পরিপূরক - পর্ব ১৬ - স্পৃহা নূর - ধারাবাহিক গল্প


আমাকে খামোখা খুজতে যেয়ো না ।। হয়ত পাবে কোন হসপিটালের মর্গে।।। হয়ত পাবেই না ।।আমি জানি আমাকে তোমার সেভাবে দেখতে ভালো লাগবে না ।।
কখনো আকাশ বেয়ে চুপ করে 
যদি নেমে আসে ভালোবাসা খুব ভোরে 
চোখ ভাঙা ঘুমে তুমি খুজো না আমায়
আশে পাশে আমি আর নেই
.
আমাকে নিজের দুস্বপ্ন ই মনে করো ।।।
ইতি
তোমার দুঃস্বপ্ন .....
.
.
 এই ভর দুপুরে বাসা থেকে বের হয়ে হাটছি আর হাটছি। কোথায় যাচ্ছি নিজেও জানি না ।
 শুধু জানি আর কখনো ফিরব না,আর অহনকে ফেরানোর সুযোগ ও দেব না ।
অনেক হয়েছে আর না ।আমি আর তাকে মন ভাঙারও সুযোগ দেব না।
.
হাটতে হাটতে বাইপাসে চলে এসেছি।।। প্রথমে ভেবেছিলাম গলায় দড়ি দেব কিংবা বিষ খেয়ে মরে যাব ।
কিন্ত পারিনি।পোস্ট মর্টেমে বড্ড বেশী ভয় পাই আমি।। লাশ কেটে ছিড়ে টুকরো টুকরো করে আবার সেলাই করে জোড়া লাগানো হবে ।। আর তারপর পুলিশি ঝামেলা তো আছেই। আর অহনকে,আমার বাড়ির লোকজন কে খামোখা বিপদে ফেলতে চাই না। 
তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম সুইসাইড করব ঠিক ই কিন্ত তা যেন সুইসাইড মনে না হয়। এটা যেন খামোখা একটা এক্সিডেন্ট ই মনে হয় ।।
.
বাইপাস দিয়ে হাটছি। পাশ দিয়ে এত স্পিডে গাড়ি গুলো যাচ্ছে আত্না শুকিয়ে শুকিয়ে উঠছে বার বার । 
কিন্ত না আমাকে ভয় পেলে চলবে না ,সিদ্ধান্ত যখন নিয়েই ফেলেছি ।। 
রাস্তার মাঝ বরাবরে খুব ই আস্তে আস্তে হেটে যেতে শুরু করলাম ঠিক এমন সময় পেছন থেকে চিতকারের আওয়াজ পেলাম।
.
পেছনে তাকিয়ে দেখি হুট করে অনেক লোকজন জড়ো হতে লাগল পেছনে।। হই হট্টগোল ও বেধে গেছে । দূর থেকে খুব একটা আন্দাজ করতে পারছিলাম না । তবে মনে হচ্ছিল এক্সিডেন্ট এর ই কেস ।
.
আমি ঢোক গিলে রাস্তার সাইডে চলে এলাম আবার ।কৌতূহল বশত এগিয়ে গেলাম । এতক্ষণে আরো লোকজন জড়ো হয়েছে ।। 
আমি লোক জনের ভিড় ঠেলে কিছুটা উকি দিতেই দেখলাম বছর পাচ সাতেক এর স্কুল ড্রেস পড়া এক বাচ্চা এক্সিডেন্ট করেছে। কি বীভত্স অবস্থা। মাথা পুরো থেৎলে গিয়েছে। ব্রেইন এক দিকে ছিটকে পড়ে আছে । একটা হাত আরেক দিকে। চোখ ও গলে গিয়েছে।রক্ত আর ব্রেইন এর যথেষ্ট আশটে গন্ধ নাকে লাগতেই পুরো বমি চলে এলো আমার।।
 বাচ্চার মা লাশ টার পাশে বসে কেদেই যাচ্ছে । প্রলাপ বকছে।।। বাচ্চা টা স্কুলে যাচ্ছিল। চঞ্চল স্বভাবের, মায়ের হাত ছেড়ে নিজেই রাস্তা পার হতে গিয়ে এ অবস্থা।
.
এসব দেখে পুরো ঘেমে গেছি আমি। গলা শুকিয়ে উঠছে। বার বার ঢোক গিলছি।
 .
রাগের বশে কি করতে যাচ্ছিলাম আমি এটা? আজ তো আমার লাশ ও এভাবেই পরে থাকত।। আমার রক্তের আশটে গন্ধেও কারো কারো বমি পেত ভয়ে।।। আর আমার মা ও লাশ দেখে হয়ত এভাবেই কাদত। যদি লাশ টা শনাক্ত করা যেত।। 
আর শনাক্ত না করা গেলে..ঐ পচা গলা লাশ পরে থাকত দিনের পর দিন মর্গে।।। আর অনেক দিন হয়ত কবর দিয়ে দিত। বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে।।।
.
আর বাবা মায়ের ই বা কি হত? এভাবেই কাদত।।
তাদের এত বছরের লালন পালনের মূল্য, এত ভালবাসার মূল্য আমি এভাবে দিতে চেয়েছিলাম??
রাগ তো অহনের ওপর করেছি কিন্ত বদলা সবার ওপর নেব কেন? খামোখা আপনজন দের কস্ট দেব কেন? আর নিজেই বা জাহান্নামি হব কেন? আখিরাত বিষয় টায় যে আমি বড্ড ভয় পাই। কিন্ত ঝোকের বশে এসব কি করতে চেয়েছিলাম আমি। যাতে ইহ্কাল পরকাল দুটো ই নষ্ট হয়?
অহন হয়ত কিছু দিন কাদত ।কিন্ত ও ঠিক ই ভুলে যেত। বৌ বাচ্চা কে নিয়ে তো নতুন জীবন এমনিতেই শুরু করে দিয়েছে। পুরনো কথা ভাবার সময় কই পেত সে?।।
.
আমি আসলেই বড্ড বোকা। অন্যের জন্য নিজের জন্য নিজের সব চেয়ে বড় সম্পদ নিজের জীবন কেন দিয়ে দেব আমি? যেখানে সেই ব্যাক্তির কাছে আমার গুরুত্ব ক্রমেই কমে যাচ্ছে।
আর যাদের কাছে আমার গুরুত্ব কোন দিন ও কমবে না আমার বাবা মা। তাদেরই কস্ট দিতে যাচ্ছিলাম আমি।
.
.
নাহ আর বোকামো নয়।।। ।
সোজা চলে এলাম বাস স্ট্যান্ডে । বাড়ির জন্য টিকেট কাটলাম। বাড়ি ই ফিরে যাব। তবে অহন ফিরিয়ে নিয়ে যেতে অবশ্যই আসবে। কিন্ত আমি আর ফিরব না ওর কাছে । হাজার বার বললেও না ।এক বার যখ্ন কথা দিয়েছি সে কথা আমি রাখব ।
.
.
বাস প্রায় দুঘণ্টা পর ছাড়ল । এদিকে জ্যাম তো আছেই।।।
বাড়ি পৌছুতে পৌছুতে অনেক রাত হয়ে গেল।।।
.
এত রাতে এভাবে একা একা আসতে দেখে বাবা মা দুজনেই কিছু একটা যে হয়েছে তা ভালই আন্দাজ করতে পারল ।। বিয়ের পর এই প্রথম একা এসেছি তাও আবার এত রাতে ।সব সময় অহনই নিয়ে আসত আর ও বেশি ব্যাস্ত থাকলে বাবা।
.
.
আমি বাড়ি ফিরে কোন কথা ই বলি নি কারো সাথে।তারাও আমাকে বেশি একটা প্রশ্ন করল না। শুধু বাবা বললেন, মা আমাকে বললেই তো আমি নিয়ে আসতাম তোমাকে। মা এগিয়ে এসে গালে হাত বুলাতে লাগল। হয়ত কিছু একটা প্রশ্ন করতে চেয়েছিল।
সোজা রুমে চলে এসেছি কোন উত্তর দিই নি কথার।। বাথরুমের দরজা আটকে অনেক্ষন কাদলাম।
এদিকে অয়ন ডেকেই যাচ্ছে,আপু কি হয়েছে তোর? দরজা খোল। । ভাইয়া কেন আসল না এবার তোর সাথে?? তুই হুট করে এভাবে কাদছিস ক্যান?
.
.
 নাহ এই ছেলে শান্তি মতো কাদতেও দেবে না । চোখে মুখে পানি দিতেই নজর পড়ল গালের দিকে। রাগ আরো বেশি বেড়ে গেল ।
বের হয়েই অয়ন কে দিয়েছি ইচ্ছে মতো চড়, কিল ,ঘুষি ।
.
মা এসব দেখে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরল আমায়। কি আশ্চর্য আগে অয়ন কে মারলেই মা এসে আমাকে বকা দিত। আজ কিছুই বলছে না । অয়ন ও কেমন যেন অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।। 
.
— অয়নী মা আমার,কি হয়েছে তোর? এরকম পাগলামো করছিস কেন এসে থেকেই? 
— মা আমার কিছুই হয় নি।
— কিছু হয়নি বললেই হলো? অহন মেরেছে তোকে তাই না?
— না তো 
— তাহলে কে মেরেছে?
— কেউ না 
— কেউ না বললেই হলো? গালে স্পষ্ট দাগ উঠে গেছে ।
— ওর দোষ ছিল না দোষ আমার ই ছিল।।
— থাক অয়নী আর সাফাই গাইতে হবে না ঐ ছেলের নামে। মেরে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে তারপর ও তুমি ওর হয়েই কথা বলছ? আমি তো জানতাম এমন কিছু একটা ই হবে একদিন। সেদিন কত বার করে নিয়ে আসতে চাইলাম আমাদের সাথে? না ও ছেলের মিষ্টি কথায় ভুলে গেলে সব তুমি। 
— ও আমাকে মেরে বের করে দেয় নি। আমি নিজেই চলে এসেছি। 
 আর এখ্ন যদি তোমাদের ও বোঝা মনে হয় এখান থেকেও চলে যাব।
— আর একটা বাজে কথা বলবে না তুমি। 

.
এর মধ্যে বাবা ও রুমে এলো ।
— আম্মুজি তোমার এসো আগে কিছু খেয়ে নাও। কত দিন তোমার সাথে এক সাথে বসে খাই না বলো তো।। 
— খাব না কিছু আমি। এখ্ন একটু ঘুমোতে চাই আমি।। 
.
.
বাবা মাকে ইশারা করলেন থামার জন্য ।। তারপর প্লেটে করে খাবার নিয়ে এসে জোর করেই খাইয়ে দিল । অনেক দিন পর বাবার হাতে খেলাম। আগে যখন মা কোন কারণে গালি দিত বা দু একটা থাপ্পড় দিত আমি রাগ করে সারাদিন কিচ্ছু খেতাম না । দরজা দিয়ে রুমে বসে থাকতাম।বাবা সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে নিজে আমাকে খাওয়াত। 
আর মা তো প্রায় সব দিন সকালে আমাকে আর অয়ন কে এক সাথে । 
.
.
খাওয়া শেষ করে আমি বাবার কোলেই মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লাম।। মা আর অয়ন ও পাশেই বসে আছে । 
বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
— অহন সন্ধ্যায় ফোন দিয়েছিল আমায়। 
— ওসব আদিখ্যেতা।
— আমার কিন্তু আদিখ্যেতা মনে হয় নি। ওর কন্ঠ অন্যরকম লাগছিল আমার ।
— তো কি বলল শুনি? 
— এটাই জিজ্ঞেস করল তুমি এবাড়িতে এসেছ কি না।। ছেলেটা টেনশন করছে হয়ত এখনো। ওকে জানিয়ে দিই তুমি এখানে ফিরেছ?
— এতই যদি টেনশন হতো রাত বাজে এখন দেড়টা,সন্ধ্যার পর থেকে কি আর একটা বার ফোন দিত না?? ও শুধু দায় এড়ানোর জন্য এক বার ফোন দিতে হয় তাই দিয়েছে। বাবা আমি চাই না তোমরা ওর বা ওর ফ্যামিলির সাথে আর যোগাযোগ করো ।
— অয়নী ছেলেটা তোমাকে নিয়ে টেনশন করছিল বোঝাই যাচ্ছে । তোমার ফোন ও তো অফ ছিল।আমি নিজেও তো ভয় পেয়ে গেছিলাম। তোমার মা আরো টেনশন করবে বলে বাড়িতে কিছু বলিনি।এরকম কেউ করে??? কিছু একটা অঘটন যদি ঘটে যেত? মানছি তোমাদের মধ্যে কিছু একটা হয়েছিল কিন্ত তুমি আমাকে তো ফোন করতে পারতে আমি নিজে গিয়ে তোমাকে নিয়ে আসতাম । 
.
.
বাবা কে নিষেধ করা সত্বেও জোর করে অহন কে ফোন দিল। আমি ও ভাবলাম জানিয়েই দিক যে আমি বাড়ি ফিরে এসেছি। তাছাড়া চিঠিতে শেষ দিকে উল্টো পাল্টা কথা ও লিখেছি। টেনশন হওয়া ও স্বাভাবিক।আমার জন্য টেনশন হবে না এতটাও খারাপ সম্পর্ক আমাদের মাঝে হয় নি।
 কিন্ত আমি এখানে ফিরে এসেছি শুনে যদি ও নিতে আসে কিছুতেই ফিরে যাব না এটাও ঠিক করে নিয়েছি মনে মনে।
.
তার ফোন সুইচড অফ।।
.
আমি শুধু হাসলাম।আমি বার বার ই তার থেকে বড্ড বেশি আশা করি ।। তার মানে সে সত্যিই দায় সারার জন্য ই বাবাকে ফোন দিযেছল একবার।
বাবাকে বললাম 
— বাবা তোমার জামাই তো এতক্ষণে হয়ত অনেক দূর চলে গেছে তার নতুন বৌ কে নিয়ে । 
— মানে?
— আজ হানিমুনে যাচ্ছে তারা। ফোন কিভাবে অন থাকবে? 
.
 বলে আবার হাসতে শুরু করলাম। কি আশ্চর্য হাজার চেষ্টা করেও হাসি থামাতে পারছি না।
.
.
— বাবা তুমি তোমার মেয়েকে কখনো মেরেছ?? মা রাগ করে হঠাত দু একটা চড় দিলেও মাকে কত বকতে তুমি?? আর তোমার জামাই আজ বাড়ি সুদ্ধ লোকের সামনে আমাকে একটার পর একটা থাপ্পড় দিল তার আরেক বৌ থামালো বলে থেমে গেল তাছাড়া হয়ত...আর তুমি সেই জামাইয়ের পক্ষ নিচ্ছ?? দেখো সেই জামাই তার আসল রূপ দেখালো তো? ওর আমাকে নিয়ে কোন টেনশন ই কাজ করে নি। ভেবেছিল হয়ত মরে টরে যাব। যদি কেসে ফেসে যায় তাই দায় এড়াতে খোজ নেয়ার ভান করেছিল মাত্র ।।
.
.
— কিন্তু..
.

বাবা আবার ট্রাই করল।
আমি বাবার হাত থেকে ফোন টা কেড়ে নিয়ে ও বাড়ির সব গুলো কনটাক্ট নং ব্লক করে দিলাম। বললাম ওদের সাথে সব যোগাযোগ শেষ হয়ে গেছে আমাদের।।
.
মার ফোনেও ব্লক দিয়েছি সব গুলো নাম্বার।
.
রাতে মা আমার সাথেই থাকতে চাইল। অয়ন ও।
বুঝতে পারলাম ওরা কিছু একটা ভয় পাচ্ছে। যদি সুইসাইড করে বসি রাগের মাথায় । এমনিতেও আসার পর থেকে খুব একটা স্বাভাবিক আচরণ করি নি।

.
 তাই আমি ই তাদের বললাম , ভয় পেয়ো না আমি সুইসাইড করব না । সুইসাইড করতে অনেক সাহসের প্রয়োজন। তোমাদের মেয়ে অতটাও সাহসী না ।আমাকে দয়া করে একা থাকতে দাও।
.
.
— পরি বৌ অনেক হয়েছে। ফিরে চলো ।
.
হুট করে অহনের গলা শুনে ঘুম থেকে জাগা পেয়ে গেলাম। উঠে বসতেই দেখি আবছা অন্ধকারে সে দরজার চোকেটে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । স্বভাব মতো দু হাত বুকে গুজে।। কি আশ্চর্য আবছা আলোয় আমি ওর শীতল হাসি টা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।। ও আবার বলল,
— ফিরে চলো অয়নী। এরকম ছেড়ে আসার কথা কিন্তু ছিল না ।
— কথা তো অনেক কিছুর ই ছিল না অহন । 
— ফিরে চলো 
— আমি আর ফিরব না 
— চলো বলছি
.
.
আমি জানতাম তুমি আসবে আর এভাবেই জোর করে নিয়ে যেতে চাইবে কিন্ত একটা কথা আমিও বলে দিচ্ছি আমি ফিরে যাব না আর।। তোমার মতো নিকৃষ্ট মানুষের কাছে আর ফিরব না আমি।
.
.
অহন আমার দিকে খুব ই ধীর পায় এগিয়ে আসতে লাগল।আমি এত গুলো কথা বলছি ও রাগ পর্যন্ত করছে না । শুধু হালকা ভাবে হাসছে।
.
 আমি বলেই যাচ্ছি, তুমি যতই এভাবে হেসে হেসে আমাকে মানাতে চাও না কেন আমি আর মানব না । আমি আর আমাকে কস্ট দেয়ার সুযোগ তোমাকে দেব না ।। এই তোমাকে কে ঢুকতে দিল এই বাড়িতে? আর বাবা তোমাকে কিছু বলছে না কেন? বাবা কে আবার বশ করে নিয়েছ না??,দাড়াও 
.
.
বাবা আর মা কে অনেক্ষন ধরে চেচিয়ে চেচিয়ে ডাকার পর দুজন ঘুম থেকে উঠে এলো ।
— কি ব্যাপার অয়নী এই ভোর বেলা এরকম চেচাচ্ছ কেন? 
— চেচাব না তো কি করব? 
— এই মাঝ রাতে তোমরা ওকে আসতে দিয়েছ কোন সাহসে?
— কাকে আসতে দিয়েছি?? আর আম্মুজি এখন মাঝ রাত না । ভোর চার‌টা বাজতে চলল।
— কাকে মানে? এই যে 
.
.
কি আশ্চর্য পাশে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই।আমি এতক্ষণ কার সাথে কথা বলছিলাম।
— মা অহন আসে নি? ও ই তো ছিল
— কি বলছিস এসব?
— হ্যা এক্ষণ ই ছিল এখানে। আমি তোমাদের ডেকেছি বলে নিশ্চয় বেলকনি তে লুকিয়েছে । দাড়াও আমি এক্ষুনি আনছি।
.
বেলকনি তে খুজ্তে গেলাম নাহ তাও নেই। ওয়াশ রুম ,খাটের নিচ ও খুজ্তে লাগলাম।
এক পর্যায়ে মা আমাকে জোর করে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরল।
— অয়নী,, আল্লাহর দোহায় লাগে..তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? অহন কি ছোট বাচ্চা যে তোর সাথে লুকোচুরি খেলবে?? তুই নিজেই দ্যাখ মেইন গেট লক করা এখ্ন ও। তো ও কোন দিক দিয়ে আসবে? 
— না মা তুমি জানো না । ও ঐ রকম ই। ওর লুকিয়ে লুকিয়ে রুমে ঢোকার অভ্যাস আছে । আমাকে ভয় দেখানোর জন্য ওমন করে । ও মে বি পাচিল টপকে ঢুকেছে। ওয়েট আমি এক্ষুনি দেখছি।
—অয়নী তুমি স্বপ্ন দেখছিলে এসব । বাদ দাও এসব। ঘুমিয়ে পড়ো । আর পাগলামো করো না । আমি আছি তোমার কাছে।
— আমাকে তোমাদের পাগল মনে হয়?? আমি পাগল? আমি বলছি আমি স্পষ্ট দেখেছি। তোমরা এখনো ওর সাইড নিয়েই কথা বলবে তাই না ?
.
.
মার সাথে চেচাতে চেচাতে হঠাত দু চোখে যেন অন্ধকার দেখতে শুরু করলাম।।
কখন সেন্সলেস হয়ে গেছি তাও জানি না। জ্ঞান ফেরার পর বুঝলাম সেন্সলেস হয়ে গেছিলাম আমি। হাতে স্যালাইন পুশ করে রেখে দিয়েছে।
.
.
মাকে কি হয়েছিল জিজ্ঞেস করতেই বলল, ব্লাড প্রেশার নাকি অনেক লো হয়ে পড়েছিল।
 .
আর আজেবাজে চিন্তা একদম করবি না। আজে বাজে মানুষ কে নিয়েও এতো ভাবতে হবে না তোর । এখ্ন থেকে শুধু নিজেকে নিয়ে ভাববি। নিজের কি হাল করে ফেলেছিস কোন আইডিয়া আছে তোর? মেন্টালি ও সিক হয়ে গেছিস তুই।
— মা ও সত্যি এসেছিল
— হ্যা আর হাওয়া হয়ে উড়ে গেল। এসব তোর মনের ভুল মা।সারাদিন ভেবেছিস ও তোকে নিতে আসবে শরীর দুর্বল ছিল তাই রাতেও ওসব আজে বাজে স্বপ্ন দেখেছিস।
আর শোন তোর বাবা তোর রহমান আঙ্কেল এর সাথে কথা বলেছে।
— উনি তো এডভকেট ।উনার সাথে আবার কি কথা???
— লিগ্যাল স্টেপ নেব আমরা। 
— মানে??
— মানে আবারকি? আমাদের মেয়েকে মেন্টালি ফিজিকালি টর্চার করে ওকে পার পেয়ে যেতে দেব ভেবেছিস?? জেলের ঘানি টানিয়ে ছাড়ব ওকে আমরা। 
— মা এসব কি বলছ তুমি?
— হুম ঠিক ই বলছি। 
আর হ্যা আজ সন্ধ্যার মধ্যেই ডিভোর্স পেপার ও রেডি হয়ে যাবে।।
— ডিভোর্স????
.
.
.
চলবে.........................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন