ভাইয়ের বন্ধু যখন বর - পর্ব ০৭ - ইয়াসমিন তানিয়া - ধারাবাহিক গল্প


-জিসান দৌড়ে গিয়ে তিশাকে জরিয়ে ধরে,আর তিশা তিশা বলে ডাকতে থাকে।হঠাৎ জিসানের মাথায় ভারী কিছু দিয়ে কেউ বারি মারে আর জিসানও সেখানে অঙ্গান হয়ে যায়।
"
"
এই কাজ গুলো সকালের ওই ছেলেগুলো করছে, ওদের টার্গেট ছিলো শুধু তিশা।ওরা চাইছিলো তিশা যাতে আর কাউকে মুখ দেখাতে না পারে এমন ব্যবস্থা করবে।ওরা তিশাকে ধর্ষণ করতে চাইছিলো। কিন্তু জিসান এসে পড়ায় ওদের সব প্লান নষ্ট হয়ে যায় ।তাই এখন জিসানকেও ওরা শায়েস্তা করতে চায়।
"
"
-কি রে কি করমু এহন,মাইয়াডার লগে এই শালাও আইসা পরছে।(ওই তিন জনের মধ্যে একজন বললো)
"
"
-মেম্বার এর পোলার নাম ছিলো শাকিব।শকিব বলে উঠলো শোন দুইডারে একসাথেই শায়েস্তা করমু।দেখ কাল কি খেলা হয়।এই কথা বলে তিনটাই হেসে উঠলো।
"
"
অন্যদিকে জিসান ও তিশা দুজনেই অঙ্গান হয়ে মাটিতে পরে আছে।কাল এক ভয়াবহ সকাল হবার অপেক্ষায়
"
"
-অনেক রাত পর্যন্ত হলুদের অনুষ্ঠান চলেছে।এদিকে রায়হান এতোই ব্যস্তছিলো যে তিশার কথা ওর মনেই ছিলো না।কিছু মেহমান চলে গেছে আর কিছু মেহমান বাসায়ই রয়ে গেছে।ক্লান্ত শরীলে যে যেখানে জায়গা পাইছে ঘুমিয়ে পড়েছে।বাড়ি ভর্তি এখনো মেহমান আছে।রায়হানও সোফায় বসার সাথে সাথে শরীলটা ছেড়ে দিছে।তাই সেও সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছে।আসলে রায়হান ভাবছে তিশা ও জিসান হয়তো বাড়ির কোথাও না কোথাও ঘুমিয়ে আছে,এখন কাউকে সে ডিস্টার্ব করতে চায় না।
"
"
-আজ বিয়ে বলে সবাই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে গেছে।সীমা উঠেই আগে তিশাকে খুঁজতে লাগলো,কারন তিশা কাল অসুস্থ ছিলো,আর কাল রাত থেকেই ওকে আর দেখেনি সীমা।পুরা বাড়ি সীমা তিশাকে খুঁজলো কিন্তু পেলো না।সীমার সাথে তিশার মামা মামীও খুঁজতে লাগলো।সীমা দৌড়ে গিয়ে রায়হানের কাছে গিয়ে রায়হানকে ঘুম থেকে উঠার জন্য ডাকতে লাগলো।এই রায়হান ভাই, ভাই,এই ভাই...উঠ।
"
"
-রায়হান ঘুম ঘুম চোখে সীমাকে বকতে লাগলো।কি রে কি হইছে।এতো সকাল সকাল ডাকলি কেন। আরো একটু ঘুমাতে দে।
"
"
-সীমা চিৎকার দিয়ে বললো, ভাই তিশাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।কাল রাতের পর থেকে কেউ ওকে দেখেনি।তুমি জানো ও কোই।
"
"
-রায়হানের মাথায় জেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।কি বলস তুই।তিশা তোর সাথে ছিলো না।ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে।
"
"
-না ভাইয়া।হলুদ শেষ হবার আগেই ও চলে আসছে বাসায়।ওর শরীল ভালো লাগছিলো না বলে।
"
"
-কি....?রায়হান লাপ দিয়ে দাঁড়িয়ে যায়।আমি ভাবলাম ও তোর সাথে আছে তাই রাতে আর খোঁজ নি নাই।আমারি ভুল ছিলো।ওওওও খোদা।
"
"
-রায়হান পাগলের মতো চারদিক তিশাকে খুঁজতে লাগলো।বাড়ীর বাকি মানুষ গুলোও খোঁজা শুরু করে দিলো।হঠাৎ রায়হানের জিসান এর কথা মনে পড়লো।সবাই আছে কিন্তু জিসান নাই এখানে।জিসান কি তিশাকে খুঁজতে গেছে নাকি ওও ঘায়োব।
"
"
সীমা এই সীমা জিসান কে দেখছোস।
"
"
-না ভাইয়া।কাল রাতের পর থেকে আমি জিসান ভাইকেও আর দেখিনি।এমনকি সকালও কোথাও পাওয়া যায় নি।
"
"
-রায়হান যেনো পুরো পাগল হয়ে যাবে এখন।এক দিকে তিশা আরেক দিকে জিসান।দুজনেই ওর কাছের মানুষ, আর দুজনকেই ও জেনো হারিয়ে ফেলেছে মনে হয়।
"
"
-পুরো বিয়ে বাড়ী এখন মরাবাড়ীর মতো হয়ে গেছে।
"
"
-হঠাৎ বাড়ীতে গ্রামের কিছু মুরব্বী এসে হাজীর হলো এরা আসলে সকলেই গ্রামের মেম্বার আর চেয়ারম্যান সাহেবের চামচা।শফিক স্যার মানে তিশার মামাকে উনারা দেখতে পারেনা।এর আগেও কয়েকবার চেস্টা করেও শফিক স্যারকে গ্রাম ছাড়া করতে পারেনি।তাই এবার ও অনেক প্লানিং করে আবার আসছে।তিশার মামাকে অপমান করতে।
"
"
-এদের দেখেই শফিক সাহেব বুজতে পারলো কেনো এরা এসেছে।শফিক সাহেব রায়হানকে চুপ থাকতে ইশারা দিলো।মুখ বন্ধ থাকলেও চোখ জেনো কোন বাধ মানছে না রায়হানের।শফিক সাহেব গিয়ে সৌজন্যতা বজায় রাখতে জিঙ্গেস করলো আরে আপনারা এতো সকাল সকাল এখানে।কি মনে করে।
"
"
-শফিক স্যার কি হুনতাছি আমরা আপনার বোনের মাইয়াটা নাকি কাইল রাত থেকে ঘায়োব।তো কই গেছে কিছু জানতে পারছেন।
"
"
-অন্য একজন বলে উঠলো, কই আর যাইবো মনে হয় রাইতে কারো লগে ভাইগা গেছে।মাইয়াটার চালচলন তেমন ভালা ছিলোনা, গতো দুইদিন যা দেখলাম।(মুখটা একটু বাকিয়ে কথাগুলো বলছে।)
"
"
তাদের সাথের আরো একজন,,,, শুনলাম.. যে পোলাডার লগে ভাগছে ওইডা নাকি রায়হানের বন্ধু,ছি ছি,, ভাবতেও ঘৃণা লাগছে।কেমনে করলো।এহোন সীমার কি হইবো শফিক সাহেব। পোলার বাড়ী যদি জানে মাইয়ার বোন রাতে কারো লগে ভাইগা গেছে তাহলে এই বাড়ীতে উনারা রিশতা করতে কোনদিনও আইবো না।
"
"
-রায়হান এখন রেগে গেলো।একতো বোনকে পাচ্ছে না তার উপর এদের এ ধরনোর কথা। নিজের রাগটা আর কন্ট্রোল করতে পারলো না।চিৎকার দিয়ে উঠলো।খবরদার আমার বোনকে নিয়ে আর একটা খারাপ কথাও আমি শুনতে চাইনা।
"
"
শফিক সাহেব রায়হানকে ধৈর্য্য ধরতে বললো, না হলে সব শেষ হয়ে যাবে।
"
"
-দেখুম আগে তিশাকে খুঁজা খুব জরুলী,আগে ওকে খুঁজে পাই তার পর কি হইছে ওদের মুখ থেকেই শোনা যাবে।।

অন্যদিকে """""

জিসানের জ্ঞান ফিরলো।বাহিরের সূর্যের আলো জানালার ফাকগুলো দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছে।চারদিকে পাখির কিচিরমিচির শব্দও শোনা যাচ্ছে।জিসান অনেক কস্টে চোখগুলো খুলতে চেস্টা করছে।মাথাটা খুব ব্যাথা করছে।হঠাৎ জিসানের খেয়াল হলো কাল রাতে পেছন দিয়ে কেউ ওকে মাথায় মেরেছে।তার ব্যাথা এখনো অনুভব করছে।হঠাৎ জিসানের তিশার কথা মনে পড়লো। জিসান চোখ খুলে তিশাকে নিজের বুকের উপর পেলো।জিসান লাফ দিয়ে উঠে তিশা তিশা করে ডাকতে লাগলো।জিসানের অনেক ডাকে তিশার জ্ঞান ফিরে এলো।তিশা মাথাটা ধরে চারদিক থাকিয়ে ভাবতে লাগলো ও কোথায় এখন।কারন কাল বাড়ীর ভেতরে প্রবেশ করতে গেলে কেউ তিশার হাত ধরে ফেলে,তিশা ঘুম ঘুম চোখে শাকিবকে দেখতে পায়।আর তখনি জ্ঞান হরায়।কিন্তু এ কি জিসান ভাই আপনে এখানে কেন।আর আমি কোথায়।আমার মাথাটা অনেক ব্যাথা করছে।চোখগুলো খুলতেও অনেক কস্ট হচ্ছে।
"
"
-সব বলবো।আগে এখান থেকে বের হতে হবে আমাদের ।কাল রাত থেকে আমরা এখানে,রায়হান মামা মামী সবাই মনে হয় খুঁজছে আমাদের। উঠ কস্ট করে, দাঁড়াবার চেস্টা কর।
জিসান তিশাকে ধরে উঠালো।জিসান দেখলো দরজাটা একনো খোলা বাহির থেকে।তাই ও আর এক মিনিটও ওখানে না থেকে তিশাকে সাথে নিয়ে বাড়ীর দিকে হাটতে লাগলো।যতো বাড়ীর কাছে আসছে চিল্লানো আর চেঁচামেচির শব্দ শুনতে পারছে জিসান।জিসান বুজতে পারলো কিছু একটা হচ্ছে বাড়ীর ভেতরে,তানা হলে কেউ আমাদের না খুঁজে এমন চিল্লাচিল্লি কেনো করছে।জিসান মনে মনে ভাবছে আল্লাহ তুমি সাহায্য করো এ বিপদ থেকে রক্ষার জন্য।
"
"
-এ দিক দিয়ে রায়হানের সাথে গ্রামের কিছু মানুষের সাথে তুমুল লড়াই লেগে গেছে।সবাই তিশার নামে আজেবাজে কথা বলছে বলে।
"
"
-জিসান বাড়ীর ভেতরে ডুকে ঘাবরে যায়।বাড়ী ভর্তি মানুষ দেখে।পরিস্থিতি বুজার চেস্টা করছে।কি হচ্ছে এসব।এতো মানুষ কেনো এখানে।জিসান একটু জোরেই রায়হান কে ডাকদিলো।ডাকের সাথে সাথে বাড়ী ভর্তি মানুষ পেছনো তাকিয়ে দেখলো তিশা ও জিসান দাঁড়িয়ে আছে।তিশা টিক মতো দাঁড়াতেও পারছে না জিসান ধরে রাখছে।রাহয়ান দৌড় দিয়ে তিশাকে এসে ধরলো।
"
"
-তিশা এই তিশা কি হইছে তোর, এই অবস্থা কেনো।বল,,,বল কিছু।
"
"
-তিশা শুনতেতো পারছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না।
 ক্লান্ত আর ঘুম ঘুম চোখে চারদিকে তাকিয়ে দেখে সব মানুষ তার দিকে তাকিয়ে আছে।আসলে তিশা বুজতে পারছে না কেন।তিশার পুরো শরীল কাপছে।কিছু বলতে চাইছে কিন্তু ভয়ে কিছুই বলতে পারছে না।
"
"
-সবাই তিশাকে কেমন নযরে জেনো দেখছে।জিসান বুঝার চেস্টা করছে, সবাই তিশাকে দেখে এমন করছে কেনো।হঠাৎ জিসান তিশার দিকে একটু ভালো করে তাকালো, দেখতে পেলো তিশার ব্লাউজ টা কিছুটা ছিড়া।ঠোটের লিপস্টিক আর কাজলটাও ছড়ানো।শাড়ীর কুছিগুলোও টিক না।জিসান এবার বুঝতে পারলো কেনো সবাই তিশার দিকে আড় চোকে তাকিয়ে আছে।
"
"
এদিক দিয়ে রায়হানকে জরিয়ে ধরে তিশা কাঁদতে লাগলো কিন্তু কিছু বলছে না।কি আর বলবে ও।কেউ কি ওর কথা বিশ্বাস করবে।
"
"
-জিসান মামী আর সীমাকে ইশারা করলো তিশাকে ঘরে নিয়ে যেতে।
"
"
-গ্রামের কিছু মহিলা বলাবলি করা শুরু করেদিলো,দেখছোস মাইয়ার কাম,লজ্জা শরমের মাথা খাইছে মনে হয় ।সারা রাইত আকামকুকাম কইরা মুখ কালা করছে।মামা মামী তো দূরহে থাহুক বোইনডার কথাও চিন্তা করেহ নাই।এহোন আবার এই মুখ হবাইরে দেহাইতে আইছে।
"
"
-তিশা সব শুনতে পাচ্ছে,আর চোখ দিয়ে অশ্রু ফেলছে।
"
"
-জিসান সব রাহয়ানকে খুলে বললো।,রায়হান স্তব্ধ হয়ে পরলো।কি হলো এক রাতে।এতো কিছু হয়ে গেলো আর ও রাতে বেঘোরে ঘুমিয়ে ছিলো।এখন কি হবে।কিভাবে গ্রামের এই অশিক্ষিত মুর্খ মানুষ গুলোকে বুঝাবে।।
"
"
-জিসান রায়নহান কে সান্তোনা দিলো,এতো ভাবছিস কেনো আমি এখন এসে পড়েছি,তুই একা না।চল দেখি কে কি বলছে।সবার প্রশ্নের উত্তর আমি দেবো।
"
"
-তিশার মামাকে সবাই অনেক অপমান করছে,লোকটা নিরবে সব শুনছে,সীমার বিয়ে ও নাকি এরা আর হতে দেবে না,গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বলছে।
"
"
-ব্যাশশশশশ....।(খুব জোরেই শব্দটা করেছে জিসান।)
"
"
-জিসানের এ ধরনের আচরণ এ উপস্থিত সবাই অবাক।

তাদের সামনে এসে বললো।সমস্যা কি আপনাদের।একটু খুলে বলবেন।আর আপনারা এই বিয়ে বাড়ীতে এসে এতো চেচামেচি কেনো করছেন। কি জানতে চান আমাকে বলুন আমি বলবো।কেন এই নির্দোষ মানুষকে অপমান করছেন।
"
"
-এতো ক্ষনে চেয়ারম্যান সাহেব ও এসে হাজির হইছে।সব কিছু শুনলো সবার থেকে।
"
"
-দেখছেন দেখছেন চেয়ারম্যান সাহেব,আফনের সামনেই কেমন বেহায়ার মতো প্রশ্ন করছে।এতো বড় কুকাম কইরা এহোন ভালা সাজতে আসছে।
"
"
-জিসান আবার বলে উঠলো কি কুকাম আমরা করছি একটু খুলে বলবেন।
.
.
.
চলবে....................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন