সারা দিন হাসপাতালে তিশা ঘুমিয়ে ছিলো।সন্ধ্যার সময় তিশার ঘুম ভাঙে আর জিসান কে পাশে বসে থাকতে দেখে।জিসান তিশার একটা হাত ধরে বসে আছে।চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছো সারাদিন কিছুই খাইনি।
তিশা একটু নড়ে উঠার চেস্টা করলে,জিসান এর ধ্যান ভাঙে, আর নিজেই তিশাকে ধরে বসিয়ে দেয়।
আমি এখানে কেনো।সামান্য একটু হাত কেটেছে, এর জন্য কি হাতপাতালে আনতে হয়।উনার দিকে তাকিয়ে দেখি চোখগুলো ছলছল করছে।কিছু বলার আগেই আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।মনে হয় ছেড়ে দিলেই আমি কোথাও চলে যাবো।আমার কাধে গরম কিছু পড়ছে আমি বুঝতে পারছি আর কিছু না সাহেব আমার নিরবে কাঁদছে।
তাই আমিও আর কিছু বললাম না।কিছুক্ষন পর উনি নিজেই ছেড়ে দিলো।আমার কাটা হাতটার জায়গায় একটা কিস করলে।আমি এই মানুষটিকে যতোই দেখি ততোই আবাক হই।এতো ভালোবাসা পায় কোথা থেকে।
- ওর হাতটা ধরে কি খাবি বল।আমি নিয়ে আসি।সারাদিন কিছুই খাস নি।
আমি বাসায় যাবো।একবারে বাসায় গিয়েই খাবো।
- আরে না ডাক্তার বলছে আজ রাত থাকতে কাল সকালে চলে যেতে।
না আমি আর এখানে এক সেকেন্ড ও থাকবো না।আমি কি অসুস্থ যে এখানে থাকবো।আপনে ডাক্তার কে বলুন।তা না হলে আমি পালিয়ে যাবো।
- হা হা সব শেষে তুই হাসপাতাল থেকে পালাবি।
হে আপনে না নিলে,আমি আপনাকে এখানে রেখেই পালিয়ে বাসায় চলে যাবো।আর আপনে সারা রাত নার্স আর ডাক্তার এর সাথে বসে বসে গল্প কইরেন।
- তাই... থাক আমার এতো শখ নেই, তকে রেখে ওদের সাথে গল্প করার।তুই বস,আমি নাঈমকে বলে আসি।আর ড্রাইভার কে বলি গাড়ী আনতে।
তারাতারি আসবেন...কিন্তু।
- ওকে... যাবো আর আসবো।আমি নাঈমকে বলে তিশাকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে ফেললাম।ড্রাইভার ও গাড়ী পার্ক থেকে গেটের সামনে নিয়ে আসলো।আমি রুমে এসে দেখি ম্যাডাম বেড থেকে নিচে নামছে।আরে রে রে কি করছিস।
নামচি,কেনো।
- তোকে বেড থেকে নামতে কে বলছে।
আরে না নামলে যাবো কি করে।
- আমি এসেই ওকে কোলে তুলে নিলাম।
আরে রে রে করছেন কি, আমার হাত কেটেছে পা না,আমি হাটতে পারবো,নামান আমাকে।কেউ দেখলে কি বলবে।
- একদম চুপ,একটা কথা বললে ফেলে দেবো।
কিকিকিকিকি..... এ আপনার ভালোবাসা।
- হুমমম, আমার ভালোবাসা এমনি,তুই জানোস না,আমার কথা না শুনলে আমি কি করতে পারি।আর সবথেকে বড় কথা ম্যাডাম,আমি আপনাকে যখন কোলে করে এনেছি।তখন আপনার পায়ে জুতাও ছিলো না,আর এখন ও নেই।আর আপনে কি খালি পায়ে হেটে হেটে বাহিরে যাবেন,আবার পায়ের বারোটা বাজুক।হুমমম,,,,তার থেকে ভালো আমিই কোলে করে নি।
আর কিছুই বললাম, উনার গলাকে জরিয়ে ধরলাম।
উনি কোলে করে আমাকে গাড়ী পর্যন্ত নিয়ে, গাড়ীতে বসিয়ে দিলো।সারা রাস্তায় আমার হাতটা ধরে রইলো।
আমার কাছে দিন দিন জিসানের পাগলামো গুলো ভালোই লাগছে,উনার সব কিছু জেনো আমার অভ্যাসে পরিনিত হচ্ছে।
- কিছুক্ষন এর মধ্যেই আমরা বাসায় এসে পড়লাম।সবাইকে আগেই বলে দিয়েছি,আমদের আসার কথা, তাই সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের।রায়হান আর তিশার মা বাবা ও এসেছে।
ভেতরে গিয়ে দেখি সবাই ড্রয়িংরুম এ বসে আছে।সাথে মা বাবা আর ভাইয়াও।আমি দৌড়ে গিয়ে মা কে জরিয়ে ধরলাম,মার চোখেতো গঙ্গা যমুনা বেয়ে পড়ছে।আরে মা দেখো আমি ঠিক আছি।সামান্য একটু কাটছে।তোমাকে দেখাবো আমি দাড়াও,
হইছে আর দেখাতে হবে না,সন্তানের একটু কাটলেও ব্যাথাটা বাবা মায়ের বুকে গিয়ে লাগে,তুই এখন বুজবি না,যখন নিজে মা হবি তখন বুজবি।
হইছে এতো কাঁদতে হবে না এখন, মুছো।বাবা আর ভাইয়ের সাথে ও কিছুক্ষন কথা বলে,আমরা সবাই একসাথে ডিনার করে নিলাম,মা বাবা আর ভাইয়া কিছুক্ষন থেকে চলে গেলো।আমিও কিছুক্ষন ভাবী আর আমার শ্বাসুড়ীর সাথে কথা বলে জানতে পারলাম,লাবনি আপুকে উনার বাবা এসে জোর করে নিয়ে গেছে,কালই আপুকে বাহিরে পাঠিয়ে দেবার ব্যবস্থা করবে।আমি এর পর আমার রুমে চলে গেলাম।রুমে গিয়ে দেখি উনি বারান্দায় দাড়িয়ে সিগারেট টানছে,আর কিছু ভাবছে।আমি উনার সামনে গিয়ে, কি মজা পান এটা খেয়ে।আমাকেও দেন আমিও একটু ট্রাই করে দেখি কেমন মজার জিনিস।
- পেছনে ঘুড়ে দেখি তিশা দাঁড়িয়ে আমার থেকে সিগারেট চাচ্ছে।আমি সিগারেট টা নিভিয়ে ওর হাতটা ধরে সামনে এনে পেছন দিয়ে জরিয়ে ধরলাম।এবার বল কি বলছিস।
ছেড়েদেন না কেনো এসব ছাইপাঁশ।
- অনেক দিনের অভ্যাস,ছাড়ি কিভাবে বল।আর সব সময় খাওয়া হয় না, যখন খুব টেনশন বা মন খারাপ থাকে তখনিই একটু বেশি খেয়ে ফেলি।তাই ছাড়তে বলিস না, প্লিস।আমার সব কিছু তোর, কিন্তু এসব ছাইপাঁশ তোকে ভাগ দিতে পারবো না, সরি।
তাইই,তাহলে বলুন, এখন কি এমন চিন্তা করছেন যার জন্য এসব খেতে হচ্ছে।
- আজ অনেক বড় দূর্ঘটনা হয়ে জেতে পারতো,হয়তো তোকে আমি হারিয়ে ও ফেলতাম,এটা ভাবতেই বুকটা কেপে উঠছে,ভুলতে পারছি না কোন কিছু।আমার কারণেই আজ তোর এ অবস্থা। সরি.... আমি তোর খেয়াল রাখতে পারিনি।
আমি উনার সামনে ঘুড়ে তার হাত দুটো ধরে।যা আবার হয়ে গেছে,তা নিয়ে এখনো কেনো এতো টেনশন করছেন।আল্লাহ যদি আমার কপালে আপনাকে লিখে রাখে,তাহলে কেউ যতো চেস্টা করুক আমাকে আপনার কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবে না।একমাত্র মৃত্যু ছাড়া।তাই মনে রাখবেন আল্লাহ যা করে বান্দার ভালোর জন্যই করে।তাই এসব নিয়ে এখন আর ভাববেন না।অনেক রাত হইছে,আপনে সারাদিন একটুও বিশ্রাম নেন নি চলুন ঘুমাবেন।দেখলাম জিসান এখনো আমার হাতটার দিকে তাকিয়ে আছে। তাই আমি উনার মুখটা দুহাত দিয়ে ধরে কপালে একটা কিস করে দিলাম।উনি কিছুটা শোকড হয়ে গেলো,ভাবেনি আমি এমন কিছু করবো।উনি আমার কোমড়টা জরিয়ে উনার বুকের সাথে চেপে ধরলো,,,
- আমি কি ছোট বাচ্চা, যে তুই কপালে কিস করলি।
তো কোথায় দেবো,কপালে দিছি এটাই বেশি।
- তাইইই নি,আমার তো ওটা লাগবে।
কোনটা....আমি একটু কপাল কুচকিয়ে।
- এই যে এটা,ওর ঠোটটা দেখিয়ে।
আরে পাগল নি,আপন আসলেই একটা লুচু।
- তাহলেতো লুচুগিরি একটু করতেই হয়।
আমি কিছু বলার আগেই আমার ঠোঁটটা নিজের দখলে নিয়ে নেয়।আমিও জেনো তার ভালোবাসা পেয়ে সব কিছু ভুলে গেলাম।কতোক্ষন ছিলাম দুজন খেয়ালি ছিলো না,একসময় আমাকে ছেড়ে আমার কপালে নিজের কপাল রেখে কিছুক্ষন, দুজনেই চোখ বন্ধকরে ছিলাম।এর পর উনি একটা মুসকি হেসে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দিলো।আর আমার বুকে মাথা রেখে আমাকে জরিয়ে শুয়ে পড়লো, টিক বিয়ের প্রথম রাতের মতো।আমিও উনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম।হয়তো খুব ক্লান্ত ছিলো তাই কিছুক্ষন পর ঘুমিয়ে গেলো।
সকালে উঠে দেখি সাহেবে এখনো ঘুমানো,আর আমাকে এমন ভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে আছে যে ছাড়াতেও পারছি না।আমি একটু নড়চড় করায় উনি খুব বিরক্ত চোখে আমার দিকে তাকালো।
- কি হয়েছে এমন নড়ছোস কেনো,শান্তিমতো একটু ঘুমাতে দেও বলে আবার জরিয়ে ধরে শুয়ে পরলো।
আরে ভাই উঠেন, দেখেন কয়টা বাজে।
- ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি এমা এতো বেলা হয়ে গেছে,লাফ দিয়ে উঠে পরি,তিশা আগে ডাক দেওনি কেনো।আজ খুব জরুলী মিটিং আছে।আমার সব কিছু রেডি কর, আমি তারাতারি আসছি।
আজব আমি কি করে জানব,যাক আমি সব কিছু বেড এ রেখে, নিশির রুম থেকে ফ্রেস হয়ে নিচে চলে এলাম।
কিন্তু্ু সাহেব আমার দেরি হয়ে গিয়েছে বলে নাস্তা না করেই চলে গেলো।
এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে গেলো।আমিও সংসার আর জিসানকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলাম।কিছুদিন পর আমার রেজাল্ট বের হলো,খুব ভালো না করলেও খারাপও করেনি।জিসান ও খুশি হলো রেজাল্ট দেখে।রেজাল্ট বের হবার পর একদিন আমার শ্বাসুড়ী জিসানকে বললো,আমাকে কলেজে ভর্তি করিয়ে দেবার জন্য।কিন্তু মি:জিসানের মনে অন্য কিছু চলছে।উনি মাকে মানা করে দিলো।
কিন্তু কেনো,তুই চাস না তিশা আরোও পড়ুক,নিজের পায়ে দাঁড়াক।
মা এতুটুকু আনতে আমার সব তেল শেষ করে দিয়েছে তোমার সাধের বৌ।একটা আস্ত বড় পড়া চোর।আর ও কলেজে গেলে,আমার জীবন আরো অতিষ্ঠ হয়ে পরবে,এতো বছর ওকে চোখে রাখার জন্য আমি বা রায়হান ছিলাম কিন্তু এখন,কলেজে ও যাবে,আর টেনশন আমি করবো।আমি নিজের কাজে মনোযোগ দিতে পারবো না,আর সবথেকে বড় কথা ও কলেজে গেলে ওর মধ্যে বিরাট পরিবর্তন আসবে,যা আমার জন্য কস্ট কর হবে।তাই ওর কলেজের যাওয়ার কোন দরকার নাই,যতোটুকু পড়ছে আমার জন্য এনাফ।আমার এতো পড়ুয়া বউ লাগবে না।
তুই আসলেই আজব,সারা দুনিয়ার ছেলেরা চায়,তার বউ উচ্চশিক্ষিত হোক আর তুই নাকি....আচ্ছা বাদ দে,তিশা যদি পড়তে চায় তখন কি করবি।
- মা আমি ওকে খুব ভালো করে জানি,ও নিজেও একবার কলেজে ভর্তির জন্য বলবে না দেখো, আর যদি ও নিজ ইচ্ছায় বলে, তখন দেখবো নি,তুমি এখন এসব চিন্তা বাদ দেও।
আচ্ছা তুই যা ভালো মনে করিস।
এভাবেই চলছিলো দিনকাল,একদিন নিশি আর আমি গল্প করছিলাম ওর রুমে,এমন সময় নিশি আমাকে জিঙ্গেস করলো,ভাবী কোন কলেজে ভর্তি হবা।
আরে বোন বাদ দেও, এতো পড়ে কি করবো বলো,কতো কস্ট করে পাস করছি জানো,তোমার ভাইয়ের কতো অত্যাচার সহ্য করেছি।এখন আর এসব পড়া পড়া নিয়ে কোন রকম যন্ত্রণা সহ্য করতে পারবো না,আমি যেমন আছি ভালো আছি,আর তোমার ভাই আমি কলেজে গেলে আমাকে আরো টর্চার করবে।এভাবে যাবি না,এটা করবি না,কারো সাথে কথা বলবি না ব্লা ব্লা ব্লা.....।এতোসব শর্ত মেনে কি কলেজ করা যাবে বলোতো।তার চেয়ে ভালো আমি এখনি আছি।
- আচ্ছা বাদ দেও, এখন বলো তুমি আমার সাথে যাবে।
কোথায়????
- আরে আমার বান্ধবী আয়নির জন্মদিন আজ,তুমি চলনা ভাবী,তুমি গেলে মা আমাকেও যেতে দিবে।
আরে রে অফ যাও ননদিনী, তুমি মার কথা পরে বলো,তোমার হিটলার ভাইকি আমাকে যেতে দিবেনি,আগে সেটা ভাবো।
- আচ্ছা আমি সবাইকে রাজি করাচ্ছি, তুমি রেডি হও।
আগে তোমার ভাই কি বলে দেখো,,,,,শুনো আমার কথা,কে শুনে কার কথা,নিশিতো দৌড়,,,,
আমি রেডি হয়ে নিলাম,নীল রংয়ের একটা শাড়ি পড়লাম,আর হালকা সাজ করলাম।রেডি হয়ে জিসানকে কল দিলাম কিন্তু জিসানের ফোন সুইচ অফ,ও মিটিং এ থাকলে প্রায়ই ফোন অফ থাকে।তাই হয়তো।আমি তবুও অনেকবার কল করলাম।কিন্তু নো রিসপনস।
- ভাবী তুমি রেডি হয়েছো।আরে ভাবী তোমাকেতো নীল পরি লাগছে।
এতো পাম্প মারতে হবে না,তোমার ভাইয়ের ফোনতো বন্ধ এখন কি করবো।তোমার ভাইকে না বলে গেলে অনেক রাগ করবে।তখন আবার আমাকে আস্ত রাখবে না।
- আরে ভাবী তুমি এতো ভয় পাও কেনো,আমি তো আছি, আমি মাকে বলে দিয়েছি, মা ভাইকে ফোন করে বলে দিবে,(ডাহা মিছা কথা,মা নিজেও বলেছে জিসান ভাইকে জেনো বলো যাই,ভাবীর ব্যাপারে সে রিস্ক নিতে রাজি না,)মা বললে ভাইয়া মার উপর কোনো কথাই বলতে পারবে না দেখো।
তিশা ফোনটা টেবিলে রেখে,নিশির কাছে এসে, সত্যি বলছো।
- হুমমম,তিন সত্যি, এবার চলো।
দাঁড়াও আমি ব্যাগটা নিয়ে নি,তিশা ব্যাগটা তো নিয়েছে কিন্তু ফোনটা ওখানেই রেখে গেছে ভুলে।
কারন কপলা যে ওর দূর্ঘতি আছে তাই।
.
.
.
চলবে.........................................................