিছুতে।হাত ঠিক হলেই সাইকিয়াট্রিক হেল্পে নিতে বেশ জোর দিয়েই বলেছে মুনাকে এটেন্ড করা ডাক্তার।সোহেল বারান্দায় দাঁড়িয়ে একটার পর একটা সিগারেট শেষ করছে।হটাৎ করে পেছন থেকে ভিনা এসে দাঁড়ায় সোহেলের পাশে।হাত থেকে নিয়ে সিগারেট টা ফেলে দেয়।
-সিগারেট খাওয়া ভালো না,নষ্ট হয়ে যাওয়া মানুষজন এগুলো করে।
-আমাকে দিয়ে নিজের দোষকে জাস্টিফাই করো না ভিনা।
-আমি জাস্টিফাই করছি না।স্মোকিং করা ভালো না,সেটা যেকোনো বয়সের জন্যই।
-আমার অবস্থা তো দেখছোই তারপরো এই কথা বলবে?
-আমার অবস্থা তো দেখোনি,তাও তো বলেছিলে তুমি।
-এখন অন্তত পুরোনো বিষয় নিয়ে কথা বলতে এসো না ভিনা,আই রিকোয়েস্ট।
-মুনাকে তার মার বাসায় পাঠিয়ে দাও।
-সেটার সুযোগ নেই ভিনা।
-কেন?
-মুনার বাবা মারা যাওয়ার পর ঐ বাসার দরজা মুনার জন্য বন্ধ হয়ে গেছে ধরতে পারো।
-তাতে তোমার কী?মুনার মা দেখবে নিজের মেয়েকে।
-মুনার মাই চাচ্ছে না সে আসুক।
-ও,আই সি,তাহলে এই কারণেই সে সুইসাইড এটেম্পট করেছে।
-বলতে পারো।
-কেন?আরো কারণ আছে কোনো?তুমি তো কোনো কমতি রাখো নি। তাকে সময় দিয়েছো,কেয়ার করেছো,সবকিছু ভুলে.....
সোহেল ভিনার দিকে তাকালো।ভিনা চোখমুখ শক্ত করে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।সোহেল কোনো কথা বললো না।
-নিজের মায়ের সাপোর্ট না পেয়ে আজকে এই অবস্থা উনার,অথচ আমার মা তো নেইই,বাবাকেও উনি কেড়ে নিচ্ছে,আমার কী করা উচিৎ ছিলো তাহলে?সিগারেট খাওয়া তো বেশ কমই ছিলো,তাই না?
সোহেল নিশ্চুপ।মেয়ের প্রশ্নের কোনো উত্তর তার কাছে নেই।ভিনার রাগে চোখে পানি এসে পড়ছে,সে কথা বলছে অথচ তার বাবা উত্তর দেয়ার প্রয়োজন মনে করছে না।
-আমি লাস্ট কথা বলে চলে যাচ্ছি।আজকে মুনার এই অবস্থার জন্য তুমি তো দায়ী না, তাহলে এর দায়ভার তুমি নিবে না।তাকে তার মার বাসায় পাঠিয়ে দাও।
ভিনাকে বোঝানোর মত অবস্থা সোহেলের ছিলো না।সে বলতে পারেনি মুনার সাথে ভালো ব্যবহারের অন্যতম কারণ ভিনা।সে বলতে পারেনি যে মুনার বাসায় আত্মহত্যার কথা জানানোর পরও কেউ তাকে দেখতে আসেনি,সে এমনভাবেই বিতাড়িত।সে বলতে পারেনি,মুনাও ভিনার মত ভুক্তভোগী,শেষের কথাটা বলার সাহস হয়ত তার কখনোই হবে না।
•
ভিনার মধ্যে অনুশোচনা আর ক্রোধ,দুইটাই কাজ করছে,কিন্তু কোনটা বেশি,সেটা নিয়ে দ্বন্দ্বে আছে। সেও একদিন সব কিছু নিয়ে ফ্রাস্টেটেড হয়ে এরকম পদক্ষেপ নিয়েছিলো।তখন যাবির এসে ওর পাশে দাঁড়িয়েছে।আজকে মুনাও অনেকটা এই কারণেই ভেঙে আছে,সেখানে মুনার পাশে দাঁড়ানো তার বাবার দায়িত্ব। কিন্তু এই মানুষটাই তার মায়ের জায়গা নিয়ে এই বাসায় এসেছে,তাকে প্রতিনিয়ত ছোট করে গেছে।এই মানুষটার জন্যই আজ তার বাবা তার থেকে অনেক দূরে,দুইজনের মাঝে অপরিচিত মানুষের মত দূরত্ব।আজকে মুনাকে সাপোর্ট দিতে গিয়ে তার বাবা যদি আরো বেশি ইনভলভ হয়ে যায় মুনার সাথে,তখন কী হবে?তার বাবা যদি ফিরেও না তাকায় তার দিকে?ভিনা পাগলের মত কাঁদছে।সে স্বার্থপর হতে পারছে না,উদার ও না।
.
.
.
চলবে.................................................