ভাইয়ের বন্ধু যখন বর - পর্ব ১৩ - ইয়াসমিন তানিয়া - ধারাবাহিক গল্প


*তিশার পরীক্ষা আজ, তাই সবার কাছ থেকে দোয়া নিয়ে বাড়ী থেকে বের হলো,রায়হান আগেই বাড়ীর বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।আজ রায়হান নিজেই নিয়ে যাবে বোনকে।

বাড়ী থেকে বের হয়ে দেখি জিসান দাঁড়িয়ে আছে।রায়হান ভাই আর জিসান কথা বলছে।আমাকে দেখে জিসান শুধু একবার তাকালো,আর সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিলো।রায়হান ভাইয়ের হাতে একটা ব্যাগ দিয়ে হুন্ডাটা নিয়ে চলে গেলো,আমি তো শোকড। লোকটা আজও একটা কথা বললো না।আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে গেলো।
আমি রায়হান ভাইয়ের পাশে দাড়ালাম।

আরে তুই আসছোস,আরো একটু আগে আসলে জিসানের সাথে দেখা করতে পারতি,বেচারা এতোক্ষন এখানেই ছিলো তোর জন্য।

তোমার বন্ধু আমাকে দেখেই পালিয়েছ, এ কথা তোমায় কিভাবে বলি।তিশা মনে মনে.....।

নে ধর, এটা তোর জন্য জিসান দিয়েছে।

কি এটাতে.....।

আরে আমি কি করে বলবো।তোকে দিয়েছে তুই দেখ।আমি বরং একটা রিকসা নিয়ে আসি।

একটা সোপিং ব্যাগ এর মতো,ব্যাগটা খুলে দেখলাম, আরে এখানে একটা চকলেট বক্স, একটা কলম,একটা খুব সুন্দর হাতের ঘড়ি আছে।আর একটা চিরকুট,

"সব চিন্তাবাদ দিয়ে ভালোমতো পরীক্ষা দিস।"

আমার খুব হাসি পেলো চিরকুট টা দেখে।

রায়হান ভাই আমাকে হলে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো।
আসার সময় নিলুর সাথে আসতাম।

পরীক্ষার এ কয়দিন জিসানের সাথে আমার একবারও দেখা হয়নি।কিন্তুু জিসান প্রতিদিনই রায়হান ভাই বা মায়ের কাছ থেকে আমার সব খবর নিতো।

এভাবে এক এক করে সব পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলো,আর আজ আমার লাস্ট পরীক্ষা তাই কিছু ফেরেন্ডরা ডিসিশনস নিলাম পরীক্ষার পরে একটা ছোট পার্টি করবো,কারন এর পর হয়তো কেউ কাউকে দেখবো না।
যেমন বলা তেমন কাজ,পরীক্ষার পর সবাই একটা রেস্টুরেন্ট এ গেলাম।আমাদের সাথে আমাদের কোচিং এর কিছু ফেরেন্ডরাও যোগ দিলো।

সবাই খাবার অর্ডার করে গল্প করতে লাগলাম।হঠাৎ আবিরও কোথা থেকে যেনো হাজির হয়ে গেলো।আবিরকে দেখে তো আমি আবাক। কারন অর এখানে কি কাজ।
আরে আবির ভাই, আপনে এখানে।কোন কাজে আসছেন।

না তোদের পার্টিতে জয়েন হতে আসছি,আমি থাকলে কোন সমস্যা।

না সমস্যা হবে কেনো,আপনে কিভাবে জানলেন আমরা এখানে।

আরে নিলুকে কিছুক্ষন আগে কল করলাম ও বললো তোরা সবাই নাকি পার্টি করতে এখানে আসছোস।তাই আমিও বিনা ইনভার্ট এ এসে হাজির হলাম

ওওওও আচ্ছা।আমিতো নিলার দিকে তাকানোর সাথে সাথে বেচারি ভয় পেয়ে গেলো।

কি মনে করে যেনো আমি একটু পিছনের দিকে তাকলাম,কিন্তু যা দেখলাম মনে হলো,আমার এখনি মনে হয় দম বন্ধ হয়ে যাবে।

পেছনের দুটা টেবিল পরেই কয়েকজন বসে আছে তাদের মধ্যে একজন আমার দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে,এই চোখ অনেক চেনা,চোখগুলো থেকে মনে হয় আগুন বের হবে, আর আমাকে জ্বালিয়ে দেবে।কারন এই চোখ দুটো আর কারো না জিসানের।

এই দুনিয়াতে কি আর কোন লোক নাই,ঘুরেফিরে জিসানের সামনেই কেনো পরি আমি।পোড়া কপাল আমার, যার ভয়ে দুনিয়া ছাড়ি সেই আমার সাথে মরে।হে আল্লাহ আমাকে বাঁচিও এবার।তার উপর এই আবির আর সময় পাইনি আসার,,,,ওর জন্য কতো কি হলো।জিসান তো মনে করবে,আমিই আবিরকে আসতে বলছি।রেগে মেগে নিলার দিকে তাকালাম।

কিরে তুই এতো রেগে আছিস কেনো,সরি ইয়ার।আর আবির ভাই আসছে তো কি হইছে,সে তো আর অপরিচিত কেউনা।

রেগে আছি কেনো,দেখ আমার যম পিছে বসে আছে।

নিলু পিছে তাকিয়ে তো বেচারি শোকড, আরে জিশশশশান ভা,,ভা,,ই।

হুমমমমম,জিসান।এবার বুঝতে পারছো আমি রেগে আছি কেনো।

আরে মাপ করে দে দোস্ত, তোর জামাইয়ের কি কোন কাজ নাই,এখানে কি করে,আর সে জানলো কি করে তুই এখানে।

আরে আমি কি করে বলবো,মনে হয় কোন কাজে আসছে,তাইতো পরিবেশ এতো শান্ত।

হুুমমমমম,মনে হয়।তারা তারি খেয়ে চল চলে যাই।তা না হলে জিসান ভাই এসেই তোকে ঠাশঠাশ করে লাগিয়ে দিবে।

দুই বান্ধবী মিলে মিনমিন করেই কথাগুলো বলছে।

এদিক দিয়ে জিদ্দের চোটে জিসানের চেহারা লাল হয়ে গেছে,আজ আবার তিশাকে আবির ছেলেটার সাথে দেখছে।যা জিসানের একদম পছন্দ না,কিন্তুু জিসান তবুও চুপ হয়ে আছে কারন সাথে ওর কিছু ফেরেন্ডরাও আছে,আর ওরা কেউ তিশাকে আগে দেখেনি,তাই এখানে সিনক্রিয়েট করতে চায়না জিসান।
জিসান তিশার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কপি খাচ্ছে আর বলছে, যা করার করে নেও সোনা,এর পর তোমাকে আমার খাচায় বন্দি হতেই হবে।তখন দেখবো তুমি উড়ো কিভাবে।

তিশা আর কোন কথাই বললো না কারো সাথে,আর আবির তো সেই কখন থেকে বাজতেই আছে,যা তিশার একদমই ভালো লাগছে না।

হঠাৎ আবির তিশার সামনে হাটুগেরে বসে তিশাকে প্রপোজ করলো।

তিশা আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।বলবো বলবো করে বলা হয়নি,কিম্তু আজ আর মনের কথা মনে রাখতে চাই না,তাই তোমাকে বলেই দিলাম।তুমি কি আমার বউ হবা।

তিশাতো লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো,আবির কি সিনক্রিয়েট করছেন,সবাই দেখছে প্লিজ উঠে চেয়ারে বসেন।

না তিশা তুমি আগে বলো তুমি আমার ভালোবাসা একসেপ্ট করেছো।

তিশারতো মনে চাইতাছে, একটা দড়ি নিয়ে গলায় দড়ি দিয়ে মরে যাই,রেস্টুরেন্ট এর সব লোক ওদের দিকে তাকিয়ে আছে,সাথে জিসানও।

জিসান শুধু দাঁতেদাঁত চেপে বসে আছে তিশার উত্তর জানার জন্য।

আবির পাগলামো ছাড়েন,আর এসব আজে বাজে কি বলছেন,কি জানেন আমার সম্পর্কে,,,,,,।আমি বিবাহিত।

না আমি বিশ্বাস করি না,আগেতো কখনো শুনি নাই।আর আজ হঠাৎ বলছো তুমি বিবাহিত, দেখো তিশা একদম মিথ্যা বলবে না।

ও খোদা,,,,,,আরে বেকুব তকে মিথ্যা বলে আমার কি লাভ।ফাজিল কোথাকার,, বিশ্বাস না হলে নিলাকে জিঙ্গেস করে দেখিস।
আর নিলা এই গাধাটা আমার সামনে কোন দিন যাতে না আসে।

তিশা আর এক মুহুর্তেও ওখানে থাকেনি।বাহিরে চলে গেলো।

what is this...নিলু,তিশা আমাকে তুই করে বলছে।এ কেমন ভাষা।আমি কি এমন রং বললাম।

ভাইয়া কিছু বলার আগে জায়গা,আর পরিস্থিতি বুঝে বলতে হয়,আর তুমি তো,,,।বাদ দেও এটা সত্য তিশার বিয়ে হয়ে গেছে।

তাহলে আমাকে কেনো বলিস নি।

আরে তিশার পরীক্ষার পরে সবাইকে বলা হতো।অনেকটা ঘরোয়া ভাবে বিয়েটা হইছে,তাই কেউ জানে না।

বেচারা আবির মনটাই ভেঙে গেলো।

এদিকদিয়ে তিশা....

নিজেকে বকতে বকতে হেটে যাচ্ছে,কচু একটা রিকসাও পাইনা।

হঠাৎ তিশার সামনে একটা বাইক দাঁড়ালো। তিশা বাইক টা চিনে।এটা কার।তিশা ভয়ে পিছাতে চাইলে হঠাৎ জিসান বলে উঠে,,,,,চুপচাপ উঠে বস।খুব গম্ভীর ভাবে কথাটা বলে।
জিসান আর কোন কথা বলে নি।

এখন না বসলে আমার কপালেই খারাপি আছে।তাই চুপচাপ বসে পড়াই ভালো।আরে আমিতো আবার বাইকে উঠতে ভয় পাই।রায়হান ভাইকে শক্ত করে ধরে রাখতাম। কিন্তু এখন কি করি।কিছু বললে আবার কে জানে আমাকে হয়তো বাইকের নিচে ফেলে দিবে।

জিসান ভালো করেই জানে তিশা বাইকে উঠতে ভয় পায়,তাই তিশার একটা হাত টান দিয়ে জিসানের বুকের সামনে নিয়ে আসলো।তিশাও ভয়ে হাত আর সারালো না।

তিশা জিসানের পিঠের সাথে একদম লেগে আছে, এতে তিশার খুবই আনইজি লাগছে।এমন করে আগে কখনো জিসানের সাথে বসেনি।আর জিসানও এর আগে তিশাকে নিজের বাইকে উঠায়নি।কিন্তুু আজ জিসানের খুব ভালো লাগছে,বাইকের আয়না দিয়ে তিশাকে দেখছে,বেচারি তিশা জিসানের এতো কাছে বসায় লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।যা জিসান খুব উপভোগ করছে,একটু আগে তিশার উপর যে রাগ ছিলো তা এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো।

জিসান সারারাস্তায় খুব আস্তেই বাইক চলালো,তিশার জন্য।

কিছুক্ষন পর তিশার বাড়ীর সামনে এলে,তিশাকে নামিয়ে দিয়ে জিসান চলে যায়।

আর তিশা জিসানের যাওয়ার পথে চেয়ে থাকে।তিশা চিন্তা করছে এটা কিভাবে হলো,আমাকে আজ কিছুই বললো না।কেন.....।চান্দু এতো ভালো হলো কেমনে।

তিশা জানেই না জিসান কি প্লান করে আসছে এতো দিন।
.
.
.
চলবে.....................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন