ভাইয়ের বন্ধু যখন বর - পর্ব ১৫ - ইয়াসমিন তানিয়া - ধারাবাহিক গল্প


★আজ তিশার বিয়ে.......

সকালে সকাল ঘুম থেকে একপ্রকার টেনে উঠালো মা আমায়। মা আরো একটু ঘুমাইনা এমন করো কেনো।

এই কি বলিস, তারাতারি উঠ,আজ বিয়ে, কতো কাজ আছে।তুই তাড়াতাড়ি নাস্তা কর।পার্লার থেকে মেয়েরা এসে পড়বে তোকে সাজাতে।জিসান ওদের পাঠিয়েছে, যে কোন সময় এসে পরবে।তুই একটু তারাতারি কাজ করতে পারোস না,আজ বাধে কাল শ্বশুর বাড়ী যাবি,এভাবে ঢিলা ঢিলা হয়ে কাজ করলে,শ্বশুর বাড়ী মানুষ বলবে আমরা তোকে কিছু শিখাইনি।

তাইতো বলছি আমাকে কোথাও পাঠাতে হবে না,আমি তোমাদের সাথেই থাকবো।মার কোমর জরিয়ে।

পাগল মেয়ে এটা কি হয় কখনো।একদিন না একদিন তোকে নিজের বাসায় যেতেই হবে।আর তোর স্বামীর বাসাই এখন তোর বাসা।মেয়েরা বাবা মায়ের কাছে কারো আমানত হিসেবে থাকে।একদিন না একদিন যার জিনিষ তাকেতো দিতেই হবে।
আর কথা বলিস না,তারাতারি ফ্রেস হয়ে, নাস্তা করে নে।

 তিশা উঠতে নিবে, তখনিই মেসেজ,

শুভ সকাল জান,,,,,নিজের বাসায় আসার জন্য তৈরি হয়ে নে।পার্লারের মেয়েদের সব বলে দেয়া হইছে,তাই তাদের কোন ডিস্টার্ব করবি না।তোর কাজ শুধু বসে থাকা,ওরা তোকে আমার মতো করে তৈরি করে দেবে।
ওওও আরেটা কথা ভুলে গেছি.....love u jan...

লাব ইউ,,,,তোর লাভ ইউ তুই রাখ,আমার জীবনটা তেজপাতা বানিয়ে এখন আসছে লাব ইউ বলতে।ব্যাটা খাটাইশ কোথাকার,মন চায় বুড়ি গঙ্গা নদীতে গিয়ে ফেলেদি।আমার শান্তি কেড়ে নিয়ে আবার আমাকে এখন ভালোবাসা দেখাতে আসছে।তিশা মনে মনে কথা গুলো বলছে আর দাঁতে দাঁত চাবাচ্ছে।

আবার মেসেজ আসছে,,,,,

গালাগালি হইচে,কিছু গালাগালি রেখে দে পরে তোর কাজে লাগবে,এখন তারাতারি কর।।

তিশার চোখ কপালে উঠে যায়।এই জিসানের বাচ্চা আমার মনের কথা জানে কিভাবে।এদিক ওদিক তাকিয়ে তিশা,,,,। 
না বাদ দে তিশা।উঠে ফ্রেস হয়ে নি।

পার্লারের মেয়েরা তিশাকে রেডি করিয়ে দিলো।পার্লারের মেয়েদের খুব কড়া করে বলে দেয়া হইছে,ভারী মেকআপ একদম না,আর চুলে জোট করানো যাবে না।তাই তারা সেভাবেই রেডি করালো।সিম্পল সাঝে গর্জিয়াছ যাকে বলে।তিশার শরীলের গায়ের রং এর সাথে বিয়ের লেহেঙ্গা টা একদম পার্ফেক্ট মানিয়েছে।তার সাথে মেচিং জুয়েলারি, হাত ভরা চুরী। তিশাকে দেখে আজ কেউ চোখ ফেরাতে পারবে না।পার্লারের মেয়েরাও খুব অবাক।এতো সিম্পল সাজে কোন বউ তারা দেখেনি,তবুও জেনো চোখ ফেরানো যায় না এই বউ থেকে।তিশার জন্য প্রত্যেকটা জিনিস জিসান নিজেই পছন্দ করে এনেছে,তাইতো সব পার্ফেক্ট।

★ জিসানকেও আজ কোন রাজকুমার থেকে কম লাগছে না,তিশার সাথে মেচিং করেই শেরয়ানি পড়েছে জিসান।জিসানের বাসার সবাই কমিউনিটি সেন্টারের দিকে রওনা দিলো।

জিসান আসার আগেই তিশাকে সেন্টারে আনা হলো।

এদিকদিয়ে জিসানও এসে পড়েছে।জিসানকে সবাই বরণ করে নিলো।

আবাক করার বিষয় হলো,আমার জামাই লজ্জা শরম সব ভুলে,ফ্রেন্ডদের সাথে নাচতে নাচতে আসছে।তার দুপাশে তার কাজিন আর ফ্রেন্ডসরাও নাচছে।সে ও তাদের তালের সাথে তাল মিলাচ্ছে।আশেপাশের সবাই খুব আনন্দ পাচ্ছে, এমন বিয়ে পাগল জামাই আমি এই জীবনে দেখি নি।মনে মনে.....।।

যেখানে আমি লজ্জায় মাথা উচু করতে পারছি না,আর সে নাকি নিজের বিয়েতে নিজেই নাচছে।।
দাদী সত্যিই বলছে এটা শেষ জামানা কতো কিছুই না আরো দেখতে হবে।

এর পর বিয়ের আয়োজন শুরু হলো।আমাকে আবার কবুল বলতে হলো।একই ব্যক্তির সাথে আমার দুবার বিয়ে হলো।কি ভাগ্য....আমার।

আয়োজন শেষে এবার এলো বিদায়ের পালা।আমার কান্নাতো কেউ বন্ধই করতে পারছে না।সবার কাছ থেকে বিদায় নিলাম কিন্তু রায়হার ভাইকে দেখিনা।এই তিনদিন আমি রায়হান ভাইকে তেমন কাছে পাইনি,আমার সাথে খুব কম কথা বলছে।আর আজ তো আমার বিদায়ের সময় সে আসেনি।আমি সবার দিকে তাকিয়ে রায়হান ভাইকে খুঁজছি।আমি জানি আমার বিদায়টা সে দেখতে পারবে না তাই হয়তো সামনে আসেনি।জিসান ব্যাপারটা বুজতে পারছে।
তাই আমার হাতটা ধরে ভিড় থেকে আমাকে বাহির করে এনে,বারান্দায় নিয়ে আসে।আমি সামনে তাকিয়ে দেখি রায়হান ভাইয়া একটা চেয়ারে মাথাটা দুহাত দিয়ে ধরে বসে আছে,হয়তো কাঁদছে নিরবে।আমি দৌড়ে গিয়ে রায়হান ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরলাম।

....ভাইয়া আমি যাবো না,তোমাদের ছাড়া আমি কিভাবে থাকবো,তুমি যা বলবে আমি তাই করবো,তোমার সব কথা শুনবো।প্লিজ ভাইয়া আমি যাবো না।
রায়হানও বোনকে ধরে নিরবে কাঁদছে।

জিসান দূর থেকে দাঁড়িয়ে সব দেখছে,তার চোখেও কিছুটা জল এসে পড়েছে,ভাই বোনের ভালোবাসা দেখে।

জিসানও ভালো করে জানে, রায়হানের কলিজা তিশা,তাই তিশার বিদায় সবথেকে কষ্টকর রায়হানের জন্য।কিন্তুু আজ জিসানের কিছুই করার নাই।কারণ এটাই নিয়ম।তিশা যদি রায়হানের কলিজা হয়, তাহলে জিসানের নিশ্বাস,আর নিশ্বাস ছাড়া কেউ বাঁচাতে পারেনা,জিসানও পারবে না।

একটা নাড়ী,আর দুজন ভালোবাসার মানুষ, একজন তার ভাই,আরেক জন তার সঙ্গী। আজ একজনকে ছেড়ে আরেক জনের কাছে যেতেই হবে।এটা যে মেয়েদের কপাল।

রায়হান কিছুই বললো না তিশাকে,ওকে জিসানের কাছে নিয়ে গেলো।তিশার হাতটা জিসানের হাতে দিয়ে দিলো।

আমার কলিজাটা আজ ছিড়ে তোকে দিয়ে দিলাম,আজ থেকে তুইও ওকে আমার মতো বুকে আগলে রাখিস, ও ভুল করলে ওর ভুল গুলো ক্ষমা করে দিছ।

তুই চিন্তা করিসনা,আজ থেকে ওর ভালোমন্দ সব দায়িত্ব আমার।

রায়হান জোর করে তিশাকে গাড়িতে বসিয়ে দিলো কিন্তু তিশা বার বার বের হয়ে যায়।শেষে রায়হানের রাগ উঠে যায়,আর একবার গাড়ী থেকে নামলে আমি কিন্তু তোর সাথে আর কথা বলবো না।
তিশা আর গাড়ী থেকে নামেনি।

তিশা চলে গেলো জিসানের সাথে,নতুন এক জীবনে,নতুন এক দুনিয়া।পুরাতন সব চেহারাগুলো ফেলে সব নতুন মানুষ গুলোকে আপন করতে।
সারা গাড়িতে তিশা এভাবেই কান্না করতে লাগলো।আর জিসান তিশাকে টিসু পেপার দিতে থাকে।

এদিক দিয়ে জিসান ভাবতে থাকে,,,,

আজ যা কান্না করার করে নে,এর পর তোকে আর কাঁদতে দেবোনা।তোর চোখের জল,আমার হ্রদয়টাকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে।।তোকো যে বড্ড ভালোবাসি পাগলী।।
.
.
.
চলবে.....................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন