রুমের দরজায় অবন্তীর হাত থেকে চায়ের কাপ গুলো পড়ে যাবার শব্দে চমকে উঠে পেছন ফিরে তাকায় ওরা দুইজন।
.
.
বাবা আর রেণু খালা তাকাতেই অবন্তী মিষ্টি একটা হাসি দিল।
— দেখুন না বাবা আসতেই দরজায় ধাক্কা খেয়ে...আমি এক্ষুনি পরিস্কার করে দিচ্ছি।
.
রেণু খালা আর বাবা মিলে অনেক বার বিভিন্ন ভাবে জিজ্ঞেস করে জানতে চাইলেন অবন্তী ঠিক কি শুনেছে কত টুকু শুনেছে। কিন্তু সে কিছুতেই বুঝতে দিল না সে কিছু শুনেছে। সে এটাই বলল, সন্ধ্যা বেলা উনাদের জন্য চা আনতে নিয়ে হুট করে দরজায় ধাক্কা লেগে পড়ে গেছে ওসব । সে এই মাত্র ই রুমে এসেছে।
.
.
রুমে এসে বালিশ চাপা দিয়ে প্রায় অনেক্ষন কাদে মেয়েটা। সে কেন কাঁদছে তার আসল কারণ সে নিজেও জানে না । এ কথা শুনে তো তার খুশি হবার কথা ছিল । কিন্তু কেন এত কান্না আসছে? সে তো শুরু থেকেই এটাই চেয়েছিল "ডিভোর্স" । এখন তো এ বাড়ির সবাই ও তাই চাইছে। সত্যি রেণু খালা ঠিক ধরেছে ডিভোর্স হলেই সব সমস্যার সমাধান । কিন্ত অবন্তীর অবচেতন মন চায় না এ সমাধান। কি দরকার এ সমাধানের? চলছে তো ভালই চলুক না এভাবেই দুজনে।। কিন্তু তারা হুট করে কেন এ ডিসিশন নিল? আর অবনী? কই ও তো কোন দিন ও বলে নি অভ্র'র সাথে ওর বিয়ের কথা চলছে। ইভেন ওর যে বিয়ের কথা চলছে তা ই তো বাড়ির কেউ জানত না ।
অবন্তীদের জয়েন ফ্যামিলি। অবশ্যই সবাই সবার সব কথা জানত। এ বিয়ে কবে ঠিক হয়ে ছিল?? অবনী অবন্তীর চেয়ে সব দিক দিয়ে কয়েকগুন এগিয়ে।তাই হয়ত এখন আবার ডিভোর্স দিয়ে ওকেই? হয়ত অবন্তী সামলাতে পারছে না অভ্র কে ঠিক মতো । অবনী সব দিক দিয়ে এগিয়ে তাই হয়ত তাকে এবার আনা হচ্ছে।
এরা টাকা দিয়ে এখন সব কিছুকে খেলা মনে করছে। অভ্র'র জন্য একেক বার একেক খেলনা এনে দিচ্ছে তারা।
আর চাচা ? সেও এত স্বার্থপর? যখন অভ্র বেশি অসুস্থ ছিল মানসিক ভাবে তখন সদ্য বাবা , মা হারানো তাকে এগিয়ে দিল। এখন যখন সুস্থ হয়ে উঠল আবার নিজের মেয়েকে?
কিন্ত ওকে সুস্থ করতে করতে সে নিজেই অভ্র'র প্রতি দুর্বল হয়ে পেরেছে।
.
.
এসব ভেবে অবন্তী ঠিক কতক্ষণ কাদে তা সে নিজেও জানে না। হ্যা সে শুধু এটুকুই শুনেছে অবনীর সাথে অভ্রর বিয়েটা প্রথমে ঠিক হয়েছিল , এখন তারা আবার ওকেই বৌ হিসেবে চাইছে। অবন্তীর সাথে ডিভোর্স করাতে চাইছে।
.
কিন্তু অভ্র ও কি চায়?
সারাদিন ভালবাসি ভালোবাসি বলা মানুষ টাও তাকে আর চায় না? যদিও মুক্তি দেবে কথা দিয়েছিল ।সত্যি বলতে কেন যেন মুক্তি আর নিতে ইচ্ছে করে না তার ।
.
শুভ্র আর অভ্র নাম দুটো যে তার জীবনে দিন কে দিন ব্যাস্তানুপাতিক হয়ে উঠেছে তা অবন্তী বেশ কিছু দিন ধরেই বুঝতে পারছে। সে ও গুরুত্ব দিতে শুরু করেছিল প্রণয় এর চেয়ে পরিণয় কে। আর এটাই উচিত। জন্ম, মৃত্যু,বিয়ে তিনটে জিনিস ই তকদীরের বিষয়। হয়ত শুভ্র তার তকদীরে ছিলই না । অভ্র ই ছিল । অভ্র'র সাথে তার সম্পর্ক টা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত। শুভ্র'র সাথে হয়ত শুধু সাময়িক মোহ ছিল তার কাজকর্ম প্রফেশন এসব ই অবন্তী কে বেশি টানত। ও হয়ত মোহ ছাড়া আর কিছুই নয় । তাছাড়া ধীরে ধীরে মনের ভেতর থেকে ও আবছা হয়ে যাচ্ছে কেন? আর অভ্র স্পষ্ট হয়ে উঠছে কেন,?কিন্তু অভ্র সে একটা মায়া ,সে যেন তার জীবনের প্রতিটা মুহুর্ত পূর্ণ করার কেউ। ধীরে ধীরে মায়ায়,পরিপূর্ণতায় পরিনত হয়ে উঠেছে সে। এমন টাই মনে মনে ভেবে নিয়েছিল অবন্তী বেশ কিছু দিন ধরে।
.
তাছাড়া তিন কবুল বলার সাথে সাথেই সৃষ্টিকর্তা কবুল বলা মানুষ দুটোর মাঝে অদ্ভুত কিছু অনুভূতি হয়ত তৈরি করে দেন।
কিন্তু এটা সত্যি যে শুভ্র'র ভুল টা ভাঙানো উচিত।
.
কিন্তু এর মধ্যে আবার এসব কি হতে যাচ্ছে? অভ্র ডিভোর্স দিয়ে দিলে অবন্তী সত্যিই জানে না সে কোথায় যাবে।
.
.
তবে সে অভ্র কে কোন দিন ও জোর করবে না তাকে কাছে রাখতে। অভ্র যা চায় তাই হবে । অবনী ও তার ছোট বোন । ছোট থেকে এক সাথে বড় হয়েছে। কোলে করে নিয়েও বহুদিন ঘুরেছে। আপু আপু বলে বহুবার ডেকেছে। এক রুমেই থেকেছে সেই ছোট থেকে বিয়ের আগ পর্যন্ত ।
.
.
কেন তার সাথেই বার বার এমন হচ্ছে? প্রথমে শুভ্র তারপর হঠাত ই অভ্র এসে সব কিছু জাদুর মতো পাল্টে দিল, ভুলিয়ে দিল। অভ্র সত্যি জাদুকর। কিন্তু তার সেই জাদুকর ও....
.
অবন্তী আবার এসব ভেবে শুয়ে শুয়ে বালিশে মুখ গুজে বাচ্চাদের মতো শব্দ করে কাদতে শুরু করে ।
.
.
হঠাত ই অভ্র'র পায়ের আওয়াজ পায় সে। চোখ মুখ মুছে স্বাভাবিক হয়ে উঠে বসতেই অভ্র হাসি মুখে ওর দিকে অর্ধেক খাওয়া আপেল এগিয়ে দেয়। অবন্তী মুচকি হেসে তা নিয়েই খেতে শুরু করে দেয়।
.
— কান্নাকাটি করেছ নাকি?
— হুম করব না কেন?
— কেন কি হয়েছে?
— আমি একটু ওমন কথা বলেছি বলে আপনি এভাবে অফিস চলে গেলেন। সারাদিন খোজ খবর নেই। আমার বুঝি খারাপ লাগে না?
— ও এই কথা?? আরে ধুর। হ্যা তখন রাগ হয়েছিল। পরে অন্য কাজে ব্যাস্ত ছিলাম সারাদিন। তাই বলে তুমি কান্নাকাটি করবে? নাকি অন্য কোন কারনে কাদছ সত্যি করে বলো ।
— বললাম তো এই জন্য ই। তো অফিস কেমন হলো?
— ওসব পরে শুনো। আগে মাহমুদ এর একটা ব্যাবস্থা করতে হবে । খুব বাড় বেড়েছে ।
— ছোট দুলাভাই?
— হুম।।
— ভাইয়া বলে ডাকতে পারেন না? কত বড় উনি আপনার?
— চুপ করো তোহ।
.
.
অভ্র রুম থেকে বেরিয়ে সোজা নিচে চলে গেল রেনু খালার রুমে। রেণু খালা ওর ই অপেক্ষা করছিল। অভ্র রেণু খালাকে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরল,
— থ্যাংক ইউ সো মাচ রেণু খালা। প্ল্যান কাজ করেছে।
— প্ল্যান কাজ করেছে না ছাই। ভাইজান তো সব ঘেটে দিতে শুরু করেছিল।আমি শুধু অবনীর কথা বলছিলাম । হুট করে উনি কথায় কথায় বলে ফেলেছন তোমার জন্যই ঐ দুর্ঘটনা টা ..তাও আমি তনু আপার কথা শুরু করে কথা কাটিয়ে নিয়েছি। কারণ তোমার বাবা তনু আপার কথা বললে আর কথা বাড়াতে চায় না ।
— কিহ?? অবন্তী এসব ও শুনেছে???
— সেটাই তো বার বার জিজ্ঞেস করে জানতে চেয়েছি ঠিক কি কি শুনেছে । কিন্তু তোমার বৌ ও তোমার তুলনায় কম নয় । ও কিচ্ছু স্বীকার করলই না । কিন্তু আমার মনে হয় যেটুকু শোনাতে চেয়েছি সেটুকু ই শুনেছে। ঐ ব্যাপার শুনলে রিয়াক্ট আরও বেশি করত। এভাবে চুপচাপ থাকত না ।
— হুম ঠিক ই। বেচারি কান্নাকাটি করে চোখ মুখ ফুলিয়ে তুলেছে।
— যাই বলো অভ্রনীল এটা কিন্তু ঠিক হয় নি।আমার ব্যাপারটাতে কিন্তু মোটেও সায় নেই । নেহাত তোমার মন খারাপ ছিল আর কেদে কেটে আমার কাছে আবদার করেছ বলে... মেয়েটা এমনি অনেক কষ্টের মধ্যে দিয়ে গেছে । আবার এসব বলে..
.
— তুমি শুধু ওর কষ্ট দেখতে পাচ্ছ তাই না? দুদিন ধরে এসে এখন অবন্তী তোমার বেশি আপন? না আমি? হ্যা? ও যে সকাল সকাল আমাকে অপমান করল? আমাকে নিজের প্রেমিকের সাথে তুলনা করে তাই না? বুঝুক মজা এখন নিজের চাচাত বোনের সাথে নিজে তুলনা করুক বসে বসে । সকাল বেলা আমাকে কাদিয়ে ছেড়েছে একদম।
.
— আমার কাছে তোমরা দুজন ই সমান বাবা। অবন্তী অনেক ভাল একটা মেয়ে। অভ্রনীল এতে কিন্তু একটা সুবিধে যে হয়েছে তা অস্বীকার করা যায় না । অবন্তী মনে হয় বুঝতে পেরেছে ওর মন আসলে এখন কি চায়। তুমি যখন হসপিটালে ছিলে তখন ই আমি বুঝতে পেরেছি ও তোমার প্রতি অনেক বেশি দুর্বল হয়ে পড়েছে।
.
— হুম আমি তো জানি সেটা। সেজন্য ই তো তোমাকে ওভাবে খুচিয়ে বলতে বলেছি। যেন একটু আঘাত পেয়ে বোঝে অন্তত নিজের মনের কথা ।
— কিন্তু তুমি যে মেয়েটার কাছে আমাকে ভিলেন বানিয়ে দিলে এটা কি ঠিক হলো বাবা? হুম? আমি কত ভালবাসি মেয়েটা কে
.
— আমিও যে কত ভালবাসি মেয়েটাকে।
.
— হুম।কিন্তু এখন তোমার বাবা যদি অবন্তীর চাচার সাথে আবার কথা বলে? তুমি তো জানো ই ওরা কত লোভী। ওরা কিন্ত রাজি হয়ে যাবে।
— রেণু খালা তুমি অত ভেব না তো । তোমাকে যেটুকু কাজ দিয়েছিলাম করে দিয়েছ তো? এখন বাকি টুকু আমাকে সামলাতে দাও। বাবাকে টেনশনে রাখার আমি নতুন কিছু পেয়েছি। অর্নির ব্যাপারে। এদিকে আর অত মনোযোগ দেবার সময় পাবে না । আর কথা উঠলে আমিও না করে দেব ।
.
— কিন্তু অভ্রনীল আমার টেনশন তোমাকে নিয়ে হয়। অর্নির চালচলন কথা বার্তা মোটেই ভালো ঠেকে না । সেদিন ডায়নিং এও কিসব বলল । তুমি নিজেকে একটু সাবধানে রেখো।
.
— হুম। ওর ব্যাবস্থা ই করছি আমি। খুব বাড় বেড়েছে দুটো।যাই হোক, থ্যাংক ইউ এগেইন।
.
অভ্র রেণু খালার দুগালে দুটো চুমু খেয়ে চলে গেল ।
ছেলের মুখে হাসি দেখে রেনু খালা ও স্বস্তি পায় । ছেলের মুখ ভার আর যাই হোক কোন মা ই সহ্য করতে পারে না । ছেলের মুখে হাসি ফোটাতে এটুকু খারাপ হওয়ার ভাব ধরাই যায় । অবন্তী ঠিক বুঝবে একদিন রেণু খালা এমন কেন বলেছিল । এসব খোচা না শুনলে ও হয়ত কোন দিন উপলব্ধি ই করতে পারত না নিজের মন কে।
তনু আপার সাথে যা হয়েছিল , যে ই করেছিল তা অন্যায়। কিন্তু সে চায় না অভ্রনীলের সাথেও কোন অন্যায় হোক। সে হতে দেবে না কোন অন্যায় অভ্র'র সাথে ।সে তার তনু আপাকে কথা দিয়েছে ওকে আগলে রাখবে । এ পৃথিবীতে আপন কেউ যদি থেকে থাকে তা ছিল তনু আপা আর তার ছোট্ট অভ্রনীল।সাথে এখন অবন্তী ও ধীরে ধীরে ।
.
মেয়ে মানেই মা, মেয়ে মানেই মমতাময়ী । ছোট থেকে মায়ের মতো ই বেড়ে তুলেছে অভ্রকে তনু আপার সাথে সাথে ।
.
.
ডিনার শেষে অভ্র রুমে একগাদা ফাইল নিয়ে বসেছে। সাথে এত এত কালার পেন, হাইলাইটার, ল্যাপটপ, ফোন। পুরো বিছানা এসব ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে।
.
এসব কান্ড দেখে অবন্তীর শরীর জ্বলে জ্বলে উঠছে। এত নাটক এ ছেলে কিভাবে করতে পারে? সারাদিন অফিস করেও হয় নি। পুরো অফিস বাড়ি নিয়ে এসেছে শুধু মাত্র নিজেকে কর্মঠ প্রমাণ করতে । বিছানায় আর একজন মানুষ বসার মতো কোন জায়গা নেই । মেঝেতেও ফেলে রেখেছে কয়েকটা ফাইল । রুমের যা ইচ্ছে তা অবস্থা।
.
অবন্তী সোফায় বসে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছে কখন অভ্র খেয়াল ই করে নি। সব কাজ শেষ করে উঠে ঘড়িতে দেখে রাত সাড়ে তিনটে বেজে গেছে । সব কিছু গুছিয়ে রেখে অবন্তীকে কোলে তুলে নিয়ে নিজেই বিছানায় শুইয়ে দিল, চাদর গায়ে জড়িয়ে দিল । মেয়েটার ঘুম এত ভারী কোন হুশ ই পাচ্ছে না । অথচ এই মেয়ে বিয়ের পর প্রথম প্রথম ভয় পেয়ে সারারাত কত সজাগ ভাবে ঘুমোনোর চেষ্টা করত। চুলে ঘাড়ে একটু আলতো করে হত দিলেও জেগে গিয়ে কতই না রেগে যেত।
অভ্র নিজেই এসব ভাবে আর প্রশান্তির হাসি হাসে।
.
.
বাবার রুমে গিয়ে ইচ্ছে মতো দরজা ধাক্কাচ্ছে অভ্র । হাতে কয়েকটা ফাইল আর ল্যাপটপ ।
.
— অভ্রনীল ভোর পৌনে চারটে বাজে। এত রাতে?
.
অভ্র বিছানায় ফাইল তিনটে ছুড়ে মারল।
— তোমার আদরের মাহমুদ কি করেছে নিজে চোখেই দেখো। তোমার কাছে তো মেয়ে জামাই ই সব চেয়ে আপন তাই না? ওদের হাতে সব ছেড়ে দিয়ে নিজে নিশ্চিন্ত হয়েছ তাই না?
.
.
সত্যিই অভ্র এক দিনেই একটা সেক্টরেই তিনটে জায়গায় হিসেবের গড়মিল ধরে ফেলেছে। সব গুলো সেক্টরে না জানি কি অবস্থা হয়ে আছে। আজমির সাহেব নিজেও হতভম্ব হয়ে যায় । নিজের মেয়ে জামাই এর ওপর এতটা বিশ্বাস করে সব কিছু ছেড়ে দিয়ে নিজে এতটা নিশ্চিত হওয়াটা সত্যি ঠিক হয় নি।
তবে এটা ভেবে খুশি হন ছেলে নিজের দায়িত্ব নিজে বুঝে নিতে শুরু করেছে ।
.
অভ্র নিজে থেকেই বলে সে ই এখন থেকে সব সেক্টর সামাল দিতে চায় । কন্সট্রাকশন সেক্টর, গার্মেনটস আর বায়ীং সেক্টর ও।
অর্নি যেন নিজের দিক নিজে খুজে নেয়। মাহমুদ কে পুলিশে ধরিয়ে দেবার কথা বলে অভ্র।
.
অভ্র কাজের ব্যাপারে এতটা কড়া হবে তা আজমির সাহেব এর ধারণার বাহিরে। কিন্তু মেয়ের দিক ও ভাবতে হবে । তিনি ওকে বুঝিয়ে বললেন,
— অভ্রনীল, তুমি তোমার বোন কে ভালোবাস না বাবা?
— ও আমাকে ভালোবাসে বুঝি? আজ অফিসে আমাকে কোন কাজ ঠিক মতো বুঝিয়ে দিতে চাইছিল না ওরা।
— ও ঠিক ই ভালোবাসে। ওর স্বভাব ই ওমন একটু খিটখিটে ছোট থেকেই । তোমার মায়ের মতো ।
— আমার মা খিটখিটে ছিল কবে থেকে?
— তুমি ক'দিন দেখেছ তোমার মাকে? যাই হোক, মাহমুদ কে পুলিশে দিলে তোমার বোনের ভবিষ্যত কি হবে একবার ভেবে দেখো। বাচ্চা দুটোর ভবিষ্যত?আর আমাদের ফ্যামিলি রেপুটেশন? হুম? তুমি কি চাও তোমার এই ডিসিশনের জন্য তোমার বোনের সংসারে অশান্তি আসুক? ভাই না তুমি ওর? ভাই ছোট হোক কিংবা বড় ,বোনের প্রতি কিন্তু তার আলাদা দায়িত্ব থাকে। ভাই বোন মিলেমিশে থাকতে হয় বাবা ।
— তাহলে তুমি কি চাচ্ছ?
— কাল অফিসে ওদের ডাকি । তারপর দেখা যাবে ।
.
.
পরের দিন অফিসে অর্নি আর মাহমুদ নিজেদের ফল্ট মেনে নিয়ে মাফ চাইতে বাধ্য হলো ।আজমির সাহেব এই ডিসিশন জানিয়ে দিলেন,
এখন থেকে অভ্র ই সব দিক সামলাবে। অভ্র কে হেল্প এর জন্য অর্নি বা মাহমুদ নয় অন্য এসিস্ট্যান্ট থাকবে। মাহমুদ আর অর্নি তাদের পোস্ট অনুযায়ী প্রতি মাসে বেতন পাবে। এর বেশি এক্সট্রা সুবিধা তারা পাবে না ।
.
.
অভ্র এসব পায়ের ওপর পা তুলে পা নাচিয়ে নাচিয়ে বসে বসে দেখছিল আর মজা নিচ্ছিল।বাবা চলে যাবার পর উঠে গিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে হেসে বলল,
— চোরের দশ দিন গেরস্তের এক দিন।এই আপু তুই কি যেন বলেছিলি আমাকে এসবের দায়িত্ব দিলে বাদরের গলায় মুক্তো পড়ানো হবে? এখন দ্যাখ কে বাদর ছিল । এত দিন কার গলায় মুক্তোর মালা ছিল? ও হ্যা আরো কি যেন বলেছিলি আমার জেলে থাকা উচিত ছিল? তাহলে শোন জেলে তোদের ও থাকা উচিত ছিল । আমি দয়া করেছি বলে এখানে দাড়িয়ে আছিস তোরা।
.
কথা গুলো বলে যেতে যেতে আবার ফিরে এসে বলে,
.
— সামনের মাসের সাত তারিখে আমার থেকে বেতনের চেক সাইন করে নিয়ে যাস। সাত তারিখের আগে বেতন দেয়া সম্ভব না । অর্থি অর্কর খরচ নিয়ে ভাবিস না ও আমি পাঠিয়ে দেব এক তারিখের মধ্যেই। তোরা আমাকে পছন্দ না করলেও, ওদের আদর করতে না দিলেও আমি ওদের খুব ভালবাসি।
.
.
— অর্নি তোমার কি মনে হয় না তোমার ভাই একটু বেশিই উড়ছে? (মাহমুদ)
— উড়তে দাও । মনে রেখো পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে।
.
.
.
চলবে.............................