ভাইয়ের বন্ধু যখন বর - পর্ব ২০ - ইয়াসমিন তানিয়া - ধারাবাহিক গল্প


জিসান ও তাওহিদ দেখে সবাই ড্রয়িং রুমে আড্ডা দিচ্ছে।কিন্তু জিসান তিশাকে দেখে মেজাজ গরম হয়ে যায়।কারন তিশা আর অর্ক পাশাপাশি বসে কথা বলছিলো,আর কি বিষয় নিয়ে জেনো অনেক হাসা হাসি করছে।

অর্ক,দিশা,ঝুমুর ও অনু এরা হচ্ছে সবাই জিসানের কাজিন।সবাই ড্রয়িংরুম বসে আড্ডা দিচ্ছিলো,সাথে তানজিলা আর নিশিও ছিলো।

জিসান তিশার দিকে রাগান্বিত ভাবে তাকিয়ে আছে সে দিকে তিশার খবরি নেই।

আরে জিসান কেমন আছিস, বিয়ের পরে ভাবলাম হানিমুনে যাবি,তা না করে অফিসে যাস।কেমন আনরোমান্টিক তুই।

কেমন আছো আপু তুমি।

আমরাও কিন্তু আছি ভাইয়া। -দিশা 

আমরা তো ভালো, কিন্তু তোর কি হলো,আমাদের দেখে কি খুশি হোসনি।

কি বলো আপু,আসলে একটু টায়ার্ড। আর কিছু না।আমি বরং একটু ফ্রেস হয়ে আসি।তার পর তোমাদের সাথে জমিয়ে আড্ডা দেবো।ওকে।

একবার তিশার দিকে তাকিয়ে,জিসান উপরে চলে গেলো।

আরে বাবা কি হলো,আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো কেনো।আমি এখন আবার কি করলাম।

তিশা জিসানের জন্য চা নিয়ে যাও।তা না হলে চিল্লাবে এখন।

হমমমমমম,,,,,ভাবী।

তিশা জিসানের জন্য চা নিয়ে রুমে গেলো।জিসান চেন্জ্ঞ না করে বারান্দায় সিগারেট খাচ্ছে।

কি হলো আপনে এখানে। চেন্জ্ঞ করবেন না।

জিসান সিগারেটা হাতে তিশার দিকে তাকালো।চোখগুলো লাল হয়ে গেছে।

চোখগুলো দেখে ভয় পেয়ে গেলাম,তবুও সাহস নিয়ে আবার জিজ্ঞাস করলাম,আপনে ঠিক আছেন।

জিসান সিগারেট টা ফেলে দিয়ে তিশাকে দেয়ালের মধ্যে চেপে ধরলো।কি করছিলি নিচে,কিছুটা ঝাঁজালো সুরে।

তিশার ভয়ে মুখ দিয়ে জেনো কথা বের হচ্ছে না।
কি হলো কথা বলোস না কেনো।আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি।

নানননন মাননননে,,, কিকিকি করেছি।

এতো কিসের হাসাহাসি অর্কের সাথে।কি হয় তোর ওওও।

না কিছু না,এমনেই।আপনে হয়তো ভুল বুজছেন।

আমাকে শিখাতে আসবি না তিশা,যা আমার একদম পছন্দ না তা করার চেস্টাও করবি না।অর্ক আমার ভাই কিন্তু তোর আশেপাশে ও আমি ওকে দেখতে চাই না।অর্কের থেকে ১০ হাত দূরে থাকবি,কি বলছি শুনছোস।

হুমমমম। (তিশা নিচে তাকিয়ে হ্যা বললো)

জিসান তিশাকে ছেড়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলো।

এদিকদিয়ে তিশার খুব কান্না পাচ্ছে,জিসানের এমন আচরণ এ।সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে এমন রিয়েক্ট করার কি ছিলো।তিশা নিচে চলে গিয়ে ভাবীর পাশে গিয়ে বসলো।

কি হলো তিশা মুখটা এমন মলিন কেনো।জিসান কিছু বলছে।

না ভাবী এমনেই।

জিসানকে খুব ভালো করেই চিনে তানজিলা তাই আর কিছু বললো না।

এদিকদিয়ে তাওহিদের সাথে গায়ে পরে হাসাহাসি করছে ঝুমুর, তা দেখে তানজিলা দাঁতেদাঁত চেপে বসে আছে।

তাওহিদ ব্যাপারটা বুঝতে পারে তাই ড্রয়িংরুম থেকে উঠে সোজা নিজের রুমের দিকে হাটা ধরে সাথে তানজিলা কেও আসতে বলে।তানজিলা ও চলে যায়।

এতোক্ষনে জিসান এসে পরে,আর গিয়ে তিশার সাথে বসে পরে।

ভাইয়া আজের প্লান কি,

আমি কি করে বলবো তোরা কি প্লান করছোস,আজ এমনেই টায়ার্ড তাই আজ না করে কাল কর, ভালো হবে যাই করোস।

ভাইয়া আমরা সবাই রাত জেগে মুবি দেখবো,টিক আগে যেমন করে দেখতাম।

ওকে আমি মুবি সেলেক্ট করে নি আগে।তার পর কাল রাত দেখবো নি।পরের দিনতো ছুটি,তাই কোন সমস্যা ও হবে না।

টিক বলছে ভাইয়া-অর্ক।

তানজিলা রুমে গিয়ে তাওহিদ কে ইচ্ছামত ঝাড়ছে। তাওহিদ তুমি জানো আমার ওকে একদমই পছন্দ না তবুও কেনো ঝুমুরের সাথে এতো মাখামাখি তোমার।ও তোমার কাজিন না হলে আমি কখনো ওকে এই বাসায় ডুকতেই দিতাম না।তাওহিদ তানজিলাকে জরিয়ো ধরে,তানজু তুমি জানো আমি তোমাকে কতো ভালোবাসি,তাই এসব চিন্তা বাদ দেও।

জিসান লক্ষ করলো তিশার মনটা ভালো না,হয়তো তখন এমনটা করা ঠিক হয়নি,কিন্তু্ু কি করবো কেনো জানি ওর পাশে অর্ককে সহ্য হচ্ছিলো না আমার।ওকে হারানোর ভয়টা এখনো আমাকে তাড়া করে।তাইতো না বুঝেও কস্ট দিয়ে ফেলি।কিন্তুু তার জন্য তোকে সরি বলবো না,কারন দোষটা তোরই ছিলো।

সবাই মিলে অনেকক্ষন আড্ডা দেবার পর,
 রাতের খাবার খেয়ে নিজনিজ রুমে চলে গেলো।

আজ আকাশে পূর্ণিমা চাঁদ উঠেছে।তাই বিছানাটা টিক করে বারান্দায় দাড়ালাম। হালকা বাতাসে চুল গুলো উড়ছে আর পূর্ণিমা চাঁদের আলো জেনো মনো মুগ্ধকরা পরিবেশ।

ঘরে এসে দেখি তিশা নেই তাই বারান্দায় চলে গেলাম।বাতাসে তিশার চুলগুলো উড়ছে,আর তিশা বার বার চুলগুলোর সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে।মুখের উপর চাঁদের আলোয় জেনো ওকে আরো অপরুপ লাগছে।আমিতো ওর থেকে চোখই সরাতে পারছিনা।

হঠাৎ মনে হলো কেউ পিছে দাড়িয়ে আছে, ঘুরে দেখি জিসান।এমন ভাবে তাকিয়ে আছে জেনো আমাকে আগে কখনো দেখেনি।চোখেচোখ পরায় আমি সরিয়ে নিলাম।

তিশা চল আমার সাথে,তিশার হাতটা ধরে।

কোথায়,,,???প্রশ্ন করার সাথে সাথে জিসান আমার হাতটা ছেড়ে আড়কোলে তুলে নিলো।আমি কিছুটা আশ্চর্য হয়ে গেলাম।

আরে এটা কি করছেন।নামান আমাকে, না হলে পরে যাবো।

চুপ থাক,তা না হলে আমি নিজেই তোকে ফেলে দেবো।

আমি ভয়ে জিসানের গলা জরিয়ে ধরলাম।

জিসান মুসকি হাসি দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে সোজা হাটা ধরলো ছাদের উদ্দেশ্যে।

ছাদে গিয়ে দেখি একটা মাদুর বিছানো।আমাকে মাদুরের উপর বসিয়ে দিয়ে,নিজেও পাশে বসলো।

জানোস আমার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিলো তোকে নিয়ে পূর্ণিমা চাঁদ দেখবো।তাই দেরি না করে এখানে নিয়ে এলাম।

রাতে খোলা আকাশের নিচে প্রিয় জনের সাথে চাঁদ দেখার মজাই আলাদা।

জিসান মাদুরের মধ্যে শুয়ে উপরের আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে,মনে হয় অনেক কিছু চিন্তা করছে।

আমি জিসানের এক হাত পাটিতে রেখে ওর হাতের বাহুর উপর শুয়ে আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছি।হঠাৎ জিসান কিছু বলে উঠলো।

মনে আছে তিশা তোর পাঁচ বছর আগের কথা।সেদিন মনের অজান্তেই তুই আমার জীবনে প্রবেশ করেছিলি।

হুমমমমম।

পাঁচ বছর আগে------

জিসান ও রায়হান এক সাথে ছাদে বসে সিগারেট খাচ্ছিলো আর কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলছিলো।এমন সময় রায়হান এর ফোন আসে তাই রায়হান নিচে চলে যায়।
আর আমি একাই ছাদে ওপিঠ করে দাড়িয়ে ছিলাম।হঠাৎ কেউ পেছন দিকদিয়ে আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে কান্না করছে আর কিছুক্ষণ পর পর নাক ঘষছে আমার জামাতে।আমার বুঝার বাকি ছিলো না এটা তিশা।আমার ভেতরটা কেমন জানি তোলপার শুরু হয়ে গেলো।তবুও নিজেকে সংযত রেখে হাতটা ছাড়িয়ে পেছনে তাকালাম,কি হলো তিশা।

আরে জিসান ভাইয়া আপনে, আমি ভাবলাম রায়হান ভাইয়া,সরি আমি বুঝতে পারিনি।কান্না করছে আর বলছে।

কেনো জানি তিশার প্রতিটি চোখের জল আমার ভেতরটা ছাড়খাড় করে দিচ্ছে।

নিজেকে শান্ত রেখে,কি হলো তিশা বল আমায়,আর কান্না করছোস কেন,আগে কান্না বন্ধ কর।চোখের পানি মুছে দিয়ে।তোকে কেউ কিছু বলছে।মা বকেছে।

না,,,,কিন্তু।

কিন্তু কি বল আমাকে সব।হঠাৎ তিশার হাতের দিকে চোখ গেলো।

তোর হাতের এ অবস্থা কেনো,কে করেছে।বল,,,।

তিশা কিছু না বলে কান্না করে যাচ্ছে,তাই জিসান একটা ধমক দিয়ে,বল আগে কিভাবে হলো এমন,তার পর কাঁদিস।

জিসানের ধমকে তিশা ভয় পেয়ে সব বলে দিলো।

রাস্তার মোরে যে দোকানটা আছে না,আমি স্কুল থেকে আসার সময় ওখামে আইচক্রিম আনতে গিয়েছিলাম,কিন্তুু ওই লোকটা খুব বাজে,আমাকে কি সব কথা বলছে আমার একদম ভালো লাগছিলোনা,তাই চলে আসতে চাইলাম,কিন্তুু আমার হাতটা শক্ত করে ধরে দোকানের ভেতরে নিয়ে যেতে চাইলো,তাই আমি আমার হাতের পানির বোতল দিয়ে জোরে একটা মেরে পালিয়ে এলাম।
দেখো আমার হাতটা কি করছে,খুব ব্যাথা করছে।

জিসান তিশার হাতটা ধরে তাকিয়ে আছে,আর রাগে ওর মুখ চোখ লাল হয়ে গেছে।পাঁচ আঙ্গুলের দাগ বসে গেছে।

তুই বস আমি আসছি।একথা বলে জিসান নিচ থেকে কিছু বরফ নিয়ে এলো।হালকা করে তিশার হতে লাগাতে লাগলো যাতে কিছুটা কমে যায়।

শোন তিশা রায়হান কে তুই কিছু বলবি না,যা করার আমি করবো।ওই লোকটা তোকে আর ডিস্টার্ব করবে না।কিন্তুু রায়হান জানলে তোকে বকবে।

ঠিক আছে আমি বলবো না।

এর পর জিসান চলে গেলো।

পরের দিন তিশা স্কুল থেকে আসার সময় দেখলো দোখান বন্ধ আর টুলেট লাগানো।

আরে একদিনের মধ্যে কই গেলো।

ফ্লাশ ব্যাক-

জিসান সে দিন এসে দোকানদার কে অনেক মারলো,এমনি যে হাত দিয়ে তিশাকে ধরেছে সে হাতটাই ভেঙ্গে দিলো।এর পর ২৪ ঘম্টার মধ্যে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বললো।না গেলে জান হারাবে।

তাই দোকানদার রাতারাতি সব কিছু ছেড়ে চলে গেলো

এসবের কোন কিছুই তিশা জানে না।

এর পর থেকেই জিসান তিশাকে নজর রাখতে লাগলো,তিশা কি করে,কার সাথে চলে।তিশার পুরো জীবনটা জেনো জিসানের হয়ে গেলো।জিসান তিশাকে চোখে হারায়।
কিন্তু কখনো তিশাকে নিজের মনের কথা জানতে দেয়নি।

এসব ভাবতে ভাবতে তিশার দিকে তাকিয়ে দেখে তিশা ঘুমিয়ে গেছে।

ঘুমন্ত তিশার মুখে চাঁদের আলো জেনো তিশার রুপকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
জিসান একটু হেসে তিশাকে একটা কিস করলো।এর পর তিশাকে কোলে করে রুমে নিয়ে এলো।তিশাকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পরলো।
.
.
.
চলবে.......................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন