অন্তর্দ্বন্দ্ব - পর্ব ৪৪ - সাবরিনা ইমরান - ধারাবাহিক গল্প


কী ব্যাপার, তিনদিন ধরে খোঁজ নেই কেন?
 
কোথায় তুমি?

তুমি কি বাইরে গেছো?

তোমার বাসার নিচে আমি।জানালা খোলা,তার মানে তুমি বাসায়ই আছো।আমার ফোন ধরছো না কেন?

আবার কী হয়েছে?জেরিন ফোন দিয়েছিলো?

অপেক্ষায় আছি..

মেসেজগুলোয় চোখ বুলালো ভিনা,এরপর আস্তে করে ফোন রেখে দিলো।যাবিরই একজন মানুষ যার কাছ থেকে এখনো কোনো কষ্ট পায়নি ভিনা।কিন্তু এই মানুষটার প্রতিই সবচেয়ে অবহেলা দেখানো হয়।যাবির যে পাগলের মত অপেক্ষা করে যাচ্ছে,এটা ভিনা জানে,তবুও উত্তর দিবে না,কারণ দেয়ার মত কিছু খুঁজে পাচ্ছে না।ওর জীবন প্রতি ক্ষণে ক্ষণে পাল্টাচ্ছে।এই কিছুদিন আগেও মুনাকে আপন লাগছিলো,আজকে ঠিক তার দ্বিগুণ অপরিচিত লাগছে।এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে ভালো হোক খারাপ হোক,কিন্তু একটা স্ট্যাবিলিটি আসুক,যে খারাপ সে খারাপই থাক,তার অভিনয় করে ক্ষণিকের জন্য আশা জাগানোর প্রয়োজন নেই,যে ভালো সে ভালোই থাকুক,ভুল করেও খারাপ হওয়ার দরকার নেই।এলোমেলো চিন্তায় মাথা ভারী হয়ে আসছে।কিছুক্ষণ পর ফোন নিয়ে যাবিরকে মেসেজ দিলো ভিনা-

-সব খুলে বলবো। কালকে বিকেলে দেখা করো পারলে। 

ফিরতি মেসেজের অপেক্ষা না করে ভিনা শুয়ে পড়লো।আজকে অনেক বেশি একা লাগছে।মাত্র তিনদিন রুপিন থেকেছিলো ভিনার সাথে,তাতেই এত একা লাগছে চলে যাওয়ার পর। মানুষ বছরের পর বছর খালি বিছানায় কীভাবে ঘুমায়?হটাতই মনে হলো শিউলি মারা যাওয়ার পর প্রায় তিন বছর একা ছিলো সোহেল।দ্বিতীয় বিয়েটা খুব বেশি অযৌক্তিক হয়ত ছিলো না।কিন্তু অচেনা একটা মানুষ এসে হুট করে চেনা মানুষের জায়গা নিয়ে কতৃত্ব নিয়ে নিবে,এটা মানা কষ্টকর। যুক্তি দিয়ে যদি আবেগকে পোষ মানানো যেত,জীবনে কোনো দ্বন্দ্ব থাকতো না।জীবনে বেশিরভাগ সমস্যাগুলোর সৃষ্টি হয় যুক্তি আর আবেগের মাঝের বিশাল তফাতের জন্য।


সারারাত ছাড়া ছাড়া ঘুম হয়েছে ভিনার।সকালে উঠেই দৌড়ে ডাইনিং টেবিলে আসলো।সোহেলের সাথে কথা বলা দরকার।দেরী করলে যে সম্পর্কে টানাপোড়েন হবে,সেটা ভেতর থেকেই টের পাচ্ছে।কিন্তু খাবার টেবিলে কাউকে না দেখে বেশ অবাক হলো।ঘড়িতে নয়টা আঠারো বাজে,সাধারণত এই সময়েই সবাই নাস্তা করে।রান্নাঘরের ভেতর থেকে মোমেনা খালা এসে ডাইনিং টেবিল গোছাতে লাগলো।

-খালা,বাবা কি নাস্তা করে ফেলেছে?

-হ,অনেক সকালেই নাস্তা করসে, এরপর বাইর হইয়া গেসে উনার বউ রে নিয়া।

মোমেনার কথায় রাগের আচ পাচ্ছে। আগে মুনাকে মুনা আপা,ক্ষেত্রবিশেষে খালাও বলত।এখন সেগুলো কিছুই বলেনি,স্বাভাবিক,গতরাতে যা হয়েছে এরপর এধরনের আচরণ অন্যায় না।কিন্তু প্রশ্ন হলো এত সকালে সোহেল আর মুনা গেলো কোথায়।

ঘরে এসেই সোহেলকে টানা ফোন দিতে থাকলো ভিনা। প্রথমে না ধরলেও এরপর ফোন বন্ধ হয়ে গেলো।পুরো বিষয়টা এত ঘোলাটে লাগছে যে কিছুই বুঝতে পারছে না।কাকে জিজ্ঞেস করবে,সেটাও জানে না।

কিছুক্ষণ পর ফোন হাতে নিয়ে দেখলো, যাবির আজকে সময় নিয়ে আসতে বলেছে দেখা করার জন্য।ভিনা মেসেজ দেখে শুয়ে পড়লো।মাথা ভার হয়ে আছে।যাবিরের সাথে বিকেলে দেখা করতে যাবে,এখন এলার্ম দিয়ে ঘুমিয়ে পড়বে।ক্ষিদে নেই একটুও।একবারে বাইরে চা খেয়ে নিবে।মোমেনা কে যাওয়ার সময় ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিতে বলে ঘুমাতে গেলো ভিনা।একদম কম সময়েই ঘুমে তলিয়ে গেলো।


-এসব কী ছিলো মুনা?অকারণে মোমেনার সাথে এমন বাজে একটা সিন ক্রিয়েট করলে কেন?না জেনেই এভাবে কেন অপমান করলে একটা মানুষকে।

-দেখো,আমার মনে হয়েছিলো মোমেনা এমন কিছু করতে পারে।কারণ কয়দিন আগেই বলেছিলো,ওর নাকি কিসের জন্য টাকা লাগবে,তাই ওর উপরেই আগে সন্দেহ গেছে।

-তাই বলে এত খারাপ ভাবে অপমানের দরকার ছিলো?মেয়েটা আমার প্রায়ই বাসায় একা থাকে,যদি রাগের মাথায় কিছু করে বসে?

মুনার ভেতরে যেন আগুন ধরে গেলো।এখনও ভিনার কথাই সোহেলের মুখে রয়েছে।নিজেকে সংবরণ করে ঠান্ডা মাথায় কথা বললো,যেভাবেই হোক,নিজের আলাদা সংসার করার জন্য হলেও কিছু ব্যাপারে সামলে থাকতে হবে।

-আমিও বাসায় একা থাকি,যদি কিছু করে আমাকে করবে,ভিনাকে না।আর আংটি টা তুমি আমাকে দিয়েছিলে।তোমার দেয়া জিনিস আমি খুব যত্নে রাখি।তাই না পেয়ে মাথা গরম হয়ে গিয়েছিলো।আমার ভয় হয়....

-ভয়?কিসের ভয়?

-সবকিছুতে ভয় লাগে আমার।কাউকে বিশ্বাস করতে পারি না।নিজের রক্তের মানুষগুলো যা করেছে,এরপর আর কীই বা করার আছে।এখন আমার জীবনে তুমি ছাড়া আর কেউ না।আমি বেঁচে আছিই তোমার জন্য।ভয় হয় যদি তোমাকেও হারিয়ে ফেলি?তোমার দেয়া প্রতিটা জিনিস এভাবেই সামলে রাখি,যেন কখনো তুমিও আমাকে ছেড়ে যাও,আমি যেন এসব আকড়ে বেঁচে থাকি।

-কীসব বলছো মুনা?এধরনের ইল্যজিকাল চিন্তার কোনো অর্থ আছে?

-আছে সোহেল।তোমার বাঁচার একটা কারণ আছে,ভিনা,তোমার নিজের সন্তান।হাজার অভিমান হোক,ও তোমাকে ছেড়ে যাবে না।কিন্তু আমার কে আছে বলো?ভিনা তো এখনো আমাকে সেভাবে আপন করে নিতে পারেনি।আমার ভয় কি খুব বেশি অযৌক্তিক?

-অবশ্যই অযৌক্তিক। 

-হয়ত।কিন্তু কিছুদিন ধরেই আমার খুব সমস্যা হচ্ছে।আমি কেন যেন ভীষন ইন্সকিউরিটিতে ভুগছি।রুপিন কে দেখলেও আমার ভয় হয়।ও তো চায়নি আমাদের বিয়ে হোক,ও যদি আমার সংসার কেড়ে নেয়?

-মুনা!তুমি কি পাগল হয়ে গেছো?

-জানি না সোহেল।কিন্তু আমি তোমাকে হারাতে পারবো না...

কথাগুলো বলেই মুনা কান্না শুরু করে দিলো।সোহেল মোমেনার ঘটনা নিয়ে ভীষণ রাগ ছিলো।কিন্তু মুনার এ অবস্থা দেখে কিছুই বলতে পারছে না।যদি সত্যিই মুনার এধরনের সমস্যায় ভুগতে থাকে,তাহলে সাইকিয়াট্রিস্ট এর কাছেই যেতে হবে।

-শান্ত হও,এসব উল্টাপাল্টা চিন্তা কেন করছো?

-আমার তো নিজের বাচ্চাও নেই যে তুমি আমার সাথে থাকবে।তোমার আর ভিনার তো রক্তের সম্পর্ক, আমিই তো বাইরের। আমাকে বের করে দিলেও তো কিছু করার থাকবে না আমার।

-কে বলেছে তোমাকে এসব?কেন এসব ভাবছো!

-আমি মনে হয় অসুস্থ হয়ে গেছি।আমি যদি পাগল হয়ে যাই,আমি সংসার করবো কীভাবে?ভিনাকে দেখবো কীভাবে?আমাকে আবার ঐ বাসায় পাঠিয়ে দিবে না তো?

-আমরা ভালো সাইকিয়াট্রিস্ট এর কাছে যাই চলো।তুমি চিন্তা করো না।মানুষের নানারকম সমস্যা জীবনে থাকতেই পারে।

-না,প্লিজ না!তুমি আমাকে সাইকিয়াট্রিস্ট এর কাছে নিও না। ওখানে গেলেই মানুষ আমাকে পাগল ভাববে।বিশ্বাস করো,আমি পাগল না।আমার শুধু তোমাকে দরকার সোহেল। কিছুদিন সময় দাও,এমনিই আমি ঠিক হয়ে যাবো।বাইরের কেউ আমাকে ঠিক করতে পারবে না।

মুনা সোহেলকে জড়িয়ে কান্না করতে লাগলো।বলা বাহুল্য পুরোটাই অভিনয়।কিন্তু নিখুঁত হওয়ায় সোহেল সামান্যতম সন্দেহ করলো না।

-দেখো মুনা,আমি তোমার পাশে আছি। তুমি আমার স্ত্রী,তোমার সব সমস্যায় আমি থাকবো তোমার কাছে।তুমি অযথাই ভয় পাচ্ছো।আমি তোমার বাবাকে কথা দিয়েছি।

-এটাই তো আমার ভয়।তুমি আমার বাবার দেয়া কথাই রাখছো।ভালোবাসা না থাকলে সেই সম্পর্ক টিকে না সোহেল।

-সব কথা বাদ দাও। তুমি ঘুমাও এখন।

-আমার ঘুম আসবে না।

-তাহলে এখন কী করবে?

-জানি না।আচ্ছা দেখো,আমাদের বিয়ে কত সাদামাটা ভাবে হয়েছে।কেউই আসেনি ধরতে গেলে।

-আমিই জানাইনি কাউকে। বেশিরভাগ আত্মীয় গ্রামে থাকে।

-শিউলি কি তোমার গ্রামে গিয়েছিলো?

-গিয়েছিলো...

-আমাকে নিবে?অনেকে হয়ত জানেও না আমি তোমার ওয়াইফ। 

-অবশ্যই নিবো।

-কালকেই চলো।প্লিজ?

সোহেল কিছু বললো না।আজকেই মাত্র বাইরে থেকে এসেছে,জার্নির ধকল কাটেনি। কিন্তু মানাও করতে পারছে না।মুনার সমস্যা বাড়তে থাকলে কোনো না কোনোভাবে প্রভাব ভিনার উপরেই পড়বে।

-ঠিক আছে,কাল সকালেই যাবো।আমি ভিনাকে জানিয়ে আসি।

-ভিনার মাত্রই পরীক্ষা শেষ হয়েছে।কয়দিন বিশ্রাম নিতে দাও।আর ভিনা খুব সম্ভবত ঐ জায়গায় যাওয়া পছন্দ করবে না।বিয়ের পর দেখেছিলাম,তোমার মার সাথে সম্পর্ক তেমন একটা সহজ না।

-তবুও,ওকে একা রেখে যাবো?

-বাচ্চা না তো। ওখানে নিয়ে গেলেই বরং আরো প্রেশার ফিল করবে।আর মোমেনা কে নিয়ে ভয় পেয়ো না।আমি ক্ষমা চেয়ে নিবো ওর কাছে থেকে।

-ঠিকাছে।তাহলে এমনিই জানিয়ে আসি ভিনাকে।

-সকালে জানিয়ো।এত রাতে মেয়েটা ঘুমিয়েও পড়তে পারে।আমিই জানিয়ে দিবো সকাল সকাল। 

-ঠিক আছে।ব্যাগ গুছাও।একদম সকালে বের হবো,রাতে এসে পড়বো।

মুনা প্রশান্তির হাসি দিলো।পরেরদিনের ঘটনাগুলোও সুন্দরমত সাজিয়ে নিলো।সকালে যেয়েই সবার আগে মোমেনা কে ডাক দিলো।

-মোমেনা কালকে যা হয়েছে ভুলে যাও।

মোমেনা উত্তর দিলো না।হালকা করে মাথা নাড়ালো শুধু।

-কী ব্যাপার, কথা বলছো না কেন?

-বুজছিই তো।গরিব মাইনষের আবার কিসের মান ইজ্জত। যা যাওয়ার,গেসেই গা।

-ভালো।আর ঠিকমত কাজ করো।কালকের ঘটনা নিয়ে কাজে গাফলতি করবে না।আমি বাইরে যাচ্ছি।

-হু

এরপর ভিনার রুমে যেয়ে ভিনার পড়ার টেবিলে সুন্দর করে একটা চিরকুট রাখলো।চিরকুটে লেখা 

'তোমার বাবা আর আমি বাইরে যাচ্ছি।তোমাকে নেয়ার ইচ্ছে ছিলো,কিন্তু তোমার বাবা বললো ওখানে গেলে তুমি আরো আনকম্ফরটেবল ফিল করবে।রাতেই এসে পরবো আমরা।মোমেনাকে বলে যাচ্ছি,তুমি খেয়ে নিও।'

চিরকুট এমন জায়গায় রাখলো যেন সহজে চোখে না পরে।এরপর রুম থেকে বের হয়ে সোহেলকে বললো,

-তোমার মেয়ে গভীর ঘুমে।ডাকলাম,উঠলো না।তাই পাশে চিরকুট রেখে দিয়েছি। 

-ভালো করেছো।

এরপর গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে গেলো দুইজন।মাঝপথে ছবি তোলার বাহানায় সোহেলের মোবাইল নিজের কাছেই রাখলো মুনা।যখন ভিনা ফোন দিচ্ছিলো,তখনও মোবাইল মুনার কাছেই ছিলো।রাস্তা ভুল হওয়ায় সোহেল বেশ বিপাকে পরেছিলো,তাই ভিনাকে ফোন দেয়ার কথা আর মাথায়ও আসেনি।মুনা গাড়ি সিটে আয়েশ করে হেলান দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছিলো,আহ্!পৃথিবী তাহলে এত সুন্দরও হতে পারে!


এলার্মে ঘুম ভাঙলো ভিনার।আড়মোড়া দিয়ে উঠে বসলো।ফোন চেক করে দেখলো সোহেল কোনো ফোন দেয়নি।যাবিরের তিনটা মিসকল রয়েছে।মন খারাপ করে দীর্ঘশ্বাস ফেললো ভিনা।সবকিছু যেন হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে।জামা পাল্টে ঘরের চাবি নেয়ার জন্য পড়ার টেবিলের সামনে আসতেই দেখলো বইয়ের নিচে একটা চিরকুট। সেটা পড়ে চোখ ভরে আসলো।একটাবার ও সোহেল জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করলো না?একটাবার ও না?মুনা যদি কোনোভাবে না নিয়েও থাকে,ফোন তো দিতে পারত অন্তত।চোখের পানি মুছে বের হয়ে গেলো ভিনা।আনমনে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে।ভোতা অনুভূতি কাজ করছে। বাসায় যাই হচ্ছে,খুব আস্তে ধীরে হচ্ছে।আজকে ওর বাবা ওকে দুইটা চড় মেরে খারাপ কথা বললে একধরনের তীক্ষ্ণ অনুভূতি কাজ করত। চিৎকার চেচামেচি করে হলেও ভেতরের সব ক্ষোভ বের করে দেয়া যেত।এখানে সেসব কিছু হচ্ছে না।কেউ সরাসরি কথা বলছে না,সরাসরি আঘাত করছে না,কিন্তু কষ্ট হচ্ছে ভেতরে।এমনকি কষ্ট বের ও করা যাচ্ছে না।সব ভাবতে ভাবতে যাবিরের ছাদে চলে আসলো ভিনা।তাকিয়ে দেখলো এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে যাবির।ভিনাকে আসতে দেখে নিজেও এগিয়ে আসলো।

- অবশেষে! আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়ত আসবে না আজকে।

-ভেবেই যদি থাকো,অপেক্ষা করছিলে কেন?

-আসবে না জেনেও প্রেমিকার অপেক্ষা করাই প্রেমিকের কাজ!

-আবার শুরু হলে?

-শুরু আর কই করতে দিলে....

-প্লিজ যাবির,এসব ঢং আমার অসহ্য লাগে।

-আমি ঢং করছি না ভিনা।

-যাই করছো,বাদ দাও।

-ঠিকাছে।এখন বলো,কোথায় ছিলে এই কয়দিন?

-জাহান্নামে!

-মানে?

-কিছু না।

-আমাকে কিছুই খুলে বলো না তুমি ভিনা।তোমার ফ্যামিলি সম্পর্কে আমি তেমন কিছুই জানি না।কে আছে না আছে,কোথায় কী,কিছুই বলো না তুমি।এতদিন ধরে আমাদের পরিচয়,কিন্তু আমি কিছুই জানি না তেমন।

-জানার মত কেউ না তুমি।

-আমি কি কোনো ভুল করেছি?আবার?

-না

-তাহলে প্রায়ই কেন হুট করে চলে যাও?কেন কিছু বলো না তুমি?

-এমনি।

-প্লিজ ভিনা,রাগ থাকলে আমার উপর ঝাড়ো,সমস্যা নেই।কিন্তু এভাবে চেপে রাখলে তো চলবে না।কী হয়েছে যে গত কয়দিন তুমি আসোনি?

-আমার বাসায় গেস্ট ছিলো।তাকে সময় দিয়েছি।

-গেস্ট?কে?

-আমার এক ফুপু।

-নাম কী?

-থামো যাবির!ইনভেস্টিগেশন করছো কেন?

-কোথায় কী করলাম,শুধু জানতে চাচ্ছি কী হয়েছে।এটাও কী জানতে পারি না?

-না!কিচ্ছু পারো না।

-এত চাপা স্বভাবের হলে হবে ভিনা?কেন এত লুকিয়ে রাখো সব?নিজের পরিবার,অতীত,নিজের অনুভূতি..... 

-কারণ কেউ ভালো না,কেউ না....

-আমিও না?

-না

-তাহলে আসলে যে?

ভিনা যাবিরের দিকে তাকালো।কিছু বললো না।যাবির এগিয়ে এসে ভিনার হাত ধরলো, এরপর সামনে আসা এলোমেলো চুলগুলো আলতো করে কানের পাশে গুজে দিলো।এরপর খুব কাছে এসে বললো

-তোমার এই ছন্নছাড়া রূপ যে আমাকেও ছন্নছাড়া করে দেয় জানো?

ভিনার পুরো শরীর অবশ হয়ে এসেছে।যাবির কপালে একটা চুমু দিলো।এরপর সড়ে আসলো।ভিনা কিছুক্ষণ বুঝতে পারলো না কী করবে,এরপর রেলিং এর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।

-জানো,আমার সব হারিয়ে যাচ্ছে।

-কথা বলেছিলে আঙ্কেলের সাথে?

-সুযোগ হয়নি।

-যাই হোক,অবিশ্বাস করো না যাকে ভালোবাসো ।অনেক সময় আমরা যা দেখি,সেটা আসলে আমাদের দেখানো হয়।

-কীভাবে বুঝবো যা দেখছি,সেটা আসলে দেখানো হচ্ছে?

-মনই বলবে।মানুষের মন গায়,যখন কিছু ভুল হতে থাকে।

যাবির পাশে এসে দাঁড়িয়ে ভিনার হাতে হাত রাখলো।ভিনা উদাস মনে বোঝার চেষ্টা করলো,মন কী গাচ্ছে......
.
.
.
চলবে.............................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন