অন্তর্দ্বন্দ্ব - পর্ব ৩০ - সাবরিনা ইমরান - ধারাবাহিক গল্প


-ভিনা!এক্ষনি আমার বাসায় আসো।

-কেন আন্টি?কী হয়েছে?

-আসতে বলেছি,শুধু আসবে।সামনা সামনি কথা বলবো।

নওমির নাম্বার থেকে ফোন আসায় অনেক খুশি হয়েছিলো ভিনা।কিন্তু হাফসা আন্টির এত রাফ বিহেভ দেখে বেশ কষ্টই পেয়েছে,তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছে।ঘটনা পুরোটা জানার জন্য দেরী না করেই বাসা থেকে মুনাকে বলে বেড়িয়ে গেলো।অনেক দিন পর গাড়ি নিয়ে বের হলো,বাধ্য হয়েই।প্রায় পৌনে এক ঘন্টা পর যখন নওমিদের বাসায় পৌছালো,তখন বিকেল।কলিং বাজানোর সাথে সাথেই হাফসা দরজা খুলে ফেললো।পুরো মুখে ক্রোধ,দরজা ধরাম করে লাগিয়ে ভিনাকে টেনে নিয়ে সে বেডরুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।ভিনা কিছুই বুঝতে পারছে না।

-আন্টি?কী হয়েছে?

-আমার মেয়ের লাইফ নিয়ে এমন কেন করলে ভিনা?কে তোমাকে অধিকার দিয়েছে?

-মানে?আমি কি করেছি?

-আমার সামনে অভিনয় ছাড়ো।আমি সব জেনে গিয়েছি,কোনো রাখ ঢাক না করে এখন সব সত্যি কথা বলবে।নাহলে কিন্তু এর ফল খারাপ হবে। 

-আন্টি কি হয়েছে খুলে বলবেন তো?আমাকে ব্লেম দিয়ে যাচ্ছেন কেন?আমি কী করেছি?

-তুমি তানভির কে চিনো?

ভিনা বড় রকমের ধাক্কা খেলো।সে আন্দাজ করতে পারছে যে কী হয়েছে।কিন্তু এই এক বছরে নওমি কোনো কথাই শেয়ার করেনি ওর সাথে,কথাই হয়নি ঠিকমত।

-হ্যাঁ,চিনি।

-তুমি তানভির আর নওমির পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলে?

-নওমির সাথে আগেই তানভিরর ভাইয়ার দেখা হয়েছিলো।

-ভালো কথা,নিজে প্রেম করলে করো,আমার মেয়েকে এখানে জড়ালে কেন?

ভিনা আকাশ থেকে পড়লো। কিসের প্রেম কিসের কী।তানভিরের সাথে তো যাবিরেরই ঠিকমত যোগাযোগ নেই।নওমির মত তানভির ও যাবিরের সাথে একটা ডিস্ট্যান্স মেইনটেইন করা শুরু করেছিলো।

-আপনি এসব কী বলছেন?

-আমি কিন্তু আগেই বলেছি,আমি সব জানি।এখন সব সত্যিটা জানতে চাই।তুমি ঐ ছেলের সাথে দেখা করার সময় নওমিকে কেন নিয়ে যেতে?একা গেলে যদি এতই সমস্যা হয়,প্রেম করতে গিয়েছো কেন?

-আমি কোনো প্রেম করিনি।তানভির ভাইয়ার সাথে আমার পরিচয় হয়েছে হস্পিটালে।এরপর টুকটাক কথা হত।প্রায় এক বছর হতে চলেছে,উনার সাথে আমার কথা হয় না।আর এটা সত্যি যে আমি তানভির ভাইয়ার নাম্বার নওমিকে দিয়েছিলাম,কারণ নওমি জিজ্ঞেস করেছিলো তার ব্যাপারে। 

-গায়ে হাত তুলতে বাধ্য করো না ভিনা।আমার মেয়ের নামে অযথাই মিথ্যা অপবাদ লাগাবা না।নিজে দোষ করে আমার মেয়ের ঘাড়ে দোষ চাপাও।এই তোমাদের বন্ধুত্ব!

-আন্টি আপনি সত্যি বলতে বলেছেন,আমি সত্যিটাই বলেছি।আমি নাম্বার দিয়েছিলাম,এই ভুল আমি স্বীকার করছি,কিন্তু এর বেশি আমি কিছুই জানিনা।নওমি তো গত এক বছর আমার সাথে যোগাযোগ ই রাখেনি ঠিকমত।

-এত মিথ্যা বলতে পারো ভিনা!আমার মেয়েকে দিয়ে নিজের জিনিসপত্র ঐ ছেলের কাছে দেয়া নেয়া করো,দিনের পর দিন ওকে নিয়ে বের হয়েছো,এখন বলছো যোগাযোগ ই ছিলো না।সব কিছুর একটা লিমিট থাকে।

-নওমিকে ডাকুন,আমি ওর কাছেই সত্যিটা জানতে চাই।

-আমার মেয়েকে এসব বাজে ব্যাপারে আনবা না।এমনিই নিজে প্রেম করতে গিয়ে আমার মেয়ের ক্যারিয়ার নষ্ট করে দিয়েছো। কলেজ থেকে ওকে সেকেন্ড ইয়ারে প্রমোশন দিচ্ছে না।আবার ওকে ডাকো কোন সাহসে!

-আমি এসব কিছুই করিনি আন্টি।আপনি আমাকে এভাবে মিথ্যা ব্লেম দিতে পারেন না।

-তোমার স্বভাব আমার জানা আছে ভিনা।ক্লাসের টিচারের সাথে কী করে বেড়াও সবই জানি। মকবুল কেও নিশ্চয়ই তুমিই ফাঁসিয়েছো।এখন এসব ঘিরিঙ্গি আমার মেয়ের সাথে করছো।আর কোনো মেয়ের কি মা মরে না?তাই বলে নষ্ট হয়ে যেতে হবে?

-থামুন আন্টি!আপনি বাড়াবাড়ি করছেন।

-বেয়াদব মেয়ে আমাকে চোখ দেখায়!তোমার বাসায় কম্পলিন করা দরকার ছিলো আমার।কিন্তু তোমার বাবা তো সেকেন্ড বিয়ে করে আর কোনো খবরই নেয়না মেয়ের।আজকের পর আমার মেয়ের আশে পাশে যেন তোমাকে না দেখি।

ভিনা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো।যে নওমিকে এত ভালোবাসত সে,সেই নওমিই কিনা আজকে ফাঁসালো ওকে।

পাশের রুম সব শুনেছে নওমি।প্রচন্ড অনুশোচনা কাজ করছে ওর মধ্যে।ইয়ার ফাইনাল রেজাল্ট খারাপ হওয়ার পাশাপাশি তানভিরের ব্যস্ততার কারণে ব্রেক আপের সিদ্ধান্ত নেয়।সব গিফট প্যাক করে ফেরত দিতে যায় নওমি।কিন্তু কোথা থেকে থেকে জানি নওমির মা এসে পড়ে।ততক্ষণে তানভির চলে গিয়েছিলো।কিছু বুঝতে না পেরে ভিনার ঘাড়েই দোষ চাপাতে হয় তাকে।এরপরেই খুরশিদ কিছু না শুনে ভিনাকে ফোন দিয়ে তুলকালাম কান্ড করে ফেলে।এতদিন ধরে খুরশিদ নওমির সব আচরণ পর্যবেক্ষণ করছিলো। ড্রাইভারকে আগেই বলে রেখেছিলো,এবার নওমি বেরোলে যেন তাকে ফোন দেয়।সবকিছু নিয়ে নওমির জীবন একদিনের মাঝে পুরো বদলে গেলো। সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগছে ভিনার জন্য।


বাসায় এসেই রুম তছনছ করে ফেলে ভিনা।প্রচন্ড রাগে পুরো শরীর কাঁপছে।সবার আগে নওমির দেয়া সবকিছু ফেলে দেয়।কান্না করে ঘুমিয়ে পড়ার পর মধ্য রাতে ঘুম ভাঙে ভিনার।ঘড়িতে পৌনে তিনটা বাজে।আজকে যাবিরের জন্মদিন।ইচ্ছা ছিলো ঠিক বারোটায় উইশ করার,পারলো না।পাশে তাকিয়ে দেখে যাবিরের জন্য আনা গিফট কয়েক টুকরো হয়ে মাটিতে পড়ে আছে।হাটু ধরে কিছুক্ষণ বসে থাকলো।পুরো ক্লাসে দ্বিতীয় হয়ে সেকেন্ড ইয়ারে উঠেছে সে।যাবির সে উপলক্ষে অনেক সুন্দর একটা ডায়রি গিফট করেছে ভিনাকে।ভিনার জন্মদিনেও অনেক বড় উপহার দিয়েছিলো যাবির।এবার ভিনার করার পালা ছিলো,কিন্তু পারলো না।দীর্ঘশ্বাস ফেলে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো যাবিরের মেসেজ। কালকে দেখা করতে বলেছে। ভিনা মেসেজ দেখে রেখে দিলো,উইশ করলো না।বারোটায় উইশ করতে না পেরে মন টাই খারাপ হয়ে গেছে।দুপুরের দিকে খালি হাতেই যাবিরের সাথে দেখা করতে গেলো।প্রথমে ভেবেছিলো কোনো রেস্টুরেন্টের কথা বলবে,কিন্তু যাবির নিয়ে গেলো ওদের ছাদে।

-শুভ জন্মদিন।তোমাকে দেয়ার মত কোনো গিফট আমার কাছে নেই যাবির। আম স্যরি।

-কিছু তো হয়েছে বুঝতে পারছি।কিন্তু কী হয়েছে এখনি জানতে চাবো না, শুধু জন্মদিনের গিফট চাবো।

-গিফট?

-হ্যাঁ, তুমিই পারবে।

-কীভাবে?

-আমার সাথে সারাটাজীবন কাটাবে তুমি?ঠিক এভাবেই?

ভিনা চুপ করে থাকলো।কিন্তু উত্তর দিতে বেশি দেরী করলো না।
.
.
.
চলবে...............................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন