- আজ থেকে তিশা কলেজে যাওয়া শুরু করলো আবার।অনেক দিন কলেজে যায় না।আজ নিলুও আসেনি,অসুস্থ বলে।তাই তিশা একাই গেলো,আবার কলেজ শেষে একাই বাসার দিকে রওনা দিলো।কিন্তু পথে আজ আবিরের সাথে দেখা হয়ে গেলো।
- আরে তিশা কোথায় যাও।
- আবির ভাই,এতো দিন পর,কোথায় ছিলেন।কোন খোঁজ খবর ছিলোনা এতোদিন।
- আরে আমি একটু ঢাকার বাহিরে কাজে গিয়েছিলাম।কিন্তুু তোমারও তো কোন খবর নাই।তুমি তো পারতে আমাকে একটা কল দিতে।
- আসলে ভাইয়া আমিও ঢাকায় ছিলাম না,কাজিন এর বিয়েতে গিয়েছিলাম।এতোদিন কলেজও আসেনি। আজই আসলাম।
- ওওও আচ্ছা,তাই বলো।নিলু নাকি অসুস্থ।
- হুমমমম,আমি ও আজই জানতে পারলাম।
- তুমি কি যাবে দেখতে ওকে।গেলে চলো আমার সাথে আমি তো ওর বাসায়ই যাচ্ছি।
- না থাক ভাইয়া আমি বিকেলে গিয়ে দেখে আসবোনি।আপনে জান।
- আরে না না। তোমার কোন কথাই আজ শুনবো না।তুমি এখনই আমার সাথে যাবে।কতোদিন পর দেখা হলো,তোমার সাথে কথা বলিনা, অনেক দিন হলো।
- এক ধরনের জোরাজোরি করার পর তিশা উপায় না পেয়ে আবিরের সাথে এক রিকশায় উঠে পরে।
- নিলু আর আবিরের সাথে অনেক গল্প করে তিশা বিকেলে বাসায় আসে।
- বাড়ীতে এসেই,,,,,,,।
কিরে এতো দেরি করলি কেনো।(তিশার মা)।জিসান কখন থেকে এসে বসে আছে তোর ঘরে জানোস।আর তোর কোন খবর নাই।
- জিসানননন.....।উনি আসবে আমাকে তো বলেনি।তাহলে আমি কি করে যানবো।(তিশা একটু আশ্চর্য হলো)
- তিশা ঘরে গিয়ে দেখে জিসাম বসে আছে।আজ জিসান কে অন্য রকম লাগছে তিশার।চোখে মুখে কেনো জানি রাগ দেখা যাচ্ছে।
- স্যার আপনে আসবেন আমি তো জানতাম না,জানলে তারাতারি আসতাম।
- জিসান উঠে আমার সামনে এসে দাড়ালো,আমার হাতটা ধরে খাটে বসালো।টিক আমার সামনে একটা চেয়ার নিয়ে বসে তার দুপায়ের মাঝে আমাকে আটকিয়ে ফেললো।আমিতো চুপচাপ বসে আছি আর ভাবছি আজ আবার কি হলো।এই রাক্ষসটা এমন রেগে আছে কেনো।
- কোথায় ছিলি তুই।
- আ... মিমিমি।নিলুদের বাসায় গিয়েছিলাম, নিলু অসুস্থ তাই।
- ছেলেটা কে তিশা।
- তিশা উঠে দাড়িয়ে গেলো।কো..ননন.....ছেলে।(ভয়ে তিশার গলা শুকিয়ে গেলো)
- জিসান তিশার হাতটা ধরে আবার অর সামনে বসিয়ে দিলো।যার সাথে রিকসায় বসেছিস,কেনো মনে পরছে না।
- তিশা ভয়ে নিচের দিকে তাকিয়েই বলছে, ওওওও তো আবির ভাইয়া।
- কে এই আবির ভাইয়া যাকে আমি চিনিনা।দেখেতো মনে হয়না তোর সাথে পড়ে।তাহলে কে....?
- নি নি নিলুর কাজিন।
- নিলুর কাজিন তোকে চিনে কিভাবে।
- নিলুর বাসায় পরিচয়ে হয়েছিলো।নিলুকে দেখতে যাচ্ছিলো,তাই তার সাথে আমিও গিয়েছিলাম।আর কিছুনা।
- পরিচয়টা মনে হয় খুব ঘনিষ্ঠ তা না হলে ছেলেটা বলার সাথে সাথে তুই ওর সাথে চলে গেলি।
- জিসান তিশার হাতটা ধরে এক টান দিয়ে তিশাকে সামনে টেনে আনে,তিশার মুখের উপর জিসানের গরম নিশ্বাস পড়ছে,তা তিশা বুঝতে পারে।
- নিলুর বাসায় সেজেগুজে যাওয়ার কারণ কি এই আবির।
- তিশা ভয়ে কাঁপতে থাকে।না না না কি বলছেন,এমন কিছুই না বলে তিশা উঠে দাঁড়াতে চায়।
- জিসান রেগে তিশার দুই বাহু খুব শক্ত করে ধরে,কি মনে করিস তুই, আমি বোকা কিছুই বুঝি না,নাকি নিজেকে খুব বেশি চালাক মনে করিস।তুই যা খুশি তাই করবি আর আমি জানতে পারবো না।তুই কবে বুঝবি আমার ভালোবাসা, নিজের ক্যারিয়ার ফেলে শুধু তোকে পাহাড়া দি,যাতে কেউ তোকে নজর দিতে না পারে,আর তুই কিনা নিজের নজরে অন্যকে বসাতে চাস,কেনো বল।আমার ভালোবাসার কি কোন মুল্য নেই তোর কাছে,তুই ছাড়া কোন মেয়েকে কাছে আসতে দেয়াতো দূরে থাক চোখ তুলে দেখিনি।শুধু তোকে ভালোবেসে গিয়েছি।বিনিময় তোর থেকে কিছুই চাইনি।কিন্তু এখন তুই শুধু আমার ভালোবাসা না,আমার বিবাহিত বউ, আর আমার বউয়ের মুখে অন্য কারো নাম আমি কিছুতেই শুনতে চাইনা।আমি আগেই বলে দিয়েছি, তোকে কেউ হাত দিলে আমি তাকে যেমন মাপ করবো না,টিক তুই কারো কাছে গেলে আমি তোকেও কিন্তুু মাপ করবো না।আমার শাস্তি থেকে তুই নিজেকেও বাঁচাতে পারবি না।মনে রাখিস আমি ভালোবেসে তোর জন্য মরতে পারি,তেমনি তুই অন্যকারো হতে চাইলে নিজ হাতে তোকে মেরে ফেলবো।এর পর নিজেও মরবো।
- জিসানের চোখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না,আর তিশার চোখ দিয়ে তো অশ্রু বেয়েই চলছে।
- প্লিস আমাকে ছাড়ুন, আমার খুব লাগছে।
- তোর খুব লাগছে,আমারো এমন লেগেছে তোকে আবিরের সাথে দেখে।
- আপনে ভুল বুজছেন, আমার আর আবির ভাইয়ের মধ্যে এমন কিছুই নেই।
- না থাকলে তোর জন্যই ভালো।জিসান কথাটা বলেই তিশাকে ছেড়ে দেয়।ওখান থেকে চলে যায়।
- তিশা খাটের উপর বসেই কান্না করছে।কেনো কান্না করছে তা হয়তো তিশা নিজেও টিকমতো জানে না,আবিরকে তিশা পছন্দ করে,কিন্তুু ভালোবাসে না।আর জিসান তো এখন ওর স্বামী, তাই ভালোবাসতে চায় কিন্তুু ভয়ে ভালোবাসতে পারেনা।সেই ছোট কাল থেকে জিসানকে দেখে আসছে কিন্তুু সেই চোখে কখনো দেখেনি।তাই অনেক সংশয় কাজ করে তিশার মাঝে।
- সেদিন এর পর থেকে তিশা আর জিসানের মধ্যে কোন কথা হয়নি।জিসান রায়হানের কাছ থেকে তিশার সব খবর নিচ্ছে কিন্তুু তিশার সাথে কোন কথা বলে না।
- আসতে আসতে শুক্রবার এসে পড়েছে।আজ জিসানের বাড়ী থেকে সবাই আসবে।তিশার বাবা মার সাথে কথা বলে সব ঠিকঠাক করে তিশাকে আংটিও পড়িয়ে যাবে।
- তাই সকাল সকাল ই তিশার বাড়ী মেহমান দিয়ে ভরে গিয়েছে,তিশার কিছু কাজিন আর ফুফুরা আসছে।তিশাকে তার কাজিনরা ও নিলু মিলে রেডি হতে সাহায্য করলো।আজ তিশা একটা নীল রংয়ের শাড়ী পড়লো,আর সাথে কিছু হালকা সাজ।এতেই ওকে অনেক সুন্দর লাগছে।আর তিশা ভালো করেই জানে বেশি সাজ জিসানের একদমই পছন্দ না,,,,এর জন্য তিশা একদিন থাপ্পড় ও খেয়েছিলো জিসানের হাতে। সে থেকে তিশা খুব হালকা সাজই দেয়।
- কিছুক্ষন পর জিসানের পুরো পরিবার এসে পড়েছে।সাথে জিসানও।এই প্রথম জিসান এই বাড়ীতে রায়হান এর বন্ধু হয়ে না বরং এ বাড়ীর জামাই হয়ে এসেছে। তাই জিসানের খাতিরদারি এখন ভিন্ন।
- কিছুক্ষন পর তিশাকেও নিয়ে আসে।
- জিসানের মা, এইতো আসছে আমার বউ মা।জিসানের মা তিশাকে জিসানের পাশেই বসালো।আর উনিও তিশার সাথেই বসলো।
আমার তো তিশাকে খুব পছন্দ হয়েছে।ওর পরীক্ষা না থাকলে আমরা আজই নিয়ে যেতাম আমাদের বাসায়।
জিসানের মার কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো।
- এর পর একটা আংটি জিসানকে দিলো তিশাকে পড়িয়ে দেবার জন্য,তিশা হাত বাড়াতে দেরি করছিলো বলে জিসান নিজেই তিশার হাতটা ধরে আংটিটা পড়িয়ে দিলো।আর তিশাকেও জিসানকে আংটি পড়িয়ে দিতে হলো।
- এভাবে ওদের এংগেসমেন্টটা হয়ে গেলো।কিছুক্ষণ পর তিশার কাজিনরা জিসান ও তিশার কিছু ভালো ভালো পিক তুললো একটু জোর করেই।
- যাওয়ার সময় জিসান সবার থেকে বিদায় নিলেও তিশার সাথে একটা কথাও বলনি।
- তিশা জিসানের এই ব্যবহার দেখে কিছুটা অবাক হলো।
.
.
.
চলবে....................................................