পরিপূরক - পর্ব ১৪ - স্পৃহা নূর - ধারাবাহিক গল্প


তুমি এখ্ন বুঝবে সত্যি কারের স্বার্থপরতা কাকে বলে ।।।। আমি আমার স্বার্থের এক ছিটে ফোটা ও আর ছাড় দেব না ।।। তুমি আমাকে যেমন ভাবো ঠিক তেমন টাই হব আমি। আমি আমার স্বার্থ পুরোটুক উসুল করে নেব।
..
..
— অহন ইদানিং গাজার নেশা ধরেছ নাকি???
— What.....???
— মেয়াদহীন গাজাখোর দের মতো কথা বলছ কেন তাহলে???
— সব সময় আজে বাজে কথা বলে মুড নষ্ট করে দিতে খুব ভালো লাগে তোমার তাই না???
— আজে বাজে কথা তো তুমি বলছ। চোরের মতো ঘরে ঢুকে।।। 
— চুপ আর একটা ও বাজে কথা বলবে না ।আমি চোর???কিসের চোর আমি??
— আমার মনের চোর ।
.
.
— চোর না ডাকাত আমি। আর তুমি আমার ডাকিনী।
বাশি শুনে আর কাজ নাই ,সে যে ডাকাতিয়া বাশি ...
সে যে দিন দুপুরে চুরি করে রাত্তিরে তো কথা নাই...
ডাকাতিয়া বাশি...
হা হা হা...পুরক সাহেব খুব তো রেগে ছিলে আমার ওপর। কই গেল সব রাগ?? হুম?? 
— তুমি জানো না আমি তোমার ওপর বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারি না।।আর তুমি সব সময় সেটার ই ফায়দা লুটাও ।
—হুহ।।।স্বার্থপর একটা ।।। স্বার্থ হাসিল করতে এসেছে ।।তাই না???দেখি আজ কিভাবে স্বার্থ হাসিল করো তুমি???? আজ আমি করব আমার স্বার্থ হাসিল।।
.
বলতে বলতে অহনের দু চোখ ওড়না দিয়ে বেধে দিয়েছি, দু হাত শাড়ির আচলে পিঠের দিকে বেধে নিয়েছি।। ও নিষেধও করছে না ।। অন্ধ চোখে সে শুধু ঢোক গিলছে।।
.
.
কানের কাছে আলত করে ঠোট দিয়ে স্পর্শ করতেই সে বলে উঠলো 
.
— অয়নী হ...হ..হচ্ছে টা কি? 
.
বুঝতে পারলাম তার নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে।ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে। মাতাল হয়ে যাচ্ছে ।
.
— ডাকাতি করতে এসেছিলে না?? দ্যাখ কে ডাকিনী ই আজ তোমায় ডাকাতি করে নেবে
— হুম শুধু ডাকাতি না খুন করে ফেলো না আমায়। খুন হয়ে যাই আজ.... wanna be die in your arms....
.
.
হঠাত ই ওহির বমি করার শব্দ পেয়ে দুজনের ই ভ্রম ভাঙল।।
.
— অয়নী খুলে দাও এসব। আর কতক্ষণ বেধে রাখবে এভাবে?
— না সারাজীবন বেধে রাখব এভাবে । । 
— অয়নী কি সব খামখেয়ালি শুরু করলে আবার?? খোল বলছি।।। ওহির কাছে যাওয়া উচিত আমার।। মেয়েটা বমি করছে।
— তো?????
— তো আবার কি?? আমার যাওয়া কি উচিত না?? হাত,চোখ খুলে দাও বলছি
— খুলব না । ও বমি করছে তো তুমি গিয়ে কি করবে? বমি বিলাস করবে দুজন এক সাথে??
.
.
আমার কথা শুনে রাগে গজ গজ করতে করতে একাই কিভাবে যেন হাত খুলে নিল আমার শাড়ির আঁচল থেকে।। তারপর চোখ।
আসলে খুব যে শক্ত করে বেধেছিলাম তা না । আলতো করেই বেধেছিলাম ।ও শুধু সায় দিয়ে চুপ করে বসে ছিল এতক্ষণ।
.
— আশ্চর্য অয়নী আমি তোমাকে এতটা স্বার্থপর ভাবিনি। তুমি বুঝি ভুলে গেছ এক সময় তুমিও দিনের পর দিন রাতের পর রাত বমি করতে।। ওহির চেয়ে বেশি ই করতে। তখন আমিই তোমার পাশে দাড়িয়ে থাকতাম ঐ অবস্থায় ই বুকের ভেতর জড়িয়ে নিতাম, তুমি অনেক ভয় পেয়ে যেতে তাই।। আর এখ্ন একটা মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে সেই তুমিই এসব বলছ। যেতে বাধা দিচ্ছ।
— তো এখন কি ওকেও জড়িয়ে ধরতে হবে নাকি গিয়ে??? এত কিসের দরদ ওর প্রতি তোমার ?? 
— অয়নী এটা কে দরদ বলে না দায়িত্ব বলে। 
— হ্যা দেখা আছে তোমার দায়িত্ব ।। বৌ এর বাচ্চা হবে বলে কতই না দায়িত্ব তাই না??? তোমার সব দায়িত্ব শুধু তোমার বাবা মা বাচ্চা আর ওহির প্রতি তাই না? আমি তো বেবি দিতে পারি না ।। আমার প্রতি কেন তোমার দায়িত্ব থাকবে।
— দেখি সর যেতে দাও আমায়।।।
.
.
আমকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেল।। 
ওহির পাশে কি সুন্দর করে পানির গ্লাস নিয়ে দাড়িয়ে আছে । বাহ।।। কি দায়িত্ব তার।।। 
অথচ কিছুক্ষণ আগেই কতই না ভালবাসার গল্প শোনাল।।। 
.
আসলে খামখেয়ালিপনার জন্য দু দুটো বাচ্চা কে হারিয়েছে সে। এবার আর কোন খামখেয়ালির ফোকর রাখতে চায় না সে।
.
.
ওহি রুমে যাবার সময় আমাকে ডাকল। 
— আপু আমার খুব ভয় করছে। আজ রাত টা তুমি একটু আমার সাথে থাকবে??
.
অহন আমাকে ইশারা করল ওহির সাথেই থাকার জন্য ।
কি আর করার রাতে ওর সাথেই থাকলাম। অহন আমার রুমে মানে আমাদের রুমে থাকল।।
.
.
বুঝলাম ওহির শরীর খুব দুর্বল। একটু কথা বলতেই ঘুমিয়ে গেল।
শুধু বলল,আপু আমার কিছু হয়ে গেলে আমার বাবুটা কে দেখো। ওর প্রতি রাগ করো না । জানিনা ওর বাবা ওকে কতটা ভালবাসবে। তুমি ই একটু দেখে রেখো
— ওহি এই সামান্য বমির জন্য কেউ মরে যায় না । আর ওর বাবা ওকে কতটা ভালোবাসে তার প্রমাণ আজই পেলাম। তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমাও ।এসব নিয়ে টেনশন করে বেবির কন্ডিশন খারাপ করো না।
— আপু একটা কথা বলি রাগ জেদ এসব জিনিস না ভাল না।। এসব মানুষকে কুরে কুরে খায়
.
আমি আর ওহির কথার কোন উত্তর ই দিই নি। সে ও ঘুমিয়ে পড়ল ধীরে ধীরে।
.
 ঘুমের মধ্যে আমাকে একদম জড়িয়ে নিয়েছে ওহি ।
খুব বিরক্ত লাগছিল খুব। বার বার মনে হচ্ছিল নিশ্চই প্রতি রাতে অহনকেও এভাবে জড়িয়ে ধরেই ঘুমায়।
.
.
পরদিন অহন অফিস চলে যাবার পর ওহিকে জিজ্ঞেস করলাম,

— ওহি একটা কথা সোজা সাপটা উত্তর দাও তো 
— জ্বি
— আর কত দিন এভাবে ভালো মানুষের ভঙ ধরে থাকবে বল তো???
— মানে???
— মানে বোঝ না???? কাল রাতে ইচ্ছে করে ওসব নাটক কেন করলে??? এটেনশন পাবার জন্য???
— কিসের নাটক?
— এই যে বমি করার নাটক?
— বমি কেউ ইচ্ছে করে করে বুঝি??? 
— তুমি করেছ কাল রাতে ।।
— দ্যাখ আপু আমার শরীর মন কোনটাই ভালো নেই । আমার এসব নিয়ে কথা বাড়াতে একদম ই ইচ্ছে করছে না ।।।
— তা তো ইচ্ছে করবেই না । সত্যি টা ধরে ফেলেছি যে ।
— কোন সত্যিই তুমি ধরতে পারো নি। সত্যি টা হল এই যে আমার কাল রাতে সত্যিই অনেক অসুস্থ লাগছিল।
— হ্যা তোমার অন্য কোন দিন অসুস্থ লাগে না। শুধু কাল রাতেই লেগেছিল।
.
.
— অয়নী তুমি কি ঝগড়া ছাড়া আর কিছুই পারো না?? এই ওহি আমি চলে গেলে ও সারাদিন তোমার সাথে ঝগড়া করে তাই না??
.
পেছন তাকিয়ে দেখি অহন।
— তুমি??
— হ্যা আমি। কি ?? কি সমস্যা তোমার????? অনেক্ষ্ং থেকে তোমার এসব শুনছি।
— বৌ এর জন্য ইদানিং গোয়েন্দাগিরি ও করছ দেখছি।। আজকাল অফিস কামাই দিয়ে ঘরে আড়ি পেতে কথা ও শোনা হচ্ছে 
— এই আমার না তোমাদের মেয়েদের মতো ঘরে আড়ি পাতার অভ্যাস নেই ওকে???আমি ওয়ালেট ফেলে গেছিলাম সেটাই নিতে এসেছি। আর এসে তো দেখি এই অবস্থা । আর কখনো যেন না দেখি তুমি ওর সাথে এভাবে ঝগড়া করছ। তাহলে কিন্ত আমার চেয়ে কেউ খারাপ হবে না । 
আর ওর বমি করা টা তোমার নাটক মনে হয় তাই না?? তাহলে তো আমাকেও এটাই ভেবে নিতে হবে তুমিও আমার এটেনশন সিক করার জন্যই তখন অমন করতে। তুমি তো কোন কোন রাতে তিন থেকে চার বার ও বমি করতে। মাথা ঘুরেও পড়ে যেতে মাঝে মাঝে। কই আমি তো কোন দিন বলি নি তুমি এসব নাটক করে করতে।।
তাই আর একটাও ফাজলামো মার্কা কথা না বলে চুপচাপ নিজের রুমে যাও। আর কখনো যেন ওহির সাথে ঝগড়া করতে না দেখি। যাও বলছি।
( অনেক জোরে একটা ধমক দিল)
.
— অহন তুমি সব সময় কেন ওকে এত আগলে রাখ???
 
— কারণ একজন কে ঠিক মতো আগলে না রেখে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে আমার।। আমি চাই না আর কারো সাথে এমন হোক।তোমাকে বলেছি না চুপচাপ রুমে যেতে।
বলেই হিড় হিড় করে টেনে আমাকে রুমে এনে চলে গেল । আর বলে গেল আমি যেন রুম থেকে বের না হই আর। ওহির রুমে তো যাওয়া একদম ই মানা।
.
.
এই ঘটনার পর থেকে ওহি অহন দুজনের সাথেই কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি।।
যদিও অহন ঘুর ঘুর করে আশে পাশে কথা বলার জন্য ।তবুও বলি না । খুব বেশি দরকার হলে ফোনে টেক্সট দিই অথবা চিরকুট লিখে দিই।।।
.
আমার এসব কীর্তি দেখে অহন রাগে আরো ফোস ফোস করে ফনা তোলা সাপের মতো ।
 .
.
বেশ কিছুদিন ধরেই খেয়াল করছি অহনের ঠান্ডা লেগেছে । সারাদিন হাচি কাশি সর্দি।। 
.
সেদিন সকালে খেয়াল করলাম চোখ মুখ ও লাল হয়ে গেছে । বুঝলাম সিজনাল ফিভার।। 
রাতে ফেরার পর দরজা খুলে দেখি অব্স্থা আরো খারাপ। চোখ মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না । কপালে হাত দিয়ে দেখি বেশ জ্বর।
বাধ্য হয়ে কথা বললাম
— ক দিন ধরেই তো দেখছি ঠান্ডা লাগিয়েছ। মেডিসিন নিতে পারো না?? শুধু বৌ কে মেডিসিন খাওয়ালেই হবে??? নিজে অসুস্থ হলে নিজের খেতে হবে না??
— আমার ওসব লাগে না।
.
রাতে খাওয়ার পর হর হর করে ওহির রুমে চলে গেল । বার বার বললাম মেডিসিন নাও। কে শোনে কার কথা ।।।
.
কিন্ত জ্বর বেশ ভালই এসেছে যা বুঝলাম । কিন্ত জেদ করে যে মেডিসিন ও নিচ্ছে না । আমি জানি এই জেদ অন্তত ওহি ভাঙাতে পারবে না । 
কি আর করার গ্লাসে পানি আর মেডিসিন নিয়ে আমিই গেলাম ওদের রুমে।
সব সময় নক করেই ঢুকি। প্রথম দিনই এই নির্দেশ অহন আমাকে দিয়েছিল।
.
.
— দেখি হা কর
— কেন??
— বিষ খাইয়ে মেরে ফেলব আজ তোমায়।
— আদিখ্যেতা করতে হবে না আর।
— দেখি বসো বলছি
.
বসার সাথেই এক হাত দিয়ে চোয়াল ধরে জোর করে হা করিয়ে মেডিসিন আর পানি দিয়েছি গলার ভেতর ঢেলে।
 .
—অসুস্থ অবস্থায় জ্বর নিয়ে কিসের এত জেদ তোর? আগে সুস্থ হ তারপর আবার জেদ দেখাস।
কথা গুলো শুনে সে আহম্মকের মতো তাকিয়ে আছে । ।
.
.
কথা গুলো বলে রুমে চলে আসতেই চোখ পড়ল বেড সাইডের ওপর।
.
— কি ব্যাপার হঠাত পাসপোর্ট??
— হুম কাজ আছে একটু
— হুম মানে কি? কেন এই অফিস ট্যুরে যাচ্ছ নাকি?? দেখো এই জ্বর নিয়ে তোমার যাওয়া কিন্ত উচিত না ।
— অফিস ট্যুরে না 
— তাহলে??
— হানিমুনে যাচ্ছি আমরা
— What nonsense???? বাচ্চা পেটে নিয়ে হানিমুন??? তোমাদের কি রেগুলার আমাকে একটার পর একটা চমক না দিলে হয় না?
.
.
.
চলবে.............................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন