ভাইয়ের বন্ধু যখন বর - পর্ব ০৬ - ইয়াসমিন তানিয়া - ধারাবাহিক গল্প


-জিসান তিশার দিকেই তাকিয়ে আছে।এই মেয়েটা আমাকে পাগল বানিয়ে ছাড়বে।আজ ওকে পরীর মতো লাগছে।এভাবে চলতে থাকলে নিজেকে ওর কাছ থেকে দূরে রাখতে কষ্ট হয়ে পরবে।আচ্ছা তিশা কি এখনো বুঝতে পেরেছে আমি ওকে কতো ভালোবাসি।এক নাম্বারের গর্দভ, আমি খুব ভালো করেই জানি.....ও হয়তো এখনো বুঝেনি।

কিভাবে ওকে বুঝাবো।আমাকে দেখলেই এরিয়ে চলে।মনে হয় আমি কোন জঙ্গল এর বাঘ ওকে গিলে খেয়ে ফেলবো।ওওও আল্লাহ এ মেয়েটাকে একটু বুদ্ধিদেও।তা না হলে আমার জীবন তেজপাতা করে তুলবে।
(জিসান তিশার দিকে এক নযরে তাকিয়ে মনে মনে কথাগুলো বলছে আর হাসছে)

-সীমা তোকো অনেক সুন্দর লাগছে,জিজু দেখলে পাগল হয়ে যাবে।(তিশা)

-তাই তুমিও কোন দিক দিয়ে কম লাগছো না।দেখনা... বউ আমি আর সবাই তোমার দিকে তাকিয়ে আছে।কতো জনকে আজ ঘায়েল করে দিচ্ছো কে জানে।(সীমা)

-তাইনি জেলাস ফিল করছো গো....(তিশা মুখটা একটু ভেঙ্গছিয়ে সীমা কে বললো।

-চারদিক নজর করতে গিয়ে হঠাৎ জিসান এর চোখ পড়লো সকালের ছেলে তিনটার দিকে।ষ্টেজ এর পাশে একটা গাছে দাঁড়িয়ে কথা বলছে আর তিশার দিকে তাকাচ্ছে।ওরা তিশাকে নিয়ে কিছু একটা বলছে এটা জিসানের বুজতে আর বাকি রইলো না।তাই সে তাড়াতাড়ি রায়হানের কাছে গেলো,আর সব খুলে বললো।রায়হানকে ছেলেগুলোকে দেখিয়ে বললো,এদের কে এখানে ইনভাইট করছে।

-মামা দেখোতো এদের চিনেননি,মামা তাকিয়ে দেখলো এরা এই এলাকার মেম্বার এর ছেলে আর তার বন্ধু।রায়হান মামাকে সব খুলে বললো, সকালে কি কি হলো,আর এখনও ওরা তিশাকে ইশারা করে কি জেনো বলছে।(রায়হান মামার সাথে)

-হে আল্লাহ কি বলস।আমাকে আগে বলস নাই কেনো।এরা একবার যার দিকে নযর দেয় তার জীবন নস্ট করে দেয়।এই এলাকার অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে।মেম্বার এর ছেলে বলে কেউ কিছু করতে পারে না।দেখ তোরা তিশার দিকে একটু নযর রাখিস।ওকে একা কোথাও যেতে মানা করিস।টিক আছে।আল্লাহ... আল্লাহ করে দুদিন ভালোয়ভালো গেলেই হলো।তার পর এক মিনিটও তোদের এখানে থাকার দরকার নাই।(তিশার মামা)

-জিসান ও রায়হান টেনশনে পরে গেলো।তাই তারা সিদ্ধান্ত নিলো জিসান যেহেতু মেহমানদের বেশির ভাগকেই জানে না তাই জিসান শুধু তিশার দিকে নযর রাগবে,আর রায়হান মেহমানদের আপ্যায়ন করবে।

-জিসান তিশাকো কিছু বলিস না,অর মনটা খারাপ হয়ে যাবে।টেনশন ও করবে।(রায়হান)

-হুমমম টিক বলেছিস। ওকে বুজতে দেয়া যাবেনা,অর আনন্দটাই মাটি হয়ে যাবে।

-রায়হান চলে গেলো,কারন মামার একার পক্ষে এতো কিছু করা সম্ভব না।আর জিসান দূর থেকে তিশাকে পাহারা দিচ্ছে।

-একজন একজন করে সীমাকে সবাইকে গায়ে হলুদ দিলো,রায়হান ব্যস্ত বলে জিসানকে ভাই হয়ে হলুদ দিতে বললে সবাই।জিসান সীমার কপালে একটু হলুদ দিয়ে একটু মিস্টি খাইয়ে দিলো।হঠাৎ তিশা বলে উঠলো এতো মিস্টি খাইস না.... বিয়ের আগেই মুটকি হয়ে যাবি।

-তিশার কথা শুনে জিসানের খুব হাসি পেলো।একটু হলুদ নিয়ে তিশার নাকে লাগিয়ে দিলো।সীমার কথা না ভেবে তুই নিজেকে দেখ দিন দিন কোলবালিশ হয়ে পড়ছিস।তোর জামাইয়ের কোলবালিস কেনা আর লাগবে না,তোকে পেলেই হবে।

-জিসানের কথা শুনে তিশার মাথা নস্ট হয়ে গেলো।কিকিকি।আমি কোলবালিস? কোন দিক দিয়ে। আপনার চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছে।ঢাকায় গিয়ে চোখের ডাক্তার দেখাবেন। আর আপনে আমাকে হলুদ দিয়েছেন কেনো।বিয়ে কি আমার।

-না তোর না,তবে শুনেছি বউয়ের হলুদ কুমারী মেয়েদের দিলে তার বিয়ে নাকি তারাতারি হয়।তাই আর কি তোকে দিয়ে দিলাম যাতে করে তোকেও আমরা তারাতারি বিদায় করতে পারি।

-তিশাতো রেগে গিয়ে চলে যেতে চাইলে সীমা বাধা দেয়।আরে কই জাস,জিসান ভাইয়া তোর সাথে দুষ্টুমি করছে।দেখস না মিটমিটিয়ে হাসছে।তিশা খেয়াল করলো সত্যিই জিসান হাসছে অর দিকে তাকিয়ে।

-তিশা মনে মনে যতো গালি ছিলো সব জিসান কে দিলো।

-অনুষ্ঠানের গান বাজনাও শুরু হয়ে গেলো।সবাই অনেক আনন্দ করছে।ছেলে পক্ষ আর মেয়ে পক্ষের মধ্যে অনেক খেলা চলছে,গিফট আদান প্রদান।কেউ ভাঙ্গা গলায় গান করছে,আবার কেউ নাচছে।যে যেটা পারছে করছে।হঠাৎ তিশার দিকে খেয়াল করলো,একটা ছোট মেয়ে তিশাকে শরবত এনে দিলো,তিশা মেয়েটার সাথে কথা বলছে আর শরবতটা খাচ্ছে।জিসান ভাবলো হয়তো তিশার পিপাসা পেয়েছে তাই মেয়েটা কে দিয়ে আনিয়েছে।

-আরে এটা কার জন্য,ছোট মেয়েটি এটা তোমার জন্য।আমার জন্য কে দিয়েছে।ভাইয়া দিয়েছে মেয়েটি বলে দৌড় দিলো।তিশা ভাবলো হয়তো রায়হান ভাই তিশার জন্য শরবতটা পাটাইছে তাই অন্য কিছু চিন্তা না করে খেয়ে ফেললো।আরে এটার টেস্টটা এমন কেনো।কোমন জানি।হয়তো গ্রামের পানি দিয়ে বানিয়েছে বলে এমন হইছে।তিশা আবার গায়ে হলুদ এর অনুষ্ঠানের।দিকে মন দিলো হঠাৎ মনে হলো তিশার মাথাটা একটু ঘুরাচ্ছে।তিশা ভাবলো হয়তো ক্লান্ত লাগছে বলে এমন হচ্ছে তাই সীমা কে বলে বাড়ীর ভেতরে যাবার জন্য হাটতে লাগলো।মাথাটা খুব বেশি ঘুরাচ্ছে। হাটতেও কস্ট হচ্ছে।

-জিসান এতো ক্ষন একটু সাইড গিয়ে রায়হানের সাথে ফোনে কথা বলছিলো, তাই খেয়ালি করেনি তিশা কখন উঠে চলে গেছে।ফোনটা পকেটে রেখে দেখলো তিশা নাই।আরে তিশা কই গেলো। জিসান সীমাকে জিঙ্গেস করলো,সীমা তিশা কই,তোমার সাথে না ছিলো।

-ভাইয়া ওর নাকি মাথা ঘুরাচ্ছে তাই বাড়ির ভেতরে চলে গেছে।

-মাথা ঘুরাচ্ছে কেনো হঠাৎ। জিসান ও বাড়ির ভেতরে দৌড় দিলো, কিন্তু বাড়ীর ভেতরে তিশাকে পেলো না,আসে পাশে খুঁজতে গেলে হঠাৎ জিসান দেখলো তিশার স্যান্ডেল পরে আছে বাড়ীর পেছনে। জিসান বুঝতে পারলো কিছু একটা হয়েছে। রায়হানকে ও অনেক কল করলো কিন্তু এতো শব্দে ফোনের রিং রায়হান শুনতে পাইনাই।জিসান আর কিছু চিন্তা না করে বাড়ীর পেছনের দিক হাটতে লাগলো।পেছনের দিকটা একটু জঙ্গলের মতো আর কিছুটা দূরে তিশার মামাদের একটা পরিতেক্ত বাড়ী আছে,যেটা এখন স্টোর রুম বানিয়ে।আসলে আগে ওখানেই তিশার মামারা থাকতো পরে এখানে নতুন বাড়ীকরে ওটাকে স্টোর রুম বানিয়ে রাখছে।জিসান সোজা ওই বাড়ীর দিকে হাটা ধরলো।দেখলো স্টোর রুমের দরজা খোলা, জিসানের মনে একটু খটকা লাগলো, তাই ফোনের লাইটটা ওন করে ভেতরে ঢুকলো।ভেতরে গিয়ে দেখে তিশা অঙ্গান হয়ে পরে আছে মাটিতে।জিসান দৌড়ে গিয়ে তিশাকে জরিয়ে ধরে,আর তিশা তিশা বলে ডাকতে থাকে।হঠাৎ জিসানের মাথায় ভারী কিছু দিয়ে কেউ বারি মারে আর জিসানও সেখানে অঙ্গান হয়ে যায়।
.
.
.
চলবে......................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন