ভাইয়ের বন্ধু যখন বর - পর্ব ১৯ - ইয়াসমিন তানিয়া - ধারাবাহিক গল্প


জিসান অফিসের সব কাজ তারাতারি শেষ করে, বিকালবেলা তিশার বাসায় চলে গেলো,সেখানে কিছুক্ষন রায়হানের সাথে গল্প করলো।

জিসান তুই ফ্রেস হয়ে কিছুক্ষন রেস্ট নে।তিশা ওকে তোর রুমে নিয়ে যা।তিশা জিসানকে নিজের রুমে নিয়ে যায়,আর নতুন কিছু কাপড় এনে দেয় জিসানকে ফ্রেস হয়ে পড়ার জন্য।

এগুলো কার কাপড়,রায়হানের।
না,আপনার জন্য বাবা আনছে।
তাইইই,কি দরকার ছিলো,আমি রায়হানের কিছু পরে নিতাম।

এটা নিয়ম , নতুন জামাই প্রথম বাড়ীতে এলে শ্বশুরের দেয়া কাপড়ি পরতে হয়।
খুব সুন্দর নিয়মতো,,,,,তো আর কিছু নিয়ম শিখিয়ে দেয়নি তকে।

তিশাকে পেছন দিয়ে জরিয়ে ধরে,এই যেমন স্বামী আসলে তাকে সেবা করা,তাকে জরিয়ে ধরে আদর করা।সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে তাকে ডিপলি একটা কিস করা।

না না এমন কোন নিয়ম নেই,কে বলে আপনাকে এসব। আমিতো আজও এসব দেখিনি কাউকে বলতে।
যতোসব আজাইরা নিয়ম।

তিশা জিসানকে ধাক্কা দিয়ে চলে যেতে নিলে,জিসান তিশার হাতটা ধরে টান দিয়ে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে।

এই তুই দেখবি কি করে,এর আগে তোর কয়টা বিয়ে হইছে,,,,বল।

কি যা তা বলছেন, মানুষের কয়টা বিয়ে হয়,আর বিয়ে হলেই সব জানবে, আর না হলে জানবে না কে বলেছে।

ওওও আমার তিশাপাখিতো তো তাহলে সব জানে,তাহলে এতোই যেহুতু জানো,তাহলে স্বামীর থেকে এতো দূরে দূরে থাকো কেনো জানু।জানো না স্বামীর থেকো দূরে থাকা আল্লাহ পছন্দ করে না।।তিশার কোমড় কে দুই বাহুদিয়ে আবদ্ধ করে রেখে।

হইছে,আজকের জন্য,এখন আপনে ফ্রেস হতে জান।আমি চা নিয়ে আসছি।তিশা জিসানের কাছ থেকে ছুটার চেস্টা করছে।

জানু আমি না ছাড়লে তুমি হাজার চেস্টা করেও নিজেকে ছুটাতে পারবে না,তাই শুধু শুধু নিজের শক্তি নস্ট করো না।।
জিসান তিশাকে ছেড়ে দিয়ে কাপড়গুলো নিয়ে ওয়াস রুমে চলে যায়।

ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে দেখে তিশা এখনো আসেনি,তাই জিসান আধো শোয়া অবস্থায় বিছানায় বসে মোবাইল টিপছে। তিশা চা নিয়ে আসে।জিসান চা টা এক চুমুক নিয়ে, আমার মাথাটা অনেক ব্যাথা করছে তাই আমি কিছুক্ষন ঘুমাবো।

তিশা চায়ের খালি কাপটা হাতে নিয়ে চলে যেতে চাইলে,জিসান তিশার হাতটা ধরে বলে,তুই কোথায় যাস।

আপনে ঘুমাবেন আমি কি করবো,বরং আমি থাকলে আপনার ঘুমের ডিস্টার্ব হবে তাই।

আমি ঘুমাবো,তুই আমার চুলগুলো টেনে দিবি।
কিকিকি,,,।
এতো জোরে চিল্লানোর কি আছে।
না মানেননন।
এতো মানে জানতে চাইনি, বস এখানে।

তিশাকে বিছানায় বসিয়ে তিশার কলে মাথা রেখে শুয়ে পরে।তিশা জিসানের মাথাটা বিলি দিতে থাকে।

তোকে আমি কি বলছি।
কি,,,।
আমি চুলগুলো টানতে বলেছি,বিলি দিতে না।
তিশা চুলগুলো টেনে টেনে দেয়।
তিশা,,,,,,,,?
হুমমমমম।
দুপুরে খাস নাই।
হুমমমম, খেয়েছিতো।
তাহলে এতো আস্তে আস্তে কেনো টানছিস, শক্তি নাই হাতে।কিছুটা চেঁচিয়ে।

 তিশা মুখটা ভেঙ্গছিয়ে চুলগুলো জোরে জোরে টানতে থাকে।

আমি না উঠা পর্যন্ত তুই কোথাও যাবি না,এখানেই থাকবি,আমি ঘুম থেকো উঠে তোকো না দেখলে খবর আছে।

আসলেই পাগল,কখন ভালেবাসে, কখন রাগ করে,আর কখন যে মতিগতি নস্ট হয়ে যায়।কিছুই বুজিনা।

তিশাও বসে ভাবতে ভাবতে কিছুটা ঘুমিয়ে যায়।

মাগরিবের আজানে তিশার ঘুম ভেঙ্গে যায়।
তিশা-এই যে শুনছেন উঠুন।আর ঘুৃমাতে হবে না।

তিশার ডাকাডাকি তে জিসান তিশার কোমড় টা আরো শক্ত করে ধরে ঘুম থেকেই বলেই কি করছোস, ঘুমাতে দে আরো একটু।

ঠিক আছে আপনে ঘুমান,কিন্তু আমাকে যেতে দিন।বাড়ীর সবাই কি মনে করবে, আমি এতোক্ষন রুমে কি করছি।

জিসান লাফ দিয়ে উঠে বসেই তিশার দিকে রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে বলে সবাই তোর মতো গাধা না,,,,,সবাই বুঝে শুধু তুই ছাড়া।

এ কথা বলেই জিসান ফ্রেস হতে ওয়াসরুম এ যেতে নিলো।

কি আমি গাধা, আমি গাধা হবো কি করে,এতো পড়া লেখা করে ও আপনে জানেন না।

তিশার কথা শুনে জিসানের মন চাইছিলো তিশাকে আছাড় মারতে।

জিসান তিশার দিকে তেড়ে আসে,তিশা ভয়ে রুম থেকে পালানোর জন্য দৌড় দিলে,জিসান তিশার হাতটা ধরে টান দিয়ে বুকের সাথে চেপে ধরে।

সব জানিস তাই না,কিন্তু জা জানার তাই জানোস না,এবার বাসায় চল দেখ কিভাবে সব শিখিয়ে দি।

তিশাতো ভ্যাবাচেকা হয়ে তাকিয়ে আছে।

জিসান তিশাকে ছেড়ে দিয়ে, যা তারাতারি রেডি হো,আমরা ডিনার করেই আজই বাসায় চলে যাবো।

তিশা মুখটা ঘোমরা করে বলে,আমি কাল আসি।

 -এক কথা আমি দ্বিতীয় বার বলবো না,আর আমরা আজই যাবো।

জিসান ফ্রেস হতে চলে গেলো।

ডিনার টেবিলে,জিসান তোমরা নাকি আজই চলে যাবে।
জি মা।একটা দিন থাকো।কাল চলে যেও।না মা,অফিসের কাজ অনেক জমে গেছে,আর ভাইয়ার একা সম্ভব না, তাই জেতেই হবে।আর কাল নাকি আমার কাজিনরা বাসায় আসবে ,তাই তিশাকেও নিতে হবে।আমরা পরে একদিন সময় করে আসবো।
আচ্ছা বাবা,তুমি যা ভালো মনে করো।ডিনার করে সবার সাথে কিছুক্ষন কথা বলে তিশাকে নিয়ে বাসায় চলে আসলো।জিসান বুজতে পারছে, তিশার মন খারাপ।এভাবে বাসা থেকে নিয়ে আসার কারনে।কিন্তু জিসান তিশাকে একদিনও তার কাছ থেকে দূরে থাকতে দেবে না।তাই তিশাকেও থাকতে দেয়নি।
বাসায় আসতে আসতে অনেক লেট হয়ে গেছে।ওরা বাসায় এসে দেখে সবাই যার যার রুমে, হয়তো ঘুমিয়ে পরছে,তাই কাউকে ডিস্টার্ব না করে রুমে চলে গেলো।

রাতেও তিসা জিসানের সাথে কোন কথা বলেনি,জিসান কিছু কাজ বাকি ছিলো বলে লেপটপ নিয়ে বসে কাজ করছে।আর তিশা ঘুমিয়ে পরছে।

আজ সকালে উঠেও তিশা নিজেকে জিসানের বুকের উপর পেলো।তিশা মনে মনে ভাবছে,আমি রোজ রোজ বালিশ ছেড়ে এখানে কি করে আসি।

হঠাৎ জিসান, এতো ভাবিস না,তোর মতো পিচ্ছি এগুলো বুজবে না।

 রেগে গিয়ে, তাহলে এই পিচ্ছি কে বিয়ে করছেন কেন।বড় কাউকে বিয়ে করতে পারলেন না।যে সব বুঝে।

হঠাৎ জিসান এক ঝটকায় আমায় বিছানায় ফেলে দিয়ে আমার উপর উঠে দুহাত চেপে ধরে।

ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি।কিন্তু হঠাৎ ফিল হয় ঠোটে কিছুর স্পর্শ, চোখ খুলে বুঝার আগই আমার ঠোট ওর ঠোটের মধ্যে নিলো।উমমমমম,,,,।আমার চোখ জেনো কপালে উঠে গেলো।জিসানকে সরানোর চেস্টা করতে লাগলাম কিন্তু হাত দুটো শক্ত করে ধরে রাখছে।আমার ছটফটানও তো ওর কোন মনোযোগ নেই।ও নিজের কাজে ব্যস্ত। প্রায় অনেকক্ষন পর আমায় ছাড়ে।

আমার দিকে তাকিয়ে বললো,এটা তোর শাস্তি আমাকে এতো দিন দূরে রাখার জন্য।আর এখন থেকে নিজেকে তৈরি করে রাখ আস্তে আস্তে আমি সব শিখিয়ে তেবো আমার এই পিচ্ছি বউটাকে।
একটা ডেবিল হাসি দিয়ে ফ্রেস হতে চলে গেলো।

আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না,এটা কি ছিলো, স্বপ্ন নাকি বাস্তব। কেউ আমাকে একটি চিমটি মারো।কিন্তু কে মারবে কেউ তো নেই।আমি মনে হয় স্বপ্ন দেখছি।আআআয়য়য়।কিন্তু আমার ঠোটটা এমন ফুলে গেছে কেনো।তার মানে এটা সত্য ছিলো।শয়তান ব্যাটা আমার ঠোট কি তোর জাগির মনে করেছোস।যে এমন করলি।তিশা বসে বসে জিসানের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করছে।

জিসান এসে দেখে আজও তিশা ঠোঁটে হাত দিয়ে কি জেনো ভাবছে।তাই তিশার সামনে এসে ভিজা চুলগুলো হাত দিয়ে ঝাকাতে লাগলো,ভিজা চুলের পানি তিশার উপর পড়লে চিন্তা থেকে বের হয়ে আসে।

তিশা জিসানের দিকে তাকিয়ে আছে।এক অদ্ভুত অনুভূতি লাগছে।জিসানে উন্মুক্ত শরীলটায় জেনো এক নেশা আছে।আগে কখনো কোন ছেলেকে এমন ভাবে দেখিনি বলে কি আজ এমন লাগছে।

জিসান আয়না দিয়ে দেখতে পেলো সব।কি রে এভাবে কি দেখছোস, চোখ দিয়ে আমাকে গিলে খাবি মনে হয়।

ফাজিল কোথাকার,মুখে কিছু আটকায় না।কিছু না, আপনার লজ্জা শরম নেই। কোন মেয়ের সামনে এভাবে থাকে।

কোন মেয়ে মানে, আমি আমার বউয়ের সামনে যেমনে খুশি তেমনে থাকবো।এতে লজ্জার কি আছে।আর এতো লজ্জা নিয়ে থাকলে তোর লজ্জা ভাঙ্গাবো কিভাবে।হুমমমম।বলতো,,,,।জিসান তিশাকে এক চোখ টিপ মেরে বলে।

উফফফফ,,,,,।বিরক্ত নিয়ে ওয়াসরুম এ চলে গেলো।

জিসান ওয়াসরুমের দরজা নক করে,তারাতারি বের হয়ে নিচে আস।।

জিসান নিচে নামার কিছুক্ষন পর তিশাও নেমে আসে।

আরে তোরা কখন এলি,আমি তো ভাবলাম তোরা আজ আসবি।

না মা আমরা কাল রাতই এসে পরেছি।লেট হয়ে গিয়েছে বলে তোমাদের আর ডাকিনি।
আচ্ছা ঠিক আছে,এখন বস নাস্তা করে নে।আজ আবার মেহমান আসবে,তাই জিসান ও তাওহিদ তোরাও তারাতারি আসিস।

আচ্ছা মা চেস্টা করবো আমরা।নাস্তা করে অফিসে চলে গেলো ওরা।

আর তিশা, তানজিলা ও রেনু খালাকে নিয়ে সব গুচগাচ করে নিলো।

রাতে জিসান ও তাওহিদ বাড়ীর ভেতরে ঢুকতেই চেচামেচির শব্দ শুনে দাড়িয়ে যায়।
ভাইয়া মনে হয় শয়তান গুলো এসে পরছে,আজ থেকে আর শান্তি দিবে না।

ঠিক বলছিস, আমিতো তোর ভাবীর কথা চিন্তা করছি।ঝুমুর কে দেখলে আমার দিকে এমন ভাবে তাকায় মনে হয় খেয়ে ফেলবে।

ঠিকই আছে, বলতে গেছো কেনো,ঝুমুর আপুর কথা আগ বাড়িয়ে।

আরে বলবো না তো কি করবো।দেখোস না মেয়েটা বাসায় আসলেই আমার পিছ ছারে না।তানজিলা তো একদিন আমাকে চেপে ধরেছে সমস্যা কি,তাই সব বলে দিলাম।

ভালো এখন বুঝো।আগে চলো ভেতরে দেখি কি অবস্থা। 

চল।আর আল্লাহ কাছে দোয়া করিস আমার জন্য।

তাওহিদ ও জিসান ভেতরে গিয়ে দেখে সবাই ড্রয়িং রুমে আড্ডা করছে।কিন্তু জিসান কিছু একটা দেখে ওর রাগ উঠে যায় তিশার উপর।
.
.
.
চলবে........................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন