অন্তর্দ্বন্দ্ব - পর্ব ৩৪ - সাবরিনা ইমরান - ধারাবাহিক গল্প


রুপিন কানাডা থেকে সবার জন্য গিফট যে এনেছিলো, সেটাই দেয়ার জন্য ভিনাদের বাসায় এসেছে।কিন্তু অন্যদিনের চেয়ে পরিবেশটা খুব হালকা মনে হচ্ছে।বিশেষ করে মুনার আন্তরিকতা চোখে পড়ার মত।বাসায় আসার পরই রুপিনের হাত ধরে ড্রয়িং রুমে নিয়ে এসে বসিয়েছে,যেন কতদিনের চেনা।ভিনা উপর নেমে এসেই জড়িয়ে ধরলো রুপিনকে।হাতে পায়ে বড় হলো মেয়েটা বাচ্চাই রয়ে গেছে।

-কত্ত মিস করেছি তোমাকে জানো?

-জানি দেখেই তো এসে পড়লাম।

-আসলে এমন সময় যে আমি বেশি টাইম ও দিতে পারবো না তোমাকে।

-কেন?

-আমার টেস্ট এক্সাম পরশু থেকে।

-অহহো!আমি জানলে তাহলে আজকে আসতাম না।

-তুমি আবার ফালতু কথা বলা শুরু করলে?আমি কখন বলেছি না আসতে?

-থামো থামো ভিনা!এত অভিযোগ!রুপিন কে শান্ত হয়ে বসতে দাও।

মুনা চায়ের কাপ আর স্ন্যাকস নিয়ে টেবিলে রেখে দিলো।

-আর বলো না মামনি,আন্টি কোনো কথাই শোনে না।

ভিনার মুখে মা ডাক শুনে মুনা এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেলো। আসলেই কি সত্যি শুনছে?নিজেকে সামলে নিলো সে।

-আরে বাবা এখন যখন আসছে,এখন মনে ভরে কথা বলো,আমি সোহেলকে ডেকে নিয়ে আসছি।

মুনা উঠে চলে যাওয়ার পর রুপিন ভিনার হাত ধরে নিজের হাতে নিলো।

-ভিনা?তুই কি সত্যিই তাহলে মুনাকে মেনে নিয়েছিস?

-আমার নিজের কথা জিজ্ঞেস করলে নেইনি।কিন্তু বাবার জন্য আমার মেনে নেয়ার অভিনয় করা লাগছে।

-সোহেলের জন্য?

-হ্যাঁ, বাবার অনেক মানসিক অশান্তি হচ্ছে।আফটার অল মুনা তার ওয়াইফ।হাজার হলেও থাকতে হবে তার সাথে।হুট করে একটা মানুষকে ফেলে দেয়া যায় না।আর বাবা যাই করেছে না কেন আমার জন্য করেছে,আমিই তার প্রায়োরিটি ছিলাম।ভেবে দেখলে বিয়েটা ভুল থাকলেও একটা ঠিক বিষয় সেখানে ছিলো,মুনার তো কখনো বেবি হবে না।এখন বাবা নিজের সেই ভুলও শুধরানোর চেষ্টা করছে,তাই আমারো উচিৎ তার পাশে থাকা।

-ওয়াইজ ডিসিশান।অকারণে অশান্তি করে লাভ নেই।ভুল সবারই হয়।এইযে তুই ডিফরেন্ট এ্যংগেলে ভাবা শিখছিস,দেখিস,জীবন অনেক সহজ হয়ে যাবে।

-আমিও সেটাই চাই।

মুনা সোহেলকে ডেকে আনার পর সবাই মিলে বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিলো।আড্ডার পুরো সময়ই ভিনা মুনার সাথে খুব আন্তরিক ব্যবহার করেছে।রুপিন সবার জন্যই বেশ এক্সপেন্সিভ গিফট এনেছে।মুনাকে ডায়মন্ডের ব্রেসলেট আর সোহেলকে ব্র‍্যান্ডেড ঘড়ি।ভিনার জন্য দামী মোবাইল ও এনেছে।ভিনা মোবাইল পেলেও সেটা তুলে রাখলো আলমারিতে,আপাতত কোনো ডিসট্র‍্যাকশন সে চাচ্ছে না।ভার্সিটিতে উঠলেই নতুন ফোন টা চালাবে।এখন সামান্যতম গাফলতি নিজের স্বপ্ন থেকে তাকে এক ধাক্কায় দূরে ফেলে দিবে।

রাতে ঘুমানোর আগে সোহেল আসলো ভিনার রুমে।এসেই মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু দিলো।

-আজকে তোমাকে দেখে খুব শান্তি লেগেছে মা।অনেক দিন পর খুব শান্তি নিয়ে ঘুমাতে যাচ্ছি।

-শুধু তোমার জন্য করেছি বাবা।আমাকে সত্যি করে বলবে আজকে।কথা দিচ্ছি,এরপর আর কখনো তোমাকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করবো না।

-বলো মা

-তুমি কি এখনো আমার মা কে ভালোবাসো?

-অনেক বেশি।

-আর মুনার সাথে যে সম্পর্ক? 

-যখন বড় হবে তখন বুঝবে, দায়িত্ব আর ভালোবাসায় একটা সুক্ষ্ম পার্থক্য আছে।দায়িত্ব ভালোবাসার অংশ হলেও,অনেক সময় দায়িত্বে ভালোবাসা থাকে না।আমি মুনার সাথে যাই করছি,সেটা ভালোবাসা থেকেই,তোমার প্রতি ভালোবাসা থেকেই।কারণ তুমি তোমার মায়ের ও অংশ।বিয়ে করে যে কষ্ট তোমাকে দিয়েছি,সেখান থেকে বের করে আনার জন্যই আমি মুনার সাথে ভালো ব্যবহার করছি,সময় দিচ্ছি।কারণ একজনকে ভালোবাসা না দিলে,সেও দিবে না।

-লাস্ট কথা,আমাদের মাঝে আর কেউ আসবে না তো বাবা?আমার জায়গা আর কেউ নিবে না তো?

-আমি কি সেই সুযোগ রেখেছি?তুমিই বলো। 

-আমি তোমাকে ভালোবাসি বাবা।আমাকে ক্ষমা করে দাও।আম স্যরি, তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি আমি।

ভিনার আজকে মনে হচ্ছে তার মা ভুল করেনি জীবনে,এতটা বড় ভুল ও করেনি।


যাবির অস্থির হয়ে পায়চারি করছে ছাদে।জেরিন এর কান্ড কারখানা বেশ ঝামেলায় ফেলে দিয়েছে।আজকে ক্লাসে মাইশা নামের এক সিনিয়র এসে খোঁজ করছিলো ওর।দেখা করার পর বললো

-তুমি যাবির?

-হ্যাঁ 

-জেরিন কে নিশ্চয়ই চিনো?

-হ্যাঁ.. 

-আচ্ছা বলো তো,জেরিনের সাথে কি তোমার আসলেই কোনো সম্পর্ক ছিলো?

-না,মোটেও না।ইভেন আমি আরেকজনকে পছন্দ করি।

-জেরিন জানে সেটা?

-না

-ও কিন্তু সাইকোপ্যাথ। তুমি যাওয়ার পর জেরিনের টিউশনি টা আমি করিয়েছিলাম।অনেক যন্ত্রণা করেছিলো। 

-আমি জানি।এর জন্য টিউশনিই ছেড়েছিলাম

-বাই দা ওয়ে,মেয়ে কিন্তু এখানে এসে পড়েছে।বি কেয়ারফুল।সেই মেয়ে আমার হাতে পায়ে ধরে তোমাকে কনভিন্স করতে বলেছে।ভেবে দেখো,কতটা শেমলেস।

-আমি জানি।

-তুমি ওকে জানিয়ে দিও তোমার পছন্দের কথা।সেটাই বেটার হবে।

-আমিও তাই ভেবেছি।

-বেস্ট অফ লাক।

মাইশার কথামত যাবির তাই করেছে।জেরিন কে জানিয়ে দিয়েছে অন্যজনকে পছন্দের কথা।জেরিন দমে তো নাইই,উলটো হুমকি দিয়ে গেছে এই সম্পর্ক ভাঙার।সম্পর্ক যেখানে এখনো নির্দিষ্ট কোনো নামই পায়নি,সেখানে সেটা ভাঙার অবস্থা এসে পড়েছে।কিছু না বুঝতে পেরে যাবির ভিনাকে ফোন দিলো।
.
.
.
চলবে................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন