অবন্তী বেলকনিতে দাড়িয়ে ঠিক দেখতে পাচ্ছে অভ্র প্রথম কবর টার পাশে বসে ফিসফিসিয়ে কিছু বলছে। মুখভঙ্গি দেখেই বোঝা যাচ্ছে কোন ব্যাপারে বিচার বা অভিযোগ জানাচ্ছে।
অভ্রর এসব কান্ড দেখে কেমন যেন অদ্ভুত ভয়ে শরীর হিম হয়ে আসছে। ঘরের পাশেই এরকম গোরস্থান । দাদির কাছে ছোট বেলায় বিভিন্ন গোরস্থান নিয়ে অনেক কিছু শুনেছে সে।
হুট করে কাধে কারো শীতল হাতের স্পর্শ পেল সে..
.
— রেণু খালা আপনি??
— হ্যা এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখছ?
— ঐ যে উনাকে।আচ্ছা উনার কি কোন মেন্টাল ডিজঅর্ডার আছে?
— কি বলতে চাইছ আমার ছেলে পাগল? এক দিন হলো সবে এসেছ। নতুন বৌ নতুন বৌয়ের মতো থাকো ।
— উনি আপনার ছেলে? উনি না আপনাকে রেণু খালা বলে ডাকে?
— এখন দেখছি অভ্রনীল ঠিক ই বলে। তুমি বড্ড বেশি প্রশ্ন করো । হ্যা আমি ওর মা না তবে মায়ের ই মতো । শুধু যে জন্ম দেয় সে ই কি মা হয় নাকি? মায়ের মতো যে লালন করে সে ও মা।
— হুম বুঝলাম। কিন্ত উনি ওখানে কি করেন? কার সাথে কথা বলেন? আর উনার আসল মা কোথায়?
— কি করবে ওর মায়ের সাথেই কথা বলে ।
— মানে?
— ওটা এ বাড়ির পারিবারিক কবরস্থান। অভ্রনীল যে কবর টার পাশে বসে আছে ওটা তনু আপার মানে অভ্রনীলের মার কবর।
— অহ আচ্ছা। আগে বলবেন তো । আমি খামোখা কি কি না ভেবে ভয় পেয়ে গেছিলাম কাল রাত থেকে।
— কি ভেবেছ?
— না কিছু না ।
— অভ্রনীল তোমার চেয়ে দু তিন বছরের বেশি বড় হবে না । খামোখা আপনি আপনি বলে সম্বধন করো কেন?
— অচেনা অজানা মানুষ কে হুট হাট তুমি বলার অভ্যাস আমার নেই।
— কয় জন মানুষের চেনা জানা মানুষের সাথে বিয়ে হয়? চিনে জেনে নিতে হয়। তার সাথে আপন করেও নিতে হয় ।
— আচ্ছা উনার মায়ের কি হয়েছিল?কত দিন হলো মারা গেছেন উনি?
— সেসব না হয় অন্যদিন শুনো । সবে তো এসেছ বাড়িতে। এত প্রশ্ন উত্তর না খুজে আগে সবাই কে আপন করে নিতে চেষ্টা করো ।
.
.
— কেন খালা অন্যদিন শুনবে কেন? এই মেয়ে তোমার অনেক কৌতূহল তাই না আমার ব্যাপারে? ভালো করে শুনে রাখো আমার মাকে খুন করা হয়েছে আগুনে পুড়িয়ে। আর কে খুন করেছে জানো?? আমি নিজে করেছি। তুমি যদি আমার আর কোন ব্যাপারে নাক গলাও তোমাকেও একই ভাবে পুড়িয়ে মারব আমি।। কয়লা হয়ে যাবে একদম।
.
অবন্তী এসব শুনে অবাক হয়ে কিছু একটা বলতে চাইছিল। রেণু খালা চোখ দিয়ে ইশারায় তাকে কিছু বলতে নিষেধ করল।
.
অবন্তী ও আর কথা বাড়াল না । বেশ ভয় পেয়ে গেছে কথা গুলো শুনে। শুধু আর এক বার অভ্র কে নতুন ভাবে পা থেকে মাথা অবধি দেখে নিল। অবন্তী বুঝতে পারছে তার হার্ট খুব বেশি দ্রুত বিট দিচ্ছে । বেড সাইডে রাখা পানির বোতল থেকে পৌনে এক বোতল এক নিশ্বাসে খেয়ে নিল সে।
.
অভ্র এখনো তার দিকে চেয়ে চেয়ে রাগে ফুসছে।
.
—অভ্রনীল তোমাকে না বলেছি ওসব বাজে কথা আর মনে করবে না । পুরো ব্যাপার টা একটা ভুল বোঝাবুঝি ছিল। আর কেউ তোমাকে বিশ্বাস না করলেও আমি তো করি । অবন্তী ও করবে একদিন দেখো। তুমি আর কথা বাড়িও না । তোমার মনে রাখতে হবে তুমি যে সে ফ্যামিলির ছেলে না । রয়েল ফ্যামিলি এটা। এক সময় তোমার পুর্বপুরুষ জমিদার ছিল এ এলাকার। তোমার আচার আচরণ কথা বার্তায় আরো সংযত হওয়া উচিত । তোমার কোন একটা কথার ফাঁকে যেন থার্ড পার্টিরা কোন সুযোগ না পেয়ে যায় । এ বাড়ির ভেতরে ও যেমন ছাড়পোকা আছে বাহিরেও আছে। তাদের সব কিছু কুড়ে কুড়ে খাওয়ার সুযোগ তুমিই না শেষে দিয়ে দাও। এ সব কিছু তোমার সব কিছুর দায়িত্ব এখন থেকেই নিতে শেখো। খামখেয়ালিপনা এখন বাদ দিতে শেখো। ভাইজান আজ তোমাদের অফিসিয়ালি ইন্ট্রোডিউস করবে তোমাদের দুজন কে সব বিজনেস ক্লায়েন্ট দের সামনে জুনিয়র চৌধুরী আর অবন্তী কে তোমার মিসেস হিসেবে। আর নতুন এম ডি হিসেবেও তোমার নাম এনাউন্স করতে পারে। নিজের ভাল পাগল ও বোঝে। তাই আশা করি দুজনেই পার্টি তে ম্যাচীউর আচরণ করবে।
.
রেণু খালা সন্ধ্যার পার্টির জন্য ড্রেস গুলো ওদের দিয়ে চলে গেলেন।
.
.
কিন্তু অবন্তীর মন থেকে এখনো ভয় যাচ্ছে না । সত্যি সত্যিই নিজের মা কে খুন করেছে নাকি লোকটা। খালার বাকি কথা গুলো ও মন থেকে সরছে না ।
.
.
সন্ধ্যায় পার্লার থেকে মেয়েরা এসে অবন্তী কে সাজিয়ে দিল। অবন্তী আয়নার সামনেই বসে আছে তখন থেকে। নিজেকে নিজেই চিনতে পারছে না। এতদিন সেলিব্রেটি দের এভাবে সাজতে দেখেছে বিয়েতে। আজ নিজেকেও তার কেমন যেন সেলিব্রেটি ই মনে হচ্ছে । নিচে কত লোকজন। ওদের নাম এনাউন্স করার সাথে সাথে অভ্র ওকে হাত ধরে রেড কার্পেট দিয়ে নিয়ে যাবে স্টেজে । সেরকম ই বলে গেছেন অভ্রর ফুফু।
অবন্তী নিজের হাতে মেহেদির দিকে তাকাল ।খুব গাঢ় রঙ হয়েছে কেন যেন আজকে।। নাকের নথ টা বেশ বড় হওয়াতে বেশ অস্বস্তি হচ্ছে। তবে এটার জন্য ই রয়েল রয়েল একটা ভাব এসেছে। এরকম বড় নথ সাধারনত আগের জমিদার গিন্নিরা ই পড়ত । গহনা গুলো খুব ভারি ।নিজেকেই নিজের আজ অন্যরকম সুন্দর লাগছে ওর।
.
অভ্র পেছনেই দাড়িয়ে ড্রেসিং টেবলের আয়নায় শার্টের ইন ঠিক করে নিল। ফর্সা, লম্বা, ছিপছিপে চেহারা, আয়তাকার শুষ্ক চোখ , শার্টের ওপর দিয়েও বাইসেপস মাসেল স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, চুল গুলো বার বার কপালের ওপর পড়ছে অভ্র বার বার হাত দিয়ে সেগুলো সরাচ্ছে। । অবন্তী আয়নার ভেতর দিয়েই আড় চোখে সেসব দেখছে। স্যুট টাই পড়ে নিল অভ্র। হুম খুব ম্যানলি লাগছে । খুনি খুনি ভাব টা স্যুট টাইয়ে যেন ঢাকা পড়ে গেছে ।
চুলে হালকা জেল দিতে দিতে অভ্র আয়না তেই আড় চোখে তাকাচ্ছিল অবন্তীর দিকে। দুজনেই এক সাথে আড় চোখে তাকাতেই অবন্তী চোখ নামিয়ে নিল।
অভ্র হাটু গেড়ে ওর বরাবর বসে পড়ল
— কি? কি দেখা হচ্ছে আড় চোখে? সোজা চোখে দেখতে পারো না? আর চোখ নামিয়ে নেয়ার কি আছে? আমার চোখে চোখ রেখে তাকাতে পারো না? শাস্তি হিসেবে এই জেল গুলো এখন মুখে মাখিয়ে দিই?
— আপনার ইচ্ছা । আমি আর আপনাকে কিছুই বলব না কোন ব্যাপারে।আমি আগুনে ভয় পাই। আপনি আগুনে না পুড়িয়ে অন্য যেকোন ভাবে....
— বাহ সকালের মেডিসিনে ভালোই কাজ হয়েছে । এভাবেই চুপচাপ থাকবে সব সময় ।
.
.
নাকের নথ টা ঠিক করে দিয়ে ঘোমটা আর একটু টেনে দিল অভ্র। মুচকি হেসে নখে একটু ঢিলে হওয়া আংটি টাও ঠিক করে নখের সাথে এটে দেয়ার চেষ্টা করল।
.
.
মেঝের এক কোনে পড়ে থাকা ডায়েরি টার দিকে আবার চোখ পড়ল অভ্রের । ওটা নিয়ে আবার বেডে বসে পড়ল অভ্র। পাতা গুলো কিছুটা আটকে থাকায় অতি সাবধানে একটার থেকে আর একটা ছাড়াচ্ছিল। এরই মধ্যে অভ্রর ফুফু এলেন।
— কি রে অভ্র তুই আরো কবে বড় হবি। এটা ডায়েরি নিয়ে ঘাটাঘাটির সময়? যা অবন্তী কে নিয়ে নিচে যা । কোত্থেকে কি ডায়েরি বের করেছিস তুই? এরকম মেটে মেটে কালারের কিসের ছাপ এগুলো? রাখ ওটা । কাজের সময় যত অকাজ।
.
ফুফু ওর হাত থেকে নিয়ে নিল।
— ফুফু আমি কিন্তু আমার হাত থেকে কোন জিনিস কেড়ে নেয়া একদম পছন্দ করি না । দাও আমাকে ওটা দাও বলছি।।
.
অভ্র ডায়েরি টা নিয়ে আলমারি তে নিজের কেবিনে রেখে দিল।
.
.
অভ্র অবন্তীর হাত ধরে রেড কার্পেট দিয়ে স্টেজের দিকে হেটে যাচ্ছিল। চারদিকে অনেকেই ফোনে ক্যাপচার করে রাখছে। আর ফটোগ্রাফার রা তো আছেই। চারদিকে এত ফ্ল্যাশের আলো । অবন্তী এক সাথে এত লোক কখনো দেখে নি। তাও আবার সবার নজর তাদের দুজনের ওপর । মনে হচ্ছে সব কিছু স্বপ্নের মতো । শুধু হাত ধরে থাকা মানুষ টা বাদে। সে তার স্বপ্নের কেউ নয়।
.
হুট করে মাঝ পথে এসে অভ্রর কি যেন মনে হল। সে অবন্তীর হাত ছেড়ে হন হন করে হেটে গেল পেছনে আবার বাড়ির ভেতর চলে গেল ।। কি হল কেউ কিছুই বুঝল না । অবন্তী স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে ।কি হল এটা । তার কি সামনে যাওয়া উচিত এগিয়ে নাকি এভাবেই দাড়িয়ে থাকবে। কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না । এত লোকজনের মধ্যে হুট করে অসহায় লাগতে শুরু করল ।
এদিকে অভ্র রুমে ঢুকেই আগে আলমারি লক করে নিল। লক করতে একদম ভুলে গেছিল যে । রুম থেকে বের হয়ে আবার কি যেন মনে হল। রুমের দরজা টাও লক করে দিয়ে আবার নিচে নেমে আসল।
দৌড়ে এসে অবন্তীর হাত আরো শক্ত করে ধরে আবার সামনে দিকে চলতে লাগল ওকে নিয়ে । এ হাত কেমন যেন অনেকখানি ভরসার হাত মনে হলো অবন্তীর কাছে। সত্যিই কয়েক মুহূর্তের জন্য এত লোকের মাঝেও একা লাগছিল তার। এখন আর একা লাগছে না । পাশে আছে তো কেউ হাত ধরার।
.
.
আজমির চৌধুরীর আজ বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। এতশত প্রশ্নের উত্তর সামলিয়ে দিতে তাকে প্রায় হিমশিম খেতে হচ্ছে ।
ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সবার প্রায় একই কথা । ছেলের বিয়ে এত তাড়াতাড়ি কেন? সবে পড়াশুনা শেষ করে দেশে এলো । আগে কিছু দিন বিজনেস সামলাতো, সব কিছু শিখে উঠত। এখন তো বৌ নিয়েই পরে থাকবে, ব্যাবসায় মনযোগ না দিয়ে। কেন এতো নর্মাল ফ্যামিলির মেয়ের সাথে বিয়ে,কনের বাড়ি থেকে কেউ আসে নি কেন। আরো শত শত প্রশ্ন
.
অর্নি অভ্রর মেজ বোন এসে অভ্রর খোজ করতেই আজমির সাহেবের চোখ পড়ল স্টেজের দিকে। অবন্তী সবার সাথে ঠিক ভাবেই হেসে হেসে কথা বলছে। কিন্ত অভ্র তো নেই।
আজমির সাহেব ঠিক বুঝতে পারলেন অভ্র কোথায় ।
অভ্রকে ফিসফিসিয়ে মায়ের সাথে কথা বলতে দেখে আজমির সাহেব ওর কাধে হাত রাখলেন।
— অভ্র ফেরার পর থেকে আবার এসব শুরু করেছ দেখছি । লোকে পাগল বলবে তো বাবা । ওঠ চলো । সবার সাথে কথা বলবে চলো ।
— বাবা আমার পাসপোর্ট টা দিয়ে দাও । আমি চলে যাব অর্পি আপুর কাছে জার্মানি বা অন্য কোথাও। আমি এখানে থাকব না । আমি তোমাদের সব সময় ই অনেক ঝামেলায় ফেলি। আর ফিরব ও না ঝামেলায় ও ফেলব না কথা দিলাম।
— আর অবন্তী কোথায় যাবে?
— ও চাইলে যাবে আমার সাথে । না চাইলে যেখানে ইচ্ছে ।
— তুমি কোথাও যাবে না এখানেই থাকবে।
— বাবা আমার আর ভাল লাগছে না । আমি হাপিয়ে উঠেছি। এটা একটা কানামাছি খেলা চলছে। এসব কত দিন চলবে? আমি এক দিনেই ক্লান্ত। আমি পারি না তোমাদের মতো ...
— চুপ একদম চুপ। তুমি জানো না দেয়ালের ও কান আছে। আমি আছি তো নাকি?
— আমার জন্য তোমাদের কত কত প্রশ্নের উত্তর দিতে হচ্ছে আমার ভাল লাগছে না এসব।
— আমি সামলে নিয়েছি তো সব টা ।
— তবুও আমার ভাল লাগছে না এসব।
..
..
— ওহ আচ্ছা সে হুশ তাহলে আপনার আছে। আপনার আবার খারাপ ও লাগে ।
— দ্যাখ অর্নিপু আমি তোর সাথে কথা বলছি না । আমি বাবার সাথে কথা বলছি।
— তা বলবি কেন? বাবা তুমি একে আরো কত কাল এভাবে সাপোর্ট করে যাবে?হ্যা?? রোজ রোজ একটা করে স্ক্যান্ডাল না করলে তো উনার রাতে ঘুম হয় না । আর আমরা সবাই আছি তো সে সব সামলাতে। উনার আর কি? খাচ্ছে দাচ্ছে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। এবার তো আবার বোনাস হিসেবে নতুন বৌ ও পেয়েছে । বাবা তুমি কি ভাব বিয়ে দিয়ে ও পাগলা ঘোরার পায়ে লাগাম লাগানো যাবে?কি হলো পাগলামো তো আরো বেড়ে গেল । এই ছেলে কে আজ তুমি বিজনেস এর সব ভার দিতে চেয়েছিলে?? সামান্য রেড কার্পেটে কি করল দেখেছ? পাগলামোর একটা লিমিট থাকা উচিত । এখন আবার জুতো মুজা খুলে এখানে এসে আরামে বসে আছে । সবাই হাসাহাসি করছে । আবার কাল রাতে নাকি বৌ কে বেধে রেখেছিল। বাবা ওর এসব খামখেয়ালি কোন দিন ও শেষ হবে না । ওকে দায়িত্ব দিয়ে এত বছরের বিজনেস তুমি লাটে তুলতে পারো না বাবা। ওসব তুমি আর তোমার দু জামাই যে ভাবে সামলাচ্ছ ওভাবেই সামলাও। বাদরের গলায় মুক্তোর মালা পড়িয়ে লাভ নেই। ।। এই অর্পি আপুর কাছে এ ক'বছর তো ভালই ছিলি। ফিরতেই আবার?? রেণু খালা তোকে উস্কায় তাই না? । তোর থেকে আর কি ই বা আশা করা যায় ।
— এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। আপু তুই রেণু খালার নামে কিছু বলবি না ।তোর যে আমাকে সহ্য হয় না সেটা আমি ভাল করেই জানি। যা বলার আমাকেই বল।
— দেখেছ বাবা দেখেছ রেণু খালার নাম নিতেই কেমন ফোস করে উঠল। অভ্র তুই বাড়ির আয়া কে আয়ার জায়গায় রাখতে শেখ। আর তোকে আমার সত্যিই সহ্য হয় না রে। নিজের মায়ের খুনি কে চোখের সামনে এরকম দেখলে কারোর ই ভাল লাগবে না । জেলে পচে মরলে তবেই আমি শাম্তি পেতাম।
— তো জেলে পাঠিয়ে দিলেই পারতি।
— তুই জেলে গেলে আবার নতুন করে এত অশান্তি কে করত? তোর তো আবার শান্তি ভালো লাগে না । সব কিছু স্পয়েল করাই তো তোর কাজ । পার্টি তো শুরুতেই ঘেটে দিয়েছিস জোকার এর মতো আচরণ করে ।নিজের তো মান সম্মান নেই ই। আবার আমাদের মান সম্মান ও দিন দিন মাটিতে লুটাচ্ছিস বৌ এর ও।খুব শান্তি পেয়েছিস তাই না?
— শান্তি তো এখনো আমি পাই নি। তোকে অনেক্ষন থেকে চুপ থাকতে বলছি। কিন্তু তুই একের পর এক আমাকে অপমান করছিস। আমি সব কিছু স্পয়েল করতে ভালোবাসি তাই না?? দ্যাখ এবার স্পয়েল করা কাকে বলে?
.
.
অভ্র জুতা মোজা ছাড়াই হন হন করে হেটে গেল পার্টি তে। কি করবে ভাবতে ভাবতেই চোখ পড়ল অবন্তীর দিকে। ও তখন ও সবার সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত।
এই মেয়েটার জন্য ই যত অশান্তি শুরু হয়েছে । সবার কাছে কথা শুনতে হচ্ছে।
সোজা স্টেজে অবন্তীর সামনে গিয়ে দাঁড়াল ।
এর পর কোন কথা না বলে এক এক করে অবন্তীর গলা , হাত কান থেকে টেনে হিচড়ে সব গুলো অর্নামেনটস খুলতে শুরু করল। নথ টেনে খুলতে গিয়ে নাক থেকে বেশ রক্ত ও পড়েছে । হার গুলো টেনে হিচড়ে খোলার জন্য গলা ঘাড়েও ও বেশ আচর পড়েছে। চুল থেকেও সোনার কাটা গুলো টেনে হিচড়ে খুলতে গিয়ে চুলের একাকার অবস্থা। চুলের ওপর শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে পড়া ওড়না টাও এক টানে খুলে ফেলেছে ।
গেস্টরা সবাই আহম্মকের মতো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।
আর অবন্তী আবার সেই প্রথম রূপে যেন অভ্র কে দেখছে। পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে আছে চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। হাত পা যেন ভয়ে থর থর করে কাঁপছে ।
— হ্যা এবার ঠিক আছে । আমি তো জোকার। এখন আমার বৌ ও জোকার। সবাই হাসুন প্লিজ। এতক্ষণ নাকি শুধু আমাকে নিয়ে হাসছিলেন ।এখন আমাদের দুজন কে নিয়েই হাসুন ।হাসুন সবাই হাত তালি দিন। আর কত প্রশ্ন আমাদের কে নিয়ে আপনাদের তাই না?লেট মি ইনট্রডিউস আমি আহনাফ চৌধুরী আর ও অবন্তিকা আফরিন আহনাফ চৌধুরী । আমি এ বাড়ির পুরাতন জোকার আর ও নতুন জোকার। আসলে একা একা জোকারি করতে করতে বোর হয়ে গেছি তো । নতুন পার্টনার...
কথা শেষ না করতেই আজমির চৌধুরী এসে সবার সামনেই ছেলে কে থাপ্পড় দিলেন।
অর্নি আর ওর হাজব্যান্ড পেছনে দাঁড়িয়ে বেশ মজা পাচ্ছিল এমন কিছুই চেয়েছিল তারা। শুকনো কাঠে আগুন ধরানো যে খুব সহজ। হালকা একটু কেরোসিন আর দিয়াশলাই হলেই যথেষ্ট।
রেণু খালা অবন্তী কে চাদর জড়িয়ে ভেতরে নিয়ে গেলেন।
গার্ড রা চৌধুরী সাহেবের ইশারায় অভ্র কে টেনে হিচড়ে গেস্ট রুমে নিয়ে গিয়ে লকড করে রাখল।
.
.
.
চলবে............................