ভাইয়ের বন্ধু যখন বর - পর্ব ১৪ - ইয়াসমিন তানিয়া - ধারাবাহিক গল্প


তিশা বাসায় প্রবেশ করে দেখে, বাসায় মেহমান দিয়ে ভরা,সব আত্মীয় স্বজন কে একসাথে দেখতে পেয়ে তিশা কিছুটা অবাক হয়।তিশাকে দেখে ও সবাই মুসকি হাসাহাসছে।তিশা বড় সবাইকে সালাম দিয়ে সবার সাথে কিছুক্ষন কথা বলে,মা কে খুঁজতে লাগলো।

তিশা খেয়াল করলো আজ তার বাবা ও ভাই কেউ অফিসে যায় নি।

মা মা.... তিশা চিল্লিয়ে।
আরে তিশা এসে পরেছিস, ভালো হলো,যা আগে ফ্রেস হয়ে আস।তারপর কিছু খেয়ে নিয়ে কিছুক্ষন রেস্ট নে।তা না হলে খুব ক্লান্ত লাগবে রাতে।

মা এসব কি হচ্ছে, বাসায় কি কোন পার্টি হবে।

তিশার বোন সীমাও এসেছে, দেখো যার বিয়ে তার কাম নাই পাড়া প্রতিবেশির চোখে ঘুম নাই।বলেই সবাই হেসে উঠলো।

মা কি বলছে, সীমা।তিশার মাথায় কিছুই আসছে না,এমনেই মেজাজ খারাপ তার উপর সবার এতো ঢং আর সহ্য হচ্ছে না।

সীমা আমার মেয়েটাকে আর লজ্জা দিওনা।তিশা মা তুই আগে ফ্রেস হয়ে এসে কিছু খেয়ে নে।আস্থে আস্থে সব জানতে পারবি।

কারো কথার কোন আগা মাথাও বুজালাম না,আর ভালোও লাগছে না তাই আর তর্ক না করে সোজা রুমে চলে গেলাম।ফ্রেস হয়ে বিছায় বসে বসে ভাবছি সবার কথার মানে।

হঠাৎ ফোনে একটা ম্যাসেজ আসলো, আমার তো চোখ কপালে উঠে গেলো।

"খেয়েদেয়ে, কিছুক্ষন ঘুমা,সন্ধ্যায় দুজন মেয়ে আসবে তকে মেহেদি দিতে।কোন নাটক না করে তাদের মেহেদী লাগাতে দিবি।"

হুমমম টিক ভাবছেন,জিসানের ম্যাসেজ।

আরে মেহেদী কেনো দেবো, পাগল নি।তিশা আবার রুম থেকে বের হয়ে সোজা অর মার ঘরে যায় মাকে খুঁজতে।মার ঘরে গিয়ে তিশা যেনো আকাশ থেকে পড়ছে।
চারপাশে সোপিং ব্যাগ,গহনা, মেহেদী, হলুদের ডালা, আরো অনেক কিছু।যা তিশা শুধু দেখছে কিন্তু বুজে উঠতে পারছেনা এসব কি,আর কার।

হঠাৎ মার ডাকে ভাবনার ছেদ পরে,মা এসব কি,আর এগুলো কার।আমাকে বলে মেহেদী লাগাতে আসবে কেনো।কিছুতো বলো।

নতুন বউ মেহেদী লাগাবে না, কি আমরা লাগাবো।তিশার ফুফি একটু হেসে বললো।

নতুন বউ মানেননন।
আজ বাদে কাল যার বিয়ে তাকে তো নতুন বউ ই বলবো।কি বলো সবাই।আবার সবাই হা হা কারে হেসে উঠে।

আমার বিয়ে, কার সাথে।

এ মা এটা কি ধরনের প্রশ্ন তিশা,তোমার বিয়ে আর কার সাথে হবে জিসানের সাথে।আজ মেহেদি, কাল গায়ে হলুদ,আর পরশু বিয়ে দিয়ে উঠিয়ে দেবো।তিশার মা।

হঠাৎ করে এসব কি,আর আমাকে বিদায় দেবার এতো জলদি কেনো সবাইর। কেউ কিছু বলার প্রয়োজন মনে করলা না আমাকে।

আরে হঠাৎ কই।এক মাস ধরে সব প্লান চলছে।

এতো কিছুর প্লান করেছো আমাকে বলনি কেনো।

আরে পাগলী মেয়ে আমার, জিসান মানা করেছে,তোর পরীক্ষা বলে।তুই জাতে কোন টেনশন না করিস তাই তোর থেকে লুকিয়ে এতো দিন রাখতে হইছে।
ও তো পারে না তোকে আজই নিয়ে যায়।কিন্তুু তুই আমার এক মাত্র মেয়ে অনুষ্ঠান না করে কিভাবে তুলে দি বলতো।অনেক কথা হইছে এখন যা কিছু খেয়ে রেস্ট নে।

তিশাতো রেগেমেগে ফায়ার।সোজা নিজের রুমে গিয়ে দরজাটা ঠাস করে লাগিয়ে দেয়।
 
বিছানায় বসে, তাহলে এই ছিলো শয়তানটার প্লান,তাইতো আমাকে কিছুই বললো না।কারন আমাকে শাস্তি দেয়ার প্লান তো আগেই করে রেখেছে।কি করবো আমি,কতো ইচ্ছা ছিলো,পরীক্ষার পর কতো ঘুরবো ফিরবো,আনন্দ করবো,সব এক নিমিষে মাটি করে দিলো।আমাকে খাঁচায় বন্দি করার সব প্লান মিস্টার জিসান করে ফেলছে। আমি চাইলেও এ থেকে মুক্তি পেতে পারবো না এখন।এসব ভাবতে ভাবতে তিশা ঘুমিয়ে পড়ে।

সন্ধ্যায়

তিশার ফোনে আবার ম্যাসেজ আছে।
"""তুই এখনো কিছু খাস নি কেনো।উঠ ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি খেয়ে রেডি হয়ে নে।ওরা এসে পড়বে,মেহেদী দিতে।তুই উঠবি নাকি আমি আসবো।আর আমি আসলে তোকে কিন্তুু সঙ্গে করে নিয়ে যাবো।'""'

তিশা মেসেজ দেখে ভয় পেয়ে লাফ দিয়ে বসে পরে।বিশ্বাস নেই এই জিসানের।সত্যি সত্যি যদি আজই উঠিয়ে নিয়ে যায়।আমার বাড়ীর কেউ ওকে আটকাতে ও পাড়বে না।না কিছু ভেবে আর লাভ নেই।আমাকে বলি দেবার সব প্লান হয়ে গেছে।গিয়ে রেডি হয়ে নি।

তিশাকে তার কাজিনরা রেডি করে দিলো।আজও তিশা শাড়ি পড়লো,প্রথমে পরতে চায় নি,পড়ে সবার জোরাজোরি তে পড়তে হলো।কিছু ফুলের গহনা পড়িয়ে দিলো।হালকা সাজ আর ফুলের গহনাতে তিশাকো অসাধারণ লাগছে।তিশা ড্রয়িংরুম এ এসে একটু অবাক, ওর মেহেদীর জন্য রুম গুলো খুব সুন্দর করে সাজানো হইছে।তিশা ভাবছে এতো অল্প সময় এতো কিছু কেমনে করছে এরা।

তিশা চুপচাপ বসে আছে,কিন্তুু মেহেদী লাগাতে কেউ আসছে না।তিশা ইশারা দিয়ে সীমাকে ডাক দিলো।

কি হলো মেহেদীর জন্য শং সাজিয়ে বসিয়ে রাখছিস। আরম্ভ করছোস না কেনো।কার জন্য অপেক্ষা করছিস।

আরে দাড়া, এতো তারা কি তোর।এখনি আরম্ভ হবে সে আগে আসুক।

কে আসবে আবার।কথাটা বলার সাথে সাথে দেখি আমার সব কাজিনরা কাকে যেনো ধরে নিয়ে আসছো।

সামনে সীমা দাঁড়ানো ছিলো বলে দেখতে পারিনি।

এইদেখ এসে পরেছে।

আমি সামনে তাকিয়ে দেখি জিসান দাঁড়িয়ে আছে।আমার সাথে মেচিং করে নীল একটা পান্জাবী পরেছে।দেখতে কোন অংশে তাকে কম লাগছে না।জিসান আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে মনে হয় আগে কখনো দেখেনি।ওর চোখে চোখ পড়ায়,আমি সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।কেনো জানি আমি জিসানের চোখে চোখ রাখতে পারিনা।যখনি উনার চোখের দিকে তাকাই মনে হয় এই চোখ দুটো হাজারো কথা বলতে চায়।

আমি টিক ওর সামনে বসেছি,আমার ছোট পরীটাকে আজ সত্যিই পরীর মতো লাগছে।কাচা ফুলগুলো ওর সৌন্দর্য কে আরো ফুটিয়ে তুলছে।মন তো চাইছে আজই ওকে নিয়ে যাই।আমিতো আজ পাগল হয়ে যাবো তিশা তোর প্রেমে।কি নেশা লাগাইলি তুই আমার মনে।

হঠাৎ তিশার কাজিনরা, ভাইয়া দেখা শেষ হলে শুরু করুন।কথা ছিলো সবার আগে তিশাকে মেহেদি আপনে দিবেন।তাই আমরা এতোক্ষন ধরে আপনার অপেক্ষা করছি।আর আপনার বউতো মাথা খারাপ করে ফেলছে আমাদের, আরম্ভ করিনা কেনো।উপস্থিত সবাই হেসে একাকার।

আমারতো লজ্জায় মরে যেতে মন চাইতাছে।কি দরকার ছিলো এই জিসানের বাচ্চার এখানে আসার।তিশা মনে মনে শতো শতো গালি দিচ্ছে জিসানকে।

জিসান তিশার হাতটা ধরে মেহেদী দিয়ে তিশার হাতে ছোট করে নিজের নাম টা লিখে দিলো।তিশাকে উদ্দেশ্য করে জিসান বলে উঠলো,মেহেদির রংটা হয়তো দুদিন পরে চলে যাবে,কিন্তুু তোর হাতে আমার নামটা সারাজীবন থেকে যাবে।

কথাটা বলার সাথে সাথে রুমের ভেতর সবাই চিৎকার দিয়ে উঠলো।ওওওওও করে।
আমার দুহাতে জিসানের নাম লিখা হয়ে গেছে।এর পর মেয়েগুলো আমার হাতে মেহেদি দেয়া শুরি করলো।

আমার কোন রিয়েকশন নেই,আসলে কি বলবো কিছুই বুঝতাছি না।

জিসানও সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।মা আর রায়হান ভাই অনেক জোর করলো থাকার জন্য কিন্তুু বাসায় সবাই ওর জন্য অপেক্ষা করছে তাই চলে গেলো।
মেহেদির অনুষ্ঠান ঠিকঠাক মতো শেষ হলো।

আমি ঘরে গিয়ে ফ্রেস হয়ে হাত দুটোর দিকে তাকিয়ে আছি।আর ভাবছি সবাই এতো খুশি তাহলে আমি কেনো খুশি হতে পারছি না।কি এমন বাধা কাজ করছে,যার কারণে আমি উনাকে মন থেকে মেনে নিতে পারছিনা।
এমন সময় মা আসলো হাতে খাবার নিয়ে।মা আমি খাবো না বললাম তো।

একদম চুপ,আমি আজ নিজের হাতে তোকে খায়িয়ে দেবো।আর তো পারবো না। কাল বাধে পরশু তুই চলে যাবি,তখন তো আমাদের কথা ভুলেই যাবি।

কি বলছো মা,আমি তোমাদের কিভাবে ভুলবো।মার কান্না বন্ধ করার জন্য বললাম হইছে আর কানতে হবে না,আমাকে খাইয়ে দেওতো,আমার খুব ক্ষুধা পাইছে।
মা আমাকে খাইয়ে দিয়ে চলে গেলো।খুব ক্লান্ত লাগছে তাই শোবার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেলো,বাড়ীর মানুষের চিল্লাচিল্লিতে।আমার তো মন চাইতাছে সবাইরে বাহির করেদি।কেনো জানি এখন আর ভালো লাগছে না এসব।একটু একা থাকতে চাই।কিন্তুু এটা তো সম্ভব না আজ আর।মা নাস্তার জন্য ডাকলে, নাস্তা করে ঘরে ডুকে বসে ছিলাম আর সারাদিন বের হইনি।আজ আমার গায়ে হলুদ, মা তৈরি হবার জন্য পার্লারে পাটাতে চাইলে,রাগের মাথায় মাকে মুখ ফুসলি বলে ফেলি মা আমি বিয়ে করবো না।আর আমার মা আমাকে কতোগুলো লেকচার মেরে চলে গেলো। এ হলো আমার অবস্থা।

আমি রেডি হয়ে বসে আছি।আমাদের ছাদটা বিষণ বড়।তাই গায়ে হলুদের আয়োজন সেখানেই করা হলো।শুধু আমার না জিসানের হলুদ ও এখানে করা হবে।মানে বর ও কনের একসাথেই হলুদ আজ।আমাকে নিয়ে গেলো ছাদে অসংখ্য মানুষ ছাদে চারদিকে একবার চোখ ঘুড়িয়ে দেখলাম।হঠাৎ চোখ গেলো স্টেজ এর দিকে একটা ছেলে আমার দিকে মায়াভরা চোখে তাকিয়ে আছে।এই চোখ দুটো আমি কখনেই ভুলিনা।এই চোখদুটো শুধু আমাকেই খুঁজে তা আমার অজানা নয়।আমাকে জিসানের পাশে বসিয়ে দেয়া হলো।আমি আজও লজ্জায় চোখ তুলে সামনে তাকাতে পারলাম না।মন তো চাইছিলো এক দৌড় দিয়ে পালিয়ে যাই।
আজও সবার আগে আমাকে হলুদ দিলো জিসান।তার পর সবাই এক এক করে হলুদ দিয়ে হলুদের অনুষ্ঠান আমার জন্য শেষ হলো।মানে হলুদের পর আমাকে আর ছাদে এক মিনিটও রাখেনি,কড়া আদেশ ছিলো জিসানের।কারন জিসান ও রায়হান ভাইয়ের ফ্রেন্ডস সার্কেল আসবে।উনারা আজ ছোট একটা পার্টি করবে।তাই আমাকে আগেই ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছে।এদের মধ্যে কিছু ফ্রেন্ডস দের চরিত্রের সমস্যা আছে।তাই জিসান চায় না এখন আমাকে কেউ দেখুক।

কি ভালোবাসা,,,,আমার তো কান্নাও পাচ্ছে।
.
.
.
চলবে.....................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন