"বৌ নয় রক্ষিতা প্রয়োজন ছিল আপনার। কথাটা বিয়ের আগে আমাকে সরাসরি বললেই পারতেন।
আমি যে ভাবেই হোক আমার চেয়ে উন্নত মানের রক্ষিতা খুজে দিতাম। খরচ ও আমার চেয়ে কম পড়ত।"
.
কথাটা যেন অভ্রর বুকে খচ করে লাগল। প্রথম বারের মতো ঘুরে তাকাল সদ্য বিয়ে করা বৌ এর দিকে ।। যদিও রুম অন্ধকার।
রুমের পাশে বেলকনিতে বসে একটা সিগারেট এর প্যাকেট শেষ করে দ্বিতীয় প্যাকেট এর দ্বিতীয় টা ধরাতে ধরাতে কৌতূহল বশত সবে ডায়েরি টা খুলছিল অভ্র। ডায়েরির কভার টাই তার কাছে কৌতূহলী লেগেছিল। কভারের এক পাশে সাদা শুকনো গোলাপ আটকানো অতি যত্নে। আর তার পাশে কিছু শুকনো বকুল ফুল আঠা দিয়ে আটকানো। মনে হচ্ছে একটা সাদা চাদের পাশে অনেক সাদা তারার মেলা। যদিও অন্য রঙের ছিটে পড়ে গেছে কিছুটা তার ওপর। বিশ্রী একটা রঙের ছিটে..এ রং অভ্রের কোন দিন ও পছন্দ ছিল না । কোন দিন ও না
কিন্তু হুট করে মেয়েটার এমন কথা শুনে ডায়েরি টা আর খোলা হল না অভ্রের।।ঘরে ঢুকতে ঢুকতে রাগে ছুড়ে ফেলল ডায়েরি টা, পড়ে রইল ঘরের ই এক কোনে অযত্নে অবহেলায়। যেভাবে এ কয়েক দিন ছিল।
অভ্র'র এরকম সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস কোনদিন ই ছিল না ।
.
ভেবেছিল মেয়েটার সাথে কোন রকম কথা ই বলবে না। সে তার মতো অভ্র তার নিজের মতো থাকবে। কিন্ত প্রথমেই মেয়েটার এমন কথা শুনে আর চুপ থাকা যায় না ।মেয়েটা কিছু না জেনে শুনেই এত নীচ ভাবল কি করে তাকে।
.
অভ্র উঠে গিয়ে খাটে বসা মেয়েটার পাশে গিয়ে দাড়াল।
— এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার???
— রুমের আলোটা জ্বালালে ভালো হয়। কার সাথে কথা বলছি সেটা দেখতে না পেলে আমার অস্বস্তি হয়। আমি আপনার মোটামুটি ছায়ার মতো অবয়ব ছাড়া কিছু দেখতে পারছি না ।
— আমি কি জিজ্ঞেস করলাম সে কথার উত্তর দাও আগে। সমস্যা কি তোমার?
— কিসের সমস্যা?? কোথাকার সমস্যা??
— ওসব বাজে বাজে কথা কেন বললে?? আমাকে তোমার ওমন মনে হয়??
— হ্যা অবশ্যই মনে হয় । আর মনে হয় কেন বলছি। আমি জানি তো আমি আপনার বৌ নই রক্ষিতা। আপনাদের মতো বড়লোক দের ওমন দু চার জন থাকেই।
— চুপ আর একটা বাজে কথা বলবে না । মেজাজ কিন্ত এমনিতেই ভালো নেই ।এসব বলে আরো খারাপ করে দিও না মেজাজ।
— আমি চুপ করব না যতক্ষণ না আপনি আমার সব প্রশ্নের ঠিক ঠাক উত্তর দেবেন
— নিজেকে কি কোয়েশ্চেন ব্যাংক মনে করো ?
— আপনারা সবাই মিলে আমার সাথে কেন এমন করলেন?
— কি করেছি? সবাই বলতে কাকে কাকে বোঝাচ্ছ?
— এই যে আপনি,আপনার বাবা, আর আমার তিন চাচা। আমাকে বাজারের জিনিস এর মতো ইউজ করছেন
— হোয়াট ডু ইউ মিন বাই বাজারের জিনিস? তুমি তো চরম অসভ্য মেয়ে। তুমি নিজে কি বলছ সে সব এর মিনিং সম্পর্কে তোমার কোন আইডিয়া আছে?? কে তোমাকে ইউজ করেছে? আশ্চর্য তো ।
— হ্যা হ্যা । বাজারে জিনিস না তো কি??? বাজারের জিনিসের মতো ই কেনা বেচা করেছেন আপনারা আমাকে।। এত টাকা দিয়ে কেন কিনেছেন আমায়???
.
অভ্র এবার বেশ অবাক হয়ে গেল । মেয়েটা টাকার ব্যাপার জানল কিভাবে । এ মেয়ে কি শুধু টাকার ব্যাপারে জেনে গেছে নাকি অন্য সব ব্যাপারে।
.
অভ্র এবার ধীর গলায় বলল,
— দ্যাখো তুমি আসলে যেরকম ভাবছ ব্যাপার টা আসলে সেরকম নয়।।
— তো কি রকম শুনি??? আপনার কি মনে হয় আমি ছোট বাচ্চা?? উল্টো পাল্টা একটা কিছু বুঝিয়ে দিলেই হলো??
— তুমি নিজেই উল্টো পাল্টা বুঝছ। কেউ তোমাকে কিচ্ছু উল্টো পাল্টা বোঝাচ্ছে না ।
— বুঝি বুঝি আমি সব বুঝি। আপনারা প্রত্যেকেই অত্যন্ত কুতসিত মন মানষিকতার মানুষ। আর আপনি সব চেয়ে নিকৃষ্ট ।
— ক দিন চেন তুমি আমাকে?? চেনা নেই জানা নেই তবুও তখন থেকে একটার পর একটা বাজে কথা বলেই যাচ্ছ আমাকে?
— প্রশ্ন টা তো আমার ও ক দিন ধরে চেনেন আপনি আমাকে??
— যদি বলি চিনি ই না।
— তো বিয়ে করলেন কেন? অন্যের বৌ কে নিয়ে টানাটানি করার খুব শখ?
— কে অন্যের বৌ ?কে হ্যা ? বিয়ে ঠিক হওয়া আর বিয়ে হওয়া এক না। স্বপ্নের দুনিয়া থেকে বের হয়ে এসো বাস্তবে বিচরণ করতে শেখো।
— কিসের স্বপ্ন হ্যা কিসের স্বপ্ন?? সব সত্যি। শুভ্র আর আমার বিয়েটা অনেক আগে থেকেই ঠিক করা । মাঝখান থেকে আপনি কোত্থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসে গেলেন?? আমার চাচারা এই চার দিনে কোত্থেকে জোগাড় করল আপনাকে হ্যা?? আর আপনিও কেমন মানুষ এই যুগেও মানুষ কেনা বেচা করেন?
— আমি কেমন মানুষ তা জানার আগে তোমার চাচারা কেমন মানুষ শুনি?? ভাইয়ের মেয়ে চার দিনের মাথায় ই বোঝা হয়ে গেল?? আমি তো অনেক খারাপ মানুষ । নিকৃষ্ট মানুষ। কিন্ত তোমার তিন চাচা তার চেয়েও নিকৃষ্ট । উনারা বিক্রি করতে পেরেছে বলেই আমি কিনতে পেরেছি।
.
অভ্র কখনোই কথা গুলো এভাবে বলতে চায় নি। কিন্ত তার ও একটা ধৈর্যের সীমা আছে। মেয়েটা প্রশ্নে প্রশ্নে তাকে পাগল করে দিচ্ছে।
.
— সত্যিই এই চার দিনে আমি সবার কাছে বোঝা হয়ে উঠেছিলাম। সাত টা দিন ও তারা আমাকে রাখল না । আমার বাবা মা ভাইয়ের কুলখানি পর্যন্ত ও রাখল না ।
— তাহলে বোঝ আমি বেশি খারাপ নাকি তারা। এখন কান্নাকাটি করে আর কি করবে বলো ।
— কান্নাকাটি ছাড়াই বা কি করার আছে আমার?? সেদিন রাতে হুট করে শুনলাম আমাদের গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়েছে । বাবা, মা, ভাইয়া তিন জনের ই স্পট ডেথ। সকাল বেলা তিনটে লাশ এল বাড়ি। আমার মনে হচ্ছিল আমিও কেন এদের সাথে লাশ হয়ে গেলাম না। কত জেদ করেছিল মা আমাকে তাদের সাথে যাওয়ার জন্য । কিন্তু আমি সেদিন কেন যে গেলাম না ।
— কোথায় যাচ্ছিল উনারা? আর তুমিই বা যাও নি কেন?
— বাবার এক ফ্রেন্ড এর বাড়িতে দাওয়াত ছিল। আমি এমনিতেই যাই নি। আমার বেশি লোকজনের ভেতর যেতে ভালো লাগে না । কিন্ত আমি যদি জানতাম এমন কিছু হবে আমি সত্যি তাদের সাথে যেতাম।আর আমিও মরে যেতাম সব পাঠ চুকে যেত।। চাচারা এভাবে আমাকে টাকার বিনিময়ে আপনার কাছে বিক্রি করে দিতে পারত না ।
— বার বার বিক্রি বিক্রি বলবে না বলে দিলাম।
— বিক্রি না তো কি হ্যা?? দেন নি আপনারা আমার চাচা দের মোটা অঙ্কের টাকা??
— তোমাকে এসব কে বলেছে শুনি??
— আমার চাচাত বোনই বলেছে। আমি বাবা মা চলে যাবার পরের দিন রাতেই জানলাম আপনার সাথে চাচারা আমার বিয়ে ঠিক করেছে । আমি খুব বেশি ই অবাক হয়েছিলাম কথা টা শুনে। চাচারা আমার সাথে এটা কিভাবে করতে পারল । যেখানে আমার বাবা মা একজনের সাথে আমার বিয়ে অনেক আগেই ঠিক করে রেখেছিল। হ্যা শুভ্র'র সাথে আমার বিয়েটা বছর চারেক আগে থেকেই ঠিক করা ছিল ।আগামী বছরের শুরুর দিকে বিয়ে টা হবার কথা ছিল । মানে আর মাস চারেক পর । কিন্ত আমার চাচারা সেই মাস চারেক ও আর অপেক্ষা করলেন না । বাবা মা আর ভাইয়া চলে যাবার পর দিন ই আপনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলল। আর তার দুদিন পর ই বিয়ে টাও জোর করে দিয়ে দিল। না দিল শুভ্রকে এক বার জানানোর সুযোগ, না দিল আপনাকে সব কিছু খুলে বলার সুযোগ। আমি চেয়েছিলাম আপনার সাথে যেভাবেই হোক দেখা করে বলব বিয়ে টা না করতে আপনার পায়ে পড়ব দরকার হলে। অন্তত শুভ্র আসা পর্যন্ত সময় চেয়ে নেব আপনার কাছে। তারপর শুভ্র সব কিছু ঠিকঠাক করে নেবে। কিন্ত তার আগেই আমি জানতে পারলাম এ বিয়ের বিনিময় বেশ মোটা অঙ্কের টাকা। বিয়ের আগেই আমি বিক্রি হয়ে গেছি আপনাদের কাছে। আমাকে তো রুম থেকে এ কদিন বের ও হতে দেয়া হয় নি। আমার ফোন,ল্যাপটপ সব কিছু নিয়ে নিয়েছে ওরা। আমি না পেরেছি কারো সাথে যোগাযোগ করতে না পেরেছি পালাতে।
— কবে আসবে শুভ্র আর কোত্থেকে আসবে?
— শুভ্র নেভি তে জব করে । বেশির ভাগ সময় সাগরেই থাকতে হয় তাকে। এখন ও সাগরেই আছে। আউট অফ নেটওয়ার্ক। সে জন্য ই তো বলতে পারি নি ওকে কিছু । ও আসবে মাস চারেক পর। সবে গিয়েছে।আমাকে সে চার টা মাস সময় দিল না চাচারা।। তারা আপনাকে কোত্থেকে পেল হুট করে আর আপনি ও বা কেন এ বিয়ে করতে চাইলেন সেসব কিছুই ধোয়াশা । আচ্ছা চাচাদের না হয় স্বার্থ আছে,টাকা পেয়েছে অনেক।কিন্ত আপনার কি স্বার্থ?? কেন ইনভেস্ট করলেন এত টাকা আমার জন্য??? হ্যা???
— স্বার্থ তো আছেই কিছু ।
— হ্যা জানি তো রক্ষিতা বানিয়ে রাখবেন আমায় এটাই স্বার্থ তো????
— আমি এত দিন জানতাম মেয়েরা দু লাইন বেশি বোঝে এখন দেখছি দু'শ লাইন বেশি বোঝে। বাই দ্যা ওয়ে কি যেন নাম তোমার???
— বাহ তিন বার কবুল বলেছেন অথচ নাম শোনেন নি?? এটা কে আবার বিয়ে বলেন আপনি?? নিজেকে আমার স্বামী দাবি করেন??? লজ্জা করে না???
— হ্যা শুনেছিলাম কিছু একটা অত মনোযোগ দিই নি। তাই মনে করতে পারছি না
— অবন্তীকা আফরিন অবন্তী আমার নাম
— ও হ্যা মনে পড়েছে। আমি আহনাফ চৌধুরী অভ্রনীল ।
— জানি মনে আছে আমার আপনার নাম ।আমি আপনার মত ভুলো না।
— হুম
— এবার আলো টা জ্বালান রুমের। আমি অন্ধকারে ভয় পাই । আর এভাবে আপনার ছায়া দেখতে অস্বস্তি হচ্ছে।
— আর আমার আলো তে ঘুমোতে অস্বস্তি হয় । রুম এমন ই থাকবে। তোমার ইচ্ছে হলে তুমি বেলকনি তে গিয়ে থাকতে পারো ।
— আচ্ছা আপনি কি ছ্যাকা ট্যাকা খেয়েছেন নাকি? সে জন্য এমন তাড়াহুড়া করে আমাকে বিয়ে করলেন? প্রেমিকা কে দেখানোর জন্য??
— উফ্ফ তুমি বড্ড বেশি প্রশ্ন করো ।
— অবশ্যই করব ।বলুন আমাকে বলুন। হ্যা এই জন্য ই দেবদাস সেজে বেলকনিতে বসে এতক্ষণ মদ গিলছিলেন আর সিগারেট ধরাচ্ছিলেন একটার পর একটা । আর পুরনো প্রেমিকার ডায়েরি খুলছিলেন তাই না?? আর আমি আপনার ডান হাতের ব্যান্ডেজ টাও দেখেছি। নিশ্চয় ছ্যাকা খেয়ে হাত কেটে সুইসাইড করতে গিয়েছিলেন। তাই আপনার বাবা স্বান্তনা পুরস্কার হিসেবে আমাকে কিনে দিয়েছে তাই না??
.
অভ্র এবার আর কোন উত্তর দিল না ।অবন্তীকে খাট থেকে জোর
করে তুলে নিয়ে গেল বেলকনিতে। বেলকনির গ্রিল গুলোর সাথে কোমরে দড়ি দিয়ে শক্ত করে বেধে রাখল , সামনে দু হাত, পা , মুখ ও বেধে দিল। অতপর বেলকনির লাইট ও অফ।
.
— এইবার হ্যাপি?? এখন যে যে প্রশ্ন গুলো আছে দাড়িয়ে দাড়িয়ে সারারাত নিজে নিজে মনে মনে আওড়াতে থাকো।। অতিরিক্ত প্রশ্ন আর অতিরিক্ত প্রশ্নকারী দুটো ই আমার অপছন্দ বলে দিলাম। আর ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন আমার ডিকশনারি তে ছ্যাকা বলে কোন শব্দ নেই।। ছ্যাকা খেয়ে আমি তোমার মতো একটা ছ্যাচড়া মেয়েকে বিয়ে করার মতো ধৈর্য ও আমার নেই। এতক্ষণ অনেক ভালো বিহেভ করেছি। কিন্ত তোমার এই বাজে বাজে ধারনা আর প্রশ্ন ই তোমার এরকম শাস্তির কারণ। থাক সারারাত দাড়িয়ে।
.
অবন্তী কিছু বলতে চাচ্ছিল কিন্তু মুখে অভ্র এমন ভাবে শেরওয়ানির ওড়না পেচিয়ে বেধে দিয়েছে কোন প্রকার শব্দ বের করার অবকাশ নেই।
.
অভ্র রুমে গিয়ে বেশ শান্তিতে শুয়ে পড়ল।
বেলকনিতে আলো নেভানোর জন্য পুরো রুম টা আরো ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে গিয়েছে।তবে বেলকনির পেছনে গার্ডেন থেকে একটু একটু আলো আসছে। অবন্তী সেই আলোর দিকে পেছনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই আরো এক দফা ভয় পেয়ে গেল। এমনিতেই অন্ধকারে বড্ড ভয় পায় মেয়েটা। বেলকনির ঠিক নীচেই বাড়ির বাইরে গার্ডেনের পাশে বেশ কিছু কবর দেখা যাচ্ছে । টাইলস দিয়ে বাধানো। তাই হালকা আলো তেও চকচক করে জ্বলছে। কবর গুলো।
অবন্তী সেদিক থেকে চাইলেও চোখ ফেরাতে পারছে না । আচ্ছা কবর গুলো কার? এখানে আরব্য রজনির মতো কোন ঘটনা ঘটে না তো??
বিয়ে করে করে পরের দিন ই তাকে মেরে ফেলা হয় না তো? এজন্য ই সদ্য বাবা মা হারা অবন্তী কে বিয়ে করে নি তো অভ্র? যেন মেরে ফেললেও কেউ মিসিং ডায়েরি না লেখাতে পারে?
অবন্তী মোটামুটি নিশ্চিত আজ রাত ই তার জীবনের শেষ রাত। সকাল হলেই পাঠার মতো বলি দেবে তাকে । এজন্য ই এমন হাত পা বেধে রেখেছে। লোকটা কে এমনিতেও অবন্তির সাইকো মনে হয়েছিল । আচ্ছা লোকটা নেক্রফিলিক নয় তো? হতেই পারে...
.
.
.
চলবে...........................