ভাইয়ের বন্ধু যখন বর - পর্ব ১১ - ইয়াসমিন তানিয়া - ধারাবাহিক গল্প


:জিসান মায়ের কলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে।মা তুমি কি আমার উপর রাগ করেছো।

:মা কি সন্তানের উপর রাগ করে থাকতে পারে...বল.

:তাহলে কিছু বলছো না কেন।আমার উপর রাগ হলে আমাকে মারো, বকো,কিন্তু চুপ করে থাকবে না।তুমি আমার সাথে কথা না বললে আমার যে কিছুই ভালো লাগে না,জানো না।

:পাগল ছেলে আমি তোর উপর কেনো রাগ করবো।তুই তো এমন কোন অপরাধ করিসনি।আচ্ছা বলতো,সত্যি করে বলবি,তুই কি তিশা কে পছন্দ করিস।

:মা আমি তিশাকে ভালোবাসি।নিজের জীবন থেকেও বেশি ওকে ভালোবাসি।কবে, কখন, কিভাবে জানি না কিন্তুু এতোটুকু জানি ও ছাড়া আমি শূন্য। আমার খালি জীবন কে ভরাট করার জন্য ওকে আমার প্রয়োজন।

(জিসান অর মায়ের সাথে খুব ফ্রি,সারা দিন কি করে না করে সবই ওর মাকে বলে,তাই আজও ওর ফিলিংস কাউকে বুঝতে না দিলেও মায়ের কাছে লুকায় নি)।

:আর তিশা!!!!!! তিশা কি তোকে পছন্দ করে।

:জানি না মা..... ও কখনো আমাকে সেই চোখে দেখেছে কিনা জানি না।আমিও তো আমার ফিলিংস ওকে কখনো বুজতে দেইনি।

:কিন্তুু আমার তো ভয় হয় তকে নিয়ে,তোর জিদ আর রাগের কারনে তুই সকলের কাছ থেকে আলাদা হয়ে জাস,তিশা কি তোর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে।

:জিসান ওর মার হাতটা ধরে,তুমি চিন্তা করো না,যেদিন ও আমাকে মন থেকে মেনে নিয়ে ভালোবাসবে,আমার জিদ ও রাগটাকেও আপন করে নিবে।আমি ওকে আমার মতো বানিয়ে নেবো।

:দেখিস আবার ওকে জব্দ করতে গিয়ে তুইনা আবার জব্দ হয়ে যাস।(জিসানের মা একটি হেসে)

শোন রায়হান কে বলে দিস আমরা এই শুক্রবারেই আসছি।আমরা তো তিশাকে দেখেছিলাম,তাওহিদ এর বিয়ের সময়, তখন তো ও আরো ছোট ছিলো।আর এখনতো ও এই বাড়ীর ছোট বউ,আমাদের ও তো কিছু দায়িত্ব আছে।

:আচ্ছা মা আমি বলে দেবো।

২দিন জিসানের সাথে কোন দেখা বা কথা হয়নি তিশার।

:দুদিন পর জিসান রায়হানদের বাড়ীতে আসছে,তিশাকে পড়াতে।এদিক দিয়ে রায়হানের চাকরীটাও হয়ে গেছে।

তিশার মা দরজা খুলে দেখে জিসান দাঁড়িয়ে আছে।
আরে বাবা তুমি এসো এসো ভেতরে এসো।তুমি সেদিন দেখা না করেই চলে গেলা। কাজটা টিক করোনি।

:আসলে আংটি বাড়ীতে যাওয়াটা খুব দরকার ছিলো।কারন বাসার কেউ কিছু জানতো না আর আমি চাইনা তারা অন্য কারো থেকে কিছু জানতে পারুক।তাই আর কি....

:আারে তুমি কি এখনো আমাকে আংটি বলবে।মা ডাকবে এখন থেকে।
(জিসান একটি লজ্জা পেলো কথাটা শুনে।

:ওকে মা।আসলে আমি তিশাকে পড়াতে আসছি।ওর কিছু সমস্যা ছিলো, আমি বলেছিলাম গ্রামের বাড়ী থেকে এসে সোলভ করে দেবো।তাহলে আর ওর পরীক্ষাগুলো দিতে সমস্যা হবে না।তাছাড়া আমাকেও তারাতারি বাবার ব্যবসায় জয়েন হতে হবে।বাবা ওয়ার্নিং দিয়েছে।

:আচ্ছা টিক আছে, কিন্তুু তোমার বউতো আজ দুদিন ধরে খেয়ে আর ঘুমিয়ে কাটাচ্ছে। যাও তুমি ওর রুমে গিয়ে ডাক দেও।

:বউ শব্দটা শুনে জিসানের খুব ভালো লাগলো।তিশার রুমে গিয়ে দেখি আমার ম্যাডাম হাতপা গুটিসুটি করে গুমিয়ে আছে।ওড়না টেবিলে রাখা।ওকে অনেক আদর করতে মন চাইছিলো,ভালোবাসা দিয়ে ওকে জরিয়ে ধরতে মন চাইছিলো।কোনও কিছু চিন্তা না করে ওর গালে একটা কিস করে দিলাম,কিন্তু ম্যাডামের কোন সারা নেই,বুজলাম সে ঘুমে দিশাহারা। 
তাই ওর পাশেই ফ্লোরে গিয়ে বসে ওর ঘুমন্ত মুখের মায়ায় জেনো পরে গেছি।
তোকে খুব কাছে পেতে মন চাইছে তিশা।তুই আমার নেশায় পরিণত হচ্ছিস।তোর নেশাটা আমাকে ভেতর থেকে পুড়িয়ে ফেলছে।তোকে পাবার জন্য কতো কাল নিজেকে পুড়িয়ে ছাই করেছি তা তো তুই জানিসই না।এখন থেকে আমার ভালোবাসায় তোকেও আমি পুরাবো,তোর মন, দেহে শুধু আমার নেশাই জরিয়ে থাকবে।একদিন তুইও আমার ভালোবাসায় নিজেকে পুড়িয়ে মারতে চাইবি।এগুলো বলে জিসান তিশার ঠোঁটের দিকে আগাতে তাকে।
আরে এই আমি কি করছি,নিজেকে আরো সংযত করতে হবে আর তো কিছুদিন তার পর তিশা আমার শুধুই আমার।তিশার দিকে তাকিয়ে,তোকে বধু সাজিয়ে আমার ঘরে নিয়ে যাবো।তার পর মন ভরে তকে ভালোবাসবো,আমার ভালোবাসাটা তোর সহ্য হবে তো....।একটু হেসে

জিসান উঠে গ্লাস থেকে হাতে একটু পানি নিয়ে তিশার মুখে মারে।তিশা ভয়ে লাফিয়ে উঠেই....

:এই কেকককক রেরররর।

:জিসান লাইটটা ধরিয়ে চেয়ার থেকে ওরনাটা নিয়ে তিশার দিকে ছুড়ে মারে।আর নিজে চেয়ারে গিয়ে বসে পরে।

:তিশা তো শোকড,প্রথমত জিসানকে নিজের ঘরে দেখে,তার পর শোকড এভাবে ওর দিকে ওড়না মারার জন্য।
আপনে এখানে কি করেন,আর আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম আপনাকে আসতে কে বলছে এই ঘরে।

:জিসান-মা বলছে।(জিসান মোবাইল টিপছে আর বলছে)

:তিশা-মা কার মা।

:জিসান-আমার শ্বাসুড়ী,আর তোর মা।

:তিশা-শ্বাসুড়ীইইই।

:জিসান-হুমমমম,তোর কি আর কিছু বলা আছে,তাহলে বল,আর যদি না থাকে তাহলে তারাতারি ফ্রেস হয়ে পড়তে বস।

:তিশা-আপনে আমাকে পড়াতে এসেছেন।কিন্তু কেনো???

:জিসান-কেনো মানে,এটা কেমন প্রশ্ন।

:তিশা -আরে আমি তো বিয়ের ডরে আপনার কাছে পড়তে রাজি হয়েছিলাম।পরীক্ষায় খারাপ করলে নাকি ভাইয়া আর বাবা আমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে,তাই এতো দিন আপনার অত্যাচার সহ্য করছি।কিন্তু লাভ কি হলো,সেই বিয়েতো হয়েই গেলো।তা আবার হিটলারের সাথে।তাহলে আমি এখন আর কেনো পরে নিজের এনার্জি নস্ট করবো।কথাগুলো একনাগাড়ে বলে জিসানের দিকে চোখ যায়।

(জিসান রেগে তিশার দিকে তাকিয়ে আছে)

হে খোদা এ আমি কার সামনে কি বললাম।
সরি জিসান ভাইয়া,আসলে..... আর কোন কথা বলতে দিলো না।

:জিসান-মন চাইতাছে ওকে একটা থাপ্পড় মারি,রাগটা এতো ক্ষন কন্ট্রোল করলেও জিসান ভাইয়া শুনে মাথা নস্ট হয়ে গেছে।

জিসান তিশার হাতটা পেছনের দিকে বাকিয়ে নিজের দিকে টেনে আনে,তিশা জিসানের বুকের সাথে মিশে আছে,ভয়ে মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।

:জিসান - কি বললি, আমি হিটলার,তোর উপর অত্যাচার করি।আর লজ্জা করে না নিজের স্বামীকে ভাই বলে ডাকিস,কেউ শুনলে আমার মান সম্মান কিছু থাকবে না।আর বিয়ে হয়েছে বলে কি পরতে হবে না।
পরীক্ষা খারাপ করলে আমার শাস্তি থেকে তোকে কেউ বাঁচাতে পারবে না,বুজলি।কথা বলিস না কেন,,,

:তিশা:সরি,ভুলে বলেছি,আর প্লিস আমাকে ছাড়ুন, আমার খুব লাগছে।

জিসান তিশাকে ছেড়ে....

:সরি,একটু জোরেই ধরে ফেলেছি।যা ফ্রেস হয়ে তারাতারি আস।

:তিশা ফ্রেস হয়ে পড়তে বসলো।জিসান শুধু তিশার সমস্যা গুলো সমাধান করে চলে গেলো।

রাতে ডিনারে....

:বাবা জিসানের পরিবার এই শুক্রবার আসছে।তিশাকে দেখতে,আর আংটি পড়াতে আসবে,যাতে কেউ কোন উল্টাপাল্টা কথা না বলতে পারে।কারন ওদের বিয়েটা তো কেউ এখনো জানে না।তাই তারা......তিশার বাবা আর কথা বলতে দিলো না।

:হুমমমম,আমি বুঝতে পারছি, আর কিছু বলতে হবে না।আমি এতেই খুশি জিসানের পরিবার খুব সহযে বিয়েটা মেনে নিলো।তোমরা সবাই শুক্রবারের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে নেও।

:তিশা শুনছে সবই কিন্তু কিছু বলার নাই।

:তিশা রাতে ফেসবুকে ডুকে কিছু সময় কাটাচ্ছিলো ঘুম আসছিলো না বলে।

হঠাৎ একটা ম্যাসেজ আসলো,যা দেখে তিশার চোখ কপালে উঠে গেলো।

:কি রে এতো রাতে তুই অনলাইন এ কেনো।কার সাথে গল্প করছিস,কয়টা বাজে এখনো ঘুমাসনি কেনো।নাকি তোকে ঘুম পারাতে আমি আসবো।

ম্যাসেজ টা আর কারো না জিসানের।

তিশা ভয়ে ফোনটাই বন্ধকরে শুইয়ে পরে।

জিসান এমন কেনো,সব সময় রাগ করে কথা বলে,মনে হয় ছোটবেলায় করলা একটু বেশি কাইছে,উনার মাকে জিঙ্গেস করতে হবে।এই লোকটার সাথে সারা জীবন কিভাবে কাটাবো, হে আল্লাহ, আমাকে রক্ষা করো।
.
.
.
চলবে.......................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন