অন্তর্দ্বন্দ্ব - পর্ব ২৯ - সাবরিনা ইমরান - ধারাবাহিক গল্প


ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা বেশ ভালোভাবেই শেষ হয়েছে ভিনার।আবার নিজের মাঝে আগের মত পোটেনশিয়ালিটি খুঁজে পাচ্ছে।ওয়াসিম না বললেও আরশিকে পরীক্ষায় সাহায্য করত, মেয়েটার প্রতি আলাদা মায়া জন্মে গেছে।এমন না যে আরশি খুব ভালো ব্যবহার করে,আগের মতই আছে।এখনো ক্লাসে ব্যাগ নিচে রাখে ভিনাই,প্রায় দিনই ছুটির সময় দাঁড়িয়ে থাকে আরশির জন্য,কিন্তু খারাপ লাগে না এখন আর।প্রতিদিন কলেজে বলতে গেলে এই মেয়েটার জন্যই যেতে ভালো লাগে।কত শত কান্ড,এই একজন কে থাপ্পড় দিচ্ছে,এই ক্যাপ্টেনের সাথে খোঁচাখুঁচি করছে,সুমনা কে নাজেহাল করছে।সুমনার ও দোষ আছে,মেয়েটার গসিপের মূল বিষয়ই থাকে আরশি,এক্ষেত্রে আরশিকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। সুমনার কথা সিরিয়াসলি নিয়ে নিলে সে আরশির সাথে দূরত্বই বজায় রাখতো।কিন্তু মেয়েটার সাথে থেকে বুঝেছে,সে আসলেই অনেক ভালো।এছাড়া কথা,আবির,সাদ,ওয়াসিমের সাথে আড্ডা তো আছেই।কিন্তু ভিনা এখনো নওমিকে আগের মত মিস করে।নওমি আজকাল ফোন তো করেই না,করলেও ফোন রিসিভ করে না।ফেসবুকে নক দিলেও পাঁচ-ছয়দিন পরপর রিপ্লাই আসে।ছোট থেকে দুজন একসাথে বড় হয়েছে,কীভাবে এত চেঞ্জ হয়ে গেলো ভাবতেও কষ্ট হয়।কিন্তু তবুও ভিনা নিজেকে সামলে নিয়েছে।পড়াশোনা,নতুন ফ্রেন্ড সার্কেল,যাবির...সব মিলিয়ে জীবন টা মোটেও খারাপ যাচ্ছে না।প্রায় দিনই যাবির কলেজে ছুটির সময় আসে।চা খেতে খেতে হেঁটে ভিনার বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দেয়,অথবা কলোনিতে বসে একসাথে সূর্যাস্ত দেখে। যেদিনই যাবির আসে,ভালো ভালো গল্পের বই নিয়ে আসে,এত ভালো কালেকশন ওর কাছে!ভিনার সারাটাদিন পড়াশোনা, কলেজ আর যাবিরের দেয়া বইগুলো পড়েই কেটে যায়।মিড টার্ম পরীক্ষার সময় যখন মুনা সুইসাইড এটেম্পট নিলো,এরপরে নিজের বাবার আচরণ দেখে অনেক কষ্ট হয়েছে নিজেকে সামলাতে।কিন্তু এইসময়টা যাবির ছিলো ছায়ার মত।রাতের পর রাত ভিনার সাথে কথা বলে,ভিনাকে স্বাভাবিক হতে সাহায্য করে
সে।এছাড়াও যাবিরের পরামর্শেই ভিনা একটা টিউশনি নিয়েছে সেভেনের একটা ছেলের।ছেলেটা কলোনিতে থাকে।মাস শেষে যখন চার হাজার টাকা হাতে পায়,তখন অন্যরকম তৃপ্তি কাজ করে। এই টাকার মধ্যে তিন হাজারই ভিনা জমায়,বাকি টাকা রেখে দেয় হাত খরচের জন্য।
 পুরোনো জিনিসপত্র ফেলে রুম হালকা করার জন্য সব বাতিল জিনিস একটা কার্টনে এনে রাখছে ভিনা।তখনি তিনটা সিগারেটের প্যাকেট পেলো।দুটো প্যাকেট ফেলে একটা প্যাকেট যত্নে তুলে রাখলো ড্রয়ারে।এই প্যাকেট ছিলো ভিনার লাস্ট স্মোকিং এর স্মৃতি, যেটা ছিলো যাবিরের সাথে।আরশির ব্যাপারে যেদিন জানলো,সেদিন ছুটির সময় যাবির এসেছিলো।মন মেজাজ খারাপ থাকায় সিগারেট কিনেছিলো অভ্যাসমত।পেছন থেকে যাবির এসে পড়ায় ভিনা প্যাকেটটা লুকালেও যাবিরের চোখ এড়ায়নি।ভিনা ইতস্তত বোধ করে চলে যেতে চাইলে যাবির আটকে ফেলে

'ছাদে চলো,একসাথে স্মোক করি'

হ্যাঁ, সেদিন ভিনা আর যাবির একসাথে ছাদের রেলিং এ বসে ধোয়া উড়িয়ে দুঃখবিলাস করেছে।দুজনের অল্প দিনের এই জীবনে জমে থাকা দীর্ঘশ্বাসগুলোও ভাগাভাগি করে নিয়েছে।

-লাইফে এই প্রথম স্মোক করলাম,তুমি?

-আমার অভ্যাস আছে।

-আজকের পর থেকে এই অভ্যাস আর থাকবে না,বলো থাকবে?
 
ভিনা প্যাকেটে থাকা বাকী সিগারেট গুলো ফেলে দিয়ে বললো 'থাকার দরকার পড়বে না হয়ত'

-ভাবলে কিন্তু আমাদের দুইজনের জীবন অনেক কঠিন,অন্যভাবে চিন্তা করলে এতটাও কঠিন না।অন্তত আমাদের দুজনের কাছেই ছাদে বসে সিগারেট হাতে গল্প করার মানুষ আছে,তাই না?
যাবির কীভাবে যেন সবকিছু সহজ করে দেয়।ভালোবাসার মানুষের অন্যতম দায়িত্ব হওয়া উচিৎ জীবন কে সহজ করে দেয়া,কিন্তু প্রেম নাকি জীবনকে আরো জটিল করে দেয়।তার মানে দুইজনের মাঝে আর যাই হোক প্রেম নেই,কিন্তু এই সম্পর্কের কোনো নামও নেই। নামহীন সম্পর্কগুলোই ভালো,নাম দেয়া সম্পর্কে নামের সাথে দায়িত্ব ও এসে সব ভারী করে দেয়।ভারী করে লাভ কী?নীরবতাই ভালো।


নওমি আর তানভিরের সম্পর্কের প্রায় দশ মাস হয়ে গেছে।প্রথমে সব ঠিক থাকলেও এখন কিছুই ঠিক নেই। তানভিরের ব্যস্ততা কাটেই না,এর উপর নতুন ফ্রেন্ড সার্কেল মেইন্টেইন করতে গিয়ে,নওমির রেজাল্ট বেশ খারাপই হয়ে গেছে।ইয়ার ফাইনালে সব সাব্জেক্ট এ পাশ আসবে নাকি,এটা নিয়েও সন্দেহ কাজ করছে।সবচেয়ে খারাপ ঘটনা হলো নওমির মা প্রথম দিকে খুব ছাড় দিলেও রেজাল্ট দেখার পর নজরদারি বাড়িয়ে দিয়েছে,যেটা নওমির বিরক্তি আর দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে গেছে।এ বিষয়ে প্রায় প্রতিদিনই বাসায় ঝগড়া লাগে।আর আজকাল নওমির বাবাও বাসায় তেমন একটা থাকে না।সেটা নিয়েও সমস্যা হচ্ছে।এ সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিলো তানভিরের,কিন্তু ব্যস্ততার মাঝে ফোন দিলে উলটো আরো কয়েক দফা কথা শুনতে হয়।আর কিছুদিন দেখার পর সম্পর্কের বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিবে নওমি।
.
.
.
চলবে................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন