-পরের তিন রায়হান আর জিসান বসে চা খাচ্ছে,তাদের একটা নির্দিষ্ট জায়গা আছে,তারা এখানেই বসে বেশির ভাগ সময়,আড্ডা মারে।হঠাৎ জিসান রায়হান কে উদ্দেশ্য করে বললো কি রে,,,কিছু ভাবলি।কাকে রাখবি।
"
"
-ভাবলাম তো.. সারা রাত ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে অনেক ভাবলাম।
"
"
-কি,,,,! মানুষ জেগে থেকে ভাবে আর তুই ভাবিস ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে।আজব!!!(জিসান)
"
"
-আরে দূর ওটা বাদ দে আমি এমনেই ভাবি।(রায়হান)
"
"
-টিক আছে বস, এখন বল কাকে দিয়ে পড়াবি।(জিসান)
"
"
-তুই ছাড়া আমার কে আছে বল।
"
"
-জিসান চা খাচ্ছিলো, রায়হানের কথা শুনে বিষম খেলো।কি জা তা বলছোস।আমি....?তুই আর কাউকে খুঁজে পাসনি।আমি কি আগে কাউকে পড়াইছি।আর জানোস না তিশা মাঝে মাঝে এমন কান্ড করে তখন আমার খুব রাগ উঠে যায়।তখন আবার আমি নিজেকে সামলাতে না পারলে কি না কি করে ফেলবো আমি নিজেও জানি না।আমার রাগ সম্পর্কে তো তোর আইডিয়া আছে।
"
"
"
- সে কারনেই তো তোকে বললাম,তিশা খুব ভয় পায় তোকে,তোর ভয়ে এমনেই দেখবি পড়াও সব তারাতারি কমপ্লিট করে ফেলবে তোকে ভাগানোর জন্য।আমি ই পড়াতাম কিন্তু আমার চাকরীর লেটার যে কোন সময় পেয়ে যাবো তখন আবার সমস্যা হবে, তাই তোকে বললাম।আর ওর পরীক্ষারও বেশিদিন বাকি নেই।দেখ এতো কম সময় ওর সিলেবাস একমাত্র তুই কমপ্লিট করে দিতে পারবি।
"
"
"
-তুই রনি কে বল,ও তো এর আগে ও অনেককে পড়িয়েছে।(জিসান)
"
"
-তুই রনির সভাব জানোস না,ওর কাছে আমার বোন কে দেব.... এর আগে ও কি কি করেছে জানোস না।পড়া রেখে আমার বোনের দিকে নযর দিবে।
"
"
-দেখ জিসান আমার শেষ ভরসা তুই।তুইও কি আমাকে নিরাশ করবি।
"
"
-ওকে টিক আছে, আমি শুধু ওর সিলেবাস শেষ করে দেবো। ওকে.....(কিছু ক্ষন চিন্তা করে জবাব দিলো)
"
"
-ওওওওও জিসান।(জিসান কে জরিয়ে ধরে) তুই আমার কতো বর সমস্যা দূর করছোস জানোস না।
"
"
-তোর সমস্যা তো দূর হলো আমার শুরু হলো,তুই জানোস তোর বোন আমাকে হিটলার বলে।আমি নাকি এনাকোন্ডা।আমি নাকি সব কিছু গিলে ফেলি,চাবানোর সুযোগও দিনা।(জিসান)
"
"
-হা হা তোকে কে বলললো।
"
"
-একদিন বসে বসে আমাকে বকছিলো,আমি পেছনো দাঁড়িয়ে ছিলাম,বেচারি জানতো না,যখন আমাকে দেখলো এমন দৌড় দিলো। এক মাস আমার সামনেও আসে নি।তাহলে বুজ.....।
"
"
-ভালই।তুই আজ থেকেই পড়ানো আরম্ভ কর।আমি মাকে বলে দিবনি।(রায়হান)
"
"
-ওকে।(জিসান)
"
"
বিকেলে হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো......
-তিশা দরজা খোল, দেখতো কে আসছে।তোর স্যার আসার কথা ছিলো।( মা চিৎকার দিয়ে বলছে রান্না ঘর থেকে)
"
"
-তিশা দরজা খুলে দেখে জিসান দাঁড়িয়ে আছে।জিসান কে দেখে এই সময় তিশা কিছুটা আশ্চর্য হলো।কারন রায়হান ভাই না থাকলে জিসান কখনো আসে না।ফোন দিয়ে আসে।
"
"
-জিসান ভাই আপনে।রায়হান ভাইতো বাসায় নেই।
"
"
-তা তো জানি,আমি তো রায়হানের সাথে দেখা করতে আসিনি,আসছি তোর জন্য।(জিসান)
"
"
-এ্যা.....।(তিশা,মুখ চোখ বাকিয়ে)
"
"
-কিরে এভাবে তাকিয়ে থাকবি নাকি ঘরেও আসতে দিবি।
"
"
-কি রে তিশা কে আসছে।(মার কথায় তিশার ধ্যান ভাঙ্গলো)
"
"
-মা জিসান ভাই,তিশা মনে মনে ভাবছে এই হিটলার আমার সাথে দেখা করতে কেনো আসছে মতলোব কি।
"
"
-আরে জিশান বাবা আসো আসো। বাহিরে দাঁড়িয়ে আছো কেন, ভেতরে আসো।
"
"
-জিশান ভেতরে ডুকে তিশার মাকে জিঙ্গেস করলো, আন্টি কোথায় বসবো, ড্রয়িংরুম এ, নাকি তিশার রুমে।
"
"
-তিশার রুমে কথাটা শুনে,,, তিশা যেনো আকাশ থেকে পড়লো,আ,,মা,,,র,,রুমে মানে কি...
"
"
তিশার মা তিশার কথা কানে মনে হয় শুনলোই না।
"
"
-আরে এখানে কেনো বসবে তিশার রুমে গিয়ে বসো।ওখানে পড়াতে সুবিধা হবে।
"
"
-এতোক্ষন পরে তিশার চিন্তার অবসান হলো,নিউ টিচার আর কেউ না জিসান।(তিশা তো পারে না কেদেই দেয়)
'
"
-এই লোকটার কাছে কিভাবে পড়বো আমি,এটাতো এক নাম্বারের হিটলার।,এনাকোন্ডা।আমাকে গিলে খেয়ে ফেলবে।মনে মনে জিসানকে গালি দিচ্ছে আর ভাবছে।
"
"
-আমাকে গালি দেয়া শেষ হইছে,নাকি আরো বাকি আছে।এখন চল পরতে বসতে।
'
"
-জিসান এর কথায় তিশা ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে গলো।কপালটা কুচকিয়ে মনে মনে বললো কিভাবে জানলো আমি গালাগালি করছি।
"
"
-জিসান গিয়ে তিশার রুমে চেয়ারে বসলো,তিশার কোন কোন সাবজেক্ট এ সমস্যা আছে তা আগে বের করতে বললো।
"
"
-তিশা ২ টা বই সামনে দিয়ে বললো, কতো বছর পর এই বই গুলোর মুখ দেখছেন।
"
"
-তোর কি মনে হয় আমি অনেক বুড়ো হয়ে গিয়েছি।তাই বই দেখলে বলবো আরে আমি তো পাস করার পর বই গুলো ধরিনি।তাই না,,,।
"
"
-না তেমন কিছু তো বলিনি আমি, আপনে একটু বই গুলোর সাথে পরিচিতো হন,আমি একটু আসছি।
"
"
-কই যাস তুই।পড়া রেখে।(জিসান)
"
"
-এই তো আম্মুর কাছে আমি এখনি আসছি।তিশা সোজা ওর মার কাছে গিয়ে জিঙ্গেস করলো,মা মা....
"
"
-কি হইছে, সারা দিন বকরীর বাচ্চার মতো ম্যা ম্যা করস কেনো।আর তুই এখানে কি করস।পড়তে না বসে।
"
"
-মা আমি কি তোমার সৎ মেয়ে।নাকি রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পাইছো।
"
"
-কি জা তা বলছিস,তোর মাথা কি ঠিক আছে।
"
"
-কিভাবে মাথা ঠিক থাকবে, তোমরা একটা বারও আমাকে জিঙ্গেস করলে না,জিসান ভাইকে ঠিক করার আগে।এমনেই তাকে আমার সহ্য হয় না তার উপর আমার ঘাড়ে বসিয়ে দিয়েছো।
"
"
-দেখ তিশা আর কোন কথা শুনতে চাই না,জিসান বসে আছে আগে পড়া শেষ কর, তার পর কথা হবে।
"
"
-তিশা চলে গেলো ওর রুমে।চেয়ারে বসে জিসানের দিকে থাকিয়ে আছে।
"
"
-জিসান বুঝতো পেরে বইটা বন্ধ করে, তিশার দিকে তাকিয়ে জিঙ্গেস করলো,কি সমস্যা, এভাবে তাকিয়ে আছোস কেন।কিছু বলবি।
"
"
-আমি আপনাকে কি বলে ডাকবো,স্যার নাকি জিসান ভাই।
"
"
-দু,,টাই।(জিসান জানতো তিশা এমন ইস্টুপিট মার্কা প্রশ্নে করবেই।)
"
"
-এ্যা,এ্যা.....।(তিশা)
"
"
-মুখ বন্ধ কর।নাহলে মোশা ঢুকবে।
"
"
-তিশা আবার, আচ্ছা স্যার আইডিয়াটা কার ছিলো আমাকে পড়ানোর।
"
"
-তোর রায়হান ভাইয়ার।(জিসান)
"
"
তিশা মনে মনে বলা শুরু করলো,, হে আল্লাহ একটা রশি ফেলো আমি উঠে যাই তোমার কাছে।কেনো এমন ভাই আমার কপালে জুটলো।
"
"
-এখন যদি তোর প্রশ্ন শেষ হয় তাহলে এবার পড়ায় মনোযোগ দেয়া যাক।
"
"
তিশাকে সব পড়া বুঝিয়ে দিয়ে জিসান চলে গেলো।কাল আবার আসবে অনেক পড়া দিয়ে গেছে সব যাতে কমপ্লিট পায় কাল, তিশাকে বলে গেলো।
"
"
-তিশা ভাবছে যদি ভালো মতো দিতে না পারি কাল আবার যেনো কি শাস্তি দেয় আল্লাহ ই যানে।সে দিনের শাস্তির কথা তিশার এখনো মনে আছে।
এই তো কয়েক সপ্তাহ আগের কথা।
"
"
-তিশা কোচিং এ গিয়ে শুনে আজ স্যার পড়াবে না অসুস্থ।তাই তিশা আর ওর কিছু কোচিং ফ্রেন্ডসরা প্লানিং করলো আজ পার্টি করবে ওরা।
"
"
-তিশার সাথে নিলাও ছিলো,আর তিন জন ছেলে ফ্রেন্ডস, যারা তিশার সাথে কোচিং এ পরতোই।ওরাও এই এলাকায় থাকে।
"
"
-তিশা ও ওর ফ্রেন্ডসরা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফুসকা খাচ্ছে আর ক্লাসের কিছু বিষয় নিয়ে হাসাহাসি করছে।
"
"
জিসান বাইক নিয়ে যাবার সময় তিশাকে দেখে থেমে যায়।বাইক থেকে নেমে তিশার কাছে গিয়ে জিঙ্গেস করে এখানে কি করস তুই।তোর না এখন কোচিং এ থাকার কথা।
"
"
-হঠাৎ জিসান কে দেখে তিশা বিষম খায়,ফুসকা মনে হয় ওর গলা দিয়ে নামছে না।কোন রকম খেয়ে বললো, আজ ছুটি দিয়ে দিয়েছে স্যার,সে অসুস্থ।
"
"
-তাই খুশিতে ফুসকা পার্টি চলছে, তা আবার রাস্তা দাঁড়িয়ে। তাই না।(জিসান রাগে কটমট করে কথা গুলো বলছে)
"
'
-চল আজ আমি তোকে ফুসকা খাওয়াবো,দেখি তুই কতো খেতে পারিস।মামা ১ প্লেট ফুসকা বানান কড়া জাল দিয়ে....।
"
"
-এ কথা শুনে তিশা তো ভয়ে কাপতে লাগলো,আর নিলা ফুসকার প্লেট টা রেখে বিল দিতে চাইলে, জিসান বলে.... আমি দিয়ে দেবো নিলা।তোমরা যাও,নাকি তোমাদের জন্যও অর্ডার করবো।
"
"
-না ভাইয়া, আমাদের পেট ভরে গেছে,আমরা আসি।সব দৌঁড়, সেখান থেকে।
"
"
-জিসান ফুসকার প্লেট টা নিয়ে তিশাকে দিলো।খাও এবার।
"
"
-তিশা প্লেটটার দিকে তাকিয়ে দেখলো মরিচ দিয়ে ভরা।সে জিসানের দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকলো।
"
"
-তুই খাবি নাকি আমি খাইয়ে দেবো।(জিসান)
"
"
-না না আমি খাচ্ছি।বলে তিশা শুরু করলো,ওর চোখ নাক লাল হয়ে গিয়েছে,চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।তবুও সব খেলো।
"
"
-নেক্সট টাইম এভাবে দেখলে এর থেকে বেশি হবে মনে রাখিস, বলে একটা রিকসা ডেকে ভাড়া দিয়ে দিলো রিকসা চালক কে।আর কিছু চকলেট তিশার হাতে দিয়ে দিলো।
"
"
-তিশা রাগবে নাকি কাঁদবে কিছু ই বুঝতে পারছে না।
"
"
-বাসায় এসে ওর ভাইকে বিচার দিচ্ছে, জিসান কি কি করছে।
"
"
-ওর ভাই ওর সামনে এসে যা বললো এতে ও আরো অভাক হলো।
"
"
-জিসান তো জ্বাল খাইয়েছে, আমি থাকলে তোকে এক থাপ্পড় মারতাম। রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তুমি পার্টি করো,তা আবার এলাকার বদ ছেলেদের সাথে করে।আবার বিচার দিতে আসছো।যা ঘরে যা।
তিশা দৌড় দিয়ে ঘরে চলে গেলো,সেদিন কিছুই আর খায়নি রাগ করে।
"
"
-পরে তিশার বাবা এসে ওর রাগ ভাঙ্গিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো।
"
"
তিশা হঠাৎ ওর মার ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে বের হলো।মনে মনে ভাবছে লোকটা আমার সাথে এমন কেনো করে।আসলে সমস্যা কি তা ও কখনো বলে না।
.
.
.
চলবে....................................................