অভ্র মাথায় এবার আবার যুক্ত হয় এসব দুশ্চিন্তা। বমি করতে করতে গলা ছিলে এক পর্যায়ে ব্লাড ও আসে বমির সাথে ।
চোখ মুখে পানি দিয়ে বেসিনের আয়নায় আবার নিজেকে দেখে নেয়। ভেতরের সত্ত্বা বলে ওঠে,
" আর কত? আর নয় অভ্রনীল। সৃষ্টিকর্তার উর্ধে কেউ নয়। তুই ও না ।"
.
.
এদিকে অবন্তী হাসতে হাসতে আবার নিজের পেটে হাত দেয়,
" দেখেছিস পুচকে , এখন বমি করার কথা কার আর বমি করে পৃথিবী ভাসাচ্ছে কে?"
.
"একা একা হাসছ কেন তুমি?"
অভ্র ফ্রেশ হয়ে এসে চোখ মুখ মুছতে মুছতে জিজ্ঞাসাসূচক দৃষ্টি ছুড়ে দেয়।
.
" প্রেগন্যান্ট মেয়েদের মতো এত বমি করেন কেন? কয় মাস চলে আপনার? "
.
অবন্তী ইচ্ছে করেই কথা ঘুরিয়ে দেয়। ওসব ব্যাপারে অভ্রকে আরো ফোর্স করলে আরো অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। )
.
" হাতির মতো দুই বছর চলে। "
(অভ্র মুচকি হাসি হেসে বলে)
.
"কোন হসপিটালে যেন ডেলিভারি আপনার?"
" সদর হাসপাতালের আউটডোরে।"
" ছি ছি! আউটডোরে ?"
"আউটডোরের কথা পরেও বলা যাবে। এখন আপাতত ইনডোর ..."
"এই না না। ভুলেও এখন এসব ভাববেন না । পুচকে দেখে ফেলবে ।"
" পুচকে আবার কে? "
"পুচকে হচ্ছে....ঐ তো রিহাম। রিহাম দেখে ফেলবে।"
.
.
অবন্তী দরজার দিকে নির্দেশ করে । অভ্র পেছনে তাকিয়ে দেখে তার ছোট ভাগ্নে বছর চারেক এর রিহাম বল হাতে দরজার চোকেটে দাঁড়িয়ে আছে । অর্পির তিন ছেলে রেহান, রিহাব, রিহাম। একমাত্র মামার বিয়েতে আসতে পারে নি তাই এবার মা বাবার সাথে ওরাও এসেছে। মামা বলতে ওরা তিনজন ই অজ্ঞান। ছোট থেকেই অভ্রর সাথে থেকেছে।
.
.
অভ্র উঠে গিয়ে রিহাম কে কোলে তুলে নিল। পেছন পেছন অর্নির মেয়ে অর্থি এসেও বায়না ধরে,
" অভ্য মামা, আমাকে কোলে নেবে না?"
অভ্র ওকেও কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় দুজনকে বসিয়ে খেলতে শুরু করল।
অবন্তী সেদিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে রয়। মনে মনে জিজ্ঞেস করে,
" কি রে হিংসে হচ্ছে বুঝি? বাবার আদর খেতে মন চাইছে? তোর হয়ত পোড়া কপাল রে ..."
.
" এই অবন্তী একা একা কি সব বিড় বিড় করছ? "
" আপনি ওদের কত ভালোবাসেন তাই না?"
" আমার আপুর ছেলে মেয়ে । ভালবাসব না তো কি করব? তুমি জানো রেহান জন্মানোর সময় আমি টেনথ স্ট্যান্ডার্ডে পড়ি । আমি স্কুল থেকে ফিরতে ফিরতেই ভিজিটিং আওয়ার শুরু হতো । বাড়িতে ব্যাগ কোন মতো রেখেই দৌড় দিতাম হসপিটালে। ছোট্ট রেহান কি সুন্দর ছিল। কি সুন্দর ছোট্ট ছোট্ট হাত পা। আমি একটু কোলে নিলেই বিড়াল ছানার মতো কেদে উঠত। তারপর আপু বাড়ি ফেরার পর আমি সারাদিন ওকে কোলে নিয়ে থাকতাম।।স্কুলও যে কত মিস করেছি। আপু ভাইয়া তো ব্যাস্ত থাকত এক্সপোর্ট ইমপোর্ট এর বিজনেস নিয়ে । আমি সারাদিন ওকে দেখে দেখে রাখতাম যদিও কেয়ার টেকার ছিল। তারপর একটু বড় হলে বিকেল বেলা খেলতে যাবার সময় ওকেও নিয়ে যেতাম।তারপর রিহাব আসল। তখন তো দুজন হলো ।দুজনে মিলে আমার মাথা খেয়ে ফেলত সারাদিন। রিহাম কে অবশ্য তেমন আদর করার সুযোগ পাই নি । ওর তিন বছর বয়সেই তো দেশে চলে এলাম । এই জন্য রিহাম সোনার আমার ওপর অনেক রাগ তাই না?"
.
অভ্র এসব বলতে বলতে আবার মুখ ডুবায় ওদের আদর করতে করতে। এরপর রুমে রেহান, রিহাব আর অর্ক ও আসে। অভ্র ওদের পাচজন কে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে । অবন্তীর ওসব কথা আর মাথায় ই থাকে না অভ্রের। সেএখন গল্প আড্ডা আর খেলায় ব্যাস্ত ভাগ্নে ভাগ্নীর সাথে ।
.
.
রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে অভ্র আয়নায় দাড়িয়ে চুল ঠিক করছিল। অভ্রনীলের এই স্বভাবটা মেয়েদের মতো । ঘুম থেকে উঠেই চুল ঠিক করা আবার ঘুমোতে যাবার আগে চুল ঠিক করে ঘুমিয়ে পড়া । চুলের আর স্কিনের ব্যাপারে প্রচন্ড যত্নশীল সে।
অবন্তী হাতে দুধের গ্লাস নিয়ে এগিয়ে আসে,
.
" নিন খেয়ে নিন "
" আমি কি ছোট বাচ্চা নাকি ঘুমোতে যাবার আগে এক গ্লাস দুধ খেয়ে ঘুমোবো?"
" বমি করে তো গলা ছিলে একাকার করেছেন। রাতে তো তেমন কিছু খেতেই পারলেন না । গলায় ব্যাথা করছে ,জ্বালা করছে নাকি । গরম দুধ খেলে গলায় সেক লাগবে আরাম পাবেন। ঠিক হয়ে যাবে "
" বলছ? "
" হুম। সত্যি"
.
.
অভ্রনীল বুঝতেও পারে না এটা অবন্তীর একটা টোপ মাত্র। দুধের ভেতর স্লিপিং পিল মিশিয়ে খাইয়ে দেয় অবন্তী। শোবার পর দু একটা কথা বলতে বলতেই অভ্র গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে । অবন্তী প্রায় অনেক্ষণ চেয়ে রয় ঘুমন্ত মানুষটার দিকে। মনে মনে কিছু প্রশ্ন ও করে । উত্তর এর আশাও করে না সে। ঘুমন্ত মানুষ তো আর উত্তর দিতে পারবে না ! আর জেগে রইলেও বা কি হত? মিথ্যে উতর ই দিত !
.
.
সকাল বেলা গায়ে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে । বিয়ের সময় কারোর ই গায়ে হলুদ ঠিক মতো হয়েছিল না তাই। অভ্রনীল কে তো ছোয়ানো ই গেছিল না বিয়ে করবে না বলে বেকে বসেছিল তাই । আর অবন্তী কেও হেলায় ফেলায় দু এক ফোটা ছোয়ানো হয়েছিল । চাচা চাচির অত সময় আছে নাকি?
.
.
কিন্তু এবারের গায়ে হলুদ বেশ ধুমধাম করে হচ্ছে। দুজনকে পাশাপাশি বসানো হয়েছে স্টেজে। ম্যাচিং করে লাল পাঞ্জাবি আর শাড়ি পড়েছে দুজন। ফুলের গহনা পড়ে অবন্তী কে আজ ফুলকন্যার মতোই লাগছে । অভ্রনীলের ইচ্ছে করছে আজ সারাদিন এই ফুলকন্যার দিকেই তাকিয়ে থাকতে। কিন্তু বাড়ির সবাই হাসাহাসি করবে এই ভেবে আড় চোখে তাকিয়ে দেখতে হচ্ছে তার। অভ্রকে সবাই ইচ্ছে মতো হলুদ লাগলেও অবন্তী এক ফোটা হলুদ ও লাগাতে দেয় নি, হলুদে এলার্জি আছে তার এই কথা বলে । হাসিখুশি অভ্রনীলের পাশে নিজেও হাসি মুখের ভান করে বসে থেকেছে। এতদিন অভ্র যেমন নিজের ভেতর টা তাকে বুঝতে দেয় নি, সে ও আর বুঝতে দেবে না কাউকে কিছু।
.
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষে রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দেয় । হ্যাচকা টান দিয়ে অবন্তীকে নিজের ভেতর নিয়ে নেয়, ঘাড়ে মুখ ডুবায়।
" এসব কি অসভ্যতা হচ্ছে? ছাড়ুন আমায়"
"অসভ্যতার কি হলো? আমার বৌ আমি ভালোবাসব না?"
" ছাড়ুন । "
" আচ্ছা ঠিক আছে ।আগে বলো মিথ্যে কথা বললে কেন তুমি? "
" কি মিথ্যে বলেছি আমি? "
" হলুদে তোমার এলার্জি কবে থেকে?"
" অনেক আগে থেকেই "
" মিথ্যে কথা "
.
.
অভ্র হাতের মুঠোয় নিয়ে আসা পুরোটুকু হলুদ বাটা অবন্তীর গালে ,গলায় ,গলার নিচে, কাধে লাগিয়ে দেয় । অবন্তী আর বাধা দিতে পারে না । অভ্রনীলের নিলাভ নয় হলুদাভ নেশায় আজ আসক্ত সে। হলুদের ছোয়ায় অভ্রতে আজ হলদে আভা লেগে আছে যে ।
.
.
সন্ধ্যায় বেশ জমকালো পার্টি হলো । রয়েল সেলিব্রেশন বলে কথা ! পুরো পার্টি জুড়ে ছিল আভিজাত্য ।তবে এবার ও অবন্তীর বাড়ি থেকে কেউ আসে নি। তাদের দাওয়াত করা হয়েছে কি না সে বিষয়েও অবশ্য অবন্তী জানে না ।
.
রাত বাড়ছে। ঝি ঝি পোকার ডাক আরো প্রবল হয়ে উঠছে ।অবন্তী জেগেই আছে বসে বসে জানলা দিয়ে নারকেল পাতার ফাক দিয়ে চিড়ে যাওয়া চাদ দেখছে। অভ্র সেই কখন ঘুমিয়ে পড়েছে । গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সে । আজও কফির ভেতর দেয়া স্লিপিং পিল খুব তাড়াতাড়িই কাজ করেছে। অবন্তীর এ ছাড়া আর উপায় ছিল না ।
সে চায় তার সন্তান কিছুক্ষণের জন্য হলেও বাবার স্পর্শ পাক। অবন্তী অভ্রনীলের ডান হাতটা নিয়ে নিজের পেটের ওপর রেখে তার ওপর নিজের হাত ও রাখলো।কিছুটা শক্ত করে অভ্রর হাত চেপে ধরল সে।
.
" কি রে খুব তো বায়না করছিলি বাবার আদর খাবি বলে। খুশি এখন? দ্যাখ কিভাবে মা ব্যাবস্থা করে দিল বাবার আদর নেয়ার । বাবার হাতে একটা পাপ্পি দে তো সোনা। দিয়েছিস ? হুম গুড বয় । আচ্ছা তুই গুড বয় নাকি গুড গার্ল? সে যা হয় হোক, তুই তো আমার ই তাই না? এখন লক্ষি সোনার মতো ঘুমিয়ে পড় তো চটপট । ভয় নেই বাবা আর মা মিলে আজসারারাত এভাবেই ধরে রাখবে তোকে। কিন্তু কাল থেকে ...কি জানি কি হবে ! "
.
.
অবন্তী অভ্রর দিকে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে অভ্রর বুকে মাথা গুজে দেয়। বুকের বা পাশে আলতো করে একটা চুমু দেয়। অভ্র নিজেও ঘুমের ঘোরেই অবন্তীর কপালে আলতো ঠোটের স্পর্শ একে দিয়ে জড়িয়ে নেয়। রোজকার অভ্যেস যে এটা।
.
.
সকাল বেলা এলার্মের তীব্র আওয়াজে ঘুম ভাঙে অভ্রনীলের। ঘুম থেকে উঠতে চাইলেও যেন পারছে না সে । মাথা কেমন ঝিম ধরে আছে। এত ঘুম কেন পাচ্ছে সে নিজেও বুঝতে পারছে না । চোখ ঘুষতে ঘুষতে মনে পড়ে সে তো কখনো এলার্ম দিয়ে ঘুমোয় না । অবন্তীই তার এলার্ম । আর অবন্তীর কখনো ঘুম থেকে উঠতে দেরি হলে অভ্রই ডেকে দেয়। ক'টা বাজে এখন? চোখ আধো আধো খুলে বিছানায় হাতিয়ে হাতিয়ে ফোন খুজে পায়। দেয়াল ঘড়ি থাকলেও এই যুগের মানুষ মোবাইল ফোনে ঘড়ি দেখতেই যেন বেশি অভ্যস্ত। অভ্র ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে বেলা এগারটা সাত।
" মানে কি? এত বেলা কখন হলো? ফজরের নামাজ মিস হয়ে গেল? এই মেয়েটা ডেকে পর্যন্ত দিল না? ইশ এত ঘুম ই বা কেন পাচ্ছে? মা চলে যাবার দিন ও এমন ঘুম ই পেয়েছিল!"
.
.
এটা ভাবতেই হুট করে যেন অবচেতন মন তাকে সজাগ হতে নির্দেশ দেয় । আশে পাশে তাকিয়ে অবন্তীকে খুজতে থাকে সে । নাহ নেই। ওয়াশরুম , বেলকনি কোথাও নেই। রুমের বাহিরে খুজতে যেতেই চোখ পড়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার দিকে। স্কচ টেপ দিয়ে চার ভাজ করা চিরকুট আটকানো ।
.
.
আহনাফ চৌধুরী অভ্রনীল,
নামের আগে সঠিক বিশেষণ খুজে পেলাম না । আপনার নামের আগে বিশেষণ ঠিক দেয়া উচিত এটা ভাবতে গেলে হয়ত আমার কয়েক কোটি বছর ও সময় লেগে যেতে পারে । কিন্তু এত সময় এক সাথে অতিবাহিত করার মতো সময় হয়ত আমাদের ভাগ্যে লেখা নেই।
এখন ক'টা বাজে এগারটা বা তার কিছু বেশি? রাতের কফিতে একটু হাই ডোজের স্লিপিং পিল মেশানোর জন্য সরি । তাছাড়া আপনি যে সজাগ মানুষ, আপনার হাতের বাধন ছেড়ে যাবার সাধ্য আমার ছিল কি? ছিল না । আমি সামান্য পাশ ফিরলেও তো আপনি জেগে যান । উফ কি সব আবল তাবল কথা লিখছি দেখেছেন ? কি করব বলুন চিঠি লেখার অভ্যেস যে কোন দিন ও ছিল না আমার । স্কুলেও ভালো মার্কস পাবার আশায় চিঠি না লিখে দরখাস্ত লিখতাম এক্সামে। ধ্যাত এবার আরো হিবিজিবি কথা লিখে ফেলছি তাই না?
আচ্ছা, এবার আসল কথায় আসি। তার আগে আপনি স্থির হয়ে বসুন আগে। এভাবে আয়নার সামনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে পড়তে হবে না । রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই আগে আয়নায় তাকান বলেই চিঠিটা এখানে রেখেছি এই যা! এখন বিছানায় বসে পড়ুন চিঠিটা ।
ও হ্যা তার আগে বা হাতের অনামিকা আঙুলের দিকে তাকান একবার। আংটি পছন্দ হয়েছে? আপনার জন্যই কিনেছিলাম গত পরশু। পড়াতেও চেয়েছিলাম । পড়িয়েছি । আপনার হাত থেকেও পড়িয়ে নেবার জন্য একটা আংটি কিনেছিলাম । হ্যা ঘুমের ঘোরে সেটা আপনি আমাকে পড়িয়ে দিয়েছেন । মনে আছে? জানি মনে নেই। আমি নিজে নিজেই আপনার হাত থেকে পড়ে নিয়েছি। অবশিষ্ট আর একটা ...না থাক বলব না আপনাকে। সত্য লুকানোর কষ্ট শুধু অন্যকেই দিয়ে যাবেন? নিজেও একটু দেখুন না, আপনার নিজের জীবনের সব চেয়ে বড় সত্য আমি কিভাবে আপনার থেকে লুকিয়ে নিলাম ! সারা জীবন খুজেও হয়ত এই সত্য আপনি খুজে পাবেন না।
অভ্রনীল ,একটা মজার বিষয় বলি ? আপনি আমার থেকে যে সত্য লুকিয়েছিলেন তা আমি বাদে এই পৃথিবীর সবাই জানত। কিন্তু আমি আজ যে সত্য আপনার থেকে গোপন করলাম সে সত্য কিন্তু আমি ছাড়া এই পৃথিবীর কেউ জানে না । হ্যা, অভ্রনীল প্রকৃতি আমাদের সাথে কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করে না । বিশ্বাসঘাতকতা মানুষের ধর্ম প্রকৃতির নয়।
আপনি কি পারতেন না নিজ মুখে সব কিছু খুলে বলতে? অথচ দেখুন আমাকে এমন একজনের কাছ থেকে সব কিছু জানতে হলো ! এই পৃথিবীর সবাই যে ব্যাপার নিয়ে আপনাকে অবিশ্বাস করে আমিই কিন্তু একমাত্র যে প্রথম থেকে আপনাকে বিশ্বাস করে আসতাম। আর সেই আপনি? মিথ্যে দিয়ে সাজালেন আমাদের সংসার টা? সত্য বলার সৎ সাহসটুকু এই তিনশ পয়ষট্টি দিনেও করে উঠতে পারলেন না?
আপনার কি মনে হয় সত্যকে আগুনে পোড়ালেই তা ধোয়া হয়ে উবে যাবে? না, অভ্রনীল সত্যের ছাই কখনো মাটি চাপা দেয়া যায় না, সত্যের ছাই উড়বেই ।
ভালো থাকবেন । যদি প্রয়োজন হয় ঠিক মতো মেডিসিন নেবেন ।নিজের য্ত্ন নিজে নিতে শিখবেন আশা করি । আমার কাছে সত্য লুকোতে গিয়েই আপনার নতুন করে যত অসুস্থতার সৃষ্টি হয়েছিল তাই না? তাই এখন আমিও থাকব না, থাকবে না কোন গোপন করা সত্য , আশা করি থাকবে না কোন অসুস্থতা । জানেন আপনার প্রতি এখনো আমার একরাশ প্রশ্ন । কিন্তু সেগুলো না হয় প্রশ্ন হয়েই থাক আমার জীবনে। অন্তত প্রশ্নগুলোর কারণে তো আপনাকে মনে পড়বে । আর হ্যা আমি অন্যদের মতো বলব না যে আমাকে ভুলে যান, বেটার কাউকে পান বা নতুন করে শুরু করুন। এসব কিছুই আমি বলব না । আমি বলব মনে রাখুন আমায়। আর বেটার কাউকে যে কোন দিনও খুজবেন না সে বিশ্বাস আমার আছে আপনার প্রতি। আমি শুধু বলব ধীর থাকুন ,স্থির থাকুন। নিজেও কিছু সত্য খুজুন। নিজে থেকে সত্য বলার সাহস খুজুন ।
আমি কবি নই ।কিন্তু আজ খুব করে ইচ্ছে হলো আপনার জন্য একটা কবিতা লিখতে । চিঠির শেষটা কবিতা দিয়েই করি । কেমন?
.
"যাচ্ছি চলে যোজন দূরে
তোমার কিছু স্মৃতি নিয়ে
থাকব পাশেই ছায়া হয়ে
তুমিও থাকবে না থাকা জুড়ে
আসব ঠিকই স্বপ্ন বেয়ে
স্বপ্ন মাঝে , দেবে কি একটু হাতটা ছুয়ে?
সত্যরে এত পাও কেন ভয়?
এ পৃথিবীতে সব চেয়ে ধনী কে জানো?
যে সত্য সয় , যে সত্যে রয়।
তোমার জন্য কথামালা, মনেই না হয় থাকুক জমা
বিদায় বেলায় বলছি শোন, পাবে হয়ত প্রতিস্থাপক, কিন্তু আমিই তোমার একমাত্র পরিপূরক।"
.
.
অভ্রনীল চিঠিটা শেষ করে মুচকি হাসে, মনে মনে নিজের বানানো কবিতা নিজেই আওরাতে থাকে, কবিতা যে সে নিজেও লিখতে পারে।
.
.
"চলেই গেলে?
হুম যাবেই তো
আমি যে মিথ্যেবাদী, হ্যা আমি মিথ্যেবাদী
কিন্তু কখনো জেনেছিলে কি রোজ রাতে আমিও কাদি?
হ্যা শুরুটা ছিল ভুলের মাশুল
বুঝিনি তো সেদিন সে ভুল জীবনে ফোটাবে ফুল।
শুধুই দেখে গেলে আমার ভেতরের কোন এক কোণের কুৎসিত শ্লোক
সত্যি বলো,
হতে কি পারি নি কোন দিন ও তোমার পরিণয়ের পরিপূরক?"
.
.
.
চলবে...........................