ভাইয়ের বন্ধু যখন বর - পর্ব ০৮ - ইয়াসমিন তানিয়া - ধারাবাহিক গল্প


-গ্রামের সব মানুষের সাথে জিসানের অনেক তর্ক হচ্ছে।এসব কিছু তিশা ঘরে বসে শুনছে।আর ভয়ে হাত পা কাপছে তিশার।কি করবে, কি হবে.....। এ ভেবে তিশা অস্থির হয়ে পড়ছে।

আর জিসান সবাইকে বুঝানোর অনেক চেস্টা করছে।কিন্তুু সবাই তিশা আর ওর নামে নোংরা নোংরা কথা বলছে যা জিসানের সহ্যেরসীমা পার হয়ে যাচ্ছে।

রায়হান ও শফিক (তিশার মামা) ও সবাইকে বুঝাবার ব্যর্থ চেস্টা করছে।

-একসময় জিসান ধৈর্যহারা হয়ে সবাইকে বললো।তিশা আমার বিবাহিত স্ত্রী, আর স্বামী-স্ত্রী এক সাথে সারা রাত যদি ছিলো এতে আপনাদের কোনো সমস্যা হতে পারেনা বলে মনে করি।(কিছু বুজতে না পেরে মিথ্যা কথা বললো,কারন বিপদ আসলে মাথায় তখন কোন ভালো বুদ্ধি আসে না।)

-জিসানের এ কথায় উপস্থিত সবাই চুপ হয়ে গেলো।রায়হানও কিছু বুজতে পারলো না,জিসান এটা কি বলছে। রায়হান ভালো করেই জানে এটা মিথ্যা কথা কিন্তুু এতো বড় মিথ্যা কথার পরিণাম কি হবে। 

-উপস্থিত সবাইকে চুপ থাকতে দেখে,জিসান বললো,তিশা আর আমি একজন আরেক জনকে ভালোবাসি।কিন্তু রায়হান যদি না মানে তাই আমরা লুকিয়ে বিয়ে করে ফেলেছি,আর রায়হান ও এই ব্যাপারটা জানে না।সময় হলে ওকে বলতাম কিন্তু আজ পরিস্থিতির কারনে বলতে হলো।
.....জিসান একটু রায়হানের দিকে তাকিয়ে... সরি বললো।রায়হান এখনো অনেকটা শকট এর মধ্যে আছে।

-এর মধ্যে অনেকে বললো, আমরা মানি না এডা মিছা কথাও তো হইতে পারে।কেমনে মানুম এই ছ্যাড়া ছ্যারি জমাই বউ।সবাই প্রমাণ চায়।এই বিবাহের কি প্রমাণ আছে।

""তখন মেম্বার ও জিসানের উদ্দেশ্য বলে উঠলো,তোমার কাছে কি সাক্ষী আছে, তোমরা জমাই বউ।

""জিসান কিছুটা ভেবে উত্তর দিলো,দেখুন প্রমাণ ঢাকায়, আমি কি প্রমান পকেটে নিয়ে ঘুরি।আমাকে কালকের দিন সময় দিন।

-কিন্তুু উপস্থিত কেউ জিসানকে এক দিনও সময় দিতে রাজী হলো না।তাই জিসান রেগে সবাইকে জিঙ্গেস করলো ঠিক আছে,আপনারাই বলুন কি করলে বিশ্বাস করবেন।তিশা আমার বউ।
(একটি সময় পেলে জিসান কোনো না কোনো পথ বের করতে পারতো এই বিপদ থেকে বাচার জন্য,কিন্তুু এখন.......)

-মেম্বার সবার সাথে যুক্তি পরামর্শ করে জিসানকে বললো,আমাগো গ্রামে এমন ঘটনা ঘটলে এটা ক্ষমা কোন ভাবেই করা হয় না।ছেলে মেয়ে উভয়কেই শাস্তি পেতে হয়।শফিক স্যার তা ভালো করাই কইতে পারবো।কিন্তু তোমরা যেহেতু জামাই বউ,তাহলো তোমাগো শাস্তি দিতে চাইনা।শুধু কারো জাতে মনে কোন সন্দেহ না তাকে তার জন্য তোমারে সবার সামনে আবার বিয়ে করতে হইবো তিশা ডারে।তাহলে আর কাউরো কোনো সমস্যা হইবো বলে মনে হয় না।

-আবার বিয়ে.......এটার কি দরকার।(জিসান)

-আরে মিয়া,আমরা তো তোমারি বউর লগে বিয়া দিমু,অন্য মাইয়ার লগে না।নিজের বউরে একবারের জায়গায় দুইবার বিয়ে করবে তাতে সমস্যা কি।
শুনো আর কোন কথাই শুনতে চাইনা।তারাতারি বিয়াডা কইরা আমাগো বিদায়করো।

-জিসান রায়হানের দিকে তাকালো।রায়হান ও অসহায়ের মতো জিসানের দিকে তাকালো।
(এই তাকানোর অর্থ অনেক কিছুই বলে দিচ্ছে,রায়হান ভাবছে, জিসান পরিস্থিতি সামাল দিতে মিথ্যা তো বলে দিলো,কিন্তু এখন কি হবে,বিয়েটা কি করতে রাজি হবে তার বোনের সম্যান পাচাবার জন্য)

-জিসান সবাইকে বললো, টিক আছে আপনারা বিয়ের ব্যবস্থা করুন,এখনি হবে।রায়হান সীমা আর মামীকে বলো তিশাকে তৈরি করতে।উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে বললো,আপনারা কিছু মনে না করলে আমিও একটু জামাটা চেন্জ্ঞ করে আসি।

-মেম্বার ও বলে উঠলো,হো...যাও বাজান পাক পবিত্র হয়ে আসো,এতোক্ষনে আমরা সব রেডি করি।কি বলো সবাই....?হো হো,,,, টিক কইছেন।

-রায়হান ভেতরে গেলো তিশার কাছে।তিশা সব শুনেছে ঘরে বসে,তার পরও রায়হান অনেক বুজালো তিশাকে, কারন এই মুহুর্তে আর কোন উপায় নাই।শুধু তিশা না সীমার জীবনও নস্ট হয়ে যাবে যদি বিয়েটা না হয়, তিশা ভাইকে জরিয়ে ধরে অনেক কাদলো,কিছুই বলতে পারলো না।বোন যা কাদার এখনি কেঁদে নে,বাহিরে একদমই কাঁদবি না, বাহিরের সবাই জানে তোর বিয়ে হয়ে গিয়েছে।তোকে এভাবে কাঁদতে দেখলে সবাইর সন্দেহ হবে।

:বোন আমার শোন,আমার দিকে তাকা,(তিশা মাথা উঠিয়ে ওর ভাইয়ের দিকে তাকালো)তোর মনে হয় আমি এমন কোনো ডিশিশন নিবো যা তোর জন্য ভালো হবে না,আমার প্রতি বিশ্বাস আছে। (তিশা মাথা নেড়ে হ্যা জনাব দিলো)শোন.... জিসান অনেক ভালো একটা ছেলে,আমি চাইলেও তোর জন্য এমন ছেলে খুঁজে আনতে পারতাম না,ও বেচে থাকতে তোর ক্ষতি কোন দিনও হতে দেবে না,তোকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করবে।যেমন আজ করছে।তুই অনেক ভাগ্যবান তিশা জিসান তোকে বিয়ে করতে রাজী হইছে।একদিন তুইও বুজবি।।।।আচ্ছা বাদ দে....। সীমা তিশাকে রেডি কর তারাতারি। এ কথা বলে রায়হান চলে গেলো বাহিরে।

জিসান গোসল করে নতুন আরেকটা পান্জাবী পরে নিলো।
""""তিশাকে জিসান ভালোবাসে,তাই তিশাকে বিয়ে করতে ওর কোন সমস্যা নাই,কিন্তু এভাবে বিয়ে করার কথা কখনো চিন্তা করেনি।জিসান আগে তিশার মনে জায়গা করতে চায়েছিলো। কিন্তুু পরিস্থিতির স্বীকার এখন সবাই।মনে মনে ভাবছে জিসান।তিশার মনের অবস্থা ও ভালো করেই বুঝতে পারছে,কিন্তুু কিছু করার নেই।ভাগ্যের লিখন কেউ পাল্টাতে পারে না।"""

-জিসান বের হয়ে দেখলো কাজী এসে সব রেডি করে বসে আছে।তিশাকে আনতে রায়হান গেলো।

-জিসান একটা চেয়ারে বসে আছে,( কনে আসছে কেউ বললে।)জিসান পেছনে তাকায়,তিশা একটা লাল শাড়ি পড়ছে।হাতে কিছু চুড়ি,আর ঠোটে একটু লিপস্টিক ,চুল গুলো ছারা। হয়তো সীমা জোর করে এগুলো লাগিয়ে দিয়েছে।টিক নতুন বউয়ের মতোই লাগছে তিশাকে।জিসানের পাশের চেয়ারে তিশাকে বসালো।রায়হান টিক ওর বাসেই বসলো।তিশা মাথাটা নিচা করে বসে আছে,কিছুক্ষন পর কাজী কবুল বলতে বলে,তিশার চোখ দিয়ে অজান্তে এক ফোটা জল পড়ে।রায়হান বুঝতে পারে,তাই তিশার হাতটা গিয়ে ধরে।তিশা মাথাটা উঠিয়ে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে কবুল বলে।এর পর জিসানও কবুল বললে বিয়েটা ওখানেই সম্পূর্ণ হয়।

-রায়হান তিশাকে ঘরে নিয়ে যা।এখনতো আপনাদের মনে আর কোন প্রশ্ন নেই।যদি কোন সমস্যা না থাকে,তাহলে দয়া করে এখন আপনারা সবাই আসতে পারেন।আমার বোনের আজ বিয়ে, আর আমাদের অনেক কাজ আছে,এমনেই সব কিছুতে দেরি হয়ে গিয়েছে।আশা করি আমার বোনের বিয়েতে আপনারা কোন সমস্যা করবেন না।সবাই বিয়েতে এসে আমার বোনকে দোয়া করে যাবেন।(জিসান কথাটা বলে ঘরে গিয়ে শোফাতে বসে পড়লো)

-তিশার মামাও সবাইকে বিদায় দিয়ে ঘরে এসে বসলো।রায়হান দৌড়ে গিয়ে জিসানকে জরিয়ে ধরলো,আর কাঁদতে লাগলো।জিসান রায়হানের এমন আচরণ এ কিছুটা আবাক হয়ে গেলো।আর রায়হান কে কোনদিনও কাঁদতে দেখেনি জিসান। রায়হান খুব শক্ত প্রকৃতির মানুষ, সহযে ইমোশনাল হয় না,আর সে মানুষ আজ কাঁদছে, তার মানে অনেক.....।তিশা দরজায় দাড়িয়ে সব দেখছে।জিসান রায়হানকে জোর করে ছাড়ালো।
হে ব্রো...!!!কি হলো তুই কাঁদছিস কেনো।আরে আমাকে বল।

-রায়হান জিসানের হাত দুটো ধরে বললো,তুই জানোস না জিসান তুই আজ আমাদের কি উপকার করলি।তুই শুধু তিশাকে না, সীমার জীবনটা ও নস্ট হতে বাচালি।আজ আমাদের পুরো পরিবার কে তুই এই বিপদ থেকে উদ্ধার করলি,তোর ঋন শোধ করার মতো না।
তিশার মামা মামীও কাঁদতে লাগলো,আসলেই তারা আজ অনেক বড় বিপদ থেকে রক্ষা পয়েছে,শুধু জিসান এর কারনে।

-জিসান এবার একটু রেগে গেলো,থাপ্পর মেরে তোর সব দাত ফেলে দিবো,কি সব উল্টা পাল্টা কথা বলছোস, তোর মাথা কি টিক আছে।আর তোর এসব কথা বলার সাহস হলো কি করে।আরেক দিন যদি দেখুম তুই এসব ঋন ফিন এর কথা বলছোস, তোর সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ করে দেবো।

-রায়হান হেসে জিসানকে আমার জরিয়ে ধরলো।
(বন্ধুত্বের সম্পর্কটাই এমন,এখানে নো সরি আর নো থ্যাংকু।)

জিসান মামা মামীর কাছে গিয়েও মামা মামীকে সান্তনা করলো।আরে অনেক হইছে কান্নাকাটি আর না,রাতে বর পক্ষ আসবে বাসায় অনেক কাজ আছে,তাই সবাই কান্না কাটি বাদ দিয়ে কাজে নেমে যাও।সবাই হেসে উঠলো।জিসানের চোখ হঠাৎ তিশার দিকে পড়লো,তিশার মুখে এখনো হাসি নাই।

-রায়হান,,,,,,।(জিসান)

-হুমমমমমম.......

-তিশা কাল রাত থেকে না খাওয়া, তুই খাইয়ে দে ওকে,তোকে ও মানা করতে পারবে না।(জিসান)

-বাবা তুমিও খেয়ে নেও কিছু, তুমিওতো খাওনি সেই কাল থেকে।(তিশার মামী)

-টিক আছে মামী চলুন। তারপর কাজ ও আছে অনেক।।
.
.
.
চলবে....................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন