ভাইয়ের বন্ধু যখন বর - পর্ব ২২ - ইয়াসমিন তানিয়া - ধারাবাহিক গল্প


আপু আপনে কস্ট করতে গেলেন কেনো।আমিই আসছিলাম,দেখুন আপনার কস্টটা বৃথা গেলো।
যাই হোক, কফিটা আমাকে দিন,আর আপনে নিচে গিয়ে সবার সাথে বসুন,উনি এখন চেন্জ করবে।

লাবনি রাগে গজগজ করতে করতে নিজের রুমে চলে গেলো। রুমে গিয়ে অস্থির হয়ে পড়লো কিভাবে তিশাকে জিসানের জীবন থেকে সরাবে।প্লান মতো কাজ করতে হবে।আগে বুঝতে হবে তিশাকে কি দিয়ে জালে ফেলতে হবে।অবশ্যই জিসানের সামনে করা যাবে না।যা করতে হবে একা,যখন জিসান বাসায় থাকবে না।

লাবনি ভাবতে ভাবতে ওর মুখে হাসি ফুটে উঠলো,তিশার মতো মোটা মাথা মেয়েকে জালে ফেলতে সময় লাগবে না।যে ভাবেই হোক তিশাকে আমার জিসান থেকে দূরে সরাতেই হবে।জিসান কে আমার চাইইই চাই।যে কোন ও মূল্যে।।তুমি শুধু আমার আর কারো না।

~তিশা চা নিয়ে উপরে যেতে নিলে,জিসান কে নামতে দেখে আর উপরে গেলো না।জিসান তিশা থেকে চা টা নিয়ে ড্রয়িংরুম এ সবার সাথে গিয়ে বসলো।সবাই গল্প নিয়ে ব্যস্ত।

ভাইয়া আজকের প্লান মনে আছে তো,আজ আমরা মুভি দেখবো।রাত জেগে।~নিশি।

হুমমম তা তো ঠিক আছে।কিন্তু প্রত্যেকবারের মতো এবারও তাওহিদ ভাইয়া ছবির মাঝ পথে ঘুমিয়ে যাবে দেখিস।

সবাই হা হা করে হেসে উঠে।

তিশা গিয়েও জিসানের পাশে বসে।

ঠিক বলেছে জিসান,তুমি প্রত্যেকবার এমন করো কেনো।সোফায় বসেই হা করে ঘুমিয়ে পরো।এতো শব্দে ঘুমাও কেমনে।~তানজিলা।

ভাবী ভাইয়া সকালে তারাতারি উঠে ঘুম থেকে নামায পড়ার জন্য,কখনো কখনো আর ঘুমায় না।আর সারা দিন অফিসের কাজে শরীল ক্লান্ত হয়ে যায়,তাই হয়তো রাত জাগতে কস্ট হয়।

একদম ঠিক বলছো তিশা,এতোদিন পর আমার দুঃখ দূর হবে বলে মনে হয়।এরা সবাই আমার বিরোধী দল জানো,কেউ আমার কস্ট বুঝে না,আজ এতোদিন পর আমার দলে একজন সদস্য পেয়েছি।নিজেকে আজ শক্তিশালী মনে হচ্ছে।

ওকে ভাইয়া আজ থেকে আমি আপনার দলে।

এতোক্ষন এ লাবনিও নিচে নেমে তাদের সাথে জয়েন হয়।কিন্তুু কোন কথা বলে না,চুপচাপ বসে থাকে।

চল আগে ডিনার সারি আমরা তার পর মুভির প্লানিং করবো নি।~জিসান।

সবাই ডিনার করতে বসে জিসানের পাশের চেয়ারে লাবনি বসে পরে।কিন্তুু তিশা বসার জন্য জায়গা পায়না। কারন মেহমান বাসায়,তাই চেয়ার সব বুক।জিসান উঠতে নিলে লাবনি হাতটা ধরে বলে কি হলো ডিনার করবে না।

জিসান হাতটা সরিয়ে,তোমরা শুরু করো,আমি তিশার সাথে করবো পরে,বলে চলে যায়।
সবার ডিনার শেষে তিশা,জিসান এক সাথে বসে ডিনার করে নেয়।

ডিনার শেষে সবাই কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে,মুভি দেখার জন্য প্রস্তুুত নেয়।জিসানদের বাসায় আলাদা একটা থিয়েটার রুম আছে সেখানে বড় একটা টিভি,আর বসার জন্য তিনটা শোফা আছে।যাতে পরিবারের সবাই বসে এক সাথে মুভি এনজয় করতে পারে,তাইতো জিসানের কাজিনরা যখনি আসে ওদের বাড়ীতে তারা একত্রে মুভি দেখার প্লান করে।

জিসান মুভি সেলেক্ট করে তাকিয়ে দেখে সবাই আসছে কিনা।সবাইকে দেখতে পেলেও তিশা এখনো আসে নি তাই ও রুম থেকে বের হয়ে তিশাকে খুঁজতে লাগে।

তুই এখনো রান্নাঘর এ কি করছিস।

তিশা জিসানের দিকে তাকিয়ে,আপনে এখানে মুভি আরম্ভ হয়নি।

কিভাবে হবে আমার ম্যাডামতো এখানে।

আমি এখনি আসতাম,খাবার গুলো না নিয়ে আসলে সবাই আবার মুভির মাঝখানে জ্বালাবে তাই সব একবারে নিয়ে যাবো বলে দেরি হলো।
তিশা চিপস,কোক,পপকোর্ন একসাথে করে একটা ব্যাগে ভরছিলো।

জিসান তিশার পেছনে দাঁড়িয়ে তিশার কোমড়টা জরিয়ে ধরলে তিশা কিছুটা কেপে উঠ।জিসান তিশার কানের কাছে মুখটা নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,,, তিশা।
একদম মায়াভরা কন্ঠে,,,,,,,

হুমমমমম।

শরীল ভালো হয়েছে।

তিশা জেনো সাত আসমান থেকে নিচে ধপ করে পড়লো মনে হয়।
তিশা তাই নিশ্চুপ।

কানের কাছে আবার, কি হলো বলিস না কেনো।

আমার কাজ শেষ চলুন,সবাই বসে আছে।এ কথা বলে তিশা জিসানের হাতটা কোমড় থেকে ছাড়াতে চাইলে জিসান আরো শক্ত করে ধরে,,,নিজের সাথে।
 
আগে আমার কথার জবাব দে।

কি?

আমি জা জিঙ্গেস করেছি।

জানি না কি জিঙ্গেস করছেন।

তাইইই,চল বেড রুমে চল।আমি চেক করি।সব টিক আছে কিনা।

তিশার কোমর ছেড়ে কোলে তুলে নিলো।

আরেরেরে কি করছেন ছাড়েন আমাকে,আমি ভালো আছি এখন।প্লিজ নামান।কেউ এসে পরবে।

জিসান তিশাকে নামিয়ে একদম বুকের সাথে চেপে ধরে।
এখন কি হলো,,,,তিশার দিকে তাকিয়ে এক চোখ টিপ মেরে।
ছাড়ুন আমাকে,এটা আপনার বেডরুম না।কেউ এসে পড়লে লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাবে।

তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে।

কি,,,,,!

তোর পছন্দের মুভি,,,,,

আমার কোন মুভি পছন্দ আপনে কিভাবে জানেন।

আগে ভেতরে চল,তার পর সব বুঝতে পারবি।

তিশা জিসানের দিকে আড় চোখ দিয়ে তাকাচ্ছে আর ভাবছে কিছু একটা প্লানতো করছে এই হিটলার,তা না হলে সামান্য মুভি পাগল এই ছাগলে না।

তিশা ও জিসান প্রয়োজনীয় সব কিছু নিয়ে থিয়েটার রুমে আসলো।

আসছোস তোরা, আমি তো ভাবলাম বউকে নিয়ে মনে হয় হানিমুনে চলে গিয়েছোস।

ঝুমুর আপু তুমিও না, কখন কি বলো,আসে পাশে দেখেতো বলো।~জিসান।

সোফাগুলো একটার পিছে আরেকটা করে তিনটা শোফা সেট করা।

প্রথম সারিতে জিসানের কাজিনরা বসেছে, দ্বিতীয় সারিতে তানজিলা, তাওহিদ,অর্ক,নিশি বসেছে।

লাবনি এখনো বসেনি,জিসানের জন্য অপেক্ষা করছে।জিসান যেখানে বসবে ওখানেই বসবে।

তিশা গিয়ে নিশির পাশে বসে পড়লো।
জিসান মুভি চালু করে দেখে তিশা নিশির পাশে বসে আছে।

জিসানের মেজাজ টাই খারাপ হয়ে যায়।

তিশার হাত ধরে একটান দিয়ে উঠিয়ে, পিছনে নিয়ে গিয়ে বসে।লাবনি বসতে চাইলে জিসান বলে উঠে,
লাবনি প্লিস নিশির সাথে একটু বসবে, বেচারী নিশি ভয় পাবে একটু পর।

কেনো ভয় পাবে কেনো,,,,তিশার প্রশ্ন।

জিসান দাঁতেদাঁত চেপে বলে মুভি আরম্ভ হলেই বুঝবি।।

লাবনি বাধ্য হয়ে নিশির সাথে বসে পরে।

পেছনের শোফায় তিশা আর জিসান ছাড়া কেউ নেই।জিসান এটাই চেয়েছিলো মনে মনে।

মুভি আরম্ভ হবার সাথে সাথে সবাই একটা চিৎকার দিয়ে উঠলো কারন এটা হরোর মুভি।

সবাই জিসানের দিকে তাকিয়ে, এটা কি হলো ভাইয়া।আমরা রোমান্টিক মুভি আসা করেছিলাম।আর তুমি ভূতের ছবি নিয়ে আসলে।

আরে এটা অন্যধরনের রোমান্টিক ছবি।

ভূতের ছবি আবার রোমান্টিক হয় কিভাবে।

হয় হয় আগে দেখ।পরে তোরাই বলবি ভাইয়া অস্থির একটা মুভি।

এতোক্ষন তিশা জিসানের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো, আর ভাবছে,,,,,বলে কি এসব।পাগল হয়ে গিয়েছে,এই ছবি আর রোমান্টিক। এটা সব থেকে ভয়ের একটা ছবি।আমি তিনবার দেখার ট্রাই করেছি একবারও পারিনি ভয়ে।

জিসান তিশার দিকে তাকিয়ে কি ভাবছিস এতো।

এটা আমার পছন্দের ছবি কে বলছে আপনাকে

তাহলে,,,,,,।

আমি দেখবো না এই মুভি আপনেই দেখুন,বলে তিশা উঠে চলে যেতে চাইলে জিসান তিশার হাতটা ধরে নিজের কোলে বসিয়ে দেয় আর তিশার কোমড়টা শক্ত করে জরিয়ে ধরে যাতে তিশা যেতে না পারে।

ছাড়ুন আমায়, আমি এই মুভি দেখবো না।

এটা কি করে হয়,এতো কস্ট করে তোর জন্য খুঁজে আনলাম আর তুই দেখবি না।

আপনাকে কে বলেছে এই মুভির কথা।~তিশা

কে আর বলবে।~জিসান

বুঝছি রায়হান ভাই নিশ্চয়। 

এতো তারাতারি বুঝে গেলি।

আমি এটা দেখতে পারবো না আমার খুব ভয় করে।

আমি আছি না,আমি থাকতে তোর ভয় কিসের।এবার তুই একটুও ভয় পাবিনা দেখিস।

ঠিক আছে, ছাড়ুন,আমি শোফায় বসি, আপনার পা ব্যাথা করবে।

না করবে না, তুই এখানে বসেই দেখবি।আর আমি তোর শরীলের ঘ্রাণ নিবো।যা আমার খুব ভালো লাগে।।

জিসানের কথায় তিশার ভেতরে তেলপার শুরু হয়ে যায়।

সবাই মুভি দেখাতে ব্যস্ত আর জিসান তিশাকে নিয়ে।

জিসান তিশার চুলের খোপা খুলে দিয়ে চুলের ঘ্রান নিতে থাকে।মাথাল করা ঘ্রান আসে তিশার চুল থেকে।আর জিসান তা খুব মনোযোগ দিয়ে উপভোগ করছে।
এক সময় চুলটা কাধ থেকে সরিয়ে তিশার গলায় ঘাড়
এ কিস করতে থাকে।

বেচারী তিশা মুভি দেখে ভয় পাবে কি,সে তো জিসানের রোমান্টিক অত্যাচারে অতিষ্ঠ।

না উঠতে পারছে না শান্তিমতো বসতে পারছে।এভাবে তাদের রোমান্টিক মুভি শেষ হলো।।

 মুভি শেষে যে যার রুমে চলে গেলো।একেকটার চেহারা দেখলে বুঝা যায় তারা কি ভয়টা পেয়েছে।

 তিশাও ভয়ে জিসানের হাত ধরে চোখ বন্ধ করে বসে আছে।

কি রে রুমে যাবি না,নাকি এখানেই থাকবি।

আমার ভয়,করছে।~তিশা

জিসান তিশাকে কোলে তুলে নিলো,এবার তিশা আর কিছু বলেনি,চুপচাপ জিসানের গলা জড়িয়ে আছে।

সবার আগে আল্লাহ কে ভয় পাবি,এর পর দুনিয়াতে আমাকে ভয় পাবি।~বুজলি।

তোর হাসবেন্ড কিন্তুু ডেবিলের থেকে কম না।তিশাকে কোলে করেই রুমে নিয়ে গেলো।

আজ তিশা নিজেই জিসানের বুকে মাথা রেখে জিসানকে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ঘুমিয়ে আছে ভয়ে।

জিসান এটাই চেয়েছিলো।কারন জিসান ভালো করেই জানে এই ছবি দেখার পর তিশা একা কিছুতেই ঘুমাবে না।

রায়হানের কাছ থেকে জেনেছিলো,তিশা হরোর মুভি দেখলে রাতে একা ঘুমাতে পারেনা।তাইতো এতো ব্যবস্থা।
তিশা জিসানের বুকো মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো।আর জিসানও তিশার কপালে একটা কিস করে ওকে জরিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।।
.
.
.
চলবে.......................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন