তিশা বাসরঘর এ বড় একটা ঘুমটা দিয়ে বসে আছে,একটু ঘুমটা টা ফাক করে পুরো রুমটা দেখছে।রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো।হঠাৎ দেয়ালের দিকে চোখ পড়লো।বিছানার পাশের দেয়ালটাতে জিসানের একটা ছবি বড় করে বাধানো। তিশা ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে,অসম্ভব সুন্দর লাগছে জিসানকে ছবিটার মধ্যে,কেউ দেখলে বলবেই না এই মানুষটা এতোটা রাগী।
অনেকক্ষণ ধরে তিশা জিসামের জন্য অপেক্ষা করছে,কিন্তু জিসানের কোন খবর নেই।তিশার খুব অস্বস্তি লাগছে।সব খুলে ফেলতে মন চাইছে।কিন্তুু তিশার চিন্তা হচ্ছে জিসানকে কিভাবে বলবে তার সমস্যার কথা।
সবাইকে বিদায় দিয়ে জিসান ঘরের দিকে যেতে নিলো, বেচারা আজ খুব খুশি।আর তার খুশিতে পানি ঢালতে এসে পরলো তার ভাবী।
জিসান,,,,,জিসানের ভাবী।
জি ভাবী।
এগুলো নিয়ে যাও,তিশার ব্রিটকেস টা দেখিয়ে।
ওকে ভাবী।
শোনো জিসান।
জি ভাবী, আর কিছু।
এই ব্যাগটা নিয়ে যাও, এতে তিশার কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস আছে।তোমাকে আরো কিছুূদিন ধৈর্য্য ধরতে হবে,আসলে তিশার ডেট পরে গিয়েছে।
তুমি কি বুঝতে পারছো আমি কি বুঝাতে চাইছি।
জিসান প্রথমে ভাবীর কথা না বুঝলেও পরে,একটু ভেবে বুঝতে পারে,ভাবী কি বলতে চাইছে।বেচারা খুব কস্টে একটু হেসে ভাবীকে বলে,জি ভাবী আমি বুঝেছি।জিসান মাথাটা নিচা করে ঘরের দিকে চলে গেলো।
ঘরে প্রবেশ করতেই বুঝতে পারি আমার মেডামটার খুব অস্বস্তি লাগছে,একতো ভারী লেহেঙ্গা, জুয়েলারি তার উপর বেচারির এই অবস্থা। ওর কস্টের তুলনায় আমার কস্টটা খুব সামান্য মনে হলো।
জিসান কে দেখে আমি আবার চুপ করে বসে পরলাম, আমার চিন্তা একটাই কিভাবে বলবো,আর এই খাটাইশ টা কি আমার সমস্যা বুঝবে।নাকি আবার ঝাপিয়ে পরবে।হে খোদা আমাকে এবার বাঁচিও।
কিরে তুই এখনো এসব পড়ে বসে আছিস কেনো।যা তারাতারি গিয়ে আগে ফ্রেস হও।আর এসব কিছু খোল,তোকে দেখে আমারি অস্বস্তি লাগছে,কিভাবে পোরস এতো ভারী ভারী জিনিস।
শ্যালা খচ্চর কোথাকার আমাকে এই অবস্থায় এনে এখন আবার বলছে কিভাবে পরি,তুই তো দিলি,এতো ভারী লেহেঙ্গা, জুয়েলারি, তখন মনে ছিলো না,কমপক্ষে বিয়ের ডেটটা ফিক্সড করার আগে আমার ডেট টাতো জেনে নিতি।তাহলে আজ এতো প্যারা লাগতো না।তিশা মনে মনে কথা গুলো বলে যাচ্ছে।
কিরে কি ভাবস এতো,তুই চেন্জ্ঞ করবি নাকি আমি করিয়ে দেবো,এতে আমার কোন সমস্যা নাই।
তিশা জিসানের কথা শুনে ৪৫০ ভোল্ট শোকড খেলো।কি বলে এসব,লজ্জা শরমের মাথা খাইছে মনে হয়।
না না না,,,,আমিই করছি।এতেক্ষনে জিসান চেন্জ্ঞ করে ফ্রেস হয়ে এসে দেখে তিশা একটা একটা করে জুয়েলারি গুলো খুলছে।
জিসান তিশার সামনে গিয়ে তিশাকে নিজের দিকে ঘুরালো।তার পর নিজেই তিশার গয়না গুলো খুলে দিচ্ছে।জিসানের হালকা স্পর্শে তিশা কিছুটা কেঁপে উঠে।
তিশা একবার বাধা দেয়ার চেস্টা করছে।
কিন্তুু জিসান,,,।
চুপ,আমার কাজে কখনো বাধা দেবার চেস্টা করবিনা।তোর জন্য ভালো হবে না।গয়না গুলো খুলছে আর বলছে।
তিশার মাথার প্রতিটি ক্লিপ খুব যত্ন করে খুলছে,এদিক দিয়ে তিশা বেচারি লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে,যা জিসানের চোখ এড়ায় নি।
কিভাবে স্বপ্ন ভাঙ্গতে হয়,তকে দেখলে বোঝা যায়।বুজছোস....।কতো শোক ছিলো বাসরঘরে বিড়াল মারবো।
কিন্তু্ু আমার বিল্লি আমাকেই মেরে ফেলার প্লানিং করে বসে আছে।
তো আজ কয়দিন তোর।
জিসানের সব গুলো কথাই তিশার মাথার উপর দিয়ে গেছে।তিশা বুঝতে পারছে না জিসান কি বলতে চাইছে।আর এতো বিড়াল মারার শখ থাকলে বাহিরে গিয়ে মারুক,ঘরে বিড়াল মারার কি দরকার আছে,আমিতো তাই বুজলাম না।আর কিসের কথা জানতে চাইছে।আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না।
জিসান আবার বলে উঠলো,আমি কিছু জিঙ্গেস করেছি তোকে। জবাব দিস না কেনো।এতে এতো লজ্জা পাবার বা ভয় পাবার কিছুই নেই।একজন নাড়ীর জন্য এটা আশির্বাদ, তাই এটা নিয়ে কখনো লজ্জা পাবিনা।এটা না হলে তুই আমার বাচ্চার মা হবি কিভাবে।
এবার তো তিশার মন চাইতাছে দরজাটা খুলে এক দৌড় দিয়ে কোন জঙ্গলে চলে যেতে।
তিশার চেহারা টা দেখার মতো ছিলো।জিসানতো মিসকি মিসকি হাসছে, মনে মনে বলছে অনেক জালাইছোস আমারে, এবার বুঝ কেমন লাগে।আমার থেকে দূরে দূরে সরে থাকতি এতো দিন,তোর দূরত্ব আমার জন্য বেদনাময় ছিলো।আজ আমি দেখ তোকে কিভাবে সাইজ করি।
জিসান জানে তিশা খুব লাজুক এবং চাপা স্বভাবের মেয়ে,সহযে কিছু বলেনা।তাই জিসান এসব বলছে......
জিসান আবারো তিশাকে জিঙ্গেস করল তিশার কতো দিন আজ।
তিশা এখন একটু সহয হয়ে বললো,তিনদিন।তিশা নরমাল একটা শাড়ি ও ব্যাগটা নিয়ে বাথরুমে চলে গেলো।
আর এদিকদিয়ে জিশান মনে মনে হাসছে,তিশার অবস্থা দেখে।
তিশা চেন্জ্ঞ করে এসে দেখে জিসান নাই।তাই ও আয়নার সামনে এসে চুলগুলো আছড়াতে লাগলো।
জিসান রুমে এসে তিশার সামনে দাঁড়ালো এক গ্লাস দুধ নিয়ে।
দুধ দেখে তিশা মুখটা কালো করে ফেললো।আমি দুধ খাবো না।একদমই পছন্দ না আমার।
দেখ তিশা নাটক করবি না আমার সামনে, কষে একটা দেবো গালে।আমি চিনি মিক্সড করে আনছি, তাই খেতে কোন সমস্যা হবে না, তাই চুপচাপ খেয়ে নে।আজ অনেক ধবল গেছে তোর উপর তা আবার এই অবস্থায়।কাল আবার বৌ-ভাত।আমি চাইনা তুই অসুস্থ হয়ে পড়িস।
জিসানের কথা শুনে তিশা চুপচাপ নাক বন্ধ করে দুধটা খেয়ে নিলো।
কিন্তুু তিশার এখন নতুন চিন্তা হলো জিসানের সাথে এক বিছানায় শোয়া।এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ঘরের লাইট বন্ধ হয়ে গেলো।তিশা কিছু বলবে তার আগেই জিসান তিশাকে কোলে তুলে নিলো,তিশাতো পুরো শোকড। লাইটের আবছা আলোয় তিশা জিসানকে দেখতে পাচ্ছে।জিসান তিশাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে নিজেও তিশার বুকের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো। জিসানের এতো কাছে থাকায় তিশার হ্রদস্পন্দন জেনো বেড়ে গেলো।
আর এ দিক দিয়ে জিসান তিশার বুকে মাথা রেখে তিশাকে জরিয়ে ধরে শুয়ে আছে,মনে হয় এই স্থানটা জেনো ওরই ছিলো,শুধু এতোদিন কাছে ছিলোনা।
জানোস তিশা ৫বছর ধরে তোর অপেক্ষা করছি,তোকে পাবার জন্য ছটফট করেছি।তোকে একদিন না দেখে থাকতে পারতাম না,তাই কতো দিন তোর কলেজ এ গিয়ে তোকে লুকিয়ে দেখছি,তোর আসে পাসে কাউকে সহ্য হতো না।তোকে একটু স্পর্শ করার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে পরতো,কিন্তু আমি তো আমার তিশাকে ভালোবাসি,তাই তোকে অপবিত্র করতে চাইনি।তোর অবহেলায় আমি কখনো নেশা করিনি,কারণ তুই নিজেই আমার নেশার কাজ করিস।নেশা যেমন মস্তিষ্ককে বস করে।তোর নেশাও আমার পুরো শরীলে চড়ে গেছে।কতো রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি,আমি জানি না।কিন্তুু সকাল হলেই তকে দেখার জন্য ছুটে গেছি, খুব বলতে ইচ্ছা করতো,আমি তোকে ভালোবাসি,টিক কতোক্ষানি ভালোবাসি বলতো পারবো না,ভালোবাসার পরিমাপ মাপতে পারবোনা,ভালোবাসার গভীরতা দেখাতে পারবো না,কিন্তুু সব শেষে বলবো ভালোবাসি,ভালোবাসি।
তুই ভালো না বাসলোও তোকে আমি ভালোবাসব,ভালোবাসতে না জানলে শিখিয়ে দেবো।কিন্তু তবুও ছেড়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করবি না।
"""ছেড়ে যেতে চাইলে তোর পায়ের শিকল হয়ে যাবো,আর ভালোবাসলো তোর গলার মালা হয়ে থাকবো"""
তুই ভুল করলে শাস্তি দেবো,আবার ভালোবাসা দিয়ে পুষিয়ে দেবো।কিন্তুু ছাড়তে তকে কখনোই পারবো না।
তিশা বুঝতে পারছে জিসানের চোখ দিয়ে জল পড়ছে,কিন্ত আজ তিশার চোখদিয়ে ও অশ্রু ঝরছে। আর এবারকার অশ্রু কস্টের না,এক পরম সুখের,তিশা কখনো ভাবতেও পারেনি জিসান ওকে এতোটা ভালোবাসে।যে মানুষটি সবসময় আমার উপর রাগ দেখাতো,তার রাগের পেছনে ছিলো আমার জন্য বুক ভরা ভালোবাসা।কেনো আমি দেখলাম না জিসানের মনের কস্টটা জিসানের চোখ বলে দিতো।তা ও লুকাতে চাইলেও পারতো না।
এসব ভাবছে আর জিসানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
এতোদিন পর মনে হয় জিসান কোন টেনশন ছাড়া শান্তিতে ঘুমাচ্ছে।
আর তিশাও এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলো।
.
.
.
চলবে..................................................