পরিণয়ে পরিপূরক - পর্ব ৩২ - স্পৃহা নূর - ধারাবাহিক গল্প


" আমি একবার যখন ও বাড়ি থেকে বেরিয়েছি আর ফিরব না । আমি চাই না আমার বাচ্চা আপনার মতো একটা লোকের সান্নিধ্য পাক। আর সে নিজেও আপনার গুনগুলো পাক। আমি ওকে একটা সুস্থ জীবন দিতে চাই। আপনার মতো বিকৃত মস্তিষ্কের বাবার সাথে থাকলে ও যে আরো কত বড় বিকৃত মস্তিস্কের অধিকারি হবে তা আমি বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি। "
'
" আমি ভুল করেছি জানি আমি। আমাকে মাফ করা যায় না? আমি তো ইচ্ছে করে কিছু করিনি । ভেতর ভেতর আমিও তো শাস্তি পেয়েছি । অর্ন্তদহন যে সব চেয়ে বড় শাস্তি তা আমি হারে হারে টের পেয়েছি । নিজের ভেতর বার বার ভেঙে চুড়ে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছি আমি। তারপরও তুমি যদি চাও কেস আবার রিওপেন করতে পারো। "
'
" আমি জানি সেটা আপনার বাবা হতে দেবে না । তার ছেলে জেলে পচে মরুক সে এটা কখনোই চাইবে না । সেই জন্যই তো উনি আপনাকে বাচাতে এত কিছু করেছে।আপনাদের ফ্যামিলিতে তো কোন পুলিশি কেস ই এলাউ না । ফ্যামিলি রেপুটেশন এতটাই বড় আপনাদের কাছে । আর সেই সুযোগ নিয়েই যে যা ইচ্ছে অন্যায় করে ধরা পড়ে শাস্তি পাবার কোন ভয় নেই কি না!"
'

" বাড়ি চলো অবন্তী।"
'
অভ্র অবন্তীর বরাবর হাটু গেড়ে বসে পড়ে কোমর বরাবর জড়িয়ে ধরে ওকে। ছোট বাচ্চাদের মতো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে শুরু করে । অবন্তীর খুব করে ইচ্ছে করে অভ্রর চুলগুলোতে স্পর্শ একে দিতে । চুলে বিলি কেটে দিয়ে বলতে, " বাচ্চাদের মতো কান্নাকাটির অভ্যেস কবে ছাড়বেন বলুন তো? বাচ্চার বাবা হতে যাচ্ছেন এখন । আর নিজেই বাচ্চাদের মতো আচরণ ছাড়তে পারলেন না?"
আর দশটা স্বাভাবিক দিন হলে হয়ত অবন্তী অভ্রকে এ কথা গুলোই বলত। কিন্তু আজ পরিস্থিতি ভিন্ন। অবন্তী পাথরের মতো দাড়িয়ে থাকে। 
অভ্র কাদতে কাদতে বলতে শুরু করে,
" অবন্তী এই শেষ বার আমাকে বিশ্বাস করো ।এবার আমি সব সত্যি বলেছি। সামান্যতম কিছু লুকোই নি আমি। কথা দিচ্ছি আর কোন দিন কিছু লুকোবো না । আর মিথ্যে বলব না । "
'
" হয়েছে আর ন্যাকা কান্না কাদবেন না প্লিজ।"
" আমার এসব কান্না তোমার ন্যাকা কান্না মনে হয় বুঝি? "
" জানিনা।"
" বাড়ি চলো ।"
"বাড়ি ফিরে যান । রেনু খালা, বাবা, অর্পি আপু বুঝি অপেক্ষা করছে আপনার।"
" আর আমার ছোট্ট অস্তিত্ব যে তার বাবার আদর নেবার অপেক্ষা করছে?"
" বাবা ছাড়াই অনেক বাচ্চা মানুষ হয়। ও সেভাবেই মানুষ হবে। বরং বাবার সাথে থাকলেই হয়ত অমানুষ হবে। "
'
" অবন্তী,কোন বাবা ই কোন দিন খারাপ বাবা হতে চায় না । পৃথিবীর সব চেয়ে নিকৃষ্ট মানুষটাও তার সন্তানের কাছে সব চেয়ে ভালো বাবা হয়েই থাকতে চেষ্টা করে । সন্তানের জন্য ভালো কিছু করার চেষ্টা করে । আমি আমার অনাগত সন্তানের জন্য শুধরে যাব কথা দিলাম। আমি তো অনেক শুধরে গেছিলাম অবন্তী শুধুমাত্র তোমার জন্য । এরপর কিছু মিথ্যের আশ্রয় নিয়েছি, কিছু বাকা পথ অবলম্বন করেছি সেসবই তোমার জন্য। তোমাকে নিজের কাছে রাখার জন্য । তোমার বিশ্বাস, আস্থা আর ভালোবাসা পাবার জন্য । অবন্তী আমার অধিকার টুকু আমার থেকে কেড়ে নিও না । দয়া করো আমায় । ভিক্ষে দাও আমায়। আমার সন্তানকে ভালোবাসার অধিকার কেড়ে নিও না আমার থেকে। আর পাচটা সাধারণ মানুষের মতো স্ত্রী সন্তান নিয়ে সুখে সংসার করার অধিকারটুকু তুমি আমায় দেবে না? আমি কি এতটাই খারাপ ছিলাম? "
'
" আপনি এখনো বুঝতে পারছেন না আপনি কতটা খারাপ ছিলেন?"
'
" অবন্তী আমি বলছি তো আমি বেশ বেপরয়া ছিলাম । কিন্তু এতটাও বেপরয়া না যে আমি কাউকে মেরে ফেলব। মার ব্যাপারটার পর থেকে আমি লাশ দেখলেই ভয় পেতাম। আর তোমার মনে হয় সেই আমি? ! আমি বলছি তো কিভাবে কি হয়ে গেছে আমি ..আমার আসলে হাতের বাহিরে ছিল সব কিছু বিশ্বাস করো । "
'
" ড্রাগস নেয়া, মদ খাওয়া এসবও হাতের বাহিরে ছিল?"
'
" আমি আর কতবার বলব অত হাই ডোজের ড্রাগস আমি নিতাম না?আমি এমন ডোজ নিতাম যা নিয়ে আমি নিজেকে কন্ট্রল করতে পারতাম। আমি জানি না সেদিন ড্রাগস এর ডোজ এত হাই হলো কি করে । আর তারপর আমার বলতে গেলে কোন জ্ঞানই ছিল না । অন্ধকার দেখছিলাম সব কিছু । "
'
" আচ্ছা আপনি তো বমি করেছিলেন এক্সিডেন্ট এর আগে তাই না? "
" হ্যা। কিন্তু তারপর আমি আবার..."
" হয়েছে এক ব্যখ্যা আর বার বার দিতে হবে না ।চলুন বাড়ি ফিরব।"

.
অভ্র অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, " মা.. মা .. মানেহ?"
অবন্তী হঠাৎ এভাবে বাড়ি ফিরতে রাজি হবে অভ্র কল্পনাও করে নি। এতক্ষণ এত কিছু বুঝিয়ে কাজ হলো না অথচ সামান্য একটা প্রশ্নের উত্তর দিয়েই অবন্তী রাজি হয়ে গেল। রীতিমত ভ্যাবাচ্যাকা খাবার অবস্থা।অভ্র যেন নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারে না । খুশিতে তার দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝরে।

" এই বোকা ছেলে আর কত কাদবেন? ক'দিন পর পুচকের কান্না থামাতে হবে তো?" অবন্তী মুচকি হেসে বলে ।

" স..সত্যি বলছ?"

" হুম।সত্যি তো ।"

অভ্র এগিয়ে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে দেয়। 
" যাওয়া যাক তাহলে?"
" উহু ।পুচকে এভাবে যাবে না । সে তার পাপার কোলে উঠতে চায় ।"
অভ্র মুচকি হেসে এগিয়ে আসে, " ওহ এই কথা?"
তারপর অবন্তীকে পাজাকোল করে নিয়ে গাড়িতে বসায়। 
'
অভ্র গাড়ির জানলায় তাকয়ে মনে মনে নিজেই নিজেকে বাহবা দেয়," বাহ অভ্রনীল! বমি ব্যাপারটা তোর জন্য এত লাকি। বমি বেশি করিস বলে সবাই কত হাসাহাসি করত তোকে নিয়ে, প্রেগনেন্ট বলে ক্ষেপাতো সবাই । এই অবন্তীও হেসেছিল তো । কিন্তু সেই বমি! তুই আমার পরম বন্ধু রে! তুই এত ভালো আগে জানলে আমি তোকে আরো আপন করে নিতাম। জানিসই তো এই পৃথিবীতে আমার আপনজনের একটু আকাল! আচ্ছা এখন বমি করলে কেমন হয়? অবন্তী ভয় পাবে, পানি এগিয়ে দেবে, ভয় পেয়ে ভালোবাসবে তারপর । এর আগে যে বার খুব বমি করেছিলাম কি ভয়ই না পেয়েছিল। সারারাত আমার সাথে গল্প করেছিল , আমার আজগুবি গল্প শুনেছিল। হুম, আসলেই এখন বমি করলে বেশ ভালোই হয়। জার্নিটা বেশ রোমান্টিক হবে । "
কিন্তু ইচ্ছে করলেই তো আর বমি করা যায় না । কিন্তু এই মূহুর্তে তার বমি করতে ইচ্ছে করছে । অভ্রর মনে পড়ে কোন এক সময় বইতে পড়েছিল, জিহবার প্রায় শেষ প্রান্তের দিকে নরম তালুতে বা এপিগ্লটিসের আশেপাশে গলবিলে আঙুল দিয়ে স্পর্শ করলেই বমি করা যায় । সাধারণত ডক্টররা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে সুইসাইডাল কেসে রোগীকে বমি করানোর প্রয়োজন হলে। বমি করিয়েও যদি স্লিপিং পিল বা বিষ বের না করা যায় সম্পূর্ণ ভাবে তারপর পাক্স্থ্লি তে নল ঢুকিয়ে ওয়াশ করা হয় । অভ্র এখন সেই পদ্ধতি অবলম্বন করবে। সবে মাত্র তর্জনি মুখে ঢুকিয়েছে।
'
অবন্তী বেশ অনেক্ষন ধরে ওকে লক্ষ্য করছিল। সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে অভ্রনীলকে যখনই চুপচাপ কিছু চিন্তা করতে দেখবে তখনই নজরে নজরে রাখবে। আর কিচ্ছু উল্টোপাল্টা করার সুযোগ তাকে দেবে না সে। নিতান্তই পাগলামো করে কি কিই না করে ফেলেছে! যেসবের আদৌ কোন দরকার ছিল না । অবন্তী অভ্রর হাত খপ করে ধরে ফেলে ।
'
" কি হচ্ছে শুনি?"
" কিছু না। দাতে মনে হয় খাবার আটকে আছে ।"
" দাতে খাবার আটকে আছে তাই না? তা কিছু খেয়েছেন?"
" না । তোমাকে খুজতে তো ঘুম থেকে উঠেই বেরিয়ে পড়েছি ।"

" রাতে তো দাত ব্রাশ করে শুয়েছিলেন। তারপর কিছু খান নি। তাহলে দাতে খাবার আটকে থাকার প্রশ্নই ওঠে না। আবার মিথ্যে বলা হচ্ছে তাই না? অভ্রনীল কবে এসব পাগলামো ছাড়বেন বলুন তো?"
'
অবন্তী জানে হুটহাট কারণ ছাড়া মিথ্যে বলা অভ্রনীলের পুরনো অভ্যাস। চাইলেই এ অভ্যাস সে খুব সহজে ছাড়তে পারবে না । পৃথিবীর কেউই তার স্বভাবগত অভ্যাস গুলো চাইলেও খুব সহজে ছাড়তে পারে না । আর সেখানে অভ্রনীল তো স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা আলাদা। ওর হয়ত আরো সময় লাগবে । আচ্ছা এরকম বাবার সন্তান কেমন হবে? বাবার এসব আজগুবি গুন পাবে না তো? অবন্তী চেয়ে চেয়ে সেসব ভাবে। এরই মধ্যে অভ্র উত্তর দেয়,
'
" অভ্রনীল পাগলামো করে বলেই তো তুমি পছন্দ করতে না । তাইতো ম্যাচীউর শুভ্রনীল হতে চেয়েছিলাম।"
'
অবন্তী অভ্রর কাধে মাথা রেখে বলে," আমার চাই না ম্যাচীউর শুভ্রনীল । আমার পাগলাটে অভ্রনীলই চাই। "
" আচ্ছা এটা কি খুব দোষের অন্যের ভালো গুন গুলো ভালো লাগলে তা নিজের মধ্যে নেয়ার চেষ্টা করা ?"
" অবশ্যই না । দোষগুন মিলেই মানুষ। অন্যের ভাল গুন নিতে আল্লাহই আমাদের বলেছেন। আমরা মুসলিমরা কাকে অনুসরণ করি বলুন তো? আল্লাহর বাণী কোরানকে আর মহানবী (স) কে। মহানবীর গুন গুলো কিন্তু নিজের মধ্যে নেয়ার চেষ্টাও সুন্নাত। আর কোরানে উল্লেখিত গুনগুলো নেয়া কিন্তু ফরয । আবার স্কুল কলেজে আমরা কি শুধু পড়তেই যাই বলুন? অনেক কিছু শিখতেও যাই। বন্ধুদের থেকে শিখি, শিক্ষকের থেকে শিখি শিক্ষকের কাছ থেকে ভাল গুন শিখি। আর বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে কিছু ভালো গুন শিখি কিছু খারাপ। সেরকমই শুভ্রনীলের থেকেও আপনি শিখেছেন। গোছালো হতে শিখেছেন। এটা মোটেও খারাপ না অভ্রনীল । কিন্তু আপনি এই যে এত ঘোর প্যাচ করে বাকা পথ নিলেন এটাই খারাপ। এরকম আর করবেন না কথা দিন।"
'
অভ্র মাথা নিচু করে অবন্তীর হাত শক্ত করে ধরে জবাব দেয়'' হু''
'
''আচ্ছা, আপনি জানলেন কি করে যে আমি এখানে আছি?"
'
" এমনি এমনি তো আর তোমার পরিপূরক হই নি। আমি তো বলিই যে আমি সব জানি । তোমার ব্যপারে সব জানি ।"
" আর হেয়ালি নয় । সত্যি করে বলুন।"
" আমি জানি তো তুমি সাগর কতটা পছন্দ করো । মন খারাপ হলেও যেমন সাগরের গান গাও মন ভালো থাকলেও তো সাগরের গানই গুন গুন করো । তাই আমি জানতাম তুমি এখানেই আসবে।আমাদের হানিমুনে এসেও আমরা এখানে ঠিক কতক্ষণ বসে ছিলাম তোমার মনে আছে? তাই আমি এখানেই প্রথমে আসি। আমি জানতাম তুমি এখানে অথবা সেই শাপলা ঘেরা পুকুরের পাড়েই আছ।"
'
" ইশ কি বুদ্ধিমান জামাই আমার! আসল সময় এত বুদ্ধি কই যায়? "
" মানে?"
" কিছু না বাড়ি চলুন।"

কিছু পথ যাবার পর অবন্তী তার ব্যাগ থেকে তিনটে আপেল বের করে । শাড়ির আচল দিয়ে মুছে অভ্রর দিকে দুটো এগিয়ে দেয়। অভ্র দুহাতে দুটো নিয়ে সেই আগের মতো করে খেতে শুরু করে এক কামড় ডান হাতের আপেল অন্য কামড় বা হাতের। 
" কি ব্যাপার ব্যাগে এত আপেল রেখেছ যে?"
অবন্তী পেটের দিকে তাকিয়ে বলে, " এই যে উনি আপেল খেতে চান একটু পর পর তাই। জন্মের আগেই জানান দিচ্ছে উনি কার স্বভাব পেতে চলেছে। "
" আমার বেবি তার পাপামুনির স্বভাবই তো পাবে তাই না?"
" হ্যা আর আমি শুধু এমনি এমনি মা হবো তাই না? আমার কোন স্বভাব পাবে না? "
" পাবে তো । ওর মামুনি যেমন ওর পাপামুনিকে ভালোবাসে ও তেমন ওর পাপামুনিকে ভালবাসবে।"
এই বলে অভ্র ওর ডান হাতের খাওয়া অর্ধেক আপেল অবন্তীর দিকে এগিয়ে দেয় অতপর বা হাতের অর্ধেক খাওয়া আপেল। অবন্তী নিজের হাতে থাকা আপেল তখনো খেতে শুরু করে নি। তাই ওটা আবার ব্যাগে রেখে দেয়। অভ্রর দেয়া অর্ধেক আপেল দুটোই খায়। 

বাড়ি ফেরার সাথেই সবাই হন্যে হয়ে এগিয়ে আসে ওদের দিকে । রেণু খালা অভ্রকে জিজ্ঞেস করে,
" অভ্রনীল বাবা আমার কাল সকাল সকাল কোথায় চলে গিয়েছিলে তোমরা কাউকে কিছু না বলে ? ফোন ও রিসিভ করছিলে না কারো? আমরা বাড়িতে সবাই কতো টেনশনে?"

" রেণু খালা, ওদের আনতে গেছিলাম ।"

" ওদের?", অর্নি এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে ।

" হ্যা, অবন্তী আর..."

কথার মাঝেই অবন্তী অভ্রর হাতে চিমটি কেটে থামিয়ে দেয়। তারপর নিজেই বলতে শুরু করে,
" হ্যা আপু আমাকে আনতে গেছিল।"
" কোথায় গিয়েছিলে তুমি?"
" অনেক দূর।সাগর দেখতে। "
" হঠাত ?"
" ফার্স্ট ম্যারেজ এনিভার্সারির পর সেকেন্ড হানিমুনে গিয়েছিলাম আপু।"
'
অভ্র এসবের কিছুই বুঝতে পারে না । অবন্তী এসব কি বলছে তা সে নিজেও বুঝতে পারে না । পাশে অর্নি থাকায় অবন্তী ইচ্ছে করেই কথা কেটে নেয়।
। 
এদিকে ডক্টর অবন্তীকে এখন নিয়ম মেনে খাবার খেতে বলেছে। একটু একটু করে হলেও দিনে কয়েকবার খেতে বলেছে ঘড়ি দেখে সময় মতো । সন্ধ্যেবেলা কিছু খাওয়া দরকার। যেহেতু এ বিষয়ে কাউকে কিছু বলে নি তাই নিজের খেয়াল নিজেকেই রাখতে হবে । রান্নাঘরে গিয়ে এটা ওটা খুজতে গিয়েই রেণু খালা পেছন থেকে কাধে হাত রাখে। 

" অবন্তী মা, আজ সকাল থেকে দেখছি খুব নিয়ম করে খাবার খাচ্ছ?"
অবন্তী লজ্জা পেয়ে বলে," খালা, না মানে..."
" শোন মেয়ে এমন সময় আমিও পার করে এসেছি । আমার কাছে লুকোতে চাও?"
অবন্তী আরো লজ্জা পেয়ে জড়িয়ে ধরে রেণু খালাকে। রেণু খালা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে জিজ্ঞেস করে, " কতদিন চলে?"
" সাত সপ্তাহ।"
" অভ্রনীল জানে?"
" হুম"
" শোন মা, এসময় একটু সাবধানে থাকবে। আর এত আগেই কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। শত্রুর তো আর অভাব নেই ঘরে বাইরে। " 
" হ্যা খালা ঐ জন্যই কাউকে বলি নি।"
" চলো আজ আমি তোমাকে খাইয়ে দিই।"
" খালা আপনি অনেক খুশি হয়েছেন তাই না?"
" আমার অভ্রনীল বাবা হবে আর আমি খুশি হবো না বলছ? খুব খুশি আমি খুব। আমার ছোট্ট অভ্রনীলের কোলে আর একটা ছোট্ট অভ্রনীল বা অভ্রনীলা দেখব চোখ দুটো জুড়িয়ে যাবে আমার ।"

অবন্তীর একটা ব্যাপারে প্রায় অনেকদিন ধরেই খটকা লাগে । কিন্তু কখনো জিজ্ঞেস করা হয়ে ওঠে নি। আজ খুব করে ইচ্ছে করছে জিজ্ঞেস করতে। 

" খালা একটা কথা জিজ্ঞেস করি?"
রেণু খালা কমলার খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে বলে, 
" হুম বলো না?"
" খালা আপনি সব সময় অভ্রকে আমার অভ্রনীল বলেন কেন?"
রেণু খালা কমলার এক কোয়া অবন্তীর মুখে তুলে দিয়ে হাস্যজ্জ্বল মুখে বলে," অভ্রনীল তো আমারই।''
.
.
.
চলবে..........................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন