অন্তর্দ্বন্দ্ব - পর্ব ১৩ - সাবরিনা ইমরান - ধারাবাহিক গল্প


-শেষ,ধ্বংস, ফিনিশ,আর কিচ্ছু হবে না তোর!

-মানে কী ভাই,আমি এমন কী বললাম যে এসব বলতেসিস?আজব!

-কী বলসিস মানে?প্রেমে পড়তে যাচ্ছিস,তো এগুলা ছাড়া কী বলবো?

-কী থেকে কী বানাস ভিনা?আমি কখন বলসি আমি প্রেম করবো?আমি জাস্ট বলসি তানভির কেমন,আই মিন তুই তো এর মাঝে দেখসিস।আবার ও তো যাবি,এই আরকি।

-প্রেমে পড়সিস তো মরসিস।কথাটা মাথায় রাখিস।

-হইসে!নিজের মত ডিপ্রেসিভ কথাবার্তা সারাদিন বলবি না।

-ডিপ্রেশনের পড়ার টাইম তোর আসতেসে সামনে।

-ধ্যাৎ,আচ্ছা বাদ দে,শরীর কেমন?

-আগের চেয়ে ভালো

-মন?

-ভালো

-যাবির?

-ভালোই তো....

ভিনা চুপ হয়ে গেলো,কী বললো এটা?মাথা নষ্ট হচ্ছে।এগুলো থেকে হাজার হাত দূরে থাকতে হবে।মার মত ভুল করা যাবে না

-আচ্ছা এখন রাখি।কালকে পারলে কোচিং এ আসিস।আর শোন,যাবির ভাইয়া তোর আইডি চাচ্ছিলো,দিবো?

-আচ্ছা,দিস।

ভিনা ফোন রেখে পুরো রুম চটপট গুছিয়ে ফেললো,তখন হটাৎ মনে পড়লো ওর ব্যাগটা নেই।হায়,দুইদিন ধরে ব্যাগ নেই আর ওর খেয়াল ও ছিলো না।ব্যাগ,ব্যাগের ভেতরে ডায়রি।যাবির কী ব্যাগটা ঘাটিয়েছে?যদি ডায়রিটা পড়ে ফেলে?ডায়রিটা মানে ভিনার নগ্ন মস্তিষ্ক। সে আবার ফোন হাতে নিলো,যাবির ওকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে।ভিনার আইডির নাম অদ্ভুত, Petrichor.এর মানে হলো বৃষ্টির পর মাটির ভেজা গন্ধ।এমন অদ্ভুত নাম দেয়ার কারণ একটাই,কেউ যেন সহজে তাকে খুঁজে না পায়।ফেসবুকে নওমি ছাড়া আর কোনো ফ্রেন্ড নেই।টাইমলাইনে তাই মনের খুশির মত বিভিন্ন লেখা আর আঁকা ছবি পোস্ট করে ভিনা। নওমিকেও রেস্ট্রিকশনে দেয়া।যাবিরের রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করলো সে।যাবিরই প্রথম নক দিলো।

-শরীর কেমন?ব্যাথা আছে?

-শরীর ভালো,ব্যাথা নেই।তার আগে বলুন তো,আপনি কি আমার ব্যাগ পেয়েছিলেন নাকি?

যাবির মেসেজটা সিন করে রাখলো।সে কী লিখবে?ভিনা সেনসিটিভ মেয়ে,যদি রাগ করে?সব ভেবে ডিসাইড করলো সত্যিটাই বলবে।

-হ্যাঁ, কোচিং এ পড়ে ছিলো।

-আশা করি শুধুই ব্যাগ টা নিয়ে কোচিং এ কোনো তাকে উঠিয়ে রেখেছেন।

-আশাভঙ্গ করার জন্য অত্যন্ত দুঃখিত।আমি আপনার ডায়রি টা পড়েছিলাম,তাও প্রতিটা পেজ।

-ঠিক আছে।ভোর দেখানোর মহত্ত্ব তাহলে কি একারণেই দেখানো হয়েছে?

-হয়ত না।সামান্য ডায়রি কখনো এত বড় ভূমিকা পালন করতে পারে না।

-আচ্ছা,ডায়রি পরে কী বুঝলেন?

-তুমি খুব ভালো লেখালেখি কর‍তে পারো।এটায় মনোযোগ দেয়া উচিৎ।

-আর?

-যেটা শুনতে চাচ্ছো,সেটা মনে করিনি।

-মানে?

-মানে কিছু না।এখন থেকে তুমি করে বলবে।

-কেন?

-ডাকতে বলেছি তাই।আর এত প্রশ্ন কেন?

-প্রশ্ন কারণ আমি বুঝতে চাচ্ছি এটা সহানুভূতি নাকি সহমর্মিতা? 

-দুইটার পার্থক্য?

-একটা হলো,আমার মাতৃহীন হওয়ার এই ঘটনায় আপনার ন্যাচারালি একটা সফট কর্ণার তৈরি হয়েছে,অথবা আপনার বাবা নেই আমার মা নেই দেখে এটা হয়েছে।

-দুইটার একটাও না।

-তাহলে কী?

-উত্তর জানা থাকলে তো ভালোই হত।উত্তরই তো জানা নেই। 

-এটা কী ভালো হলো।

-জানা থাকলে অজানাও থাকবে,তাই না ভিনা।

-কিছু অজানা যে যন্ত্রণা দেয়,তাও নিশ্চয়ই জানেন?

-জানি। অজানার ও সৌন্দর্য্য আছে।তুমি মনমত সাজিয়ে নিতে পারবে তাকে।জেনে গেলে তো জেনেই গেলে।সাজানোর সুযোগ নেই। 

-হুম,আসি তাহলে 

-ঠিক আছে,গুড নাইট।

ভিনা মেসেজ সিন করে রেখে দিলো।এত কথা বলার দরকার নেই। যাবির জানত মেসেজ শুধু সিন ই হবে।তাও সে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে গেলো,কী মনে করে,কে জানে।


মুনা সুযোগ খুঁজছে ভিনার ব্যাপারটা সোহেলকে জানানোর জন্য,কিন্তু পাচ্ছে না।সোহেল কথা বলাই প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে।জ্বর এসেছে,ঔষুধ খুঁজছিলো,বক্সই পায়নি।ঔষধ তো কিনে আনেই নি,উলটো ঘরের জিনিসপত্র কেনো ঠিকমত রাখা হয় না এরজন্য এক দফা কথা শুনিয়ে দিয়েছে।মানুষটা এমন কেন?আর মুনাই বা কেমন,এই মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কাঙ্গাল হয়ে আছে।নিজের উপরই মাঝে মাঝে লজ্জা লাগে।কিন্তু দেরী করলে চলবে না।যতই হোক,আজকে সে ভিনার রাত বিরাতে বাইরে যাওয়ার কথা বলবেই।সন্ধ্যা বেলা সোহেল আসতেই মুনা ফ্রেশ হতে বলে চা নাস্তা দিলো। 

-কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিলো।

-বলো,শুনছি।

-আগে কথা দাও,তুমি আমাকে বিশ্বাস করবে।

-কী এমন কথা?ডোন্ট সে ভিনার ব্যাপারে।

-দেখো,আমি ওর খারাপ কেন চাবো।ও বড় হচ্ছে,একটু খেয়াল রাখতেই হবে।

-বলো যা বলবা।

-আমি পরশু ভিনাকে ভোরবেলা এক ছেলের সাথে আসতে দেখেছি।

-মানে?

-সত্যিই।আমি বারান্দা দিয়ে দেখেছি,একটা ছেলে ভিনাকে এগিয়ে দিয়ে গেছে।

-প্রমাণ ছাড়া কোনো কথা বলবা না মুনা,খবরদার।আর ভিনার ব্যাপার থেকে দূরে থাকো।

-ঠিক আছে,নিজে সিদ্দিক থেকে জেনে নিও।মেইন দরজা না খোলা ছাড়া তো আর বের হতে পারবে না।

-যাও সামনে থেকে। 

মুনাকে যেতে বললেও সোহেল ঠিকি চিন্তায় পড়ে গেলেন।আসলেই কি তার মেয়ে হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে?কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেললে শিউলিকে সে কী জবাব দেবে?কালকে বের হওয়ার সময় সিদ্দিকের সাথে কথা বলতে হবে।


যাবির রাস্তার ফুটপাতে বসে আছে।আগামী মাসে কীভাবে চলবে, তাই বুঝে পাচ্ছে না।সাহায্য যত কম পারা যায় তত নেয়।এইবার কী করবে?জেরিনের টিউশনিটা যাবির ছেড়ে দিয়েছে।নিজের আত্মসম্মানের কাছে অভাবটা বড় হতে দেয়নি। টিউশনি সে ইচ্ছে করে ছাড়েনি।পরিস্থিতির শিকার হয়ে ছেড়েছে।আজকে জেরিনদের বাসায় যাওয়ার পরই জেরিনের মা এসে বলেছে-

-কী ব্যাপার যাবির?দুইদিন না বলে এলে না।

-একটু ঝামেলায় ছিলাম আন্টি। 

-ঝামেলায় থাকলেও জানানো উচিৎ ছিলো।এই মাসে বাকী দুইদিন অবশ্যই কাভার করে দিবে।কাভার করে দেয়ার পরই বাকী বেতন নিবে। 
এর মাঝখানে জেরিন এসে বলেছে-

-টিচার হয়ে এত ইরেস্পন্সিবল হলে তো হবে না।এরকম ফার্দার করলে আপনার আসার দরকার নেই।

যাবিরের প্রচন্ড রাগ লেগেছে কথা শুনে।ছোট হয়ে কীভাবে এত ডাট দেখিয়ে কথা বলে মেয়েটা?

-বেটার আপনারা অন্য কাউকে খুঁজে নিন।এই টিউশনি টা আমি আর করাবো না।

মাসের বাকী বেতন না নিয়েই যাবির বের হয়ে আসে।ভেবে পায় না যে আসলেই কী হবে সামনের দিন গুলোতে।

এদিকে জেরিন কান্না করে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে।সে চেয়েছিলো শুধুমাত্র একটু ভয় দেখাতে।এই সামান্য কারণে যে যাবির টিউশনি ছেড়ে দিবে,এটা তার ধারণার বাইরে ছিলো।তার মা যাবিরের ব্যবহার দেখে বলেছে এই ছেলে একটা অসভ্য,আর কখনো এ বাসায় পা রাখবে না,অর্থাৎ ফিরিয়ে আনার সুযোগ নেই। জেরিনের ইচ্ছে করছে সবকিছু ভেঙ্গে ফেলতে.......
.
.
.
চলবে....................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন