ভাইয়ের বন্ধু যখন বর - পর্ব ২৭ - ইয়াসমিন তানিয়া - ধারাবাহিক গল্প


~তিশা কাঁদতে কাঁদতে ঝর্নার নিচে বসে পড়লো।না জেনে জিসানকে কস্ট দিয়ে ফেললো।এভাবে অনেকক্ষন ভিজলো,চোখের পানি ঝর্ণার পানির সাথে মিশে যাচ্ছে।এভাবে অনেকক্ষন থাকার পর বাহিরে বের হয়ে দেখলো জিসান এখনো আসে নি।তাই তিশাও চুপচাপ বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।খুব ক্লান্তে ঘুমিয়ে গেছে।

~এদিকদিয়ে জিসান ছাদে এক কর্নারে দাঁড়িয়ে সিগারেট এর ধোয়া ছাড়ছে আর গভীর চিন্তায় আছে।কি হবে এখন।কেনো জানি মনে হচ্ছে সামনে অনেক বড় বিপদ আসছে, আর এই বিপদ থেকে মুক্ত হবার কোন উপায় জেনো জিসানের জানা নেই।নিলয় ও রনি দুজনকেই চিনি আর এ দুজনেই তিশার জন্য বিপদ ডেকে আনবে।এদের চোখ থেকে এতো বছর আড়ালে রাখলাম কিন্তু এখন কেনো পারছি না,কেনো জানি মনে হচ্ছে খুব শীঘ্রই আমি কিছু হারাবো।এমন সময় জিসানের ফোন বেজে উঠলো।জিসান একটু চিন্তিত হলো,এতো রাতে আননোন নাম্বার থেকে কে কল করছে।জরুলী হতে পারে ভেবে ফোনটা ধরে,হ্যালো,,,,,.।

:হ্যালো জিসান। কি হলো ঘুম আসছে না।~নিলয়।

~উমমম।আমি ভাবছিলাম এখনো ফোন কেনো আসলো না।

:হা হা হা,আসলেই আমরা দুজন শত্রু হলেও দুজন দুজনকে খুব ভালো করে চিনি।

~উমমমম,আমি এটাও জানি কেনো এতো রাতে আমাকে ফোন করেছিস।তাই আমি আগেই বলেদি ভালো করে শুন,যার দিকে নযর দিচ্ছিস সে আমার ভালোবাসা,আমার জীবন,আমার রাতের পূর্ণিমা চাঁদ।যা শুধু আমাকে আলোকিত করার জন্য জন্ম ওর।আমার চাঁদকে আমি অন্য কাউকো আলোকিত করতে দিবো না,আর এটা কলেজ না,যা নিয়ে তোর আর আমার মধ্যে দন্ধ হবে বা প্রতিযোগিতা হবে।
ও আমার গার্ল ফ্রেন্ড না আমার বিবাহিত স্ত্রী, তাই আমি আসা করবো তুই ওর থেকে দূরে থাকবি।

:রিলেক্স... এতো চিন্তা করে কি হবে এখন।আমি আপাতত দূরেই থাকবো কিন্তু মনে রাখিস তিশার ওই চোখের চাওনী আমাকে ঘায়েল করছে।তাই ওকে ভুলা এতো সহয না।আর আমি ভুলতেও চাই না।আসলে রনি টিকই বলেছিলো,তিশা মনেই নেশা।তাইতো এতো পাগল হয়ে গিয়েছে ওওও।

~নিলয় জাস্ট সেট আপ।

:আমাকে চুপ করিয়ে লাভ নেই,আমি ততোক্ষণ তিশাকে আপন করে পাওয়ার চেস্টা করবো না, যতোদিন তুই ওকে আঘলে রাখবি,কিন্তু তিশার প্রতি তোর কোন অবহেলা হলেই,আমি তিশাকে নিজের কাছে নিয়ে আসবো।আর এতে তুই কেনো তিশাও আটকাতে পারবে না,আর আমি কেমন আর কি করতে পারি,এটা খুব ভালো করেই জানোস।

~জিসান.... নিরব।

:আর একটা কথা,রনি খুব রেগে আছে যে কোন সময় কিছু একটা করবে,সো বি রেডি।

~তকে এতো চিন্তা করতে হবে না।

আরে ভাই আমি তোর চিন্তা করিনা,আমার তো তিশুর জন্য চিন্তা হচ্ছে,আর তিশু যেহেতু এখন তোর দায়িত্বে তাই ওকে সব দিক থেকো রক্ষা করাও তোর কাজ, আমার না।

জিসান আর কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিলো।
আপাতোত নিলয়কে নিয়ে টেনশন করতে চাই না,সমস্যা হচ্ছে রনিকে নিয়ে এই রনির একটা ব্যবস্থা করতে হবে।

জিসান আর কিছু না ভেবে,রুমে চলে গেলো,রুমে গিয়ে দেখি তিশা শুয়ে আছে,হয়তো ঘুমিয়ে গেছে।তাই নিজেও গিয়ে শুইয়ে পড়লাম।গভীর রাতে কারো আর্তনাদে ঘুম ভাঙ্গলো। হঠাৎ লাফ দিয়ে উঠে দেখি তিশা কাঁপছে, আমি তারাতারি ওর মাথায় হাত দিয়ে দেখি,এতো বিষণ জ্বর শরীলে ।একি ওর চুল ভিজা,তার মানে ও এতো রাতে শাওয়ার নিয়েছে,মনে হয় অনেকক্ষন ছিলো,তাইতো এতো জ্বর আসছে।আমি ওর চুলগুলো ভালো করে মুছে দিলাম,ওকে তুলে জোর করে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে কপালে পট্টি দিতে লাগলাম।আর ওর গালটাতে আমার আঙ্গুলের দাগ গুলো কালছে ওয়ে পরেছে, আমি দাগগুলোতে মলম লাগিয়ে দিলাম।কিন্তু জ্বর এখনো কমছে না,তাই আর কিছু না ভেবে।নিজের শার্টটা খুলে তিশাকে বুকে জরিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম,শরীলের তাপদেয়ার জন্য।ভোর রাতে তিশার জ্বর চলে গিয়ে শরীল থেকে ঘাম বের হয়।

~সকালে উঠে দেখি জিসান আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে ঘুমিয়ে আছে।উনার ঘুমান্ত ফেসটা একদম বাচ্চাদের মতো দেখতে,কে বলবে এই মানুষটা এতোটা রাগি।আমাকে বকে,আবার সারারাত বসে আমার সেবাও করছে।মাঝে মধ্যে মনে হয় আমি উনাকে এখনো পুরাপুরি চিনি নাই।আমি আস্তে করে উঠে ফ্রেস হতে চলে গেলাম।এর পর নিচে গিয়ে সবার জন্য নাস্তা টেবিলে সাজাতে লাগলাম।গালের দাগটা এখনো অনেকটা আছে তাই চুল দিয়ে ডেকে রাখলাম।নিশি এসে টেবিলে বসলো।কিন্তু আমি কোনো কথাই বললাম না ওর সাথে।কারন দোষটা সম্পূর্ণ ওর ছিলো।ও ভালো করেই জানে জিসান কেমন তবুও মিথ্যা বলছে।তাই আমি ওকে দেখে রান্নাঘরে চলে গেলাম।

~জিসান ও কিছুক্ষন পর নিচে আসলো নাস্তা করার জন্য।কাল থাপ্পর খেয়েও এই মেয়ের মধ্যে কোন অনুশোচন নেই।বুঝছি কালকের ডুসটা কম ছিলো, এখনো কন্ট্রোল না করলে এমন ঘটনা আরো ঘটবে।নিশিএএএএ।

:বলো ভাইয়া কি বলবে।মুখটা ঘোমরা করে।~নিশি

~তোর ফোনটা দে তো।

:কেনো,,,,,

~দিতে বলছি দে,,,,,, অনেকটা চেঁচিয়ে।

জিসানের চেঁচানো শুনে রান্নাঘর থেকে দৌড়ে টেবিলে এসে যা দেখলাম,আমি তো শোকড। নিশির ফোনটাও আমার ফোনের মতো ইন্তেকাল করছে। 

~জিসান নিশির ফোনটা জোরে ফ্লোরে ছুড়ে মারলো,আর ফোনটা ভেঙ্গে চুরমার।

:ভাইয়া এ কি করলে,আমার নতুন ফোন।

~কাল কয়টা কল করেছিলাম।একটা কলও রিসিভ করার টাইম হয়নি তোর।তোকে ফোন দিলে যদি তুই ফোন ধরার টাইমই না পাস তাহলে ফোন দিয়ে কি হবে,আজ থেকে ২ মাস তুই ফোন ছারাই থাকবি।এটা তোর শাস্তি।এর পর জিসান রাগে গজগজ করতে অফিসে চলে গেলো।আর আমি ওর যাওয়ার পথে চেয়ে রইলাম।

:নিশি ন্যাকা কান্না করতে লাগলো,তখন আমার শ্বাসুড়ী এসে এক ধমক দিলো।

মা তুমিও আমাকে বকছো।ভাইয়াকে কিছু বলছো না কেনো।

-কি বলবো,সব নস্টের মুল তুই।তোর ফোনটা ভাঙ্গছে বলে এতো নাটক করছিস দেখ তোর কারনে এই মেয়েটার কি অবস্থা, আমাকে টেনে নিশির সামনে নিয়ে।
তোর কারনে ওকে ও শাস্তি পেতে হইছে।আমি তোকে বার বার বলেছিলাম না জিসানকে না বলে তিশাকে কোথায়ও নিতে না।তুই জানিস তোর ভাই কেমন তবুও তুই মিথ্যা বলে তিশাকে নিয়ে গেলি।এখন আবার এখানে বসে নাটক করছিস।

:নিশি আমার গালের দাগটা দেখে,আমাকে জরিয়ে কান্না করে দিলো।সরি ভাবী।আমার জন্য তোমাকে শাস্তি পেতে হলো।আমি ভাবছি ভাইয়া একটু বকবে,কিন্তু এতো কিছু হবে আমি বুঝতে পারিনি।সরি।ওর কান্না দেখে আমি আর রাগ করে থাকতে পারলাম না।আমি ওকে শান্ত হতে বললাম, ওর কান্না বন্ধ করার জন্য বললাম,ননদিনী শুধু তোমার ফেনটা ইন্তোকাল করেনি,আমার টাও কাল শহীদ হইছে।

:কি তোমার ফোনও ভাইয়া ভেঙে ফেলছে।

~হুমমমমম.....আমি বাচ্চাদের মতো ঠোটটা উলটিয়ে।

এর পর আমরা দুজনেই হেসে দিলাম।

সারাদিন জিসান আর কল করেনি।তাই আমিও আর কল দি নাই।

~রাতে বাসায় এসে ফ্রেস হয়েই আবার লেপটপ নিয়ে বসে পড়লো,একটাবারও আমার সাথে কথা বলনি

একটু পর ডিনারের জন্য নিশি এসে ডেকে গেলে,উনি ডিনার করে রুমে এসে বারান্দায় সিগারেট এর ধোয়া উড়াচ্ছে।আর আমি সব কাজ শেষ করে রুমে আজ ইচ্ছা করেই দেরি করে গেলাম,ভাবলাম ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু গিয়ে দেখি উনি এখনো বারান্দায়।

আমি আস্তে করে উনার পেছনে গিয়ে জরিয়ে ধরলাম।সরি,আমি আর এমন কখনো করবো না,আপনাকে না বলে কোথাও যাবো না।প্লিস এবারের মতো আমাকে ক্ষমা করে দিন।প্লিস....।আপনে বললে আমি কানও ধরতে রাজি।তবুও ক্ষমা করেদিন।

এদিকদিয়ে জিসান…তিশার এমন আচরনে হাসবো না কাঁদবো চিন্তা করছি।একদম পিচ্ছিদের মতো মাপ চাচ্ছে।আমি ওর হাতটা ধরে ওকে সামনে নিয়ে এলাম।দেখি ও এখনো কান্না করছে।কান্না বন্ধ কর তিশা।

আপনে এখনো আমার উপর রেগে আছেন,আগে বলুন আমাকে মাপ করেছেন।

~আমি রেগে নেই,তুই কান্না বন্ধ কর।

সত্যি.....

~হুমমমমম,কিন্তু এর পর এমন যাতে না হয় মনে থাকবে।
আমি মাথা নেড়ে হা বললাম।উনি আমাকে শক্ত করে বুকে জরিয়ে ধরলেন।এর পর কপালে একটা কিস করে কোলে তুলে নিলেন।বিছানায় রেখে আবারো ভালোবাসার সাগরে ডুব দিলাম আমরা।
.
.
.
চলবে......................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন