অন্তর্দ্বন্দ্ব - পর্ব ৩১ - সাবরিনা ইমরান - ধারাবাহিক গল্প


-আমাকে সময় দাও যাবির।এখনি কোনো সম্পর্কে আমি যেতে চাই না।একটা বছর যেভাবে ছিলাম,ওভাবেই থাকলে হয় না?কোনো নামহীন সম্পর্কে? 

-তোমার উপর আমি কিছুই চাপিয়ে দিবো না,অন্তত এতটুকু কথা দাও,কোনো একদিন তুমি এই সম্পর্ককে একটা নাম দিবে,আর এর মাঝে তৃতীয় কেউই আসবে না।

-তুমিই যদি তৃতীয় কাউকে নিয়ে আসো?

-সময় তো নিলেই,পরখ করে দেখো।

ভিনা অন্যদিকে তাকিয়ে রেলিং এ পা ঝুলিয়ে বসলো।যাবির ভিনার পাশে বসে হাত শক্ত করে ধরে রাখলো।কেন যেন মনে হচ্ছে যে কোনো মূহুর্তে মেয়েটা লাফ দিবে।

-কী হয়েছে?খুলে বলো

ভিনা সবকিছু খুলে বললো। যাবির সব শুনে অবাক। 

-তানভির তো এই সম্পর্কের ব্যাপারে আমাকে কিছুই বলে নি।অবশ্য আমি ওর খুব বেশি কাছের ফ্রেন্ড না,ভালো একটা বোঝাপড়া আছে আরকি।

-নওমি কখনো এমন করবে,ভাবিনি আমি।

-পরিস্থিতিতে পরে মানুষকে অনেক কিছুই করতে হয়।আর প্রেমে পড়া মানুষকে কখনো ছকে ফেলতে পারবে না,প্রেম এমনই জিনিস। 

-জেনেশুনে নিজেকে এই 'জিনিসে' জাড়াচ্ছিলে কেন?

-নতুন করে জড়ানোর কী আছে,জড়িয়েই তো আছি।যাই হোক,রুশান তোমার খোঁজ নিয়েছিলো।

-রুশান?কবে দেখা হলো?

-রুশানের খালাতো ভাইকেই তো পড়াচ্ছি।পরশুই দেখা হয়েছিলো ওর সাথে।তখন জিজ্ঞেস করেছিলো।

-আচ্ছা

-কেন যেন মনে হয় রুশান তোমাকে পছন্দ করে।

-আবোল তাবোল কথা বলো না তো।

-না সত্যিই বলছি।

-কীভাবে বুঝলে?

-টিউশনির লিফলেট ছাপানোর আগে রুশান আর আরেকটা ছেলেকে বলেছিলাম খোঁজ দিতে, তখন কোনো রেস্পন্স পাইনি।কিন্তু সেদিন রুশানের খালাত ভাই,কাইফ বললো কোন এক মেয়ে নাকি রুশানকে বলেছে টিউশনির কথা,পরে নাকি নিজের খালার হাতে পায়ে ধরে এই টিউশনির জন্য রাজি করিয়েছি।

-বেশ,তো আমি আসলাম কোথা থেকে?

-মেয়েটা তুমিই।

-বেশি জানো।

-কত ভালো হত যদি জানতাম।

-বাদ দাও তো,অযথাই সব। 

-বিরক্ত হচ্ছো কেন?সেম এজ পছন্দ না?

-একটুও না। সেম এজ ছেলেরা ন্যাকামি ছাড়া কিছুই পারে না।ওদের পুরো জগৎ টাই ফ্যান্টাসির। এছাড়াও এদের দায়িত্বজ্ঞান নেই। 

-সে হিসেবে তো আমি তোমার এলিজিবিলিটি পেতেই পারি,নাকি?

-কিসের? 

-দায়িত্ব পালনের।

-আজকে আসি। আমার টিউশনিতে যেতে হবে।

যাবির দাঁড়িয়ে দেখলো ভিনা দৌঁড়ে চলে যাচ্ছে,কিছু একটা খুব সংগোপনে লুকিয়ে। 


জেরিনের এইচএসসি শেষ, এখন দরজা বন্ধ করে সারাদিন ভোকাবুলারি পড়তে থাকে।রুমটাকে নীলক্ষেত বানিয়ে ফেলেছে। দুনিয়ার যত ইংলিশ বই,নোটস আর হাইলাইটার এদিক সেদিক ছড়ানো।খুরশিদ নিজের মেয়ের দিকে তাকিয়ে কপাল চাপড়াচ্ছেন।এইভাবে মেডিকেলে প্রিপারেশন নিলে ঢাকা মেডিকেলেই হয়ে যেত চান্স। ঘার ত্যাড়া মেয়েকে কিছু বলাও যাবে না।ইদানিং তার শরীর একটুও ভালো যাচ্ছে না।মেয়ের যন্ত্রণায় প্রেশার হাই হয়ে থাকে সবসময়। কোন এক ছেলের জন্য জীবন শেষ করে দিচ্ছে একেবারে।খুরশিদ ভালোমতই জানেন, নওমি টিকতে পারবে না সেখানে,হুজুগের বশে নিজের জীবনে কত বড় ভুল ডিসিশান যে সে নিলো,সময় গড়ালেই টের পাবে,তখন এই মেয়েকে নিয়ে যে কী করবে,খোদা মালুম।


মুনার মন ইদানীং খুবই ভালো থাকে।সোহেলের সাথে বেশ ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।যে ভালোবাসার জন্য সারাটা জীবন হাহাকার করেছে সে,সেই ভালোবাসা ধীরে ধীরে তার জীবনে আসছে।সোহেল আগের চেয়ে বেশি সময় দিচ্ছে।বিয়ের বছর খানেক পর,এখন তাদের মাঝে স্বাভাবিক দাম্পত্য সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।এছাড়াও ঘরে বসেই অনলাইন বিজনেস শুরু করার পরিকল্পনা করেছে মুনা।সোহেল এতে সহযোগিতা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।দিন কয়েক পরেই সে বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রোডাক্ট হোলসেল প্রাইজে কালেক্ট করে নিজের ব্যবসা শুরু করবে। নিজের একটা কিছু করা কতদিনের স্বপ্ন ছিলো মুনার,কিন্তু দায়িত্বের পিছুটানে নিজের জন্য কিছুই করা হয়নি,এখন সোহেল পাশে দাঁড়িয়ে জীবনের সব স্বপ্নগুলো এক এক করে পূরণ করে দিচ্ছে।সোহেল ঠিকি বলেছিলো,প্রতিটা সুন্দর সম্পর্ক শুরু হতে সময় লাগে।মুনার আগেই এটা বোঝা উচিৎ ছিলো।অধৈর্য্য হয়ে যেসব আচরণ সে করেছে,সেগুলো ভাবতেই নিজের উপর রাগ লাগে তার।এখন যখন সব ঠিক হয়ে যাচ্ছে,তখন সেও সংসারটাকে সুন্দর করে ফেলবে।ভিনা মেয়েটাকে প্রথমে খুব অসহ্য লাগলেও,এখন মায়া কাজ করে। জীবনের সব আশা পূর্ণ হলেও মা হওয়ার আশা কখনোই পূর্ণ হবে না।কিন্তু এই শূন্যতা ভিনাই পূরণ করতে পারবে। এত বড় বাসাটা বাড়িতে রুপান্তরিত হবে যদি সবার সাথে সবার ভালো সম্পর্ক থাকে।গত এক বছরে যা হয়েছে হয়েছে,এখন অতীতকে কিছুতেই বর্তমানে প্রভাব ফেলতে দেয়া যাবে না।পরের বার সোহেলকে বলে ভিনাকেও বেড়াতে নিয়ে যাবে।
.
.
.
চলবে..............................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন