অন্তর্দ্বন্দ্ব - পর্ব ০৫ - সাবরিনা ইমরান - ধারাবাহিক গল্প


-ভিনা!পাগল হয়ে গেলি নাকি!

  মাঝরাস্তা থেকে টান দিয়ে ভিনাকে সরিয়ে আনলো নওমি।

-কথা বল ভিনা!

-কিছু না রে,বাসে উঠবো আমি।

-বাসে উঠার জন্য বাসের সামনে আসার দরকার হয় না।

-বললাম তো,অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলাম।

-আজকে তো মকবুল স্যার নেই।আজকে কেন এত আপসেট?

-এমনি,অনেক একা লাগছে।

-আমার বাসায় চল,মিনি কে দেখে আয়,মন ভালো হয়ে যাবে।

-দেরী হয়ে যাবে রে,তাছাড়া শরীর টাও ভালো নেই।

-নাস্তা করিস নি তো মনে হয়, চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে।কিছু খেয়ে নে আয়।

-না,ক্ষিদে নেই।

-আসলেও কী তাই?নাকি ক্রাইসিস চলছে।

-একি কথা,ক্রাইসিস চললে ক্ষিদে থাকে না। 

-সব ফালতু কথা!

-কোনো ফালতু কথা না। 

-তোদের না গাড়ি আছে?বাসে আসিস কেন প্রতিদিন?

-গাড়ি নিতে ইচ্ছে করে না।

-আগে গাড়ি ছাড়া চলতে পারতি না।

-আগে তো মাকে ছাড়াও থাকতে পারতাম না।

নওমি আর কথা বাড়ালো না।চোখের সামনে মেয়েটা একটু একটু করে শেষ হয়ে যাচ্ছে।আগে নওমি নিজের জীবনে সামান্য সমস্যা হলেই কেঁদে অস্থির হয়ে যেত। ভিনাকে দেখে এখন নিজেও শক্ত হচ্ছে।একদম কিছু না থাকার চেয়ে থেকেও না থাকার কষ্ট অনেক অনেক বেশি!

সামনে বাস এসে পড়ায় ভিনা চোখের পলকে উঠে চলে গেলো। আবারো বসার জায়গা নেই।দাঁড়িয়ে যেতে ক্লান্ত লাগছে।গত দুপুর থেকে এখনো কিছুই খাওয়া হয়নি।বাসায় যেয়ে ঘুমোবে,আপাতত মুনার হাতের খাবার খাওয়ার রুচি নেই তার।


যাবির পাশের দোকান থেকে কিছু নোট প্রিন্ট করে আসছিলো।তখনি সে দেখে ভিনা রাস্তার মাঝখানে দাঁড়ানো।কিছু করার আগেই নওমি এসে বাঁচিয়ে ফেলে ওকে।এরপর ওদের দুজনের পিছনে খুব সাবধানে মাস্ক পড়ে দাঁড়িয়ে কথা শুনে।সব শুনে কিছু বিষয়ে ভীষণ খটকা লাগে যাবিরের।মকবুল স্যার কী করেছে?মকবুলের স্যারের কাছে যাবির আগে ইংলিশ পড়ত। কখনো তো কুরুচিপুর্ণ কিছু চোখে পড়েনি।অবশ্য সে ছেলেদের ব্যাচে পড়ত।আর ছোট থেকেই ইন্ট্রোভার্ট হওয়ায় কোনো মেয়ের সাথে সেরকম বন্ধুত্ব ও গড়ে উঠেনি,তাই কিছু করে থাকলেও,জানার কোনো উপায় নেই। সেকেন্ডলি,নওমির কথা শুনে মনে হয়েছে,ভিনার পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব ভালো।তবুও সে বাসে আসা যাওয়া করে।সবশেষে, খুব সম্ভবত ভিনার মা নেই।মা ছাড়া একটা মেয়ের জীবন খুব মুশকিল।কিন্তু তবুও এত ভেঙে পড়েছে কেন সে যে সুইসাইডাল হয়ে গেছে?এসবের উত্তর না জানা পর্যন্ত অস্থিরতা কাজ করতেই থাকবে যাবিরের।তাই আজকেই কিছু একটা করবে সে।

 
বাসায় গিয়েই ভিনা উপরে নিজের রুমে যেয়েই শুয়ে পড়ে।প্রচন্ড পেট ব্যাথা করছে।সাইড টেবিলে পানিও নেই। উঠতে ইচ্ছে করছে না,প্রচন্ড দুর্বল লাগছে।কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলেও ঘুম আসলো না।আধো ঘুম আধো জাগো অবস্থায়ই সে রুপিন আন্টির কথা ভাবতে লাগলো।কোথায় গেলো সে।ছোট থেকে কত আদর দিয়ে এসেছে সে ভিনাকে,অথচ গত সাত মাস ধরে একটাবার ও খোঁজ নেয়নি।তার নাম্বার খুব সম্ভবত চেঞ্জ হয়েছে।নতুন নাম্বার তার সেক্রেটারি তোহার কাছে থাকতে পারে।তোহা আপুর নাম্বার সে টুকে রেখেছিলো কোনো এক ডায়রিতে।ডায়রিটা তার বাবার রুমে।এত ব্যাথা নিয়েই ভিনা তার বাবার রুমে গেলো।মুনা বসে টিভি দেখছে।এর মধ্যেই ভিনা আশেপাশে খোঁজা শুরু করলো।মুনা বিরক্ত হলো এতে।

-কী চাই?

-একটা টেলিফোন ডায়রি ছিলো এখানে,সেটা খুঁজছি।
 
-কী করবে সেটা দিয়ে।

-একজনের নাম্বার লাগবে।

-কার নাম্বার?

-সব জিনিস আপনার জানা লাগবে না।

-আমার রুমে এসে জিনিসপত্র ঘাটাঘাটি করছো,আর আমার জানা লাগবে না?

-আপনার আগে আমার মার রুম ছিলো এটা। এছাড়া এটা এখনো আমার বাবার রুম।

-সবসময় তর্ক করবে না ভিনা,তোমার মা এখন নেই।এটা এখন আমার আর সোহেলের রুম।তোমার এই রুমে কোনো দরকার হলে আমাকে সেটা জানাতে হবে।

-এমন কোনো নিয়ম নেই ।আমার মা এমন কোনো নিয়ম আমার জন্য করে যাননি।সে বেঁচে থাকতে আমার ফ্রি এক্সেস ছিলো এই রুমে,এমনকি আলমারিতেও।

-সেটা ছিলো,এখন থাকবে না।এখন আমি আছি এখানে।আমার কথাই শুনতে হবে।

-আমি শুনবো না।আমি আমার বাবার রুমে আসছি।

-কথা না বাড়িয়ে বলো কার নাম্বার লাগবে?

-তোহা আপুর।

-তোহা কে?

-রুপিন আন্টির সেক্রেটারি। 

কথা বলতে বলতেই ভিনা ডায়রিটা পেয়ে গেলো।ডায়রি নিয়েই দরজা ধরাম করে লাগিয়ে চলে গেলো।মুনার পুরো শরীর রাগে কাঁপছে।সে খুব ভালোমত জানে যে রুপিন তার বিয়েটা ভাঙতে এসেছিলো। বিয়ের দুইদিন আগে তার পরিবারের সামনেই সে সোহেলের মা কে বিয়ে ভাঙার জন্য জোর দিচ্ছিলো।এমনকি মুনার মাকেও বলেছিলো বিয়েটা না দিতে। এই অসভ্য মেয়ে সেই রুপিনের সাথে কথা বলার জন্য পাগল হয়ে গেছে।মেয়েটা সংসার ভেঙেই ছাড়বে যা মনে হচ্ছে।এর একটা ব্যবস্থা করতেই হবে.....
.
.
.
চলবে...............................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন