পরিণয়ে পরিপূরক - পর্ব ২০ - স্পৃহা নূর - ধারাবাহিক গল্প


এখানেও পিছু ছাড়ে নি শুভ্র ! অভ্র যদি বুঝতে পারে ওটা শুভ্র, কি হবে এই পার্টির পরিস্থিতি তা অবন্তী বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে।
.
অভ্র আজ হয়ত মেরেই ফেলবে শুভ্রকে মারতে মারতে । আর তাছাড়া অবন্তী জানে বাবার মতো অভ্র'র কাছেও লাইসেন্স করা পিস্তল থাকে সব সময় আত্নরক্ষার জন্য । আর এটা এদের ফ্যামিলির ট্রেডিশন। শুটিং ট্রেনিং ও নেয়া আছে। রাগের বশে শুট করে দিলে সব শেষ । আর তাছাড়া অভ্র'র গার্ড রাই যথেষ্ট অভ্র'র এক ইশারার জন্য । বাবা ইদানীং অভ্রকে দুজন স্পেশাল গার্ড দিয়ে রেখেছে । যদিও অভ্র নিজেও বিরক্ত হয় এতে,সে নিজেও জানে না এত সিকিউরিটি কেন দিয়ে রেখেছে বাবা। 
.
শুভ্র সে ও বা কম কি? ও তো আরো স্পেশাল ট্রেইনড । ও নিজেও ওর কাছে লাইসেন্স করা পার্সনাল পিস্তল রাখে যখন ডিউটি থাকে না । ওর নাকি ওয়েপুন ছাড়া চলতে ভালো লাগে না। ডিউটি তে সব সময় রেখে রেখে অভ্যাস । তাই ছুটি তে পার্সনাল টা টাই রাখে ।তাছাড়া ওর শুট করার শখ খুব বেশিই । অকারণে মাঝে মাঝে পাখি শুট করত। অবন্তী কে তার টার্গেট কত টা পারফেক্ট দেখানোর জন্য তখন অবন্তী মজা পেলেও আজ একটু ও মজা লাগছে না । এদের দুজনের কে যে কি করে বসবে আল্লাহ্ মালুম। । 
.
.
কিছু একটা করতেই হবে । । 
.
.
স্পিচ শেষে স্টেজ থেকে নামতেই অবন্তী জানালো, সে বাড়ি যেতে চায় । শরীর খারাপ করছে । 
.
শরীর খারাপ শুনে অভ্র ব্যাস্ত হয়ে পড়ল অবন্তীর প্রতি। তাড়াহুড়া করে ওকে নিয়ে বাড়ি ফিরল। 
.
ফেরার পর থেকে অবন্তী উপুড় হয়ে শুয়ে আছে আর শুভ্রর বলা কথা গুলো আবার ভাবছে। । অভ্র পাশে কাচুমাচু হয়ে বসে আছে । ডক্টর এর দরকার নেই অবন্তী সাফ সাফ বলে দিয়েছে ।  
.
— আচ্ছা তুমি কি আমার ওপর রাগ করে ডক্টর দেখাতে চাইছ না? কি হয়েছে তোমার বলো তো?
.
কথাটা বলতে বলতে অভ্র ওর হাত ধরতে চাইলে অবন্তী ছাড়িয়ে নেয়। 
.
— আমার জন্য আর এত আদিখ্যেতা দেখাতে হবে না ।  
— এখন তোমার... আমার সব কিছু আদিখ্যেতা মনে হয় ।তাই না?
— সারাজীবন ই আদিখ্যেতা ই ছিল । আমি বুঝতে ভুল করেছি । 
— ওহ আচ্ছা। এখন সব কিছু ঠিকঠাক বুঝছ তো?
— হ্যা । আপনি সব কিছু ঠিকঠাক বুঝছেন তো?
— ভুল বোঝার কিছু আছে নাকি?
— হ্যা সেটাই । ভুল বোঝার তো কিছুই নেই । 
 — আমি মানছি আমি একটু বেশিই ওভার রিয়াক্ট করে ফেলেছি আসলে হুট করে মাথা গরম....
— হয়েছে থামুন । কৈফিয়ত চেয়েছি কি আমি? আপনার কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করাই বৃথা। আমার ভালো লাগছে না কিছু । প্লিজ একা থাকতে দিন আমাকে । এটুকু দয়া করুন যদি পারেন। 
.
 .
অভ্র উঠে গিয়ে স্টাডি রুমে চলে গেল । সারারাত ওখানেই ছিল। 
.
সকাল বেলা বের হতেই রেণু খালার মুখোমুখি পড়ে সে।
.
— কি ব্যাপার অভ্রনীল এত সকালে এখানে কি করছ?
— না এমনি। 
— চোখ এমন লাল হয়ে গেছে কেন?
— এমনি। কিছু পড়েছে মনে হয় । 
.
এ কথা বলে অভ্র চোখ ঘুষতে ঘুষতে চলে গেল ।
.
অবন্তী ঘুম থেকে জেগে খেয়াল করল বেশ বেলা হয়ে গেছে । ক'টা বাজে এখন? ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে দশ টা পঞ্চান্ন। ঘড়ি ঠিক আছে তো? ফোন চেক করতেই শুভ্র'র পাঠানো টেক্সট চোখে পড়ে, 
.
 " পালিয়ে গেলে? ভয় পেতে শুরু করেছ আমাকে? অথচ কোন একদিন অভ্র কে ভয় পেতে তাই না? কাল তোমার কথায় তো অন্তত তাই বুঝেছিলাম 
।" 
 .
সত্যি ঘুম থেকে উঠতে বেশ দেরি হয়ে গেছে । অভ্র আজ একবার ডাক ও দেয় নি? এখন বেশির ভাগ দিনে অভ্রই আগে ওঠে। ওকে ডেকে দেয়। 
সারারাত এর অভ্র শুভ্র নিয়ে মনের ভেতর দ্বন্দ হতে হতে ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পড়েছিল সে। 
.
রেণু খালা খাবার নিয়ে রুমে এলেন। 
 — উঠে পড়েছ মা? আমি ভাবলাম অনেক বেলা তো হলো ডেকেই না হয় দিই তোমাকে। অভ্রনীল যাবার সময় বলে গেল তোমাকে ডেকে বিরক্ত না করতে। কিন্তু এতক্ষণ না খেয়ে শুয়ে থাকলে শরীর আরো খারাপ করবে । কাল রাত থেকেই নাকি শরীর খারাপ তোমার? কি হয়েছে?
.
— খাবার রেখে আপনি যেতে পারেন ।
.
— এভাবে কেন কথা বলছ তুমি? আবার অভ্রনীল কেও দেখলাম সকালে মন মরা হয়ে ছিল । কি হয়েছে কিছু বলল ও না ছেলেটা ।
.
— এত প্যাচাল আমার ভালো লাগছে না । প্লিজ আমি আর একটু ঘুমাবো। আর আমি সুস্থ ই আছি । আপনাদের এত মাথা ঘামাতে হবে না আমাকে নিয়ে । আপনারা আপনাদের ছেলেকে নিয়েই মাথা ঘামান।
.
.
অবন্তী আবার ঘুমিয়ে পড়েছিল। খিদেয় পেটে মোচড় দিয়ে ওঠায় জাগা পায় সে। বিকেল হয়ে গেছে । বেড এর সামনে টেবিলে করে সকালের প্লেট এর পাশে আরেক প্লেট খাবার দিয়ে যাওয়া হয়েছে । 
.
আজ যেন ভীষণ অসহায় লাগছে মেয়েটার। মাকে বড্ড মনে পড়ছে । এখন জেদ করে না খেয়ে থাকলে কেউ আর মার মতো জোর করে খাইয়ে দেয় না । বেশি জেদ করলে মা দু চারটা থাপ্পড় দিয়ে হলেও খাইয়ে দিত। আর এখন !! 
নিজের খোজ নিজে না রাখলে কেউ নেই শশুর বাড়িতে খোজ নেবার। 
.
"সত্যি কি আমি শুধুই এদের প্রয়োজন ছিলাম ? "
.
চোখের কোনে বেয়ে পড়া পানি মুছতে মুছতে নিশব্দে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে । 
.
ফোনে শুভ্র'র ছ'টা মিসড কোল। অভ্র'র একটা ও নেই। 
.
"খেয়ে নাও"
অন্তত এরকম একটা ছোট্ট টেক্সট আশা করেছিল অভ্র'র কাছে থেকে। 
.
মন খারাপ করে আবার শুয়ে পড়তেই ওয়াশরুম থেকে অভ্রকে বেরিয়ে আসতে দেখে। হাত মুখ ধুয়ে বের হচ্ছে।
.
 এই ছেলে হাত মুখ ধুতে গিয়ে সব সময় মুখে পানির এত জোরে ঝাপটা দেয় যে সামনের চুলগুলো পুরো ভিজিয়ে ফেলে। এমনিতেই মরণ খেলানো চুল । তার ওপর এভাবে টপটপ করে পানি পড়ছে। অবন্তী কি যেন কোন যেন মোহে আচ্ছন্ন হয়ে সেদিকেই তাকিয়ে থাকে। 
.
অভ্র প্লেট হাতে নিয়ে ওর সামনে বসে । ভাত মাখিয়ে এক লোকমা তুলে ধরে ।
.
— আমার ওপর রাগ বুঝলাম। কিন্তু এসবের ওপর রাগ কেন তাই তো বুঝতে পারছি না । হ্যা রাগ হওয়া স্বভাবিক ছিল যদি এগুলো আমার টাকায় কেনা হত। কিন্তু এগুলো তো আপনার শশুরের টাকায় কেনা । আমার তো মনে হয় এগুলো খেতে প্রবলেম নেই ।
.
— খাব না আমি। 
কথাটা বলে অবন্তী পাশ ফিরে আবার শুয়ে পড়ে । 
.
 — খাবে না? আচ্ছা একবার দেখো তো কি রান্না হয়েছে আজ। চিংড়ি না তোমার ফেভারিট? সাথে আরো কি আছে দেখো 
.
— আমি তবুও খাব না । না খেয়ে না খেয়ে মরেই যাব আমি। তারপর জায়গা হলে আপনার মা'র কবরের পাশে আমাকে একটু কবর দেবেন। আমার মায়ের কবরের পাশে তো আর জায়গা নেই । এক পাশে ভাইয়র কবর এক পাশে বাবার।। আর তাছাড়া এখানে থাকলে আপনার আর আপনার নতুন বৌয়ের কীর্তিকলাপ দেখতে সুবিধে হবে । দু একটা গাছ লাগিয়ে দেবেন কবরের ওপর । আর মাঝে মাঝে গাছে পানি দেবেন।
.
— ব্যাস। শেষ? অনেক্ষন থেকে বাকওয়াজ শুনছি। শুনেছি খিদের চোটে মানুষ ভুল বকে। কিন্তু এতটা ভুল বকে এই প্রথম জানলাম। আপনি না খেলে এক্ষুনি ডক্টর ডেকে স্যালাইন পুশ করাব। আর না হলে হাত পা বেধে নাক দিয়ে নল ঢুকিয়ে খাওয়ানোর ব্যাবস্থা করব। মরতে এত সহজে দিচ্ছি না আপনাকে । এখন চয়েজ আপনার। আমার হাতে খাবেন নাকি ডক্টর ডেকে ..আমি কিন্তু যা বলি তা করেই ছাড়ি ।
.
— হয়েছে হয়েছে । দিন দিন আমি নিজে হাতেই খেতে পারি। আপনার মতো নোংরা মন মানসিকতার মানুষের হাতে খাব না আমি। আর আপনি আপনি বলে এত আদিখ্যেতা দেখতে হবে না । তুমি করে ও বলতে হবে না ।আগের দিনের মতো তুই করেই বলবেন । অসভ্য লোকের সভ্যতা মানায় না ।
.
.
অবন্তীর খাওয়া শেষ হলে অভ্র আবার চলে গেল । ওকে খাবার খাওয়াতেই এসেছিল। রেণু খালা ই ফোন করে জানিয়েছিল অবন্তী কিছু খেতে চাইছে না । তাই এভাবে কাজ ফেলে আসা।
 .
.
আজ অনেক দিন পর অর্নি এসেছে বাড়িতে । তবে আজ কেমন অন্যরকম দেখাচ্ছে। চোখ মুখ ফ্যাকাশে । এসেই বাবার রুমে ঢুকেছে। প্রায় অনেক্ষন ধরে বাবা মেয়ের মধ্যে কি কথা হলো কেউ জানে না । রেণু খালা দুপুরে খেয়ে যেতে বলল ওকে। তাও খেল না । সামান্য খেতে বলায় যা ইচ্ছা তাই বলে গেল রেণু খালা কে।
আবার হঠাত এ মেয়ের কি হলো রেণু খালা কিছুই বুঝলেন না । অভ্র কে আদর করা মেয়েটা এখনো সহ্য করতে পারে না ।  
.
এদিকে অভ্র'র যে আবার কি হয়েছে সে বিষয় নিয়েও রেণু খালা চিন্তিত। এসব ব্যাপারে কিছুই বলে নি সে রেণু খালা কেও।
.
অভ্র চায় না রেণু খালা এসব শুনে অবন্তী কে আটকাক। সে নিজেও খুব বেশি জোর করবে না অবন্তী কে। জোর করে আর যাই হোক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায় না । যদি না সম্পর্ক টেকানোর ইচ্ছে থাকে। অবন্তী আদৌ এ সম্পর্ক নিয়ে কতটা সিরিয়াস আদৌ এ সম্পর্ক টেকানোর ইচ্ছা আছে কি না তা সে জানে না । এমনিতেই বিয়ের সিদ্ধান্তটা অবন্তীর ওপর চাপানো হয়েছে । অভ্র হয়ত কোন দিন ছিলই না অবন্তীর।, সত্যি হয়ত অন্যের আমানত ছিল। এবার অবন্তী যা চাইবে তাই হবে । অনেক হয়েছে জোরাজুরি। আর নয় । 
.
.
— তারপর বলো ..পালিয়ে গেলে কেন কাল?
— আমি পালাই নি। অসুস্থ লাগছিল।
— আমকে দেখেই?
— জানিনা।
— তোমার সাহেব তো খুব সেন্সেটিভ তোমার ব্যাপারে যা বুঝলাম। সামান্য অসুস্থতার নাটক করেছ তাও কোলে করে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে তুলল। আচ্ছা তুমি আসলে কাকে বোকা বানাতে চাইছ বলো তো? অভ্রকে না শুভ্রকে?
— কাউকে না । শুভ্র তুমি কি চাও বলো তো?
— সেদিন ই তো বললাম কি চাই। ছেড়ে দাও অভ্রকে। আমি মেনে নিয়েছি তোমাদের এ কদিনের সম্পর্ক । যা হবার হয়ে গেছে । আবার নতুন করে শুরু করব আমরা। অভ্র নিজেও শুরু করবে দেখো ।
— আমি নতুন করে শুরু করব কি না জানিনা। তবে অভ্র শুরু করতে শুরু করেছে । 
— মানে?
— কিছু না । তুমি কেন এসেছিলে পরশু পার্টি তে?
— তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিল। তোমার থেকেই তো শুনলাম পার্টি আছে। সো ভাবলাম ....আমার ও দু একজন ফ্রেন্ড বিজনেস এর সাথে ইনভলভ । ইনভিটিশন জোগাড় করতে তেমন কোন কস্ট করতে হয় নি।তুমি যে আমাকে দেখতে পাবে ভাবি নি।
— আমি ঐ পাঞ্জাবি চিনি শুভ্র। 
— অভ্র কে বানিয়ে দাও নি?
— নাহ।
— এভাবে আর কত দিন?
— কিভাবে?
— এই যে যেভাবে আছ তুমি। তুমি প্রথম থেকেই আমার ছিলে। হুট করে মাঝপথে কে আসল তুমি তার প্রতি এত সিরয়াস কেন হয়ে যাচ্ছ তাই তো বুঝতে পারছি না । যখন সে নিজেই তোমাকে ছেড়ে দিতে চেয়েছে। 
— অভ্র তুমিই তো বলেছিলে আমার জীবনে আরো কেউ আসবে।
— তুমি এখন সেসব বিশ্বাস করতেও শুরু করেছ? হাসি পেল পিচ্চি । এসেছে কিন্তু যেতে কতক্ষণ ?হয়ত আসার ছিল এসেছে । আমি আর এখন এসব বিশ্বাস করি না। বাদ দাও তো এসব। তুমি আমার ছিলে আর আমার কাছেই ফিরবে এটাই সত্যি ।
.
.
 অভ্র কি পারে না এভাবে শুভ্রর মতো জোর করতে? না হয় আরেকটু বেশি জোর করতে? প্রথম দিন ভুল বুঝে কি না কি বলল। আর এখন তো একদম চুপচাপ হয়ে গেছে । গতকাল রাতে অবন্তী গিফটের ব্যাপার টা বলেছে। অভ্র শুধু চুপচাপ শুনেছে মাথা নিচু করে । 
.
.
" আমি কিছুই বলব না আর তোমাকে। অভ্র তো খুব খারাপ। অভ্র ভালো ভাবে কথা বলতে পারে না । অভ্র অসভ্য । তুমি চলে গেলে অভ্র আবার বিয়ে করবে তাই তো?তাছাড়াও অভ্র অনেক খারাপ তোমার ধারণার ও বাহিরে। অভ্র আর কোন দিন ও তোমাকে জোর করবে না কোন বিষয়ে । তোমার যা ভালো লাগে যে পথ ভালো লাগে সে পথেই যাবে তুমি। আর যাই হোক মনের বিরুদ্ধে জোর করে তো তুমিও একটা সম্পর্ক টেকাতে পারবে না । ।"
.
অভ্র মাথা নিচু করে এসবই বলেছিল।
.
.
চার দিন পর অবন্তী অভ্রকে জানিয়ে দিল সে যা সিদ্ধান্ত নেয়ার নিয়ে নিয়েছে । 
হ্যা সে যা সিদ্ধান্ত নেবার নিয়ে ফেলেছে।
এ চার দিনে শুভ্র'র সাথে অনেক কথা হয়েছে । দিনক্ষণ ও ঠিক হয়েছে । কালকের দিন ই হয়ত এ বাড়িতে অবন্তীর শেষ দিন। পরশু সন্ধ্যা পর্যন্ত আছে সে ।
.
 অভ্র সেসব শুনে পকেট থেকে দুটো এয়ার টিকেট বের করে দেখালো অবন্তী কে। ঢাকা টু চিটাগাং এয়ার টিকেট। টিকেট দেখিয়ে অভ্র একা একা হাসতে থাকে। বুক ফাটানো হাসি মুখ ফুটে যখন বের হয় ঠিক সেরকম হাসি।
.
— পাগলের মতো হাসছেন কেন?
— দেখো এটা কি? 
— এয়ার টিকেট। চিটাগাং যাচ্ছেন অফিসের কোন কাজে?
— হুম। আমাদের হনিমুন টিকেট। বাবা কত বোকা বুঝতেই পারে নি । কটেজ ও বুক করে দিয়েছে আমাদের জন্য পনের দিনের । এবার আমি বাবা রেণু খালা কাউকে বুঝতে দিই নি । বুঝলেই খামোখা তোমাকে আটকাতে চাইত। আসলে প্র‌জেক্ট পাবার পর আমাদের সব স্টাফ দের নিয়ে গ্র্যান্ড সেলিব্রেশন হবে চিটাগাং এ তিন দিনের। তো সেই সাথে বাবা ভেবেছে আমাদের ও বিয়ের পর তেমন কোথাও যাওয়া হয়নি । তাই ওখানেই কিছু দিন ... মানে ঘুরে পেচিয়ে না ভেবে সোজাসুজি ভাবলে হানিমুন। হাহ!! আমাদের আবার হানিমুন। বাবা আর রেণু খালা কত বোকা তাই না? বুঝতেই চায় না আমাদের ব্যাপারটা। ভালোই হল এক দিক দিয়ে কাল তুমি তোমার মতো আর আমি আমার মতো । দুটো পথ তো আলাদা ছিল ই। হঠাত এক হয়েছিল । কাল থেকে আবার দুজন না হয় পুরনো পথে।
.
—মানে?
— কাল বলব।
.
পরের দিন অভ্র আরেকটা এয়ার টিকেট দেখালো।
.
— আপনি চলে যাচ্ছেন?
— হুম । আমি এসেই যত ঝামেলার শুরু। আরো থাকলে হয়ত আরো ঝামেলা হবে। আমি জার্মানি চলে যাব আবার অর্পি আপুর কাছে ।
—আমিও চাই আপনি নতুন ভাবে আবার সব কিছু শুরু করুন
— হুম । আমিও তাই চাই।
.
.
অভ্র এয়ারপোর্টের পাশের রাস্তায় ফুটপাতে ভিখিরির মতো বসে আছে । লাগেজ গুলো এমনি ই গুছিয়েছিল সে, সবাইকে দেখানোর জন্যে । হাতে ড্রাগস এর লিথাল ডোজ (মারণ ডোজ) আর ইনজেকশন নিয়ে বসে আছে । লিথাল ডোজ পুশ করলে নিশ্চিত মৃত্যু, জীবনের সাথে আজ সত্যি অনেক বড় বাজি ধরে ফেলেছে সে ।
.
.
.
চলবে...............................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন