পরিণয়ে পরিপূরক - পর্ব ০৪ - স্পৃহা নূর - ধারাবাহিক গল্প


গার্ডরা চৌধুরী সাহেবের ইশারায় অভ্র কে টেনে হিচড়ে গেস্ট রুমে নিয়ে গিয়ে লকড করে রাখল।
.
অবন্তী বেশ ভয় পেয়ে গেছে। হাত পা এখনো কাপছে। রেণু খালা তাকে ওপরে রুমে নিয়ে যেতে চাইল।
— খালা আমি ঐ রুমে যাব না । 
— আরে অভ্রনীল নেই তো ও রুমে। ওকে নিচে গেস্ট রুমে লকড করে রেখেছে।
— তারপর ও ...আমি আপনার কাছে থাকব। ও রুমে আমার ভয় করে। নিচে উনি যেভাবে দরজা ধাক্কাচ্ছেন ঠিক ভেঙে চলে আসবে।
— আসলে আসবে। তোমার ই তো স্বামী। পরপুরুষ তো আর না ।
— আমি অত কিছু জানি না। আমি ও রুমে যাব না ।
.
.
আজমির সাহেব যতক্ষণ না হাপিয়ে উঠলেন ছেলে কে ঠিক ততক্ষণ বেল্ট দিয়ে মারলেন। প্রথম অপরাধ সবার সামনে বংশের মান ইজ্জত ডুবিয়েছে উল্টো পাল্টা আচরণ করে আর কথা বলে। দ্বিতীয় অপরাধ নিজের স্ত্রী কে ছোট করেছে সবার সামনে। তৃতীয় অপরাধ রুমে লকড করার পর অর্নির হাজব্যান্ড শাসন করতে গেলে অভ্র তার দুলাভাই কে মেরে নাক ,ঠোট ফাটিয়ে রুম থেকে বের করে দিয়েছে, অর্নি এগোতে গেলে ওকেও মেরেছে। 
বাবা যতক্ষণ মারলেন অভ্র চুপ করেই ছিল। 
— বাবা আমি এ রুমে থাকব না । বন্ধ করে রাখতে হলে আমার রুমেই রাখো যতদিন ইচ্ছে রাখো। এ বাড়িতে ও রুম আর রেণু খালার রুম ছাড়া আমি থাকতে পারি না ।দম আটকে আসে। 
মার শেষ হলে অভ্র শান্ত গলায় বলল । 
.
.
 এত পরিপাটি বাড়ির ভেতরে মানুষ গুলোকে অবন্তীর বড্ড ওপরিপাটি মনে হচ্ছিল ।
.
.
অবন্তী ঘুমিয়ে পড়েছে অনেক্ষন। রেণু খালা তখন ও জেগে জেগে কিছু ভাবছে। হঠাত দরজায় চেনা কড়া নাড়ার শব্দ পেল। এতক্ষণ এ ভয় টাই পাচ্ছিল। সে জানত অভ্র আজ তার সাথে থাকতে চাইবে। তাই অবন্তী কে ওপরের রুমেই থাকতে বার বার বলছিলেন উনি। এর আগেও এমন হয়েছে অভ্র কে যখন ই শাসন করা হয় সে মাঝ রাতে রেণু খালার কাছে এসে ঘুমিয়ে পড়ে । হুম মায়ের স্নেহ নিতে।
.
— রেণু খালা আমি এখানে ঘুমবো । আমার শরীর টা ভাল লাগছে না । জ্বর জ্বর লাগছে কেমন। তুমি একটু জল পট্টি দিয়ে দেবে?
— তোমাকে না নিচের রুমে রেখেছিল বন্ধ করে ।
— হুম পরে বাবাকে বলেছি। আমার রুমেই লকড করে রেখেছিল। আমি বেলকনি টপকিয়ে পেছন গেট দিয়ে ঘুরে এসেছি।
— এখানে কিভাবে থাকবে অবন্তী আছে তো । তোমাদের স্বামী স্ত্রীর মাঝে আমি থাকব কেমন দেখায়?
— ও তো এক পাশেই শুয়ে আছে । তুমি একটু সরো ওর দিকে আমার একটু জায়গা হলেই হবে ।
— ধুর পাগল ছেলে ও আবার কেমন দেখায়। তুমি থাকো ওর সাথে ।আমি পাশের রুমেই আছি।
— না তাহলে তুমি বসে বসে জলপট্টি দিয়ে দাও আমার পাশে । আমার সত্যি খুব জ্বর জ্বর করছে।
— বাবা অনেক মেরেছে???
— হুম।

— এসব কেন করিস বাবা আমার?
– জানিনা। 
.
.
মাঝ রাতে ঘুম হালকা ভেঙে যাওয়াতে অবন্তী কপালে কারো উষ্ণ শ্বাস পড়ার অনুভূতি পেল।। কেউ জড়িয়ে নিয়েছে এটাও ঘুমের ভেতর বেশ টের পাচ্ছে সে। রেনু খালা? নাহ 
হুট করে উঠে পড়ার চেষ্টা করল সে ।কিন্তু নাহ ওঠার চেষ্টা করতেই আরো আস্টেপৃষ্টে নিয়ে নিল অভ্র। 
আশ্চর্য এই লোক টা এখানে এলো কি করে । রেণু খালা কই গেল ।
অবন্তী হালকা ভাবে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করে কোন কাজ হলো না । জোর করে ছাড়াতে গেলে যদি জেগে যায় জেগে গেলে যদি রেগে যায় । তার চেয়ে ভালো ঘুমেই থাক।
জ্বরে গোঙাছে বোঝাই যাচ্ছে । হাত ও তো বেশ গরম, নিশ্বাস ও। 
.এই প্রথম কারো উষ্ণ শ্বাস প্রশ্বাস অনুভব করছে সে। 
.
হঠাত দরজায় হালকা নক করে রেণু খালা বললেন 
— আসব?
.
অবন্তী এবার বেশ সাহস পেল। জোর করে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে বসে পড়ল। অভ্র তখন ও ঘুমে ,পাশ ফিরিয়ে আবার ।
। রেণু খালা খাবার আর মেডিসন নিয়ে এসেছে । 
— খালা আপনি কোথায় গিয়েছিলেন? উনি এখানে কেন?
— তোমাদের দুজনের মধ্যে আমি থাকব? এটা কেমন কথা? আমি পাশের রুমে ছিলাম। প্রাইভেসি বলেও তো একটা ব্যাপার আছে নাকি? 
— আমাদের আবার প্রাইভেসি। ও জ্ঞান উনার থাকলে অন্তত সবার সামনে আমাকে আজ ওভাবে অপমান করতেন না ।
— নাও খেয়ে নাও তো । রাতে তো তুমিও ভয়ে কিছু খেলে না । আর ও ছেলে তো রাগে কিছু খায় নি বোঝাই যাচ্ছে । ডাক দাও তো ওকে
— আমি পারব না । আপনিই ডেকে দিন। 
.
.
রেণু খালা অভ্র আর অবন্তী দুজন কেই নিজ হাতে খাইয়ে দিলেন। অভ্র তখন ও জ্বরের ঘোরে ঢুলছে। চোখ বন্ধ করেই বসে বসে খাচ্ছে। অবন্তী সে দিকেই তাকিয়ে আছে । চোখ বন্ধ করে বসে বসে কি করে খাওয়া যায় । সত্যিই আশ্চর্য লোকটা। রেনু খালা খাবার আর মেডিসিন খাইয়ে চলে গেলেন।  
পাশে যে কেউ আছে এ ব্যাপারে অভ্রের কোন ভ্রুক্ষেপই নেই । আবার ঘুমিয়ে পড়ল ।
অবন্তী খাটের এক কোনে জড়সর হয়ে চুপ করে বসে আছে । শুভ্রর কথা বড্ড মনে পড়ছে। জানলা দিয়ে আকাশ দেখছে । আমাবস্যার কালো কুচকুচে আকাশ। আর সাথে ঝি ঝি পোকার মাথা যন্ত্রণাকারী ডাক।

.
.
শুভ্রর সাথে দেখা হয়েছিল কোন এক চৈত্রের দুপুরে। অবন্তী নানা বাড়ি গেছিল ভাই আর মায়ের সাথে । গিয়ে জানতে পারে গ্রামে চৈত্র সংক্রান্তির মেলা বসেছে অবন্তীর ফ্যামিলি বেশ রক্ষণশীল। মেলায় যাওয়া একদম মানা। তবুও মামাত বোন এর সাথে ঠিক করল লুকিয়ে লুকিয়ে যাবে মেলা দেখতে। ভর দুপুরে সবাই নামাজ খাওয়া দাওয়া সেরে ঘুমে ব্যাস্ত। অবন্তী নেকাব এর মতো করে ওড়না টাই পড়ে নিল শুধু চোখ দুটো বের করে রেখে। বেশ ঘুরে বেরিয়ে ফেরার পথেচোখ পড়ল মস্ত বড় টেডি বিয়ার টার দিকে । নাহ এটা ওকে নিতেই হবে । পরে ভাইয়া কে বলে মা কে কোন মত ম্যানেজ করা যাবে ।দোকানে গিয়ে কিনতে চাইলে জানতে পারল এটা শুটিং গেমের প্রাইজ । তিনটে শুট টার্গেট মতো করতে পারলে তবে পাওয়া যাবে প্রাইজ। সুযোগ পাবে পাচ বার। 
প্রথম দু বার মিস হতেই চোখ ছলছল করতে শুরু করল মেয়েটার। আরো তিন বার ট্রাই করল। নাহ একটাও ধারে কাছে যায়নি।। 
চোখ ছলছল করে দাড়িয়ে আছে টেডির সামনে। আর দেখছে কে তিনটে শুট ঠিক মতো দিতে পারে ।। হুট করে সবাই কে সরিয়ে কেউ হিরোর মতো এন্ট্রি নিয়েই পর পর পাচটা শুট ই টার্গেট মতো দিল। অবন্তী হা করে চেয়ে রইল।
বেশ লম্বা,সুদর্শন,স্মার্ট, হালকা শ্যাম বর্ণ, চুল বেশ ছোট করে কাটা। বেশ বড় চুল হলে আরো ভাল লাগত। 
এক হাতে টেডি নিয়ে অন্য হাতে সানগ্লাস টা পড়তে পড়তে এগিয়ে এলো ওর দিকেই
— এই যে পিচ্চি আর মন খারাপ করতে হবে না । নাও । ইশ চোখে যেন সাগর বাসা বেঁধেছে । 
— আমি হাইটে একটু ছোট হলেও আমি কিন্তু পিচ্চি না । আপনি অতিরিক্ত লম্বা বলে এভাবে ভাব নিতে পারেন না ।  
— আচ্ছা যাই হোক নাও এটা। হ্যাপি তো এবার?
— আপনি কোন কারণ ছাড়াই আমাকে কেন দেবেন? 
— কারণ ঐ চোখে জল মানায় না তাই।ঐ চোখে হাসি মানায়
— চোখেও হাসি থাকে?
— হুম থাকে তো । চোখের হাসি ই আসল হাসি। 
— আপনি খুব সুন্দর কথা বলতে পারেন তো । আচ্ছা আপনি এত ভাল শুট কিভাবে করেন?
— ম্যাম পানির নিচেও টার্গেট মতো শুট করার ট্রেনিং আমার আছে। আর এ তো কোন বাচ্চাদের খেলা
— সত্যি?? আপনি কি কোন সুপার হিরোর ক্যারেক্টারে ডামী দেন নাকি?

— আরেহ না । আমি নিজেই তো সুপার হিরো । শান্তিতে সংগ্রামে সমুদ্রে দুর্জয় আনি আমরা। ।।
— মানে?
— দেশ রক্ষা করার সুপার হিরো আমরা ...ম্যাম ।। সাগর শত্রু থেকে দেশ রক্ষা করি । 
— খুব interesting তো 
— হুম খুব interesting
— আমাকে সাগরের গল্প শোনাবেন?
— শুনতে চাইলে অবশ্যই । ধর নাও এটা
— না থাক
— তোমার জন্য ই তো নিলাম পিচ্চি। আমি কি করব এটা?
— নিই তাহলে আচ্ছা? 
— হুম নিবেই তো তোমার ই তো ।
— আপনি কেন দিলেন বলবেন না?
— বলব?
— হু
—নাহ থাক পরে যদি কোন দিন দেখা হয় তখন বলব।
.
যেতে যেতে শুভ্র কি যেন মনে করে আবার পেছনে তাকাল, সামনে দিকে হাটতে হাটতে পেছনে অবন্তীর দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল,
ওহে সর্বনাশী 
পরে বলার ধৈর্যে কুলোলো না । বলছি শোন,
'"" প্রহর শেষে আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস 
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।""""
.
.
"" উফ্ফ সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে"""
অভ্রের এ কথায় শুভ্রের ভ্রম কেটে গেল অবন্তীর।
.
— আপনার আবার কি সর্বনাশ? এটা তো চৈত্র মাস নয়।
— চৈত্র মাসের সাথে সর্বনাশের কি সম্পর্ক? 
— আছে সম্পর্ক
— এই আশ্বিনের সকালে চৈত্রের সর্বনাশ খুজে বেড়ানোর মানে কি? আমি তোমার কথার আগা গোড়া কিচ্ছু বুঝি না বিলিভ মি। 
.
.
.
চলবে.............................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন